যে তিনটি বিষয় সময় থাকতে না বুঝলেই নয়!

প্রারম্ভিক কথাঃ
একজন নাস্তিক মৃত্যুকে ভয় করে না ঠিকই – কিন্তু নিষিদ্ধ জীবন ধারাকে কানায় কানায় ভোগ করতে না পারায় আক্ষেপ, বেদনা ও অতৃপ্তি নিয়ে একদিন মৃত্যু বরণ করে। দৈহিক সত্তার মৃত্যুর পর, আত্মিক সত্তার কি হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে বড় জোর এ কথাই বলতে পারে যে সে আত্মিক সত্তায় বিশ্বাসী নয়। তার এই উত্তর আত্মিক সত্তা ও পারলৌকিক জীবন সংক্রান্ত প্রশ্ন বিদ্ধ মনকে আশ্বস্ত করার জন্য কি যথেষ্ট? না, যথেষ্ট নয়! কারণ, আত্মিক সত্তাকে স্বীকার করে নিলে পারলৌকিক  জীবনকে স্বীকার করে নিতে হয়, সৃষ্টিকর্তাকে স্বীকার করে নিতে হয়। কাজেই এগুলা হচ্ছে বিরাট প্রশ্ন যার বুদ্ধি বৃত্তি ও যৌক্তিক সমাধান অবশ্যই বিবেচনার দাবী রাখে।

একজন আস্তিক মৃত্যুকে ভয় তো করেই না – উপরন্তু নিষিদ্ধ জীবন ধারাকে পাপ মনে করে-আর পারলৌকিক জীবনের জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। আর যে ব্যক্তি মৃত্যুকে ভয় করে তার অবস্থান এমন যে , সে  নাস্তিকতা ও আস্তিকতার মাঝামাঝি বিচরণ করে। না’সে নিষিদ্ধ জীবন ধারাকে কানায় কানায় ভোগ করতে পারে – আর না’সে পারলৌকিক জীবনের জন্য প্রস্তুত- এমন তরো সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যদিয়ে যে ব্যক্তির পার্থিব জীবন শেষ হয়ে আসবে- তখন শোধরানোর শেষ সময়টুকু সে আর পাবে কি? কাজেই

যে চিন্তা সময় থাকতে না করলেই নয়!

“রাজনৈতিক ব্যবস্থা” হচ্ছে মানুষের সামাজিক ও  রাষ্ট্রীয় চিন্তাধারার বাস্তব প্রতিফলন। চিন্তাধারার ভিত্তি যা হয় তার উপরই নির্মিত হয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা। যদি চিন্তাধারার ভিত্তি “নাস্তিকতা” হয়- তাহলে সেই নাস্তিকতার ভিত্তিমূলের উপর যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠবে-তার সাথে নিশ্চয়ই সাংঘর্ষিক হবে- সে রাজনৈতিক ব্যবস্থা যা “আস্তিকতার” ভিত্তিমূলের উপর গড়ে উঠতে চাইবে। এখন এই “আস্তিকতার” ভিত্তিমূলের উপর রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এক জন বিশ্বাসী আস্তিক ব্যক্তির সর্বদাই করে যেতে হবে তানা হলে তার আস্তিকতা “নাস্তিকতার” ভিত্তিমূলের উপর গড়ে উঠা রাজনৈতিক ব্যবস্থার যাঁতাকলে পড়ে বিলীন হয়ে যাবে। আর যে হেতু মানুষ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের বাইরে অবস্থান করতে পারে না কাজেই –

যে রাজনৈতিক আদর্শের অনুসরণ সময়
থাকতে
না করলেই নয়!

। মানুষের চিন্তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটায়- তার লক্ষ্য উদ্দেশ্য ভিত্তিক কর্মকাণ্ড।  একজন নাস্তিক ব্যক্তির লক্ষ্য উদ্দেশ্য ভিত্তিক কর্মকাণ্ড যা হবে তার সাথে নিশ্চয়ই মিলবেনা সেই ব্যক্তির লক্ষ্য উদ্দেশ্য ভিত্তিক কর্মকাণ্ড যে আস্তিক তথা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী। একজন আস্তিক ব্যক্তির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত তা একজন আস্তিক ব্যক্তির অবশ্যই জানতে হবে আর তা জানার পর তা পালন করতেই হবে। অর্থাৎ-

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে
যে কর্তব্য
সময় থাকতে না করলেই নয়!

তা’হলে সব মিলিয়ে আমরা তিনটি মৌলিক বিষয় পেলাম-

১) যে চিন্তা সময় থাকতে না করলেই নয়!
২) যে রাজনৈতিক আদর্শের অনুসরণ সময় থাকতে না করলেই নয়!
৩) লক্ষ্য অর্জনে যে কর্তব্য কর্ম সময় থাকতে না করলেই নয়!

উপরের তিনটি বিষয়’কে একত্র করে বলতে পারি – যে তিনটি বিষয় সময় থাকতে না বুঝলেই নয়!

উপরের ৩টি অংশই আমার এ পোস্টের প্রতিপাদ্য বিষয়।

মানুষের মৃত্যু অবধারিত এবং নিশ্চিত। নিশ্চিত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার আগে আসুন আমরা ভাল করে ভেবে দেখি, জীবনের হিসাব মিলিয়ে দেখি “আমরা কি সঠিক পথে আছি?” “আমাদের জীবনের সকল কর্মকাণ্ড কি সঠিক হয়েছে?” “যদি পরকাল” থেকে থাকে- তা’হলে আমাদের এই কর্মকাণ্ড নিয়ে আমরা ‘কি সৎ, যুক্তিপূর্ণ ও শঙ্কাহীন অবস্থানে দাড়াতে পারব?” যদি দড়াতে না পারি – তাহলে এখনই সময় তার সংশোধন অতীব জরুরী নয়’ কি?” আমি আপনি কেন এভাবে চিন্তা করতে ব্যর্থ হচ্ছি!..

আমাদের বর্তমান পৃথিবী ও বিশ্বজগত- যদি বর্তমান প্রাকৃতিক বিধানসহ, মানবকুলের উপস্থিতি নিয়ে বিদ্যমান থাকতে পারে- তা’হলে সেই একই মানবকুলের উপস্থিতি নিয়ে, আরেক প্রাকৃতিক বিধানের অধীন, আরেক বিশ্বজগতের আর্বিভাবের সম্ভাবনা- কেন অপ্রাসঙ্গিক বা অযৌক্তিক ও অচিন্তনীয় ব্যাপার হবে? এ বি’বিষয়টি নিয়ে আমাদের গভীরভাবে চিন্তা করার প্রয়োজন রয়েছে। আমি আপনি একদিন এ পৃথিবীতে থাকবো’না । কিন্তু আমাদের বংশধররা এবং তৎপরবর্তী …-এই পৃথিবীতে থাকবে। এখন আমি আপনি কি চাইতে পারি- তারা বিপথগামী হউক, অজানা অচেনা গন্তব্যে পাড়ি জমাক-নিশ্চয়ই আমি আপনি তাদের অকল্যাণ চাইতে পা’পারিনা। যদি চাইতে না পারি- তাহলে সব দ্বিধা-দ্বন্ধ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে’ কি উচিত নয়- আমরা সকলে একই নিশ্চিন্ত পথের সহযাত্রী হই। (চলবে)

 

 

Loading


Comments

যে তিনটি বিষয় সময় থাকতে না বুঝলেই নয়! — 6 Comments

  1. ডাক্তার সাব আমি আপনার লেখা ভালা পাইলাম! পরবর্তি পর্বের অপেক্ষায় আছি!

  2. মুনিম সাহেব,
    ধন্যবাদ।
    “বানান যাতে ভুল না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত বলে মনে করি।”

    সহমত। চেষ্টা করব।
    কম্পিউটারে বাংলা লিখায় আমি তেমন এক্সপার্ট হতে পারি নাই। এই ব্লগের এডিটরদের কেউ বানান ঠিক করে দেয়ার এ কাজটা করে দিলে ভাল হবে নতুন ব্লাগারদের জন্য।

  3. ডাঃ আজিজ সাহেব সংলাপব্লগে আপনার যোগদান এবং ১ম পোস্ট করার জন্য স্বাগতম জানাচ্ছি।

    আপনি যে বিষয়ে নিয়ে আলোকপাত করছেন বা করবেন তা খুবই মূল্যবান। তাই মূল্যবান বিষয় নিয়ে যা কিছু লিখা হয় না কেন তা অবশ্য বাক্য গঠন এবং বানান যাতে ভুল না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত বলে মনে করি। কারণ বানান ভুল হলে আপনার বাক্যের অর্থ অন্য রকম ভাবে পাঠকের কাছে পৌছাতে পারে।
    বানান আমারও ভুল হয়, তবে চেষ্টা করে যাই যাতে কম ভুল হয়। ধন্যবাদ।

  4. আপনার প্রথম বাক্যটি সহজে যেন নিতে পারছিনা। “একজন নাস্তিক মৃত্যুকে ভয় করে না ঠিকই” –এটা যদি কোন গবেষণার সার-নির্যাস না হয়, তবে কথাটি এভাবে ঠিক হবে বলে মনে হয় না। আমার তো মনে হয় মৃত্যু ভয় ওদের বেশী থাকার কথা। কেননা জগতই হচ্ছে তাদের একমাত্র সম্বল। তাই এখান থেকে চিরতরে বিদায় হওয়ার মানসিকতায় ভয়ের সম্ভাবনা তিরোহিত হওয়ার প্রতিপাদ্য বুঝে আসছে না।

    • হ্যাঁ ভাই আমিও সেইটি ভেবেছিলাম! নাস্তিকরা মরণে ভয় পায়! তারা আর কারো কাছে অসহায় নয় কিন্তু মরণের কাছে তারা অসহায়!
      তাই তো তারা তাদের জীবনকে দীর্ঘ করতে চায়, অপঘাতে মরতে চায় না। আর জীবনকে কানায় কানায় ভোগ করে যেতে চায়।

      আমাদের কবি শামসুর রহমানকে উনার মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে এক স্বাক্ষাতকারে তাকে আমি বলতে শুনেছি তিনি মৃত্যুকে ঘৃণা করেন! এর কারণ হিসাবে তিনি বলেছেন মৃত্যু নাকি উনার প্রিয় মাকে দূরে নিয়ে গেছে! (আসলে যখন তিনি এই কথা গুলো বলছিলেন তখন তার সারা চোখে মুখে আমি তার সম্ভাব্য মৃত্যু ভয়কে দেখতে পেয়েছিলাম!)
      এই তো কয়েকদিন আগে তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা খ্যাত কবি শহীদ কাদরী যখন জীবনের শেষ প্রান্তরে এসে পৌছে গেছেন তখন তিনি অন্য এক সত্ত্বার অনুভূতির কথা উপন্যাসিক হুমাউন আহমেদকে জানিয়ে দিলেন।
      আসলে হলো যখন “বল” বা “শক্তি “মানুষের থাকে তখন সে নিজকে মনে করে যা নয় তা ভেবে চলে এবং বলে বেড়ায়। কিন্তু মৃত্যুর মুখামুখি যখন হয় তখন সবাই নিজেদের ভুল বুঝতে পারে, তবে কেউ কেউ সমাজের লোকের কাছে লজ্জা পাবার ভয়ে প্রকাশ্যে তা স্বীকার করেন না।

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *