মহানবী সা:-এর জন্মদিন

বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ বিশেষ করে সাড়ে ১৪ কোটি মুসলমান আজকের শিরোনামটি নিয়ে কতটুকু চিন্তাভাবনা করেন, তা আমার জানা নেই। বিগত দিনে নিজেও ভাবতাম নাÑ আমার বাবা কিংবা দাদাও ভাবতেন না। ভাবনার প্রয়োজনও ছিল না। একটি ধর্মপ্রাণ ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারের সদস্য হিসেবে আমাকে খুব ছোটবেলা থেকেই ইসলামি মূল্যবোধের খুঁটিনাটি যেমন শেখানো হতো, তেমনি আরবি ভাষা এবং ইবাদত-বন্দেগি সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেয়ার পর পরিবার থেকে তা কায়েম করতে বাধ্য করা হতো। ইলমে শরিয়ত, মারেফত, তরিকত ও হকিকত সম্পর্কে ধারণা পেয়েছিলাম ১৫ বছর বয়সের আগেই। ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদত ও বন্দেগিতে মশগুল থাকার অভ্যাস আমার হয়েছিল কিশোরবেলা থেকেই।
আমার শৈশব এবং কৈশোরের না শোনা শব্দমালা ইদানীং হঠাৎ করেই বিরাট আকার ধারণ করে পুরো দেশে আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। লাখ লাখ লোক একত্রে সমাবেশ করে বলছেনÑ আমরা সবাই ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করছি। এটা পালন করা বিরাট এক পুণ্যময় কর্ম। আমাদের এই কর্মে আল্লাহ খুশি হন এবং রাসূল সা:ও বেজায় খুশি হন। তারা হুজুরে পাক সা:-এর জন্মদিবসকে নিজেদের জীবন, সমাজ ও সংসারের সবচেয়ে আনন্দময় দিন বলে উল্লেখ করেন এবং মিছিল, সমাবেশ, আলোচনা, রোজা রাখা, কাঙালিভোজ অথবা হামদ-নাত পাঠ করে অতিবাহিত করে দেন। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত, আশেকানে রাসূল সা: প্রভৃতি সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন মাজার কমিটি, দেশের প্রতিষ্ঠিত ও নামকরা পীরের দরবার এবং সেই সাথে কিছু বিতর্কিত ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিপুল আয়োজন করে ক্রমবর্ধমান হারে মহা জাঁকজমক করে প্রতি বছর ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করে চলেছেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হারাম অথবা বেদায়াতÑ এমন কথার ধারক-বাহকের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। তাদের বক্তব্য হলো ‘হুজুরে পাক সা:-এর জীবদ্দশায় কখনো তার জন্মদিবস পালিত হয়নি। তার ওফাতও একই দিনে হওয়ার কারণে দিনটি সব দিক থেকেই তাৎপর্য ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ হিসেবে মুমিন-মুত্তাকিদের হৃদয়ে স্থান করে নেয়। খোলাফায়ে রাশেদিন, উমাইয়াদের ৯০ বছরের রাজত্বকালে এবং আব্বাসীয়দের সাড়ে ৪০০ বছরের খেলাফতের সময়ে কোনো নামেই হুজুর সা:-এর জন্মদিবস ও মৃত্যুদিবসের অনুষ্ঠান পালিত হয়নি। মুসলমানদের প্রতিষ্ঠিত চারটি মাজহাব এবং শিয়া-সুন্নি নামের দু’টি সম্প্রদায়ের দলিলপত্রে দিবসটি পালন সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা নেই। কাজেই কলিকালের আলেম নামধারীরা হুজুরে পাক সা:-এর নাম করে তার জন্মদিবস ও মৃত্যুদিবসকে ঈদে মিলাদুন্নবী আখ্যা দিয়ে একধরনের বাণিজ্য ফেঁদে বসেছেন। জশনে জুলুস, কাঙালিভোজ এবং মিলাদ-কিয়ামের নাম করে বিরাট অঙ্কের টাকা চাঁদা আদায় করে বিশাল অঙ্ক যেমন মেরে দেয়ার ধান্ধা থাকে, তেমনি ওইসব অনুষ্ঠানে মস্তবড় গদিওয়ালা কুরসিতে বসে নিজেকে মহাকামেল পীর-দরবেশ-কুতুব-আউলিয়া বলে প্রচার-প্রদর্শন এবং প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ গ্রহণ করে থাকেন। এতে করে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয় এবং ইসলামের মূল আকিদা থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যায়। তারা ফরজ ইবাদত-বন্দেগি এবং ফরজ বাদ দিয়ে পীরের কথামতো বেদায়াতি অনুষ্ঠানমালায় যোগদান করে গাফেল হয়ে পড়েন এবং মনে করেন, এসব করলেই সব হয়ে যাবেÑ ডাইরেক্ট বেহেশতে যাওয়া যাবে। তাদের কারণেই ধর্মপ্রাণ মানুষ ধর্মের পরিবর্তে ফন্দিফিকির করে আল্লাহ এবং রাসূল সা:-এর সন্তুষ্টি লাভ করতে চান এবং চিন্তা-চেতনায় দিন দিন উগ্র হয়ে ওঠেন।’
মিলাদুন্নবী পালনের বিরোধিতাকারীরা দিবসটি পালন করতে চান ভিন্নমাত্রার ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে। তারা দিনটিকে সিরাতুন্নবী আখ্যা দিয়ে রাসূল সা:-এর জীবন ও চরিত্রের মাধুর্যময় বিষয়গুলোকে আলোচনার মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে এমনভাবে উপস্থাপন করতে চান, যাতে করে লোকজন ইসলামের নবীকে ভালোবাসতে পারেন এবং তাকে যথাযথভাবে অনুসরণ করতে পারেন। দিবসটি উপলক্ষে আনন্দ-ফুর্তি, মিছিল-মিটিং, খানাপিনার আয়োজন, আয় কিংবা ব্যয়ের ধান্ধা ইত্যাদিকে নাজায়েজ বলার পাশাপাশি এ মহলটি মিলাদুন্নবীর জশনে জুলুসকে বেদায়াত এবং মুসলমানদের জন্য ফেতনা ও ফাসাদ মনে করে থাকেন।
সিরাতুন্নবীপন্থীদের বক্তব্য শোনার পর মিলাদুন্নবীপন্থীরা বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তারা মনে করেন, সিরাতুন্নবী শব্দটি কোনো নবীর শানে ব্যবহার করাই হারাম। এই শব্দ দ্বারা নবীকে অপমান করা হয়। কেবল বেয়াদব, বেকুব, গাফেল ও ইসলামের শত্রুরা এহেন শব্দ ব্যবহার করতে পারে। কারণ, সিরাত মানে চরিত্র। এ কথা বললেই চরিত্রধারীর চরিত্রের ভালো ও মন্দ উভয় দিক আলোচনায় চলে আসে। রাসূল সা: তো বটেই, অন্য নবী ও রাসূলগণ সাধারণ মানুষ ছিলেন না। তারা কোনো ভুল করতেন না, অন্যায় করতেন না এবং শয়তান ও নফসের ধোঁকায় আক্রান্ত হতেন না। জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ করুণা ও দয়ার কারণে নবী ও রাসূলগণ সব মানবীয় ভুলভ্রান্তি, অন্যায় অপরাধ এবং দুর্বলতা ও অক্ষমতা থেকে মুক্ত ছিলেন। কাজেই রাসূল সা:-এর শানে ‘সিরাত’ শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না।
তারা ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে পবিত্র কুরআনের সূরা ইউনুসের ৫৮ নম্বর আয়াত, সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নম্বর আয়াত এবং সূরা ইব্রাহিমের ৫ নম্বর আয়াতকে প্রামাণ্য দলিল হিসেবে উপস্থাপন করে থাকেন। তারা বুখারি শরিফ, মুসলিম শরিফ এবং অন্যান্য সূত্রের কয়েকটি হাদিস বর্ণনার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর কয়েকজন নামকরা ইমামের ফতোয়াও হাজির করেন। আমরা এখন দেখে নেব কুরআন-হাদিস এবং ফতোয়ায় আসলে কী বলা হয়েছে : সূরা ইউনুসের ৫৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেÑ ‘বলুন, আমার অনুগ্রহ এবং দয়ায় তারা যেন সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। তাদের জমা করা ধনসম্পত্তি থেকে আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া উত্তম।’ সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছেÑ ‘আমি তো আপনাকে সৃষ্টিকুলের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ অন্য দিকে সূরা ইব্রাহিমের ৫ নম্বর আয়াতের বক্তব্য হলোÑ ‘আল্লাহর নিয়ামত স্মরণ করাওÑ এতে নিদর্শন রয়েছে ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞদের জন্য।’
হাদিস প্রসঙ্গে তারা প্রথমেই তারিক ইবনে খাতির রা: বর্ণিত প্রমাণটি উপস্থাপন করে বোঝাতে চান যে, জন্মদিন পালন জায়েজ করা হয়েছে। তারিক ইবনে খাতির বলেনÑ ‘আমাদের নবী সা: তার সন্তান ইব্রাহিমের জন্মদিবস পালন করেছিলেন একজন ক্রীতদাস মুক্ত করার মাধ্যমে।’ ইমাম মুসলিম বলেন ‘হুজুরে পাক সা: সপ্তাহের প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন। তাঁকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছেনÑ সোমবার আমার জন্মদিন।’ ইমাম বুখারি বলেন ‘আবু লাহাবের মৃত্যুর পর তার পরিবারের একজন তাকে স্বপ্নে দেখলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, কবরে তোমার দিনকাল কেমন কাটছে। আবু লাহাব উত্তরে বললেন, আমি কেবল সোমবার দিন ছাড়া সব সময় মারাত্মক আজাবের মধ্যে থাকি। আমার যে হাতটি দ্বারা ক্রীতদাসী খুয়ায়বাকে মুক্ত করেছিলাম, সেই হাতের আঙুল দিয়ে সোমবারে পানি বের হতে থাকে (রাসূল সা:-এর জন্মের সুসংবাদ পেয়ে আবু লাহাব তার দাসী খুয়ায়বাকে মুক্ত করে দিয়েছিলেন।)’
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রবক্তারা বলেন, আল্লাহ যে অনুগ্রহ ও দয়ার জন্য সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে বলছেন, সেই অনুগ্রহ ও দয়াই হলেন আমাদের নবী সা:, যার বিষয়ে সূরা আম্বিয়ায় স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের মতে, আমরা আমাদের ছেলেসন্তান, পিতামাতা, স্ত্রী-প্রিয়জন কিংবা নেতার জন্ম ও মৃত্যুদিবস পালনের জন্য কতই না আয়োজন করে থাকি। কাজেই যিনি সৃষ্টি না হলে দুনিয়া পয়দা হতো না, যার জন্ম না হলে কুরআন-হাদিস, নামাজ-রোজা, ঈদ কিছুই হতো না, সেই নবীর জন্মদিনই হওয়া উচিত মুসলমানদের বড় ঈদ। তারা দাবি করে থাকেনÑ খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলে ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত হতো সাহাবিগণের ব্যক্তিগত উদ্যোগে। অন্য দিকে মিসরের ফাতেমি খলিফাদের আমলে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিনটি পালিত হতো। ১৫৮৮ সালে তুরস্কের অটোমান সম্রাট দিনটিকে সরকারি ছুটি বলে ঘোষণা করেন। ‘মিলাদ’ শব্দটি আরবি মাওলুদ থেকে এসেছে, যার অর্থ নবীর জন্ম। অন্য দিকে ‘সিরাত’ শব্দের সাথে কোনো নবী বা রাসূলের সম্পর্র্ক নেই। একটি গরু বা ছাগলের চরিত্রের আরবি প্রতিশব্দ হবে সিরাতে বাকারা বা সিরাতে বকরি। কিন্তু ঈদে মিলাদুন্নবী শব্দটি ব্যবহার করলে পৃথিবীর কোনো শক্তিই তা বিকৃত বা ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করতে পারবে না।
উপরিউক্ত যুক্তিতর্ক শুনে সিরাতুন্নবীপন্থীরা ুব্ধ হয়ে যান। তাদের মতে, কায়েমি স্বার্থবাদী মুসলিম নামধারীরা কুরআন-হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করেন। নবীপ্রেমের নাম করে তারা নিজেদের স্বার্থ আদায় করে ছাড়েন। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, সূরা ইউনুসের ৫৮ নম্বর আয়াতের উদ্দেশ্য বুঝতে হলে অবশ্যই ৫৭ নম্বর আয়াতের সাথে মিলিয়ে পড়তে হবে। এই দু’টি আয়াত একত্র করলে যে কেউ বুঝতে পারবেন, ৫৮ নম্বর আয়াতে বর্ণিত আল্লাহর অনুগ্রহ বলতে পবিত্র কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। অথচ অতি উৎসাহীরা সেখানে রাসূল সা:-এর নাম বসিয়ে নেন। আবার সূরা ইব্রাহিমের ৫ নম্বর আয়াতের একটি অংশকেই কেবল তারা প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে থাকেন। অথচ পুরো আয়াতটি পড়লে তিনি নিজেই বলতে পারবেন, আল্লাহ আসলে কী বলেছেন। পুরো আয়াতের অর্থ এ রকমÑ ‘আর আমি মুসাকে নিদর্শনসহ প্রেরণ করে বলেছি, তোমার জাতিকে বের করে আনো অন্ধকার থেকে আলোর দিকে, আল্লাহর দ্বীন (নিয়ামত ও আজাবের) স্মরণ করাও, এতে নিদর্শন রয়েছে ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞদের জন্য।
হাদিস সম্পর্কে সিরাতপন্থীদের বক্তব্য হলো আল্লাহর রাসূল সা: নিজের জন্মদিন পালন করেননি। কোনো সাহাবা তার জীবদ্দশায় পালন করেননি। তাদের মতে, ইসলামের যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগির ধরন, প্রকৃতি এবং রীতিনীতি প্রথম চারটি যুগেই শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে কোনো কিছু চালু করা যাবে না। ইসলামের ইতিহাসের সব যুগের ইমামগণ সব সময়ই ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে অত্যন্ত সতর্কতা এবং শরিয়াহ অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি ছোট্ট একটি শব্দ নয়, একটি অক্ষরের উচ্চারণেও সামান্য গাফিলতি ইসলাম বরদাশত করে না। প্রয়োগ বা উচ্চারণের হেরফেরে কত বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, তার সবেচেয়ে বড় উদাহরণ সালমান রুশদির স্যাটানিক ভার্সেস। দুনিয়াব্যাপী স্যাটানিক ভার্সেস শব্দটি প্রথম বিস্তার ঘটান পশ্চিমা ঐতিহাসিক স্যার উইলিয়াম মুর ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি সূরা নজমের ১৯ ও ২০ নম্বর আয়াতের তেলাওয়াত সম্পর্কে সাহাবি মোহাম্মদ ইবনে কাব আল কুরায়জি রা: বর্ণিত দুর্বল একটি হাদিসের সূত্রে প্রথম ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।
আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুরের আমলে ইবনে ইসহাক রচিত ‘আদি ও আসল সিরাতে রাসূল সা:’ নামক কিতাবে ইবনে কাব বর্ণিত হাদিসটি স্থান না পেলেও পরবর্তীকালে আবু জাফর মোহাম্মদ ইবনে জারির আল তাবারি রচিত ‘সিরাত’ গ্রন্থে ঘটনাটি লিপিবদ্ধ হয়েছে, যা কিসসাত আল মারাবিক নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এর প্রতিপাদ্য বিষয় হলোÑ আল্লাহর রাসূল সা: একদিন কাবা শরিফে সালাতরত অবস্থায় সূরা নাজমের ১৯ ও ২০ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করছিলেন। এমতাবস্থায় শয়তান এসে তার ওপর প্রভাব বিস্তার করে কয়েকটি শব্দের উচ্চারণ এমন করে দেয়, যাতে উপস্থিত কাফেররা মনে করে যে তাদের দেবতা লাত-মানাত সম্পর্কে আল্লাহর পক্ষ থেকে স্বীকৃতি মিলেছে (নাউজুবিল্লাহ)। ফলে রাসূল সা: যখন সিজদায় যান তখন কাফের-মুশরিকরাও সিজদায় অংশগ্রহণ করেছিল বলে সাহাবি মোহাম্মদ ইবনে কাব (রা:) বর্ণনা করেছেন। এই ঘটনা নিয়ে আল্লাহর রাসূল সা:-এর জমানায় ভীষণ হইচই পড়ে যায় এবং বর্তমান জামানায়ও তা অব্যাহত আছে। কাজেই ইসলামের খুঁটিনাটি কোনো বিষয় নিয়ে হেলাফেলা করার ন্যূনতম অবকাশ নেই।
আমি যদি মিলাদুন্নবী এবং সিরাতুন্নবীপন্থীদের যুক্তি-পাল্টা যুক্তি এবং এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক উপস্থাপন করতে থাকি, তাহলে কয়েক শ’ পৃষ্ঠা লেখা হয়ে যাবে। কাজেই ওদিকে অগ্রসর না হয়ে আমরা বরং আজকের প্রসঙ্গের সমাপ্তির দিকে এগোতে থাকি। যতটুকু আলোচনা করলাম, তাতে সম্মানিত পাঠক হয়তো নিজেদের করণীয় সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা লাভ করতে পেরেছেন। এ ব্যাপারে যদি আমার মন্তব্য জানতে চান তবে বলব, কোনটি সঠিক তা স্পষ্টই আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সা: ভালো জানেন। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, কোনো বিষয় নিয়ে চরমপন্থা অবলম্বন করা ইসলাম মোটেও সমর্থন করে না। অন্য দিকে, ধর্মকর্ম পালনের ক্ষেত্রে সবার আগে ফরজ, তারপর ওয়াজিব, সুন্নত এবং সবার শেষে নফল। দালিলিকভাবে প্রমাণিত হাজার হাজার নফল ইবাদতের বর্ণনা রয়েছে, যা পালন করে আল্লাহর মাহবুব বান্দাগণ দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছতে পারেন। কোনো লোক যদি ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত এবং প্রচলিত নফল ইবাদত পরিপূর্ণভাবে আদায় করার পর মনে করেন যে, তিনি আল্লাহতালার সন্তুষ্টির জন্য আরো কিছু করতে চান, তাহলে তার জন্য অনেক কিছু জায়েজ রয়েছে।

পূর্ব প্রকাশিত: নয়া দিগন্ত

Loading

Comments are closed.