শিশুদের সাথে কথোপকথন

শিশুদের সাথে কথা বলার সময় আমি যেটা সবসময় মনে রাখি তাহলো –ওরা উপদেশ একেবারেই পছন্দ করে না ,  উপদেশের সুর ওদের পছন্দ না৷ আমি অনেক বার খেয়াল করেছি কথার মধ্যে যখনি কোনো কথা উপদেশের সুরে হয়ে যায় তখনি তাদের মুড পাল্টে যায় ৷ মনে হয় যেন ওদের রাডারে অস্বস্তিকর কিছু ধরা পরেছে এবং ওরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না৷ মাছ খেতে খেতে হঠাত মুখে কাটা অনুভব হলে যেমন লাগে ওদের যেন তেমনি একটা অনুভুতি হয়৷ অনেক সময় মাছ থেকে সযত্নে কাটা বের করে দয়ার মত করে ওরাও অন্য সব কথা রেখে উপদেশ টুকু মাথা থেকে বের করে দেয়৷ তাই বলে কি ওদের উপদেশ দিব না ? অবশ্যই দেব তবে একটু অন্য ভাবে … সেভাবে দেব যেভাবে দিলে ওর রাডারের “অস্বস্তিকর” সংকেত টাকে ফাকি দেয়া যায় এবং খুশী মনে ও সেটা গ্রহণ করে; মাছের কাটার মত বের করে না দেয়৷
আমার নিজের একটি অভিজ্ঞতার কথা বলছি-
যথারিতী বোনের ছেলে তাদভীনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল –
তাদভীন: খালামনি, আমার পাজেরো জীপটা (খেলনা গাড়ী) ভেঙ্গে গেছে , আমি স্কচ টেপ দিয়ে জোড়া লাগিয়েছি৷
( এটা বলে সে গাড়ীটা উল্টে পাল্টে টেপ লাগানো জায়গাটা আমাকে দেখাচ্ছে )

আমি বুঝলাম এটা Introduction চলছে, ground তৈরী হচ্ছে আসল কথায় যাবার জন্য ….

তাদভীন: এটা দিয়ে খেলতে আমার ভালো লাগছে না৷ আমার একটা নতুন পাজেরো লাগবে ….

আমি বলতে পারতাম – না, তোমার গাড়ী প্রায় নতুন…. টাকা অপচয় করা ভালো না ….

আমি তা বলিনি৷ কারণ আমি জানি সে উপদেশ শুনতে পছন্দ করে না …
আমি বললাম – নতুন গাড়ী কিনতে তো অনেক টাকা লাগবে ..একটা কাজ করলে কেমন হয়..তুমি কিছু টাকা জমাও আর আমিও কিছু টাকা জমাই তারপর আমরা একটা গাড়ী কিনতে পারব
(সে দৌড়ে তার মাটির ব্যাংক নিয়ে এলো)
তাদভীন: খালামনি , এই যে আমার ব্যাংক …
আমিও আমর কয়েন জমানোর ব্যাংকটা ওকে দেখালাম …
তাদভীন: খালামনি, দুজনের টাকা মিলে তো অনেক টাকা হবে ..আমরা তিনটা গাড়ী কিনব …
আমি : তিনটা গাড়ী দিয়ে তুমি একা খেলতে পারবে না৷ তার থেকে আমরা একটা গাড়ী কিনি আর বাকী টাকা দিয়ে তুমি আর আমি মিলে গরীব শিশুদের জন্য কিছু খাবার আর কাপড় কিনি৷
তাদভীন: কেন ওদের জন্য কিনব?
আমি: ওরা গরীব , ওদের জামাকাপড় নেই, ওরা ভলো খাবার খেতে পায় না, ….
তাদভীন: খালামনি , তার থেকে আমরা একটা কাজ করি , আমরা তিনটা গাড়ী কিনি তারপর একটা রেখে বাকী দুটা ওদেরকে দিয়ে দেই …
আমি : এটা একটা ভালো পরামর্শ ….কিন্তু আমার মনে হয় ওরা খাবার আর কাপড় বেশী পছন্দ করবে৷ তুমি দেখছ রাস্তার পাশের বাচ্চা গুলোর কী কষ্ট হয় ? শীতের সময় ওদের ভালো কাপড় থাকেনা , ওদের খুব শীত করে… ওদের মজার মজার খাবার খেতে ইচ্ছা করে কিন্তু ওদের বাবা মা ওদের খাবার কিনে দিতে পারে না..
তাদভীন: জানো, একদিন আমি একটা ভালো কাজ করেছি, একটা গরীব ছেলেকে কেক দিয়েছি
আমি: OWO! তুমি সত্যিই একটা ভালো কাজ করেছ৷ এবার তুমি আর আমি মিলে ওদের জন্য কিছু কাপড় আর খাবার কিনব ..ওরা খুব খুশী হবে ….আল্লাহ আমদেরকে টাকা দিয়েছেন , আমদের তা দিয়ে গরীবদের সাহায্য করতে হবে ….
আমি : তুমি যখন নতুন গাড়ীটা পাবে তখন পুরানটা দিয়ে কী করবে?
তাদভীন: আমি যার খেলনা নেই তাকে দিয়ে দেব……. 

Loading


Comments

শিশুদের সাথে কথোপকথন — 2 Comments

  1. অত্যান্ত সুন্দর সাবল্লিল জ্ঞানগর্ভপৃর্ণ একটি পোষ্ট ।
    ধন্যবাদ ।

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *