বিশ্বশান্তির ফর্মুলা কোথায়?

কিছু খ্রিস্টান আছে যারা তাদের এলোহি নামের ঈশ্বরকে খুশি করতে মুসলিমদের মসজিদে হামলা করে এবং দরজায় ক্রস লাগায়, শুওরের কাটা মাথা ফেলে রেখে যায়। এরা একধরণের বিশ্বাসী, সঠিক হোক আর বেঠিক।

কিছু মুসলিম আছে যারা তাদের আল্লাহকে খুশি করতে মন্দিরের মূর্তি ভাঙে এবং জেহাদের নামে অন্য নিরীহ মুসলিম আর সাধারণ মানুষদের হত্যা করে, –কখনো আত্মঘাতী বোমা ফাটিয়ে, কখনো গলা কেটে। এরা একধরণের বিশ্বাসী, সঠিক হোক আর বেঠিক।

কিছু হিন্দু আছে যারা তাদের গরু দেবতাকে খুশি করতে গরু জবাইকারী মুসলিমকে হত্যা করে পিটিয়ে, আর ভগবান বিষ্ণু বা নারায়ণকে খুশি করতে মসজিদ ভেঙে মন্দির বানাতে চায়। এরা একধরণের বিশ্বাসী, সঠিক হোক আর বেঠিক।

কিছু ইহুদি আছে যারা তাদের প্রভু (Yaweh) য়াওয়েঃ অথবা রাব্বীদের দেয়া নাম আদনাইকে(Adonai) খুশি করতে জোড় করে আদিবাসী আরব ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করে আর পাটকেল ছোড়া প্রতিবাদকারীদের হত্যা করে। এরা একধরণের বিশ্বাসী, সঠিক হোক আর বেঠিক।

কিছু বৌদ্ধ আছে যারা তাদের ঈশ্বর বিহীন নির্ভানার জগতে পৌঁছে তৃপ্ত হবে বলে নিজ দেশের নাগরিক প্রতিবেশী রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে তাদের শরণার্থী বানায় আবার দাবি করে অহিংসাই তাদের ধর্ম। এরা একধরণের বিশ্বাসী, সঠিক হোক আর বেঠিক।

কিছু নাস্তিক আছে যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেনা কিনতু ঈশ্বর বিশ্বাসীদের চেয়ে বেশিক্ষন এমনকি সারাক্ষন জিকিরে ব্যস্ত থাকে ঈশ্বরকে নিয়েই, তাদের ঘুম নিদ্রা বন্ধ হয়ে যায় বলতে বলতে ঈশ্বর নেই, হে ঈশ্বর তুমি নেই। ঈশ্বর নেই তাহলে চুপ করে থাকো, সারাক্ষন ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বকবকাও কেন?

বকবকায় এজন্যে যে তারাও এতে নিজেদের কোনো লাভ যেমন জার্মান – সুইজ্যারল্যান্ড ইত্যাদি দেশে ইমিগ্রেশন বা এসাইলাম মিলতে পারে বলে বিশ্বাস করে। এরাও একধরণের বিশ্বাসী, সঠিক হোক আর বেঠিক।

এদের বাইরের পৃথিবীর যাবতীয় মানুষেরা দুই প্রকার।

প্রথম প্রকার –নিরীহ ধার্মিক মানুষদের দল,-বিভিন্ন ধর্ম বিশ্বাসে এই ধরণের মানুষ বেশি। তারা যে কোন ধরণের ইশ্বরে বিশ্বাস করে কিন্তু তা নিয়ে মারামারি করতে নারাজ। তারা তাদের নিজ নিজ রীতি অনুযায়ী ধর্মপালন করে শান্তিপূর্ণ ভাবে। এই প্রকারের মানুষেরা কোনো ধর্মযুদ্ধ, ক্রুসেড, জেহাদ বা প্রতিবাদী কোন সংগ্রাম আন্দোলন,– কোনো কিছুতে জড়ায়না। এমনকি পারলে কোন বিবাদ বিসম্বাদ, তর্ক বিতর্কও এড়িয়ে চলে। এরাই হচ্ছে,”বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর” দলের লোক। এরা পৃথিবীর চলমান ঘটনাবলিতে শুধু উহু আহ করেন আর ফেসবুকে লাইক কমেন্ট করেই এনারা তৃপ্ত থাকেন।

দ্বিতীয় প্রকারের মানুষ ধর্মহীন নিরামিষ ভাবনার, বিশ্বাস অবিশ্বাস কোনো কিছুতেই নেই, যেকোন ধর্মের ব্যাপারে উদাসীন, কোন প্রকার ধর্মে তাদের কৌতূহল নেই –ধর্মহীন কিন্তু তারা আবার নাস্তিকও নয়, কারণ ঈশ্বর থাকলে বা না থাকলে তাদের কিছু যায় আসেনা।

তাদের ভাবনা এরকম, উনি থাকলে থাকুক, আমিও আছি, ওনার জায়গায় উনি ঈশ্বর, আমার জায়গায় আমি বাপের ব্যাটা। ন্যাচারাল পৃথিবীতে এনাদের জন্ম মৃত্যু কেন হয় তা নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা থাকেনা – যেমন গরু, ছাগল, গাছপালার কোনো ভাবনা নেই তেমনি তারা মনে করেন এসবই ন্যাচারাল। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ এখন এই দলের।

এনারা নিজের শরীরের চাহিদা আর মনের খুচরা আনন্দ যেমন সিনেমা দেখা, ভ্রমণ করা, সারাক্ষন সেলফি তোলা জাতীয় সুখ নিয়ে আত্মপ্রেমে ব্যস্ত থাকে। ওনারা দিন ভর চাকরি- বাণিজ্য করেন বলে তাদের সময় নেই জীবন দর্শন নিয়ে ভাবার। এই প্রকারের মানুষেরা এভাবেই একদিন ‘রেস্ট ইন পিস’ বা RIPএর জগতে চলে গেলে প্রথম প্রকারের মানুষেরা ‘ইন্নালিল্লাহ’ বলে পোস্ট দেয়। পৃথিবী এখন এই জাবর কাটা মানুষে গিজগিজ করছে।

বিশ্বাস নিয়ে পৃথিবীর মানুষদের প্রকারভেদ বোঝা গেলো।

আর দেখা গেলো, সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বর কেন্দ্রিক বিশ্বাসের জগতের প্রথম ছয় প্রকার মানুষদের থেকেই সাত চরিত্রের মানুষের উৎপত্তি হয়েছে,–মুসলিম জঙ্গি, হিন্দু সন্ত্রাসী, খ্রিস্টান হেইট ক্রিমিনাল, রেসিস্ট (যারা মনে করে সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসাবে বানিয়েছে বাকিরা মানুষ নয়), ইহুদি জুলুমবাজ সৈনিক, বৌদ্ধ ভিক্ষু কিলার, আর ঘেউ ঘেউ নাস্তিক।

দেখা গেলো কি বিশ্বাস করতে হবে সেটি সঠিক না বোঝার কারণে এই ছয় প্রকার মানুষ যারা বিশ্বাস করতে বিশ্বাসী,–তাদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি ঘৃণা, আর অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে।

এবং দেখা গেলো, এই বহু রকমের বিশ্বাসীরা একে অপরের অস্তিত্বকে সহ্য করতে পারেনা, তাই একে অপরকে নির্মূল করতে এই বিশ্বাসীরা তাদের সর্বশক্তি এমনকি জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকে।

তাদের এই প্রচন্ড অশুভ শক্তি পারমানবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী, সেটি বুঝে এদেরকে বর্তমানে ব্যবহার করছে পৃথিবীর বিবাদমান পরাশক্তিগুলি আর আগ্রাসী দেশসমূহ এবং বিভিন্ন দেশের কিছু অশুভ ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক নেতা।

পৃথিবী এখন ধনে জনে বিদ্যায় জ্ঞানে সর্বকালের সেরা পজিশনে থাকা স্বত্বেও, এই ছয় ধরণের বিশ্বাসী গ্রূপের সম্মিলিত কর্মকান্ডে এখন সারা পৃথিবীতে যাবতীয় যুদ্ধ, অশান্তি, অনাচার, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আর রক্তপাত হচ্ছে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে যে, — এইসব অশান্তির পেছনের সৈনিক হিসাবে যারা কাজ করছে তারা কোন না কোনো ধরনের আধ্যাত্বিক ভাবনা সংশ্লিষ্ট বিশ্বাসের শক্তি দ্বারা পরিচালিত।

পৃথিবীর মালিক আর সব মানুষের প্রভু আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষদের এই অবস্থা একদিন এরকম হবে তা জানতেন এবং জানেন। তাঁর গ্রন্থ কোরআনুল করিমে তিনি বর্তমান অবস্থার মত চরম অশান্তিময় পৃথিবীর শান্তির সমাধান দিয়েছেন সূরা বাকারার ২০৮ নম্বর আয়াতে।

এই আয়াতে করিমের অনুবাদ হয়েছে ৫৩টি সোর্সে। তার মধ্যে ৩৫টি স্বীকৃত, ১০টি আংশিক বিতর্কিত, ৫টি অমুসলিম তরজমা, আর ৩টি সাম্প্রতিক। বর্তমান পৃথিবীর ঘটনাবলীর সাথে মেলালে সবচেয়ে অর্থবহ তর্জমা হচ্ছে স্বীকৃত ৩৫টি সোর্সের একটি –আল মুন্তাখাবের,– যা বেশ কয়েকজন ইসলামিক স্কলারের সমন্বয়ে গঠিত। তর্জমা হচ্ছে এরকম:–

“ও মানুষেরা যাদের হৃদয় সত্যিই বিশ্বাস করে, তোমরা একে অপরের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলো এবং আল্লাহ তোমাদের জন্যে যে শান্তি এবং ন্যায়পরায়ণ সমাজের পৃথিবী চান সেটিকে স্থাপন করো; এবং তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা অথবা তাদেরকে অনুসরণ করোনা যাদের চরিত্র শয়তানের মতো; কারণ শয়তান তোমাদের স্বীকৃত আর ঘোষিত প্রকাশ্য শত্রু।

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱدْخُلُوا۟ فِى ٱلسِّلْمِ كَآفَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا۟ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيْطَٰنِ إِنَّهُۥ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ

ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানুদ খুলূ ফিছছিলমি কাফফাতাওঁ ওয়ালা-তাত্তাবি‘ঊ খুতুওয়া-তিশশাইতা-নি ; ইন্নাহু লাকুম ‘আদুওউম মুবীন।

এই আয়াতটি অন্যান্য আয়াতের মতো শুনালেও গভীর দর্শনের কথা খুঁজে পেয়েছেন আধুনিক ইসলাম ধর্মের পন্ডিতেরা। তাদের মত, যেহেতু কোরআনুল করিম শুধু ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসী মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ নয় এটি সমগ্র বিশ্বাসী অবিশ্বাসী সব মানুষ আর জ্বীন জাতির জন্যে তাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর তরফ থেকে সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ যা পাঠ ও অনুধাবন করে তারা তাদের স্রষ্টাকে আর তাদের জন্যে মনোনীত ধর্মকে চিনতে এবং বুঝতে পারবে।

আল্লাহ যেহেতু আগে থেকেই জানেন যে, একসময় আসবে যখন স্রষ্টাকে ডিফাইন করার জন্যে তাঁকে বিশ্বাস করার পন্থা আর প্রয়োজন নিয়ে মানুষেরা বাদানুবাদ আর রক্তপাতে লিপ্ত হবে। শুধু সেই সময়ের এবং সর্বসময়ের জন্যে আল্লাহ গাফুরুর রাহীম এই আয়াতে পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন,– মানুষদের মধ্যে মত বিশ্বাসের পার্থক্য নিয়ে মাত্র দুটি দল থাকবে সব সময়, একটি আল্লাহর দল আর একটি শয়তানের। সবচেয়ে বিভ্রান্ত হবে শয়তানের সেই দল যারা নিজ নিজ বিশ্বাসের অনুসরণ করে সারা পৃথিবীকে অশান্তিময় করে ফেলেবে।

এই আয়াত অনুযায়ী বিশ্বশান্তির জন্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পরিষ্কার হুকুম, প্রথমতঃ যারা কলেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”তে বিশ্বাস করেন, তারা শত্রুতা মতপার্থক্য ভুলে যেয়ে, সবাই সবার সাথে মিলে একটি উম্মা বা একই প্রকারের ভাবনার আর বিশ্বাসের মানুষ হতে হবে।

একই ভাবে অন্যান্য যারাই সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করেন তাদের সাথেও সৃষ্টিকর্তা কেন্দ্রিক ভাবনার বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু মানব সমাজের প্রকাশ্য ও লুকানো শত্রু শয়তান তা হতে দিচ্ছেনা।

আল্লাহ বলছেন, বিশ্ব শান্তির জন্যে সর্ব প্রথম আল্লাহকে যারা বিশ্বাস করো তারা এক হও। সমস্ত ফেরকা, মাজহাব, শিয়া, সুন্নি, ইসমাইলি,কাদিয়ানী সব ভুল আকিদা, মতভেদ মুছে দিয়ে নবী (সা) এর সময়কার মত এক উম্মত হও, নতুবা শয়তানের দলে থাকো সবাই।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, এই একটি আয়াত দিয়ে বিশ্বশান্তির যে ফর্মুলা দিয়েছেন এর বাইরে যাবার কোনো রাস্তা পৃথিবীর কোন মানুষের নেই, যতদিন মানুষ তা না বুঝবে আর পালন না করবে ততদিন বিশ্বশান্তি সুদূর পরাহত থাকবে।

আল মুন্তাখাবের ইংরেজি তর্জমা (2:208) O you people whose hearts truly believe, enter into friendly relations with one another and promote Allah’s requirement of peace and virtuous order and do not follow AL-Shaytan’s footsteps nor walk in the footsteps of those with AL- Shaytan’s characteristics; he is indeed your avowed enemy. (http://islamawakened.com/quran/2/208/default.htm)

 

ছবি:– কদিন আগের সুইডেন। একটি মসজিদে হামলার পর ক্রস লাগিয়ে দিয়েছে বিভ্রান্ত মুসলিম হেটাররা। আর কাফের হেটার মুসলিম, আর মুসলিম হেটার গরু পূজারী, মুসলিম হেটার ইহুদি আর বৌদ্ধদের ছবি দেয়ার দরকার নেই, এদের কর্মকান্ডের ছবি পাওয়া যায় সব জায়গায়, সব দেশে, সারা পৃথিবীতে প্রতিদিনই ।

Please comment on Facebook

Comments are closed.