বন্ধু দু’জনা

পড়ন্ত বিকেল। অনেক মানুষের আনাগোনা। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের হাঁটাচলার জন্য এ ব্যস্ত শহর তেমন কোন আয়োজন করতে পারে নাই। তাই ছোট্ট এই পার্ককে ঘিরে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। অনেকক্ষণ হাহাহাটির পর আরিফ সাহেবের সাথে লেকের কোল ঘেঁষে বসে গল্প করছেন হেলাল সাহেব। অনেক দিন পরে দুই বন্ধুর দেখা। তাই কথা যেন শেষই হচ্ছেনা । কথার পিঠে কথা চলছে । হেলাল সাহেব থাকেন সুদূর কানাডায় । স্ত্রী সন্তান নিয়ে পৃথিবী অন্যতম আধুনিক, সুখী ও সমৃদ্ধ দেশের বাসিন্দা । তাই যখন ই সুযোগ পান নাড়ীর টানে ছুটে আসেন এই গবীর দেশে । বন্ধু- বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন এবং সাধারণ মানুষের সাথে আড্ডা দিয়ে সময় কাটান । ঘুরে বেড়ান রূপের রাণীর এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তে । পুরানো বন্ধুদের কাছে পেলে অনেক দিনের জমে থাকা কথা গুলো ভীড় করে। জমে ওঠে কথার বাজার। আজ কথার বাজারের সওদাগর বাল্য বন্ধু আরিফ।

দুই বন্ধুর জমিয়ে আড্ডা চলছে । তখনই “স্যার ২০টা টাকা দেন” বলে ময়লা কাপড় পরা এক টোকাই আবদারের হাসি হেসে হাত বাড়ালও হেলাল সাহেবের দিকে। হেলাল সাহেব হাসি মুখে তাকালেন শিশুটির দিকে । প্রচণ্ড বিরক্ত আরিফ সাহেব ।
” ২০ টাকা দিয়ে কি করবি?” হেলাল সাহেব জনাতে চাইলেন ।
” একটা চকবার আইসক্রিম খামু” বলল শিশুটি ।
হেলাল সাহেব ম্যানিব্যাগ থেকে ২০ টাকার একটি চকচকে নোট দিলে বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে দৌড়ে চলে গেল শিশুটি।
” এভাবে লাই দিলে এরাতো মাথায় উঠবে” বিরক্ত কণ্ঠে বললেন আরিফ সাহেব।
“গরীব মানুষ। বেচারার একটা আইসক্রিম খাবার শখ” হেলাল সাহেব হাসি মুখে বললেন।
” তুমি তো বিদেশ থাক। এইদেশের অবস্থা কিছুই জান না। ও আইসক্রিম খাইব না। নেশা করব। এরা যে কত ধান্ধাবাজ তাতো তুই জানস না। খাবার, সাহায্য, চিকিৎসার কথা বলে টাকা নিয়ে খারাপ কাজ করে।” আরিফ সাহেব বলল।
” তাই নাকি? চলত দেখে আসি কি করে।” বলে শিশুটির চলে যাওয়া পথ ধরে এগিয়ে গেলেন দুই বন্ধু। দেখলেন রাস্তার অপর পাশের দোকান খেকে শিশুটি দু’প্যাকেট চিপস নিয়ে বেড়িয়ে আসছে ।
” দেখলি কি বলে টাকা নিল আর কি করল” তাচ্ছিল্যে হাসি হেসে বলল আরিফ সাহেব।
হেলাল সাহেব রাস্তা পার হয়ে শিশুটির কাছে গেলেন। মিষ্টি হেসে কাছে ডাকলেন। আরিফ সাহেব এক দৃষ্টিতে রাগত চোখে চেয়ে আছেন শিশুটির দিকে।
“কিরে আইসক্রিম এর কথা বলে টাকা এমন চিপস কিনলি কেন?” হেলাল সাহেব হাসি মুখে জনাতে চাইলেন।
” আয় আমার বন্ধু মাসুম। রাস্তায় আইয়া অর লগে দেখা। একটা আইসক্রীমতো আর দুই জনে খাওয়া যায়না। হের জন্যই চিপস কিনলাম।” শিশুটি পাশের আরেকটি শিশুকে দেখিয়ে হাসি মুখে জবাব দিয়ে বন্ধুর হাত ধরে দৌড়ে চলে গেল।
আরিফ সাহেব অবাক নয়নে চেয়ে দেখছেন দুই টোকাই বন্ধুর রাজ্য জয়ের আনন্দ নিয়ে ছুটে চলা।

Loading


Comments

বন্ধু দু’জনা — 4 Comments

  1. সত্য ঘটনাটা তোলে ধরার জন্য ধন্যবাদ। গরীব মানুষের প্রতি হেলাল সাহেবের মত মানষিকতা হওয়া উচিত আমাদের সবার। তাঁকে জানাই সালাম।

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *