প্যারাডক্সিক্যাল_সাজিদ ( চতুর্থ পর্ব )

কোরআন কি মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নিজের কথা?

সাজিদ একটি মজার গল্প বলতে শুরু করল। গল্প বলার আগে কয়েক বার ঝেড়ে কেশে নিল। সাজিদ যখন কোনাে গল্প বলতে শুরু করে, তখন সে গল্পটির একটি সুন্দর নাম দেয়। এখন সে যে গল্পটি বলতে শুরু করেছে, সেটার নাম নিউটন-আইনস্টাইন সমঝোতা এবং বোকা আইনস্টাইনের বিজ্ঞানী হাবলুর কাছে নতিস্বীকার।‘ এইখানে নিউটন আর আইনস্টাইনকে তাকে চিনিই, কিন্তু বিজ্ঞানী হাবলুটা যে আসলে| কে, সেটা ঠিক বুঝলাম না প্রথমে। না বুঝলেও কিছু করার নেই। গল্প শুরু না হলে সাজিদকে এ নিয়ে প্রশ্ন করাও যাবে না। এটা তার গল্প ক্লাসের প্রাথমিক শর্ত। শুধু যে এটা বুঝিনি তা নয়। আরেকটি ব্যাপারও বুঝলাম না। গল্পের নামে বলা হলাে নিউটন-আইনস্টাইনের সমঝােতা।’ বিজ্ঞানী নিউটনের সাথে তাে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কোনােদিন সাক্ষাতও হলাে না। দুজন সম্পূর্ণ দুই প্রজন্মের। তাদের মধ্যে তাহলে সমঝােতাই-বা কীভাবে হলাে? মনের মধ্যে প্রশ্ন দুটো | উশখুশ শুরু করছিল। না পারছি চেপে রাখতে, না পারছি উগরে দিতে। সাজিদ গল্প বলা শুরু করল । সাজিদের গল্প ক্লাসে উপস্থিত আছি আমি, রাব্বি, রােহান, মােস্তফা আর সবুজ। আমাদের মধ্যে রােহান নাস্তিক টাইপের। পুরােপুরি নাস্তিক নয়, অ্যাগনােস্টিক বলা যেতে পারে । তার ধারণা , মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের কথাগুলােকে ঈশ্বরের বাণী বলে চালিয়ে দিয়েছে। যাহােক, আজ কোরআনের বিশুদ্ধতা প্রমাণের জন্য তারা বসেনি। গল্প শুনতে বসেছে। এই সপ্তাহে সাজিদ গল্প বলবে। এরপরের সপ্তাহে আরেকজন। তারপরের সপ্তাহে আরেকজন, এভাবে। সাজিদ বলতে শুরু করল’আজকে বলব মহাকাশ নিয়ে গল্প । মহাকাশ নিয়ে বলার আগে বলে নিই, ‘তখনও Astronomy তথা জ্যোতির্বিদ্যা পদার্থবিদ্যার আওতাভুক্ত হয়নি। অন্তত মহাকাশ নিয়ে বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক রকম মতপার্থক্য। এই জিনিসটা পদার্থবিদ্যার আওতায় আসার আগে এটা ফিলােসফির বিষয় ছিল। কারও ধারণা ছিল মহাকাশ অসীম, মানে মহাকাশের কোনাে শেষ নেই। কারও ধারণা ছিল মহাকাশ অসীম নয়, মহাকাশ সসীম। এটি একটি নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
‘এ দুয়ের বাইরে গিয়ে আরেক দল মনে করত, মহাকাশ অসীম, তবে স্থির। অর্থাৎ, এর নির্দিষ্ট সীমা নেই ঠিক, কিন্তু এটি স্থির। ‘বিজ্ঞানী নিউটনও তৃতীয় ধারণাটির পক্ষপাতি ছিলেন। তিনি তাঁর বিখ্যাত মহাকর্ষীয় তত্ত্ব আবিষ্কার করে তখন বিজ্ঞানী মহলে ব্যাপক হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু, এত জনপ্রিয় একটি তত্ত্বের মধ্যে খুবই সূক্ষ্ম একটি ঘাপলা রয়ে গিয়েছিল। নিউটনের সূত্রের মধ্যে ঘাপলা ছিল শুনে ম্যানেজমেন্টের ছাত্র রাব্বি তার চোখজোড়া বড় বড় করে বলল-বলিস কী? প্রতিষ্ঠিত সূত্রের মধ্যে ঘাপলা? এরকমও হয় নাকি? সাজিদ বলল-“হ্যাঁ। -কী রকম ঘাপলা?’, রাব্বির পাল্টা প্রশ্ন। সাজিদ বলল- নিউটনের সূত্র মতে, মহাকর্ষের বস্তুগুলাে একে অপরকে নিজেদের দিকে আকর্ষণ করে। কিন্তু ঘাপলা হচ্ছে, যদি এমনটি হয়, তাহলে মহাশূন্যের বস্তুগুলাে নির্দিষ্ট একটি পয়েন্টে এসে মিলিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবার কথা। এমনটি হয় না কেন? সমাজতত্ত্বের ছাত্র সবুজ বলল-‘তাই তাে। নিউটন এর কী ব্যাখ্যা দিয়েছে? সাজিদ বলল-“নিউটনের কাছে এর কোনাে ব্যাখ্যা ছিল না। এই ব্যাপারটা পরে ক্লিয়ার করেছে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন, তার বিখ্যাত ‘Theory Of Relativity দিয়ে। আইনস্টাইন নিউটনের অমীমাংসিত প্রশ্নের সমাধানে বলেছেন, এরকম হতাে, যদি Time আর Space শাশ্বত বা পরম হতাে। কিন্তু Time আর Space কখনােই পরম নয়। এই বিখ্যাত তত্ত্ব দিয়ে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বিজ্ঞানকে পরিচয় করিয়ে দিলেন এক নতুন জগতের সাথে। সেই জগতটির নাম “আপেক্ষিকতার জগত। রাব্বি বলল-“ও আচ্ছা, এজন্যে গল্পের নাম দিয়েছিস ‘নিউটন-আইনস্টাইনের সমঝােতা, তাই না? সাজিদ মুচকি হাসল। আমি একটা সুযােগ পেলাম প্রশ্ন করার। জিজ্ঞেস করলাম-“কিন্তু বিজ্ঞানী হাবলুটা আসলে কে? সাজিদ আমার প্রশ্নের কোনাে উত্তর দিল না। সে আবার গল্প বলতে শুরু করল‘আইনস্টাইনের এই আপেক্ষিকতার সূত্র ধরে, রাশিয়ান পদার্থবিদ আলেকজান্ডার ফ্রিম্যান দাবি করেন যে, এই মহাবিশ্ব স্থির নয়, এটি একটি
ক্রমবর্ধমান মহাবিশ্ব। স্যার আলেকজান্ডার ফ্রিডম্যান সাধারণ ধারণা করেছিলেন বটে, কিন্তু যথেষ্ট ব্যাখ্যার অভাবে তার কথা বিজ্ঞানী মহল তখন। আমলে নেয়নি। এরপর বেলজিয়ামের বিজ্ঞানী Georges Lemaitre সর্বপ্রথম বিজ্ঞানী মহলকে একটি শক্ত শক খাওয়ালেন। তিনি বললেন, এই মহাবিশ্ব একটি ক্ষুদ্র পরমাণু কণা, যাকে Super Atom বলা হয়, এর বিস্ফোরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে, এবং রাশিয়ান বিজ্ঞানী স্যার আলেকজান্ডার ফ্রিম্যানের সাথে সুর মিলিয়ে বললেন, মহাবিশ্ব স্থির নয়, এটি ক্রমাগত সম্প্রসারিত হয়ে চলেছে। বলাবাহুল্য, Georges Lemaitre-এর এসব। দাবিরও ভিত্তি ছিল আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার সেই সূত্র। মােস্তফা জিজ্ঞেস করল-“Georges Lemaitre-এর এটিই কি আমাদের সেই Big Bang Theory? সাজিদ বলল-“হ্যাঁ। এটিই হলাে বিগ ব্যাং থিওরি। কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানিস, বিজ্ঞানী Georges Lemaitre আইনস্টাইনের সূত্রকে ভিত্তি করে এই দাবি করলেও আইনস্টাইন নিজেই Georges Lemaitre-এর এই দাবিকে নাকচ করে দেয়। রাব্বি বলল-বলিস কি? কেন? সাজিদ বলল-কারণ, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে, এটা আইনস্টাইন মেনে নিতে পারেনি। তিনি বললেন, Lemaitre তার ব্যাখ্যাতে ম্যাথমেটিক্যালি প্রচুর ভুল করেছেন। আইনস্টাইন আরও বললেন, মহাবিশ্ব অসীম হলেও এটি সম্প্রসারিত হচ্ছে—এটি ভুল ব্যাখ্যা। ‘সে যা হােক, এই হলাে বিজ্ঞানীদের মধ্যে আগ্রুমেন্ট। কিন্তু তাদের এই ডিবেটে না জড়িয়ে, আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডউইন হাবল বিজ্ঞানী মহলে একটি | বােমা ফাটালেন। আমি বললাম-“ও আচ্ছা, তুই বিজ্ঞানী হাবলকেই হাবলু বলেছিলি বুঝি? সাজিদ আবারও মুচকি হাসল। বলল-“হ্যাঁ। শােন কী হলাে: ১৯২০ সালে বিজ্ঞানী এডউইন হাবল ওরফে বিজ্ঞানী হাবলু একটি টেলিস্কোপ আবিষ্কার করে ফেলল। এটিই রাতারাতি পাল্টে দিল তখনকার জ্যোতির্বিজ্ঞান জগতকে। মাউন্ট উইলসন অবজারভেটরিতে বিজ্ঞানী হাবল তাঁর আবিষ্কৃত টেলিস্কোপ দিয়ে প্রমাণ করে দেখালেন যে, আমাদের মহাবিশ্বের ছায়াপথগুলাে ক্রমাগত একটি অন্যটি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তিনি এটি প্রমাণ করেন Doppler Effect থিওরি দিয়ে। Doppler Effect হলাে: মহাবিশ্বের বস্তুগুলাের তরঙ্গদৈর্ঘ্য যদি আলােকতরঙ্গের উপর ফেলা হয়, তাহলে তরঙ্গ যদি লাল আলাের দিকে সরে আসে, তাহলে বুঝতে হবে ছায়াপথগুলাে একটি অন্যটি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। যদি তা না
করে সেটা নীল আলাের দিকে সরে যায়, তাহলে বুঝতে হবে, ছায়াপথগুলাে একটি অন্যটি থেকে দূরে সরে গিয়ে, বরং কাছাকাছি চলে আসছে। বারবার এই পরীক্ষাটি করে প্রমাণ করা হয় যে, ছায়াপথগুলাে একটি অন্যটির কাছাকাছি নয়, বরং একটি অন্যটি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ১৯৫০ সালে মাউন্ট পিলমারে সে সময়ের সবচেয়ে বড় টেলিস্কোপ বসিয়ে এই ব্যাপারটি আরও নিখুঁতভাবে অবজার্ভ করে বিজ্ঞানীরা। হাবলের এই দাবির সাথে বিজ্ঞানী Georges |Lemaitre-এর দাবি সম্পূর্ণ মিলে যায় এবং সেই পরীক্ষা থেকে বােঝা যায়, মােটামুটি ১০-১৫ বিলিয়ন বছর আগে একটি ক্ষুদ্র কণা থেকেই আজকের মহাবিশ্বের সৃষ্টি। মজার ব্যাপার হলাে যে-আইনস্টাইন বিশ্বাস করতেন, মহাবিশ্ব অসীম হলেও স্থির, সম্প্রসারিত হচ্ছে না, বিজ্ঞানী Georges Lemaitre-এর থিওরিকে ভুল বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, সেই আইনস্টাইনই পরে নিজের ভুল স্বীকার করে নিয়ে বললেন-“বিজ্ঞানী হাবল এবং Georges Lemaitre-এর দাবিই সত্য। মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। “তিনি বিজ্ঞানী Georges Lemaitre-এর কাছে অনুতপ্ত হন এবং নিজের ভুলকে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ভুল দাবি করেন। ‘এখন বিজ্ঞানী মহলে এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হয়েই চলেছে আজ অবধি। এতটুকু বলে সাজিদ থামল। আমরা এক নিশ্বাসে বিজ্ঞানের একটি মজার অধ্যায় থেকে ভ্রমণ করে এলাম। এবার সাজিদ আমাদের মধ্যে যে-অ্যাগনােস্টিক রােহান, যে বিশ্বাস করে, কোরআন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিজের কথা, তার দিকে ফিরল। বলল-‘রােহান, বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে তাের এসব অবশ্যই জানা থাকার কথা, তাই না? রােহান বলল-“হ্যাঁ। জানি। -মাত্র গত শতাব্দীতে বসে আইনস্টাইনও যে মহাবিশ্ব নিয়ে ভুল জানতেন, তা তাে তুই জানিস, তাই না? -“হ্যাঁ। -“বিজ্ঞানী Georges Lemaitre আর বিজ্ঞানী হাবলের আগে এই জিনিস তাবৎ দুনিয়ার কেউই জানতাে না, ঠিক না? -হ্যাঁ।’, রােহানের স্বীকারােক্তি। সাজিদ বলল-“আচ্ছা রােহান, আমি যদি বলি, তাদের অনেক অনেক অনেক আগে, তাদের প্রায় সাড়ে ১৩০০ বছর আগে একজন ব্যক্তি এসব কথা বলেছে, তুই বিলিভ করবি?

রােহান চিঙ্কার করে বলল-‘Impossible, Quite impossible.’ সাজিদ তখন বলল-‘কোনাে রােহান, কোরআনের সূরা আয-যারিয়াতের ৪৭ নাম্বার আয়াতে আছে ‘আমি নিজ হাতে মহাকাশকে সৃষ্টি করেছি এবং এটাকে সম্প্রসারিত করে চলেছি। ‘এখানে আয়াতের শেষে মহাকাশের সম্প্রসারণ বোেঝাতে যে-মুসিউন’ শব্দ আছে, সেটি একটি সক্রিয় বিশেষণ। চলমান ক্রিয়া নির্দেশক, যা নির্দেশ করে কোনাে কাজ অতীতকাল থেকে শুরু হয়ে বর্তমান অবধি চলছে এবং ভবিষ্যতেও তা হয়ে চলবে। অর্থাৎ, আল্লাহ বলছেন, তিনি মহাবিশ্বকে (এখানে মহাকাশ = মহাবিশ্ব) নিজের হাতে সৃষ্টি করেছেন, এবং সেটাকে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করেই চলেছেন। ঠিক এই কথাগুলােই বিজ্ঞানী Georges Lemaitre এবং বিজ্ঞানী হাবল আমাদের গত শতাব্দীতে জানিয়েছেন। বল তাে, আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে, মরুভূমিতে উট-বকরি চড়ানাে এক বালক এমন একটি কথা কীভাবে বলল; যা আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে মাত্র ১৯২৯ সালে? এই কথা না বাইবেলে ছিল না ইঞ্জিলে; না ছিল কোনাে গ্রিক পুরাণে, না কোনাে মিথােলজিতে। মহাকাশের এমন। একটি রহস্যময় ব্যাপার মক্কার একজন নিরক্ষর, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবিহীন লােক মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোথায় পেলেন? বল তাে? অন্যান্য সময় হলে রােহান বলত, মুহাম্মদ বাইবেল থেকে চুরি করেছে, নয়তাে। বলত কোনাে গ্রিক পুরাণ থেকে মেরে দিয়েছে, কিন্তু সাজিদের বিস্তারিত গল্প শােনার পর তার এই দাবি যে ধােপে টিকবে না, সে সেটা বুঝতে পারল। সাজিদ বলল-“এটা কি নিরক্ষর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দ্বারা। সম্ভব যদি কোনাে ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ তাতে না থাকে? রােহান মাথা নিচু করে বলল-নাহ। সাজিদ বলল-“তাহলে প্রমাণ হলাে, কোরআন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর লেখা নয়, এটি একটি ঐশ্বরিক কিতাব, যা নাজিল হয়েছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর। রােহান কিছু বলল না। তাকে কিছুটা চিন্তিত দেখাল। সম্ভবত সে বুঝতে পেরেছে যে, চোরের দশদিন, গেরস্থের একদিন।
===============================================================
রেফারেল :
• সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত ৪৭ • A word for word meaning of holy Quran by Mohammad Mohar Ali • Wikipedia


স্রষ্টা যদি দয়ালুই হবেন তাহলে জাহান্নাম কেন?

-আচ্ছা সাজিদ, সৃষ্টিকর্তা কি দয়ালু নাকি পাষাণ?’, দেবজিঙ্গা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সাজিদকে জিজ্ঞেস করল। আমার পাশে বসা ছিল মিজবাহ। সে বলল-“অদ্ভুত তাে! সৃষ্টিকর্তা পাষাণ হবেন কেন? উনি হলেন রহমানুর রহিম। পরম দয়ালু। দেবজিত্না মিজবাহর দিকে তাকালেন। এরপরে বললেন-“মিজবাহ, সৃষ্টিকর্তা যদি পরম দয়ালুই হবেন, তাহলে তিনি তার সৃষ্টিকে শাস্তি দেওয়ার জন্য কেন নরক, আই মিন জাহান্নামের মতাে জিনিস বানিয়ে রেখেছেন? মিজবাহর চটপট উত্তর-‘এটা কোনাে প্রশ্ন হলাে দাদা? কেউ যদি সৃষ্টিকর্তার কমান্ড ফলাে না করে, তাহলে তাকে যদি শাস্তি দেওয়া হয়, সেটা কোনােভাবেই সৃষ্টিকর্তাকে পাষাণ প্রমাণ করে না। মিজবাহর এই উত্তর দেবজিঙ্গাকে সন্তুষ্ট করেছে বলে মনে হচ্ছে না। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করতে যাবেন, ঠিক এই সময় সাজিদ বলে উঠল, “দাদা, আজকের পত্রিকা পড়েছ? দেবজিন্দা বললেন, না। কেন? -একটা নিউজ আছে। -কী নিউজঃ সাজিদ দেবজিৎদার দিকে পত্রিকাটা এগিয়ে দিল। পত্রিকার একদম প্রথম পাতায় বড় বড় অক্ষরে শিরােনাম-‘সােনাগাজীতে ৯ বছরের বালিকাকে ৫ জন মিলে গ্যাংরেপ। বিস্তারিত অংশে যা লিখা আছে তার সারমর্ম এরকম‘নােয়াখালীর সােনাগাজীতে ৯ বছরের এক বালিকাকে স্কুল থেকে ফেরার পথে ৫ জন যুবক মিলে ধর্ষণ করেছে। ধর্ষণের পর তারা মেয়েটিকে আহত অবস্থায় ধান ক্ষেতে ফেলে যায়। মেয়েটিকে খুব গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। শুধুই ধর্ষণ নয়, মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন অংশ ব্লেড দিয়ে কাটাও হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। মেয়েটি এখন পুরােটাই কোমার মধ্যে আছে। ধর্ষণকারীদের গ্রামের লােকজন আটক করে পুলিশের হাতে সােপর্দ করেছে। জানা গেছে,
মেয়ের বাবা এলাকার মেম্বার। মেম্বারের উপর সালিশ বিষয়ক কোনাে এক ব্যাপারে ক্ষোভ থেকেই উনার মেয়ের উপরে এই নির্যাতন চালায় ওরা।’ ঘটনাটা গতকালের। পত্রিকায় ছােট্ট মেয়েটির একটি ছবিও দেওয়া আছে। কি ফুটফুটে চেহারা! দেবজিত্সা নরম মনের মানুষ। এরকম একটি খবর পড়ার পরে উনার মনটা মুহূর্তেই বিষন্নতায় ছেয়ে গেল। দাঁতে দাঁত খিচে অনেকক্ষণ ঐ ৫ জন। ধর্ষণকারীদের গালাগাল দিলেন। সাজিদ পত্রিকাটি ব্যাগে রাখতে রাখতে বলল-“দাদা, ধরাে, এই ৫ জনকে কোটে তােলা হলাে আর তুমি হলে বিচারক। এই ৫ জন যে আসল অপরাধী তার সমস্ত রকম তথ্যপ্রমাণ তােমার কাছে পেশ করা হয়েছে। এখন একজন নাবালিকার উপরে এরকম নির্মমভাবে নির্যাতন করার জন্য তুমি কি তাদের শাস্তি দেবে? দেবজিৎদা দাঁতমুখ খিচে বললেন-“শাস্তি দিব মানে? শূয়ােরের বাচ্চাগুলােকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেবাে। সাজিদ মুচকি হাসল। বলল-“সত্যিই তাই? -“হ্যাঁ, একদম। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এদের মাংস শেয়াল-কুকুর দিয়ে খাওয়াতে পারলেই আমার গা জুড়ােবে। দেবজিৎঙ্গার চোখমুখ লালবর্ণ ধারণ করেছে। উনাকে এরকম অবস্থায় আগে কখনাে দেখিনি। সাজিদ এক গ্লাস পানি উনার দিকে বাড়িয়ে দিল। পানিটা ঢকঢক করে পান করে উনি শার্টের হাতা দিয়ে মুখ মুছলেন। উনি তখনও প্রচণ্ড রেগে আছেন বােঝা যাচ্ছে। সাজিদ বলল-“আমি যে-দেবজিৎ দাদাকে চিনি, সে কিন্তু এতটা হিংস্র না। আমি তাকে জানতাম দয়ালু, ক্ষমাশীল, মহানুভব হিসেবে। সে যে কাউকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়ার কথাও ভাবতে পারে, সেটাই বিরাট আশ্চর্য লাগছে।’ দেবজিন্দা সাজিদের দিকে তাকালেন। তাকানােতে একটা তাচ্ছিল্যতা আছে। বললেন, কোনাে সাজিদ, আমি দয়ালু, মহানুভব ঠিক আছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমি কোনাে অন্যায় দেখে চুপ করে থাকব। আমার ক্যারেক্টারের ক্রাইটেরিয়াতে যেমন দয়ালু, মহানুভবতা, উদারতা-এসব আছে, ঠিক তেমনি আমি ন্যায়বিচারকও। অন্যায়ের কোনাে প্রশ্রয় আমার কাছে নেই। -“বিচারক হিসেবে তুমি চাইলেই ঐ ৫ জন অপরাধীকে ক্ষমা করে দিতেই পার।’, সাজিদ বলল।
-“হ্যাঁ পারি। কিন্তু তাহলে যে ঐ নিস্পাপ মেয়েটার সাথেই অন্যায় করা হবে। অবিচার করা হবে। আমি সেটা পারব না। -তাহলে কি ধরে নেব যে, তুমি পাষাণ? কঠিন হৃদয়ের? তােমার মাঝে কোনাে ভালােবাসা নেই, মমতা নেই? দেবজিত্সা উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন, আশ্চর্য! তাের বুদ্ধিসুদ্ধি কি সব লােপ পেয়েছে রে সাজিদ? ৫ জন লােক ঘােরতর অন্যায় করেছে। তাদের অন্যায়ের জন্য আমি তাদের শাস্তি দিব এটাই স্বাভাবিক। একজন বিচারক হিসেবে এখানে ন্যায়ের পক্ষ নেওয়াই আমার ধর্ম, আমার প্রেম, আমার ভালােবাসা। এটা কি প্রমাণ করে যে, আমি পাষাণ? সাজিদ আবার মুচকি হাসল। বলল-“দাদা, তােমাকে উত্তেজিত করার জন্য দুঃখিত। তুমি না আসলেই খুব ভালাে।। সৃষ্টিকর্তা যেমন পরম দয়ালু, ক্ষমাশীল, ঠিক তেমনি তিনি আবার একজন ন্যায়বিচারকও। তিনি কারও সাথে বিন্দু পরিমাণও অবিচার হতে দেন না। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট রুলস তৈরি করে দিয়েছেন। এখন কিছু লােক এই রুলস ফলাে করে যদি তার দেওয়া বিধান মতাে জীবনযাপন করে, তাদের তিনি পুরস্কার হিসেবে জান্নাত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এখন একদল লােক নামাজ-কালাম পড়ে, মিথ্যে কথা বলে না, লােক ঠকায় না, চুরি-রাহাজানি করে না, সুদ-ঘুষ খায় না, মানুষ খুন করে না-মােদ্দাকথা, সকল প্রকার অন্যায় থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে কেবল স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ এবং তাঁর প্রতিশ্রুত জান্নাতের জন্য। ‘অপরদিকে আরেকদল লােক এসবের থােড়াই কেয়ার করে যদি ভােগবিলাসে মেতে উঠে, সকল অন্যায় কাজ করে, স্রষ্টার অবাধ্য হয়, তাহলে স্রষ্টা যদি দয়াপরবশ হয়ে তাদেরকে আগের দলের সাথে জান্নাতে পাঠিয়ে দেয়, তাহলে এটা কি ন্যায় হলাে? প্রথম দলকে তাে ঠকানাে হলােই, সাথে কি পরের দলের সকল অন্যায়কে মেনে নেওয়া হলাে না? প্রশ্রয় দেওয়া হলাে না? তুমি যেভাবে বিচারকের আসনে বসে ক্ষমতা থাকার পরও ঐ ৫ জনকে ক্ষমা করে দিতে পার।
কেবল ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য, স্রষ্টাও কি সেটা পারেন না? দেবজিত্সা কিছু বললেন না। সাজিদ আবার বলল-“এটা হলাে স্রষ্টার ক্রাইটেরিয়া । তিনি যেমন পরম দয়ালু, ঠিক সেরকম ন্যায় বিচারকও। ‘আরেকটু পরিষ্কার করি। ধরাে, একজন বাবার দুটি সন্তান। দুই সন্তানের প্রথমজন দ্বিতীয়জনকে বিনা কারণেই ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিল। যাকে ধাক্কা দিল সে মাটিতে পড়ে খুব ব্যথা পেল এবং চিৎকার করে কেঁদে উঠল।
‘এখন বাবা এসে যদি প্রথমজনকে তার অন্যায়ের জন্য কোনাে শাস্তি না দেয়, তাহলে সেটা তার দ্বিতীয় সন্তান, যে নিস্পাপ, তার প্রতি কি অন্যায় করা হবে না? -হু’, দেবজিৎদা বললেন। -স্রষ্টা এরকম নন। এজন্যই তিনি জান্নাত আর জাহান্নাম দুটোই তৈরি করে রেখেছেন। আমাদের কর্মফলই নির্ধারণ করে দেবে আমাদের গন্তব্যস্থল। এতে কোনাে দুই নাম্বারি হবে না। কারও সাথে চুল পরিমাণও অন্যায় হবে না।’ দেবজিত্সা বললেন-“তা বুঝলাম। কিন্তু তিনি যেহেতু স্রষ্টা, তিনি আমাদের চেয়ে হাজার গুন দয়ালু হবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই তিনিই আবার আমাদের কম পরিচালনা করছেন, আবার তিনিই আমাদের ধরে ধরে জাহান্নামে পাঠাচ্ছেন। ব্যাপারটা কেমন না সাজিদ? সাজিদ বলল-“দাদা, স্রষ্টা আমাদের একটা স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। সাথে পাঠিয়েছেন একটা গাইডবুক। এখন এই স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি প্রয়ােগ করেই আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, আমরা কি তাঁর দেখানাে পথে চলব, কি চলব না। যদি চলি, আমরা জান্নাতে যাব। যদি না চলি, আমরা জাহান্নামে যাব। মােদ্দাকথা, আমরা কোথায় যাব তা আমরাই নির্ধারণ করি আমাদের কর্মের মাধ্যমে। তবে দাদা, ব্যাপার হলাে, আমাদের কর্মের ব্যাপারে উনি ওয়াকিবহাল। কারণ উনি সর্বজ্ঞাত। তিনি আলিমুল গায়েব। তাই, তিনি আগ থেকেই জানেন বলেই তা আমাদের ভাগ্যলিপি হিসেবে লিখে রেখেছেন। দেবজিত্না হাসলেন। বললেন, “ও আচ্ছা। তার মানে তুই বলতে চাচ্ছিস যে, কিছু লােক স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি প্রয়ােগ করে জাহান্নাম বেছে নিচ্ছে? -হ্যাঁ। -“উদ্ভট না কথাটা? -একদম না। -“লজিক্যালি বল। -আচ্ছা। ধরাে, তুমি গভীর সাগরে জাহাজ থেকে পানিতে পড়ে গেলে। পানিতে তুমি হাঁসফাঁস করছ। একটু পরেই অতলে তলিয়ে যাবে। এখন ধরাে, তােমাকে উদ্ধার করার জন্য আমি একটি লাইফ জ্যাকেট তােমার দিকে বাড়িয়ে দিলাম। -হু, তাে? -“সেই মুহূর্তে তােমার কাছে দুটি অপশন। হয় লাইফ জ্যাকেটটি নিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাবে নয়তাে, আমাকে ডিনাই করবে আর অতল সাগরে তলিয়ে যাবে এবং মৃত্যুবরণ করবে।
‘খেয়াল করাে, আমি কিন্তু বাঁচার উপকরণ, অর্থাৎ লাইফ জ্যাকেট তােমার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছি। এখন তুমি তােমার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি প্রয়োেগ করে জ্যাকেটটি গ্রহণ করে প্রাণে বাঁচবে নাকি ডিনাই করে মৃত্যুকে বরণ করবে সেটা সম্পূর্ণ তােমার ব্যাপার। স্রষ্টাও জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপকরণ আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন। সাথে আমাদের ফ্রি উইলও দিয়ে দিয়েছেন। এখন, আমরা তা আকড়ে ধরে বাঁচব, নাকি উপেক্ষা করে মরব তা আমাদের উপর নির্ভর করছে। দেবজিৎদা কিছু বললেন না। স্রষ্টা দয়ালু হয়েও কেন জাহান্নাম তৈরি করেছেন তার উত্তর তিনি মনে হয় পেয়ে গেছেন। চায়ের বিল পরিশােধ করে এসে দেবজিৎদা বললেন-স্রষ্টা যেহেতু আমাদের চেয়ে অনেক বেশি দয়ালু, তিনি কিন্তু চাইলেই পারেন ক্ষমা করে দিতে। সাজিদ বলল-স্রষ্টা শুধু তােমার চেয়ে অনেক বেশি দয়ালুই নন, তােমার চেয়ে অনেক বেশি ন্যায়বিচারকও বটে। সুতরাং…’ সাজিদকে আর কিছুই বলতে দিলেন না দেবজিত্না। মনমরা করে বললেন-বুঝেছি।। সাজিদ হাসল। দেবজিত্সার এই চাহনি দেখে আমাদেরও হাসি পেল। আমরাও হাসলাম। আমাদের হাসতে দেখে তিনিও আমাদের সাথে হাসা শুরু করলেন। হা হা হা।


কোরআন মতে পৃথিবী কি সমতল না গােলাকার?

খুবই সিরিয়াস একটি ব্যাপার নিয়ে আলােচনা হচ্ছে। ঠিক আলােচনা নয়, আদতে হাসাহাসি হচ্ছে। যারা হাসাহাসি করছে তাদের সবাই খুবই স্মার্ট। শুধু স্মার্ট নয়, ওভার স্মার্ট বলা যায়। এরা কথায় কথায় বলে, আমরা বিজ্ঞান ছাড়া কিছুই বুঝি না। এরা উঠতেবসতে, হাঁটতে-চলতে সবকিছুতেই বিজ্ঞানের প্রমাণ খোঁজে। কেউ যখন তাদের বলে বিজ্ঞানের এটা এরকম নয়, ওরকম, তখন তারা তেড়েমেড়ে এসে বলবে-বাপু, তুমি কি বিজ্ঞানী? বিজ্ঞান নিয়া পড়াশােনা আছে? কয় ক্লাস বিজ্ঞান পড়েছে যে বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলতে আসছ? যাও, আগে পড়াে, পরে লেকচার দিবা।’ আবার এই তারাই অনলাইনে কিছু ছাইপাশ পড়া মুক্তমনা তথা নাস্তিকদের লেখা পড়ে সেটাকে এত পরিমাণ বিশ্বাস করে যে, নিজের বাবা-মাকেও এরা এত বিশ্বাস করে না। এসব নাস্তিকের অধিকাংশই এমন, যারা আরবিতে কোরআন পড়তেই জানে।
। কিছু ইংরেজি অনুবাদ এবং বাংলা অনুবাদের খিস্তি উড়িয়ে বলে-কোরআনের এটা ভুল , সেটা ভুল। কোরআনের এইটা অবৈজ্ঞানিক, ঐটা অবৈজ্ঞানিক। লেখা পড়ে মনে হবে, এরা একেকজন বড় বড় মুফতি ছিল এক সময়। কোরআনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এতসব ভুলভ্রান্তি দেখে তারা আজকে নাস্তিক হয়ে গেছে। এরা আরবিতে কোরআন পড়া তাে দূরে থাক, অধিকাংশই ২৯টি আরবি হরফ ঠিকঠাক মতাে বলতেও পারবে না।। এ মুহূর্তে হাসাহাসি হচ্ছে কোরআনে পৃথিবীর আকার নিয়ে। হাসাহাসি করছে বিপুল, সৌরভ আর নিপুণদা। বিপুলকে আগে জুমার নামাজে দেখতাম। এখন সে নাকি ধর্মকর্ম করছে না। বিপ্লব নিয়ে আছে। কমিউনিজম বিপ্লব। বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে ছেলেদের মধ্যে এমনিতেই রক্ত গরম, রক্ত গরম টাইপ একটা ভাব থাকে। এই ভাবের সাথে যখন দুচারখানা মার্ক্স আর লেলিনের কিতাব যুক্ত হয়, তখন তাে কথাই নেই। স্বপ্নের মধ্যেও তখন হেলাল হাফিজের পঙক্তি ‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় ‘, জপতে থাকে।
বিপুলেরও একই অবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কি না কি পড়েছে, তাতেই এখন ঈশ্বরকে অলীক কল্পনা মনে করা শুরু করেছে। অবশ্য, এর পেছনে মােক্ষম ভূমিকা পালন করেছে নিপুণদা। তিনি কট্টর বাম। আমাকেও কয়েকবার আরজ আলি মাতুব্বরের বই পড়তে দিয়েছিল। আমি পড়ে হাসিমুখে ফেরত দিয়েছিলাম। আমার কাছ থেকে বই ফেরত নেওয়ার সময় জিজ্ঞেস করলেন-“কী? কী বুঝলে ভাইয়া? আমি ফিক করে হেসে বললাম-বুঝলাম যে, লােকটার মেন্ট্যাল ট্রিটমেন্ট দরকার ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তিনি বিনা চিকিৎসায় গত হয়েছেন। আমার মুখ থেকে এরকম কথা শুনে নিপুণদা খুব চমকে গেলেন। এখন বুঝতে পারছি তিনিই বিপুল আর সৌরভের ব্রেইন ওয়াশ করেছেন। এরা এখন যা পড়ে হাসাহাসি করছে, তা একজন ব্লগারের লেখা। ব্লগারটা হিন্দু পরিবারের। হিন্দু পরিবারের হলেও উনি নিজের ধর্মত্যাগ করে এক সময় নাস্তিকতা চর্চা শুরু করেন। পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার। এই ব্লগার লিখেছেন, মুহাম্মদের আল্লা কি জানত না যে, পৃথিবী গােলাকার, সমতল নয়? তাহলে মুহাম্মদের আল্লা পৃথিবীকে সমতল বলল কেন? আসলে, কোরআন কোনাে ইশ্বরের বাণীটানী না। এটা স্রেফ মুহাম্মদের নিজের বানানাে। ১৪০০ বছর আগে মানুষ বিশ্বাস করত যে পৃথিবী হলাে সমতল। মুহাম্মদ তখন যা বিশ্বাস করত, তাই লিখে দিছে আর বলে দিছে এইটা আসছে আল্লার কাছ থেইকা। হা হা হা। বােকা মুমিনগুলা এইটারে আল্লার বাণী মনে কইরা বাকুম বাকুম করতাছে। প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করল এই আয়াতগুলাে-“তিনি (আল্লাহ) তােমাদের জন্য ভূমিকে করেছেন বিছানাস্বরূপ।’ সূরা নূহ : ১৯ ‘And Allah has made the earth for you as a carpet (spread out). তিনিই তােমাদের জন্য জমিনকে করেছেন বিছানাস্বরূপ। আর তাতে তােমাদের জন্য করেছেন চলার পথ। সূরা ত্বহা : ৫৩ ‘Has enabled you to go about therein by roads (and channels). অতঃপর, তিনি তার জমিনকে বিস্তীর্ণ করেছেন। সূরা আন-নাজিয়াত ৩০ আমি আর সাজিদ পাশাপাশি বসে আছি। আমার তাে গা জ্বলে যাচ্ছে এদের বিদ্রুপ-ঠাট্টা দেখে। সাজিদ একদম শান্তভাবে বসে বসে এসব শুনছে। কী করে যে পারছে কে জানে। নিপুণদা বলল-“কী সাজিদ মিয়া, তােমার কি কিছু বলার আছে এই ব্যাপারে?’
সাজিদ হাসল; সচরাচর যেমন হাসে। এরপর বলল-দাদা, তােমরা বলে যাও। আমি না হয় আজ শুনেই যাই। -না না, তােমাকেও বলতে হবে। বলতে হবে তুমি কি বিশ্বাস করাে, পৃথিবীটা কার্পেটের মতাে সমতল? নাকি বিশ্বাস করাে পৃথিবীটা গােলাকার, নিপুণদা বলল। সাজিদ বলল-“আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীটা গােলাকার। -হা হা হা। তাহলে তাে কোরআনের সাথে বিপরীত হয়ে গেল। কোরআন বলছে পৃথিবীকে কার্পেটের মতাে সমতল করে বিছানাে হয়েছে। ডু ইউ বিলিভ ইট? সাজিদ কিছু বলল না। একটু ঝেড়ে কেশে নিল। এরপর বলল-“দাদা, অনেকক্ষণ ধরেই খেয়াল করছি তােমরা বলছে ‘সমতল সমতল। আচ্ছা, কোরআনের ঠিক কোনাে জায়গায় বলা হয়েছে পৃথিবীটা সমতল? নিপুণদা বলল-“আরে, কোরআন বলেছে পৃথিবীকে বিছানার মতাে বিছানাে হয়েছে। এর মানে কি এই নয় যে, পৃথিবীটাকে সমতল বলা হয়েছে? সাজিদ বলল-“দাদা, প্রথমেই বলে রাখি, অনুবাদ দিয়ে কোরআনকে জাস্টিফাই করাটা ভুল। দেখাে, সমতল শব্দের আরবি প্রতিশব্দ হলাে সাবি, আল মুস্তাবি’ এসব। কোরআন যদি সত্যিই পৃথিবীকে সমতল বলত, তাহলে কোরআন নিশ্চয় এই শব্দগুলাে ব্যবহার করত। কিন্তু কোরআন এখানে এসব শব্দ ব্যবহার করেনি। কোরআন এখানে ব্যবহার করেছে ফারাশ’, বাসাত’, ‘দাহাহা, এই জাতীয় শব্দ যার কোনােটার অর্থই সমতল নয়। এগুলাের অর্থ কার্পেট’ বা ‘বিছানার মতাে করে বিছানাে’; Spread Out. এগুলাে দিয়ে কোনােভাবেই বােঝায় না যে পৃথিবী সমতল। নিপুণদা অনেকটাই বিদ্রুপ করে বলল-“তাহলে কী বােঝায় এগুলাে দিয়ে স্যার সাজিদ? সাজিদ বলল-Let me finish… ‘আমরা কোরআনের সেই আয়াতে চলে যাই, যেটা নিয়ে তােমাদের আপত্তি। যেটাতে নাকি বলা হচ্ছে পৃথিবী সমতল। আয়াতটি হলাে: তিনিই তােমাদের জন্য জমিনকে করেছেন বিছানাস্বরূপ। আর তাতে তােমাদের জন্য করেছেন চলার পথ। “দেখাে দাদা, আল্লাহ বলছেন, তিনি আমাদের জন্য জমিনকে করেছেন। বিছানাস্বরূপ, কার্পেটের মতাে করে। আচ্ছা দাদা, বিছানা বলতে আমরা কী বুঝি? আমরা বুঝি, বিছানা এমন একটি জিনিস, যা নরম, আরামদায়ক। যাতে বিশ্রাম নেওয়া যায়। যদি এটাকে রূপক হিসেবে ধরি, তাহলে এটা এমন কিছু যাতে স্বচ্ছন্দে বেঁচে থাকা যায়, চলাফেরা করা যায়। আজকের বিজ্ঞানও আমাদের সেটা বলছে। বিজ্ঞান আমাদের বলছে, আমাদের পৃথিবীর ভূত্বক মােট
৭টি স্তরে বিভক্ত। এই স্তরগুলাের মধ্যে সবচেয়ে উপরের স্তরের নাম হলাে ক্রাস্ট। এই স্তরের পুরুত্ব ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩০ কিলােমিটার গভীর পর্যন্ত। এটিই সেই স্তর, যে-স্তরে আমরা বসবাস করি, চলাফেরা করি। এরপরে আছে Mentle। এই স্তরের পুরুত্ব ২৯০০ কিলােমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এই স্তরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হলাে ৯০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় মানুষ তাে দূরের কথা, একটি ক্ষদ জীবও মুহুর্তে ভস্ম হয়ে যাবে। চিন্তা করাে তাে, পৃথিবীর যে স্তরে আমরা বাস করছি, হাঁটছি, চলছি, ঘুরছি-ফিরছি, তার থেকে মাত্র ৩০ কিলােমিটার গভীরে এই ভয়াল স্তর অবস্থিত। এটা তাে মাত্র দ্বিতীয় স্তরের কথা। এরপরের স্তরের নাম হলাে Outer Core। এর পুরুত্ব হলাে ২৮৯০ কিলােমিটার এবং এই স্তরের তাপমাত্রা হলাে ৩৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চিন্তা করাে, পৃথিবীর আভ্যন্তরীণ এইসব স্তরে ঠিক কী ঘটে? ‘এর পরের স্তরের নাম হলাে Inner Core। এটা তাে আরও ভয়াবহ। এভাবে যত নিচে নামা হয়, স্তরগুলাে ততােই ভয়ানক। আমরা যে আগ্নেয়গিরির লাভা দেখি, এটা এসব স্তরের ছােট্ট একটা বিস্ফোরণ মাত্র। কিন্তু আমরা যে-স্তরে থাকি, সেই Crust স্তরের তাপমাত্রা অন্য ৬ স্তরের তাপমাত্রার তুলনায় মাত্র ১%, যা আমাদের বসবাসের উপযােগী। এখন, এই দিকটার দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ যদি বলেন, “আমি তােমাদের জন্য ভূমিকে করেছি বিছানাস্বরূপ, তাতে কি বােঝায় যে আল্লাহ এটা দ্বারা পৃথিবীর শেইপ বুঝিয়েছেন? একদম না। এটা দিয়ে যে আল্লাহ্ ভূত্বকের ঐ স্তরের কথাই মিন করেছেন, যা আমাদের বসবাসের উপযােগী, তা আয়াতের পরের অংশ থেকেই বােঝা যায়। আয়াতের পরের অংশেই আছে ‘আর, তাতে তােমাদের জন্য করেছেন চলার পথ। ‘এটা তাে একদম পরিষ্কার যে, এটা পৃথিবীর আকার নয়, ভূমির ব্যাপারে বলা হয়েছে এবং ভূমির সেই অংশের ব্যাপারে, যে অংশে আমরা, মানুষেরা বসবাস করছি। যেটা আমাদের বসবাসের জন্য উপযােগী। তাহলে এটা দিয়ে পৃথিবীকে সমতল বানিয়ে দেওয়া যায় কী করে? স্রেফ মনগড়া ব্যাখ্যা। নিপুণদা চুপ করে আছে। বিপুল বলে উঠল-“আচ্ছা সাজিদ ভাই, আপনার কথা মানলাম যে, এখানে পৃথিবীর আকার নয়, ভূমির স্তরের কথা বলা হয়েছে আর সেটাকে বিছানার সাথে উপমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনি কি কোরআনের এমন একটি আয়াত দেখাতে পারবেন যেখানে বলা হচ্ছে পৃথিবী গােল? সমতল নয়? বিপুলের কথা শুনে সাজিদ হেসে উঠল। বলল-“বিপুল, তার আগে তুমি বলাে তত, কোরআন কী মানুষকে পৃথিবীর শেইপ কী রকম, পদার্থবিদ্যায় কী কী। ঘাটে, রসায়নে কোন যৌগের সাথে কোন যৌগের বিক্রিয়া ঘটে এসব শেখানাের জন্য নাজিল হয়েছে? -না।’, বিপুল বলল।
-তাহলে তুমি কি করে এক্সপেক্ট করাে যে, কোরআন পৃথিবীর আকার, আয়তন নিয়ে বলবে? এবার বিপুলও চুপ। কিন্তু সাজিদ আর চুপ হলাে না। সে বলে যেতে লাগল-ঠিক আছে বিপুল। তুমি যখন আশা করেছ, তখন আমি প্রমাণ করে দেখাতে পারি যে, কোরআন পৃথিবীর আকার নিয়ে বলেছে এবং সেটা গােলাকার। এবার আমি, নিপুণদা, বিপুল আর সৌরভ চোখ বড় বড় করে সাজিদের দিকে তাকালাম। বলে কি ব্যাটা! কোরআন পৃথিবীকে গােলাকার যদি বলেই থাকে, তাহলে এতক্ষণ এত কাহিনি বলার কি কোনাে দরকার ছিল? নিপুণদা হাে হাে করে হেসে উঠল। বলল-“এবার কি নতুন তত্ত্ব শােনানাে হবে নাকি? হা হা হা। নিপুণদার সাথে সাথে বিপুল আর সৌরভও হেসে উঠল। তাদের সাথে সাজিদও হাসছে। আমার তখন সাজিদের উপর খুব রাগ হচ্ছে। সাজিদ বলল-“নিপুণদা, একটু মনােযােগ দিয়ে শুনবে প্লিজ। কোরআন সরাসরি পৃথিবীকে গােলাকার বলেনি। বলার দরকারও ছিল না। কারণ কোরআন জিওগ্রাফির কোনাে বই নয় যে, এখানে পৃথিবীর আকার, আকৃতি নিয়ে বলাই লাগবে। তবে, কোরআন কিছু ইঙ্গিত দিয়েছে। জ্ঞানীদের উচিত তা বুঝে নেওয়া। নিপুণদা বলল-“তাই বুঝি? তা বুঝিয়ে দেন দেখি মহাজ্ঞানী সাজিদ ভাই। হা হা হা। সাজিদ বলল’প্রথমত: সূরা আর্য্য-যুমারের ৫ নং আয়াত। বলা হচ্ছে, তিনি রাত দ্বারা দিনকে আচ্ছাদিত করেন এবং রাতকে আচ্ছাদিত করেন দিন দ্বারা। ‘এই আয়াতে রাত দিন দ্বারা এবং দিন রাত দ্বারা আচ্ছাদিত হওয়া বােঝাতে যে আরবি শব্দ ব্যবহার হয়েছে তা হলাে “S”। এই শব্দটির একদম সঠিক অর্থ হলাে প্যাঁচানাে/জড়ানাে। ক্লাসিক্যাল আরবি ডিকশনারিতে এর অর্থের ব্যাখ্যাতে বলা হয়েছে এটি ঠিক এমন কোনাে পাগড়ির মধ্যে একটি কাপড় অন্য একটি কাপড়ের মধ্যে যেভাবে প্যাঁচিয়ে ঢােকানাে হয়। একটি অন্যটির মধ্যে প্যাঁচিয়ে ঢুকে যাচ্ছে। জীবনে কখনাে পাগড়ি দেখলে বা পাগড়ি বেঁধে থাকলে ব্যাপারটা ভালাে বােঝার কথা। আল্লাহ্ বলেছেন তিনি রাত দ্বারা দিনকে এবং দিন দ্বারা রাতকে ঠিক সেভাবেই আচ্ছাদিত করেন। এখন রাতকে দিন দ্বারা এবং দিনকে রাত দ্বারা এভাবে আচ্ছাদিত করা তখনই সম্ভব, যখন পৃথিবীর আকার গােল হবে। ‘আমরা দেখি কীভাবে দিন-রাত্রি হয়। প্রথমে ভাের, এরপর আস্তে আস্তে দুপুর, এরপর বিকেল, এরপর গােধূলি, এরপর সন্ধ্যা, এরপর একসময় দিন রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে যায় যেভাবে আস্তে আস্তে পাগড়ির একটা অংশ অন্য অংশের
মধ্যে ঢুকে পড়ে। যদি পৃথিবী সমতল হতাে, একটা লম্বা কাঠ বা তার মতাে তাহলে কি এভাবে দিনরাত্রি হতাে? না। তখন এই দিন হতাে, আবার চোখের পলকে এই রাত নেমে পড়ত। তাহলে সূরা যুমারের এই আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, আল্লাহ রাতকে দিনে এবং দিনকে রাতে আচ্ছাদিত করার যেপ্রক্রিয়া বলেছেন সেটা তখনই সম্ভব, যখন পৃথিবী গােলাকার হবে। তাহলে কোরআন ইন্ডাইরেক্টলি ইঙ্গিত করছে যে পৃথিবী গােলাকার। ‘দ্বিতীয়ত: সূরা আর রহমানের ১৭ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ্ বলছেন-“তিনিই দুই অস্তাচল আর দুই উদয়াচলের মালিক। ‘এখানে অস্তাচল আর উদয়াচল বলতে সূর্যের উদয়-অস্তের কথা বলা হচ্ছে। আমরা জানি, পৃথিবীতে একদিনে দুবার সূর্যোদয় আর দুবার সূর্যাস্ত ঘটে থাকে। আমরা বাংলাদেশে যখন সূর্যকে পূর্বদিকে উদিত হতে দেখি, তখন আমেরিকানরা দেখে যে সেখানে সূর্যটা পশ্চিমে ডুবে যাচ্ছে। তাহলে আমাদের এখানে যখন। সকাল, তাদের কাছে তা সন্ধ্যা। আবার, আমরা যখন সূর্যকে পশ্চিমে ডুবে যেতে দেখি, তারা তখন সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত হতে দেখে। ‘তার মানে পৃথিবীতে মােট দুবার সকাল, দুবার সন্ধ্যা পরিলক্ষিত হয়। এখন, দুবার সূর্যাস্ত আর আর দুবার সূর্যোদয় তখনই সম্ভব যখন পৃথিবীর আকার গােল হবে। পৃথিবীর আকার যদি সমতল বা চ্যাপ্টা কাঠ বা তার মতাে হতাে, তাহলে পৃথিবীতে একবারই সূর্যাস্ত-সূর্যোদয় ঘটত। লম্বা কাঠ সদৃশ পৃথিবীর একপাশে সূর্য। উঠে অন্যপাশে ডুবে যেত। কিন্তু সেরকম হয় না, কারণ পৃথিবী গােলাকার। এজন্য পৃথিবীতে আমরা দুবার সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয় দেখতে পাই। ‘আল্লাহও কোরআনে একই কথা বলছেন। তিনি বলেছেন-“তিনিই মালিক দুই। অস্তাচল আর উদয়াচলের। তাহলে তিনি নিশ্চয় জানেন পৃথিবী গােলাকার। তাই তিনি দুই সূর্যাস্ত আর দুই সূর্যোদয়ের কথা বলেছেন। তিনি যদি পৃথিবীকে ফ্ল্যাট তথা সমতলই বলবেন, তাহলে অবশ্যই তিনি এক অস্তাচল আর এক উদয়াচলএর কথাই বলতেন। কিন্তু তিনি তা বলেননি। তার মানে, কোরআন ইঙ্গিত করছে যে, পৃথিবী গােলাকার। এতটুকু বলে সাজিদ থামল। বিপুল চুপ করে আছে। নিপুণদাও। তাদের হয়তাে আর কিছু বলার নেই এই মুহূর্তে। সৌরভ বলল- সবই বুঝলাম, কিন্তু পৃথিবীর ভূমিকে বিছানা বলার কি দরকার? এত জটিল করে…’ সাজিদ হাসল। বলল-‘সৌরভ, আমি যখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি, তখন নিপুণদা। আমাকে একটি লাভ লেটার দিয়েছিলেন বিপাশাদিকে দেওয়ার জন্য। কি নিপুণদা, দাওনি? নিপণদা’লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বলল-হ্যাঁ, কিন্তু এখানে বলছ কেন এসব?
-“জানাে নিপুণদা, আমি সেই চিঠিটা বিপাশাদিকে দেওয়ার আগে খুলে একবার পড়ে নিয়েছিলাম। হা হা হা হা। কি রােমান্টিক প্রেমপত্র ছিল সেটা! হা হা হা। নিপুণদা হাসছে, লজ্জাও পাচ্ছে। আমরাও হাসছি। সাজিদ বলল-“জানাে সৌরভ, সেই চিঠির শুরুতেই বিপাশাদির রূপের বর্ণনা দিতে গিয়ে নিপুণদা। লিখেছে-‘তােমার ঐ চাঁদমুখখানা না দেখলে আমার দিনটাই পানসে লাগে। আমরা সবাই হাে হাে হাে করে হাসছি। সাজিদ আবার বলল-“আচ্ছা সৌরভ, নিপুণদা যে বিপাশাদির মুখকে চাঁদমুখ বলেছে, এখানে নিপুণদা কি বুঝিয়েছে যে, বিপাশাদির মুখ দেখতে চাঁদের আকৃতির মতাে? আই মিন গােলাকার? সৌরভ বলল-না, উনি বিপাশাদির রূপ বুঝিয়েছেন এটা দিয়ে। -এক্সাক্টলি। নিপুণদা সেদিন চাঁদমুখ দিয়ে আসলে বিপাশাদি’র রূপ বুঝিয়েছে, বিপাশাদির মুখের আকৃতি না। এটাকে বলে উপমা। ঠিক সেরকম আল্লাহও পৃথিবীর ভূমিকে বিছানার উপমা দিয়ে বুঝিয়েছেন। তিনি আমাদের জন্য কত উপযােগী করেই-না এটা তৈরি করেছেন। এটা দিয়ে তিনি পৃথিবীর আকৃতি বা আমার বা তােমার বেডরুমের বিছানা বুঝাননি, বুঝেছাে?’ | সৌরভ একদম চুপ মেরে গেল। বুঝেছে। বিপুলও চুপচাপ। সাজিদ নিপুণদার কাছে গিয়ে বলল-“স্যরি ভাই, ঐ চিঠিটা তােমার পারমিশন ছাড়াই পড়েছিলাম। বলে। কী করব বলাে? তােমাদের মতাে সিনিয়ারদের থেকেই তাে এক্সপেরিয়েন্স নিতে হবে, তাই না? হা হা হা। নিপুণদা সাজিদকে ধরতে যাচ্ছিল, আর অমনি সে এমন এক দৌঁড় দিল…. পুনশ্চ: তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেওয়া হয় যে, আল্লাহ্ সত্যি সত্যিই পৃথিবীকে কার্পেটের মতাে করে তৈরি করেছেন, তাহলেও কোনাে ভুল হবে না। কারণ কার্পেট যে শুধু সমতল জিনিসে করা হয় তা নয়। গােলাকার জিনিসেও কার্পেট করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি ফুটবলের কথা চিন্তা করুন। ফুটবল একটি গােলাকার জিনিস। এর উপরিভাগ কী রকম? কার্পেটের মতাে করে আচ্ছাদিত। এখন আল্লাহ্ যদি বলেন, তিনি ভূমিকে কার্পেটের মতাে করে বিছিয়েছেন, তাহলে ধরা যায় যে, ফুটবলের মতাে গােলাকার ভূমিকে তিনি কার্পেটের মতাে বিছিয়েছেন। তাছাড়া, সূরা আল ইনশিক্বাকের ৩ নাম্বার আয়াতে আছে-যেদিন পৃথিবীকে সমতল করা হবে…।’ এখানে বলা হচ্ছে কিয়ামত দিবসের কথা। সেদিন পৃথিবীকে আল্লাহ সমতল করবেন। তাহলে, তিনি যদি এখনই পৃথিবীকে সমতল করে তৈরি করতেন, আবার কিয়ামত দিবসে এটাকে সমতল করার কথা আসে কীভাবে?

একটি ডিএনএ’র জবানবন্দী

সেদিন সকালবেলা বাসায় ছিলাম। আমার ক্লাস ছিল না বলে আমি ইউনিভার্সিটিতে যাইনি। সাজিদের ক্লাস ছিল। আমি বাসায় বসে বসে। শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট পড়ছিলাম। দুঃখের কাহিনি আমি একদম পড়তে পারি না। হ্যামলেট পড়তে গিয়ে কখন যে আমার চোখজোড়া অশ্রুসজল হয়ে উঠল, আমি খেয়ালই করিনি। এই জিনিস আর বেশিক্ষণ পড়া যাবে না। না হলে কেঁদেকেটে আমি বুক ভাসিয়ে ফ্লোরে। ছােটখাটো জলাশয় বানিয়ে ফেলব, শিওর। হাত থেকে ধপ করে টেবিলের উপর রাখলাম হ্যামলেট’ । খুব মন খারাপ। এই মুহূর্তে সাজিদ থাকলে সে নিশ্চয় আমাকে নিয়ে রসিকতা করত। একবারের কথা। টেলিভিশনে একটা মুভি দেখাচ্ছিল। মুভিতে দেখাচ্ছিল নায়কের সৎ মা নায়ককে খেতে দিচ্ছে না, পরতে দিচ্ছে না। নায়কের বাবা নায়কের জন্য প্রচুর সম্পত্তি উইল করে রেখে যায়। সেগুলাে থেকে বঞ্চিত করতে নায়কের সৎ মা নায়ককে ছােটবেলায় শহর থেকে অনেক দূরে রেখে আসে। নায়ক খুবই মানবেতর জীবনযাপন করে। একটি চায়ের দোকানে চাকরি করে। এই দৃশ্য দেখে টপটপ করে আমার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। সেদিন আমার এই অবস্থা দেখে সাজিদ আমাকে নিয়ে এতই হাসাহাসি করল যে, আমি এরপর থেকে তার সাথে বসে আর কোনােকিছুই দেখি না। আজকে হ্যামলেট পড়েও আমার একই অবস্থা। খুব কান্না পাচ্ছে আর কষ্ট লাগছে হ্যামলেটের জন্য। মনটাকে হালকা করা দরকার। একবার ভাবলাম বাইরে থেকে ঘুরে আসি। কি। মনে করে আবার সিদ্ধান্ত পাল্টালাম। সাজিদের টেবিলের পাশে এসে দেখলাম। তার সেই বিখ্যাত (আমার মতে) ডায়েরি টেবিলের উপর থেকে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। এই ডায়েরির অনেক কিছুই আমার পড়া। নতুন কিছু লেখা আছে কিনা দেখার জন্য উল্টাতে লাগলাম। মাঝামাঝিতে এসে। দেখলাম নতুন কিছু লেখা। লেখাটার শিরােনাম ‘একটি ডিএনএ-র জবানবন্দী’। মজার বিষয় মনে হচ্ছে। ডিএনএ-র জবানবন্দী আবার কী জিনিস? পড়া শুরু। করলাম। সে ঠিক যেভাবে লিখেছে আমি সেভাবেই তুলে ধরছি‘একটি ডিএনএর জবানবন্দী
আমি একটি DNA। আমার পূর্ণরূপ Deoxyribo Nucleic Acid। আমার সম্পর্কে। বিস্তারিত জানার আগে আপনারা আগে জেনে নিন DNA আসলে কী
DNA হচ্ছে বংশপরম্পরায় বৈশিষ্ট্য নির্ধারক ‘জিন’-এর ধারক ও বাহক। আপনারা কেউ আপনাদের বাবার মতাে, কেউ মায়ের মতাে, আবার কেউ দাদাদাদি বা নানানানীর মতাে হয়ে থাকেন। DNA আপনাদের পূর্ব পুরুষদের বৈশিষ্ট্য আপনাদের মাঝে নিয়ে এসেছে এবং একইভাবে আপনাদের বৈশিষ্ট্য আপনাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নিয়ে যাবে। আপনারা প্রায়ই বলেন-“তােমার সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক। এই কথাটা আসলে ভুল। রক্তের সম্পর্ক বলে আসলে কিছু নেই। আপনাদের আসলে বলা উচিত-তােমার সাথে আমার DNA-র সম্পর্ক। আপনার চোখ দেখতে আপনার বাবার মতাে। নাক আপনার মায়ের মতাে। মুখ একদম আপনার দাদার মতাে। চুল আপনার ভাইয়ের মতাে কোঁকড়ানাে। এই যে আপনি আপনার আত্মীয়স্বজনের মতাে দেখতে হলেন, তাদের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য পেলেন, এটা কীসের জন্য? এটার কারণ হলাে DNA. সংক্ষেপে এটাই DNA তথা আমাদের পরিচিতি। আমাদের ব্যাপারে আরও বিস্তারিত লেখা যায়। তবে, আমরা সেদিকে না গিয়ে এখন অন্যদিকে লাফ দেব। আচ্ছা, আপনারা ‘ইনফরমেশন তথা তথ্য সম্পর্কে তাে জানেন, তাই না? ইনফরমেশন হচ্ছে এমন কিছু যা আপনাদের কোনাে ব্যাপারে ইনফর্ম করে। সিম্পলি, যার মধ্যে জ্ঞান থাকে, নির্দেশ-নির্দেশনা থাকে তাই হলাে ইনফরমেশন তথা তথ্য। আরেকটু এগিয়ে যাই। ধরুন, আপনি কোনাে একটি সাগর পাড়ে হাঁটছেন। ধরে নিই যে, সাগর পাড়ের এই এলাকাটিতে আপনি ছাড়া অন্য কারও প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আপনি গার্ড রেখে এই জায়গাটিতে অন্য কোনাে মানুষ, পশুপাখির প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করেছেন। এমনকি, বিচের এই জায়গাটায় যাতে কোনাে জাহাজও নােঙর করতে না পারে, তাও নিশ্চিত করেছেন। ধরুন, হাঁটতে হাঁটতে আপনি বিচের একটি নির্জন এলাকায় এসে দেখলেন যে, বিচের বালুতে লেখা ‘I Love You৷’ আচ্ছা, বিচের বালুতে ‘I Love You’ র মতাে অর্থপূর্ণ, সাজানাে-গােছানাে, ভাব প্রকাশক একটি বাক্য দেখার পরে আপনার তৎক্ষণাৎ কী মনে হবে? আপনি ১০০% শিওর যে, এটি আপনি কোনােভাবেই লিখেননি। নিশ্চয় মনে হবে যে, কোনাে মানুষ, যার অক্ষরজ্ঞান আছে, যে ‘I Love You’-এর অর্থ বােঝে, তা লিখতে সক্ষম, স্পেলিং করতে সক্ষম এমন কেউ এটি লিখে গেছে। যে এটি লিখে গেছে তার বুদ্ধি আছে। সে একটি বুদ্ধিমান সত্তা।
ধরুন, এটি দেখে আপনি খুব রেগে গেলেন। বুঝতে পারলেন যে, আল গার্ডদের অসচেতনতায় কেউ একজন এখানে এসেছে এবং এটি লিখে চলে গেছে। আপনি আপনার গার্ডকে ডাকলেন। বললেন-কোন, আমি বলেছিলাম এখানে আমি ছাড়া অন্য কেউ যেন কোনােভাবেই ঢুকতে না পারে? আমার অবর্তমানে এখানে কে ঢুকেছে বলাে? গার্ড কাচুমাচু করতে করতে বলল-“সাহেব, সত্যি বলছি এখানে কেউই ঢাকেনি। আল্লাহর কসম। গার্ডের কথা শুনে আপনি আরও বেশি রেগে উঠলেন। বললেন-হােয়াট দ্যা হেল। ইট ইজ? এখানে যদি কেউ না-ই ঢুকে তাহলে এই ‘I Love You’ লেখাটি কীভাবে এল? তুমি কি বলতে চাচ্ছাে সমুদ্রের বালু, পানি আর বাতাস একসাথে। মিশে এই ‘I Love You’ বাক্যটা নিজে নিজে তৈরি হয়ে গেছে? তুমি আমাকে এটি বিশ্বাস করতে বলছ? এই ‘I Love You’ লেখা বাক্যটা নিজে নিজে তৈরি হয়ে যেতে পারে, এটি কি আপনি কোনােমতেই বিশ্বাস করবেন? নিশ্চয় না । ধরুন, গার্ডকে বকাঝকা করে আপনি আবার হাঁটা ধরলেন। হাঁটতে হাঁটতে আরও কিছুদূর গেলেন। হঠাৎ আপনি দেখলেন যে, বিচের বালুর উপরে একটি বই রাখা আছে। অদ্ভুত ব্যাপার। আপনি বইটি হাতে নিলেন। খুলে দেখলেন যে, এটি একটি উপন্যাসের বই। আপনি আবার গার্ডকে ডাক দিলেন। জানতে চাইলেন এই বই এখানে কীভাবে এল? কে রেখে গেল?
সে আবার মুখ নিচু করে বলল-“সত্যি বলছি সাহেব, এখানে কেউ আসেনি। আপনি চিল্কার করে আবার বলে উঠলেন, তাহলে এই বইটাও কি সমুদ্রের বালু, পানি আর হাওয়ার মিশ্রণে নিজে নিজে লেখা হয়ে গেছে? প্রিন্ট হয়ে গেছে? বাঁধাই হয়ে গেছে? একটি উপন্যাসের বই, যাতে কিছু বর্ণমালা পাশাপাশি বসে শব্দ হয়েছে, কিছু শব্দ পাশাপাশি বসে অক্ষর হয়েছে, কিছু অক্ষর পাশাপাশি বসে বাক্য হয়েছে আর অনেকগুলাে অর্থপূর্ণ বাক্য নিয়ে হয়েছে একটি পুরাে উপন্যাসের বই। আচ্ছা, সমুদ্রের পানি, বাতাস আর বালুর মিশ্রণে এই বইটি নিজে নিজে লেখা হয়ে গেছে-এমনটি কেউ দাবি করলে কি আপনি বিশ্বাস করবেন? করবেন না। আপনি পাল্টা তাকে বলবেন, যেন সে পাবনা মেন্টাল হসপিটালে সিট বুক করে রাখে নিজের জন্য। ব্যাপারটা এতটাই হাস্যকর।
এমনকি, স্বয়ং মহামতি আইনস্টাইন এসে যদি পদার্থবিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে বলে, এই বইটি অটোমেটিক লেখা হয়ে গেছে কোনাে লেখক ছাড়াই, তখন আপনি আইনস্টাইনকেও বলবেন, ‘স্যার, দয়া করে নিজের রাস্তা মাপুন। কোনাে তথ্য, কোনাে ইনফরমেশন, কোনাে অক্ষর, কোনাে বর্ণমালা, কোনাে অর্থপূর্ণ রচনা লিখতে যে একটি বুদ্ধিমান সত্ত্বার দরকার অনিবার্য, তা একটা বাচ্চা ছেলেও জানে। ধরুন, আপনি আরও কিছুদূর হেঁটে গেলেন। গিয়ে দেখলেন, অপরূপ সুন্দর, ঠিক তাজমহলের মতাে ডিজাইন করে মার্বেল পাথর দিয়ে একটি বিল্ডিং তৈরি করা আছে। আপনি খুব অবাক হলেন। এত সুন্দর মহলটি এখানে কীভাবে এল? এটি দেখার সাথে সাথে আপনার কী মনে হবে? সমুদ্রে টর্নেডাের মতাে ভয়ঙ্কর ঝড় উঠত, আর সেই ঝড়ের সাথে সাথে সমুদ্রের গভীর থেকে মণি-মুক্তোওয়ালা পাথর উড়ে এসে বালু আর পানি দিয়ে এই অপূর্ব মহলটি তৈরি হয়ে গেছে? একদম না। এটি ঘূর্ণাক্ষরেও আপনার মনে আসবে না। আপনার যা মনে আসবে তা হলাে, প্রথমে একজন ডিজাইনার তথা ইঞ্জিনিয়ারের কথা, যে এই সুন্দর মহলটির নকশা করেছে। এরপরে অন্যসব। এই সুন্দর মহলটি তৈরির জন্য কিছু ইনফরমেশান দরকার। মহলের সামনের দরজা কোনদিকে হবে, কোন পাশে ঝরনা থাকবে, কোন পাশে বাগান। কোনদিকে গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, কোনদিকে উদ্যান—এসবের জন্য কিছু দরকারি তথ্য তথা ইনস্ট্রাকশন দরকার। এই ইনস্ট্রাকশন একজন ইঞ্জিনিয়ার তার নকশায় বিস্তারিত এঁকে রাখে এবং এটার উপর ভিত্তি করেই একটি মহল তৈরি হয়। ধরুন, আপনি সেই মহলে প্রবেশ করলেন। যেই মাত্র আপনি মহলে প্রবেশ করলেন, দেখলেন আপনার সামনে একটি কাগজ রাখা। কাগজটি আপনি হাতে নিলেন। খুললেন। তাতে লেখা-এই মহলের ডান দিকটা আপনার জন্য অনিরাপদ। আপনি ভুলেও ডান দিকটায় যাবেন না। তবে, বাম দিকটা আপনার জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। আচ্ছা, কাগজের এই লেখাটা পাওয়ার পরে আপনি কি এমন কারও অস্তিত্ব অনুভব করবেন না, যে বুদ্ধিমান? যে লিখতে জানে, পড়তে জানে? যে চায় না আপনি বিপদে পড়ন। নাকি আপনি ভাববেন যে, এই কাগজ, এই লেখা। সবকিছুই আপনা-আপনি হয়েছে? অবশ্যই সেটা ভাববেন না। এবার ধরুন, আপনি মহলটি ঘুরেফিরে দেখা অবস্থায় খেয়াল করলেন যে বাইরে, সমুদ্র পাড়ে ভীষণ ঝড় উঠেছে। খুব প্রলয়ঙ্করী ঝড়। ঝড়টা বেশ কয়েক ঘণ্টা ছিল।
ধরুন, ঝড় থামল আর আপনি মহল থেকে বের হয়ে নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলেন। একটু এগােতেই দেখলেন একটি বালুর স্তুপ, তার উপর কিছু হেঁড়া পলিথিন, হেঁড়া ব্যাগ, কিছু নুড়ি পাথর এদিক-সেদিক ছড়ানাে-ছিটানাে। এই স্তুপ আসার পথে আপনি দেখেননি। যাবার পথেই দেখছেন। আচ্ছা বলুন তাে, এই বিদঘুটে বালুর স্তুপটা দেখে আপনার কি প্রথমেই কোনাে ইঞ্জিনিয়ারের কথা মনে আসবে? মনে হবে কি এই সুপটা তৈরিতে একজন ইঞ্জিনিয়ারের একটি নকশা আঁকতে হয়েছে? হা হা হা। কখনােই না। আপনি নিশ্চিত ধরে নেবেন যে, এই বালুর স্তুপটি একটু আগের ঝড়ে তৈরি হওয়া। কারণ এর মধ্যে কোনাে শিল্প নেই, সৌন্দর্য নেই। নেই কোনাে কারুকার্যতা। ঝড়ঝাপ্টার ফলে এরকম কিছু এবড়ােথেবড়াে বালুর স্তুপ, আবর্জনার স্তুপ তৈরি হতেই পারে, কিন্তু একটি অপরূপ মহল? অসম্ভব। এতক্ষণ ধরে যা বললাম তা হলাে তথ্য। সেই ‘I Love You’, সেই উপন্যাসের বই, সেই মহলের নকশা’, সেই কাগজের লেখা সবকিছুতে কিছু না কিছু তথ্য আছে। আর এই তথ্যের পেছনে আছে কোনাে কনশাস মাইন্ড তথা বুদ্ধিমান সত্ত্বা। কোনাে জড় পদার্থ, প্রাকৃতিক কোনাে দুর্ঘটনা কোনােদিনও কোনাে ইনফরমেশন দিতে পারে না। কারণ ইনফরমেশন দিতে লাগে একটি মন। যেমন, সমুদ্রের পারে সবগুলাে বাংলা অক্ষর রেখে আসলে হাজারকোটি বার ঝড়ঝাপ্টার পরেও সেই অক্ষরগুলাে কোনাে একদিন পাশাপাশি মিলে রবীন্দ্রনাথের ‘সােনার তরী’র মতাে কোনাে কবিতা হয়ে যাবে এই সম্ভাবনা ০.০০%। কারণ সােনারতরী কবিতা লিখতে একটি মন লাগবে, বুদ্ধিমান সত্তা লাগবে। ঝড়ঝাপ্টার পর হয়তাে সেখানে আপনি কিছু অর্থবােধক শব্দ পেলেও পেতে পারেন। যেমন, প্রচণ্ড ঝড়ের কারণে ব’ এর পাশে ল অক্ষরটি এসে বসতে পারে। আর, বসলে সেটি হয়ে যাবে বল। বল একটি অর্থপূর্ণ শব্দ। ‘ম’ এর পাশে হ’ এবং তার পাশে ‘ল’ এসে বসলে পাওয়া যাবে মহল’ শব্দ (যদিও তার সম্ভাবনা কয়েক হাজারে ১ বার হলেও হতে পারে)।
দেখুন, আপনি এরকম দুচারটি ছন্নছাড়া শব্দ পেলেও পেতে পারেন কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ‘সােনার তরী’র মতাে একটি কবিতা পাওয়া কোনােদিনও সম্ভব না। হাজার কেন, কোটি কোটি বছর সময় দেওয়া হলেও পাওয়া সম্ভব না। এতক্ষণ বলা হলাে তথ্যের ব্যাপারে। উপরের আলােচনা থেকে আমরা দুটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারিএক: ইনফরমেশন তথা তথ্য পেতে দরকার একটি কনশাস মাইন্ড তথা বুদ্ধিমান সত্তা যার বিবেক আছে, বুদ্ধি আছে, চিন্তা করার ক্ষমতা আছে এবং দুই: কোনাে জড় পদার্থ, কোনাে অচেতন পদার্থ (টর্নেডাে, ঘূর্ণিঝড়, পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র)
যার প্রাণ নেই, বুদ্ধি নেই, চিন্তা করার ক্ষমতা নেই তার কাছ থেকে কখনােই তথ্য পাওয়া সম্ভব না। এবার আমরা আবার DNA-তে ফিরে আসি। প্রাণীদের শরীরের একেবারে গাঠনিক যে উপাদান, তার নাম হলাে কোষ। এই কোষের নিউক্লিয়াসের ভেতরে, একদম কেন্দ্রে যা থাকে তার নামই DNA। এই DNA-তে চারটি অক্ষর দিয়ে আপনার পুরাে শরীরের গঠনের একটি বুপ্রিন্ট (নকশা) সেট করা আছে। এই চারটি অক্ষর হলাে-A, T, G, C. A= Adenine T= Thymine G = Guanine C= Cytosine বায়ােলােজিস্টরা সংক্ষেপে এটাকে বলে জেনেটিক কোড’। কখনাে কম্পিউটার প্রােগ্রামিং করেছেন? কম্পিউটারের প্রােগ্রামে যে-বাইনারি কোড ব্যবহার করা হয়। সেটি কী রকম? সেখানে যে-সংখ্যা দুটি ব্যবহার করা হয় তা হলাে ০ এবং ১। কম্পিউটার প্রােগ্রামে বাইনারি সংখ্যাগুলাে সাজানাে থাকে এভাবে০০০০১০০০১১০০১০১১। এই সংখ্যাগুলােকে কোড হিসেবে ব্যবহার করে যেপ্রােগ্রাম তৈরি করা হয়, সেটার উপরই কম্পিউটারের পরবর্তী কাজ নির্দেশিত হয়। ঠিক একইভাবে, DNA-তেও A, T, G এবং C এই অক্ষর চারটির সমন্বয়ে কম্পিউটার প্রােগ্রামের মতােই একটি প্রােগ্রাম DNA-তে সেট করা আছে। এই প্রােগ্রামের নির্দেশনা অনুসারেই প্রাণীর শরীরে প্রােটিন তাদের কাজ। করে। এই প্রােগ্রামে যদি লেখা থাকে আপনার চোখ দেখতে হবে আপনার মায়ের মতাে, তাহলে আপনার চোখ ঠিক সেরকমই হবে। এই কাজটা করবে প্রােটিন। প্রােটিন এই নির্দেশটা পাবে RNA থেকে। RNA-তে এই নির্দেশ ডেলিভারি করবে DNA T আপনার বাবা আপনাকে কোলে নিয়ে কপালে চুমু খেতে খেতে আপনার মাকে বলবেন, “দেখাে, বাবুর চোখ দুটো দেখতে ঠিক তােমার মতাে? এটা কেন হলাে? কারণ DNA। বিংশ শতাব্দীর নাস্তিকতা যার কাঁধের উপর ভর করে এগিয়েছিল, তাঁর নাম Antony Flew। উনাকে বলা হতাে নাস্তিকদের ‘ভাবগুরু। নাস্তিকতার পক্ষে উনি প্রচুর সংখ্যক বই লিখেছেন, লেকচার দিয়েছেন, তর্ক করেছেন। কিন্তু ২০০৪ সালে এই বিখ্যাত নাস্তিক একদম ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘােষণা দিয়ে আস্তিক হয়ে গেলেন। আস্তিক হওয়ার যে কয়েকটি মেজর কারণ/প্রমাণ তিনি উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে একটি হলাে DNA-এর মধ্যে এই অপূর্ব ‘তথ্য’ তথা ইনফরমেশন’। তিনি প্রশ্ন করেছেন, কোনাে ফিজিক্সের ল, কোনাে ন্যাচারাল কজ যেখানে একটি সিঙ্গেল কোড তৈরিতেও অক্ষম সেখানে প্রাণের স্পন্দন DNA-এর মধ্যে এই ইনফরনেশন তথা এরকম সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা কীভাবে এল যার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে প্রাণীর শরীর? নিশ্চয় এতে কোনাে সুপার ন্যাচারাল ইন্টেলিজেন্সের হাত আছে। তিনি লিখেছেন, ‘Almost entirely because of the DNA investigations. What I think the DNA material has done is that it has shown, by the almost unbelievable complexity of the arrangements which are needed to produce (life), that intelligence must have been involved in getting these extraordinarily diverse elements to work together’ | এই DNA-এর মধ্যে কী পরিমাণ তথ্য তথা ইনফরমেশন মজুদ আছে রাখা যাবে জানেন? বিখ্যাত এথেইস্ট বায়ােলজিস্ট, রিচার্ড ডকিন্স লিখেছেন-‘There is enough information capacity in a single human cell to store the Encyclopaedia Britannica, all 30 volumes of it, three or four times over’. একটা মাত্র কোষের মধ্যে (কোষের মধ্যে থাকে DNA) সে-পরিমাণ তথ্য রাখা যাবে যা দিয়ে ৪-৫টি ৩০ ভলিউমের এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা লেখা যাবে। চিন্তা করতে পারেন? শুধুমাত্র একটা কোষের মধ্যে যে-পরিমাণ তথ্য আছে তা যদি কোনাে মানুষ পড়া শুরু করে, প্রতি ১ সেকেন্ডে যদি ৩ টি শব্দ সে পড়তে পারে, তাহলে একটি কোষের তথ্য পড়ে শেষ করতে একজন মানুষের সময় লাগবে ৩১ বছর। বিজ্ঞানী Dr. Francis Collins, যিনি Human Genome Project-এর হেড ডিরেক্টর, তিনি DNA সম্পর্কে বলেছেন-‘Think of DNA as an instructional script, a software program, sitting in the nucleus of the cell.’ DNA কী পরিমাণ তথা তথা ইনফরমেশন ধারণ করে উপরে তার কিছুটা নমুনা দেখানাে হলাে মাত্র। এই ইনফরমেশন DNA-এর মধ্যে কীভাবে এল? কোথা হতে এল? এর কোনাে সদুত্তর নাস্তিক জীব বিজ্ঞানীরা দিতে পারেননি। তারা যা বলে তা হচ্ছে এরকম-ধরুন, আপনার কিচেনে একটি হিটার আছে। হিটারের পাশে একটি পটে চিনি, একটি পটে চা পাতা, একটি পটে দুধ এবং একটি মগে কিছু পানি রাখা আছে। এখন হলাে কি,
আপনার হিটারটি নিজে নিজে অন হয়ে গেল, মগ থেকে পানি নিজে নিজে গিয়ে হিটারের উপর রাখা পাত্রে এসে পড়ল, পানি গরম হলাে। এরপর পটগুলাে থেকে পরিমিত পরিমাণ চিনি, চা পাতা, দুধ নিজে নিজে গিয়ে পাত্রের গরম হওয়া জলে মিশে গেল এবং তৈরি হয়ে গেল এককাপ সুস্বাদু চা। এই চা আবার নিজে নিজেই একটি কাপে গিয়ে সুন্দর করে পরিবেশন হলাে। আপনি এসে দেখলেন যে, আপনার ভুমি টেবিলে এককাপ গরম গরম চা। প্রশ্ন-এই চা কীভাবে এল? তাদের উত্তর-সাইন্সের ব্লাইন্ড ল অনুসারে। হাস্যকর। সাইন্সের ব্লাইন্ড ল মেনে এককাপ চা তৈরি হলেও হতে পারে (!), কিন্তু ইনফরমেশন তথা তথ্য আসার জন্য যে-একটি কনশাস মাইন্ড দরকার, তা আমরা ইতােপূর্বে পরিষ্কার করেছি। এমনকি, বিজ্ঞান মহলে সুপরিচিত ইনফরমেশন থিওরিও বলে, কোনাে এনার্জি বা ম্যাটার থেকে কোনাে ইনফরমেশন পাওয়া যায় না। তাহলে DNA-এর মধ্যে এরকম সুনির্দিষ্ট, সুপরিকল্পিত, সুসজ্জিত তথ্য কোথা থেকে এল? আমরা এর জন্য ৪ টি ধারণার অবতারণা করতে পারি। এক: হয়তাে, কোনাে মানুষ এই তথ্যগুলাে DNA-তে লিখে দিয়েছে। দুই: হয়তাে কোনাে এলিয়েন এই তথ্যগুলাে DNA-তে লিখে দিয়েছে। তিন: হয়তাে সাইন্সের সূত্রগুলাে নিজে নিজে কার্যকরী হয়ে এটা লিখে ফেলেছে। চার: হয়তাে কোনাে অতি প্রাকৃতিক বুদ্ধিমান সত্তা এই তথ্যগুলাে DNA-তে লিখে রেখেছে। এখন, সমীকরণ ১ অনুসারে যদি ধরে নিই যে, কোনাে মানুষ এটি লিখে রেখেছে, তাহলে প্রশ্ন আসে, এই মানুষের শরীরে যে-DNA আছে, তাতে কে তথ্যগুলাে লিখল তাহলে? দেখা যাচ্ছে সমীকরণ ১ বাতিল। সমীকরণ ২ অনুসারে যদি ধরে নিই যে, কোনাে এলিয়েন এটি লিখেছে, তাহলেও একই প্রশ্ন: এই এলিয়েনের যে-বুদ্ধি তা কোন বুদ্ধিমান সত্তা দান করেছে? তাহলে এটাও বাতিল। ইনফরমেশন থিওরি মতে সমীকরণ: ৩ নিজে নিজেই বাতিল হয়ে যায়। কারণ কোনাে আনকনশাস মাইন্ড, কোনাে বস্তু কখনােই কোনাে তথ্য তথা ইনফরমেশন প্রােডিউস করতে সক্ষম নয়। পৃথিবীতে এমন একটি প্রমাণও নেই, যেখানে দেখা গেছে সাইন্সের সূত্রগুলাে নিজে নিজে কার্যকর হয়ে শেক্সপিয়ারের মতাে একটি সনেট লিখে ফেলেছে। তাহলে এটাও বাতিল।
বাকি থাকল সমীকরণ ৪। এই তথ্য DNA-তে কোথা হতে এল? প্রােপার এবং লজিক্যাল উত্তর হলাে: অতিপ্রাকৃত কোনাে সত্তা থেকে। ঠিক যেমনটা এককালের নাস্তিকদের গুরু Dr. Antony Flew বলেছেন: ‘Almost entirely because of the DNA investigations. What I think the DNA material has done is that it has shown, by the almost unbelievable complexity of the arrangements which are needed to produce (life), that intelligence must have been involved in getting these extraordinarily diverse elements to work together’ যেমনটা ক্যামব্রিজ ফেরত গবেষক, বায়ােলােজিস্ট Dr. Stephen C Meyer 16169a1: ‘The kind of information that DNA contains, namely, functionally specified information. And it requires a designer.’ তাহলে DNA-তে এই তথ্য কোথা হতে এল এর একটিই গ্রহণযােগ্য উত্তর: স্রষ্টা থেকে। সাজিদের ডায়েরিতে এটুকুই লেখা। আমি ডায়েরিটা বন্ধ করলাম। ভাবলাম, আমি নিজেও একজন জেনেটিক্সের ছাত্র। এই DNA নিয়ে আমি কত পড়েছি, কত জেনেছি কিন্তু এভাবেও যে ভাবা যায়, তা আমি কোনােদিন ভাবিনি। হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার কাঁধে কেউ একজনের হাত। আমি পাশ ফিরলাম। দেখলাম সাজিদ দাঁড়িয়ে। সে বলল-“কী পড়ছিস? -একটি DNA-র জবানবন্দী -কী বুঝলি? আমার মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এল এই আয়াত-অচিরেই আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলি দেখাব আর তাদের নিজেদের মধ্যেও। তখন তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, এ কোরআন সত্য। সাজিদ মুচকি হাসল। খুব রহস্যময় সেই হাসি।
রেফারেন্স
• ‘If Darwin had known about DNA’, Dr. Harun Yahya • ‘There is a God : How the worlds most notorious atheists changed his mind’, Antony Flew • ‘The blind watchmaker’, Richard Dawkins
‘Siganature in the Cell’, Dr. Stephen C Mayer • ‘Language Of God’, Dr. Francis Collins

কোরআনে বিজ্ঞান-কাকতালীয় নাকি বাস্তবতা?

দেবাশীষ বলল-ধর্মগ্রন্থগুলাের মধ্যে বিজ্ঞান খোঁজা আর আমাজন জঙ্গলের রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে সভ্যতা খোঁজা একই ব্যাপার। দুটোই হাস্যকর। হা হা হা হা। ওর কথায় অন্যরা খুব ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। সাকিব বলল-“দেখ দেবাশীষ, অন্য ধর্মগ্রন্থগুলাের ব্যাপারে জানি না, তবে আল-কোরআনে এমন অনেক বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্ট নিয়ে বলা আছে যা বিজ্ঞান অতি সম্প্রতিই জানতে পেরেছে। দেবাশীষ বিদ্রুপের সুরে বলল-“হ্যাঁ। এজন্যই তাে মুসলমানদের কেউই নােবেল পায় না বিজ্ঞানে। সব ঐ ইহুদি-খ্রিষ্টানরাই মেরে দেয়। এখন আবার বলিস না যেন ঐ সব ইহুদি-খ্রিষ্টানগুলা কোরআন পড়েই এসব বের করছে। হা হা হা। পারিসও ভাই তােরা ! হা হা হা। রাকিব বলল-“নােবেল লাভ করার উদ্দেশ্যে তাে কোরআন নাজিল হয়নি, কোরআন এসেছে একটি গাইডবুক হিসেবে। মানুষকে মুত্তাকি বানাতে। -“হুম, তাে?’, দেবাশীষের প্রশ্ন! রাকিব কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। ঠিক সেসময় সাজিদ বলে উঠল-আমি দেবাশীষের সাথে একমত। আমাদের উচিত না ধর্মগ্রন্থগুলাের মধ্যে বিজ্ঞান খোঁজা। সাজিদের কথা শুনে আমরা সবাই থ হয়ে গেলাম। কোথায় সে দেবাশীষকে যুক্তি আর প্রমাণ দিয়ে একহাত নেবে তা না, উল্টো সে দেবাশীষের পক্ষেই সাফাই গাইছে। সাজিদ আবার বলতে লাগল-“আরও ক্লিয়ারলি, বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মগ্রন্থগুলােকে যাচাই করা ঠিক না। কারণ, ধর্মগ্রন্থগুলাে ইউনিক। পাল্টানাের সুযােগ নেই। কিন্তু বিজ্ঞান প্রতিনিয়তই পাল্টায়। বিজ্ঞান এতই ছলনাময়ী যে, পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা বিজ্ঞানী, স্যার আলবার্ট আইনস্টাইনকেও তার দেওয়া মত তুলে নিয়ে ভুল স্বীকার করতে হয়েছে।’ দেবাশীষ বলল-মানে? তুই কী বলতে চাস?” সাজিদ মুচকি হাসল। বলল-“দোস্ত, আমি তাে তােকেই ডিফেন্ড করছি। বলছি যে, ধর্মগ্রন্থে বিজ্ঞান খোঁজা আর তা দিয়ে ধর্মগ্রন্থকে বিচার করাটা বােকামি। আচ্ছা বাদ দে। দেবাশীষ, শেক্সপিয়ারের রচনা তাের কাছে কেমন লাগে রে?” আমি একটু অবাক হলাম। এই আলােচনায় আবার শেক্সপিয়ার কোত্থেকে এসে পড়ল? যাহােক, কাহিনি কোনােদিকে মােড় নেয় দেখার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
দেবাশীষ বলল-“ভালাে লাগে। কেন? -হ্যামলেট পড়েছিস? -হ্যাঁ। -পড়ে নিশ্চয় কান্না পেয়েছে? দেবাশীষ বাঁকা চোখে সাজিদের দিকে তাকাল। সাজিদ বলল-“আরে বাবা, এটা তাে কোনাে রােমান্টিক রচনা নয় যে, এটা পড়ে মজা পেয়েছিস কিনা জিজ্ঞেস করব। এটা একটা করুণ রসভিত্তিক রচনা। এটা পড়ে মন খারাপ হবে, কান্না পাবে এটাই স্বাভাবিক, তাই না? দেবাশীষ কিছু বলল না। সাজিদ আবার বলল-“শেক্সপিয়ারের ‘A Mid Summer Nights Dream’ পড়েছিস? কিংবা ‘Comedy Of Errors?” -“হ্যাঁ। -‘Comedy Of Errors’ পড়ে হেসে কুটিকুটি হয়েছিস, তাই না? হা হা হা হা।’ দেবাশীষ বলল-“হ্যাঁ। মজার রচনা। সাজিদ বলল-“তােকে শেক্সপিয়ারের আরেকটি নাটকের নাম বলি। হয়তাে পড়ে থাকবি। নাটকের নাম হচ্ছে ‘Henry The Fourth’। ধারণা করা হয়, শেক্সপিয়ার এই নাটকটি লিখেছিলেন ১৫৯৭ সালের দিকে এবং সেটি প্রিন্ট হয় ১৬০৫ সালের দিকে। -তাে? -“আরে বাবা, বলতে দে। সেই নাটকের এক পর্যায়ে মৌমাছিদের নিয়ে দারুণ কিছু কথা আছে। শেক্সপিয়ার দেখিয়েছেন, পুরুষ মৌমাছিদের একজন রাজা থাকে। রাজাটা নির্ধারিত হয় পুরুষ মৌমাছিদের ভেতর থেকেই। রাজা ব্যতীত, অন্যান্য মৌমাছিরা হলাে সৈনিক মৌমাছি। এই সৈনিক মৌমাছিদের কাজ হলাে মৌচাক নির্মাণ, মধু সংগ্রহ থেকে শুরু করে সব। রাজার নির্দেশমতাে, সৈনিক মৌমাছিরা তাদের প্রাত্যহিক কাজ শেষ করে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে রাজা মৌমাছির কাছে জবাবদিহি করে। অনেকটা প্রাচীন যুগের রাজা বাদশাহদের শাসনের মতাে আর কি। আমরা সবাই শেক্সপিয়ারের গল্প শুনছি। কারও মুখে কোনাে কথা নেই। সাজিদ আবার শুরু করল ‘চিন্তা কর, শেক্সপিয়ারের আমলেও মানুষজনের বিশ্বাস ছিল যে, মৌমাছি দুই প্রকার। স্ত্রী মৌমাছি আর পুরুষ মৌমাছি। স্ত্রী মৌমাছি খালি সন্তান উৎপাদন করে, আর বাদবাকি কাজকর্ম করে পুরুষ মৌমাছিরা। সাকিব বলল-“তেমনটা তাে আমরাও বিশ্বাস করি। এবং এটাই তাে স্বাভাবিক, তাই না? -হা হা হা। এরকমটাই হওয়া স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু মৌমাছির জীবনচক্র অন্যান্য কীটপতঙ্গের তুলনায় একদম আলাদা।’ -“কী রকম?’, রাকিবের প্রশ্ন। সাজিদ বলল-“১৯৭৩ সালে অষ্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী Karl Von Frisch Physiology of Medicine বিষয়ে সফল গবেষণার জন্য চিকিৎবজ্ঞানে নােবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল মৌমাছির জীবনচক্র। অর্থাৎ মৌমাছিরা কীভাবে তাদের জীবননির্বাহ করে। এই গবেষণা চালাতে গিয়ে তিনি এমন সব আশ্চর্যজনক জিনিস সামনে নিয়ে এলেন, যা শেক্সপিয়ারের সময়কার পুরাে বিশ্বাসকে পাল্টে দিল। তিনি ফটোগ্রাফি এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে করে দেখিয়েছেন যে, মৌমাছি দুই প্রকার নয়, মৌমাছি আসলে তিন প্রকার। ‘প্রথমটা হলাে, পুরুষ মৌমাছি। দ্বিতীয় হলাে স্ত্রী মৌমাছি। এই মৌমাছিদের বলা হয় Queen Bee, এরা শুধু সন্তান উৎপাদন করা ছাড়া আর কোনাে কাজ করে
। এই দুই প্রকার ছাড়াও আরও এক প্রকার মৌমাছি আছে। লিঙ্গভেদে এরাও স্ত্রী মৌমাছি, তবে একটু ভিন্ন। -কী রকম?’, দেবাশীষ প্রশ্ন করল। ‘আমরা জানি, পুরুষ মৌমাছিরাই মৌচাক নির্মাণ থেকে শুরু করে মধু সংগ্রহ-সব করে থাকে, কিন্তু এই ধারণা ভুল। পুরুষ মৌমাছি শুধু একটিই কাজ করে, আর তা হলাে কেবল রানী মৌমাছিদের প্রজনন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা। মানে, সন্তান উৎপাদনে সহায়তা করা। এই কাজ ছাড়া পুরুষ মৌমাছির আর কোনাে কাজ নেই। -“তাহলে মৌচাক নির্মাণ থেকে শুরু করে বাকি কাজ কারা করে?’, রাকিব জিজ্ঞেস করল। -“হ্যাঁ। তৃতীয় প্রকারের মৌমাছিরাই বাদ বাকি সব কাজ করে থাকে। লিঙ্গভেদে এরাও স্ত্রী মৌমাছি, কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে এরা সন্তান জন্মদানে অক্ষম। সােজা কথায়, এদের বন্ধ্যা বলা যায়। আমি বললাম-“ও আচ্ছা।’ সাজিদ আবার বলতে লাগল-বিজ্ঞানী Karl Von Frisch এই বিশেষ শ্রেণির স্ত্রী মৌমাছিদের নাম দিয়েছেন worker Bee বা কর্মী মৌমাছি। এরা Queen Bee তথা রানী মৌমাছির থেকে আলাদা একটি দিকেই। সেটা হলাে রানী মৌমাছির কাজ সন্তান উৎপাদন, আর কর্মী মৌমাছির কাজ সন্তান জন্ম দেওয়া ছাড়া অন্যসব। সাকিব বলল-বাহ, দারুণ তাে। এরা কি প্রাকৃতিকভাবেই সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়ে থাকে? -“হ্যাঁ। -“আরও, মজার ব্যাপার আছে। বিজ্ঞানী Karl Von Frisch আরও প্রমাণ করেছেন যে, এইসব কর্মী মৌমাছিরা যখন ফুল থেকে রস সংগ্রহে বের হয়, তখন তারা খুব অদ্ভুত একটি কাজ করে। সেটা হলাে, ধর, কোনাে কর্মী মৌমাছি কোনাে এক জায়গায় ফুলের উদ্যানের সন্ধান পেল যেখান থেকে রস সংগ্রহ করা যাবে। তখন ঐ মৌমাছি তার অন্যান্য সঙ্গীদের এই ফুলের উদ্যান সম্পর্কে খবর দেয়। মৌমাছিটি ঠিক সেভাবেই বলে, যেভাবে যে-পথ দিয়ে সে ঐ উদ্যানে গিয়েছিল। মানে, এক্সাক্ট যে পথে সে এই উদ্যানের সন্ধান পায়, সে পথের কথাই অন্যদের বলে। আর , অন্যান্য মৌমাছিরাও ঠিক তার বাতলে দেওয়া পথ অনুসরণ করেই সে উদ্যানে পৌঁছে। একটুও হেরফের করে না। বিজ্ঞানী Karl Von Frisch এই ভারি অদ্ভুত জিনিসটার নাম রেখেছে ‘Waggle Dance’। আমি বললাম-ভেরি ইন্টাস্টিং। সাজিদ বলল- “মােদ্দাকথা, Karl Von Frisch প্রমাণ করেছেন যে, স্ত্রী মৌমাছি দুই প্রকারের। রানী মৌমাছি আর কর্মী মৌমাছি। দুই প্রকারের কাজ সম্পূর্ণ আলাদা। আর, পুরুষ মৌমাছি মৌচাক নির্মাণ; মধু সংগ্রহ এসব করে না। এসব করে কর্মী স্ত্রী মৌমাছিরাই। এই পুরাে জিনিসটার উপর Karl Von Frisch একটি বইও লিখেছেন। বইটির নাম-“The Dancing Bees’। এই জিনিসগুলা প্রমাণ করে তিনি ১৯৭৩ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নােবেল পুরস্কার পান। এতটুকু বলে সাজিদ থামল। দেবাশীষ বলল-এতকিছু বলার উদ্দেশ্য কী? সাজিদ তার দিকে তাকাল। এরপর বলল-যে-জিনিস ১৯৭৩ সালে বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, সেই জিনিস ১৪০০ বছর আগে কোরআন বলে রেখেছে। দেবাশীষ সাজিদের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাল। সাজিদ বলল-কোরআন যেহেতু আরবি ভাষায় নাজিল হয়েছে, তাই আমাদের আরবি ব্যাকরণ অনুসারে তার অর্থ বুঝতে হবে। বাংলা কিংবা ইংরেজি কোনােটাতেই পুংলিঙ্গ এবং স্ত্রীলিঙ্গের জন্য আলাদা আলাদা ক্রিয়া (Verb) ব্যবহৃত হয় না। ‘যেমন ইংলিশে পুংলিঙ্গের জন্য আমরা বলি, He does the work, আবার স্ত্রী লিঙ্গের জন্যও বলি, She does the work.
খেয়াল কর, দুটো বাক্যে জেন্ডার পাল্টে গেলেও ক্রিয়া পাল্টায়নি। পুংলিঙ্গের জন্য যেমন Does, স্ত্রীলিঙ্গের জন্যও Does. কিন্তু আরবিতে সেরকম নয়। আরবিতে জেন্ডারভেদে ক্রিয়ার রূপ পাল্টে যায়। আমরা মনােযােগী শ্রোতার মতাে শুনছি। সে বলে যাচ্ছে‘কোরআনে মৌমাছির নামেই একটি সূরা আছে। নাম সূরা আন-নাহ্। এই সূরার ৬৮ নাম্বার আয়াতে আছে-“(হে মুহাম্মদ) আপনার রব মৌমাছিকে আদেশ দিয়েছেন যে, মৌচাক বানিয়ে নাও পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং মানুষ যে-গৃহ নির্মাণ করে, তাতে। ‘খেয়াল কর, এখানে সন্তান জন্মদানের কথা বলা হচ্ছে না কিন্তু মৌচাক নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে। ‘Karl Von Frisch আমাদের জানিয়েছেন, মৌচাক নির্মাণের কাজ করে থাকে স্ত্রী কর্মী মৌমাছি। এখন আমাদের দেখতে হবে কোরআন কোন মৌমাছিকে এই নির্দেশ দিচ্ছে। স্ত্রী মৌমাছিকে, নাকি পুরুষ মৌমাছিকে? যদি পুরুষ মৌমাছিকে এই নির্দেশ দেয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, আধুনিক বিজ্ঞান অনুসারে কোরআন ভুল। আরবি ব্যাকরণে, পুরুষ মৌমাছিকে মৌচাক নির্মাণ কাজের নির্দেশ দিতে যে-ক্রিয়া ব্যবহৃত হয় তা হলাে ‘ইত্তাখিজ’ আর স্ত্রী মৌমাছির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় ইত্তাখিজি’। ‘অত্যন্ত আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, কোরআন এই আয়াতে মৌমাছিকে নির্দেশ দিতে ‘ইত্তাখিজ’ ব্যবহার না করে, ‘ইত্তাখিজি ব্যবহার করেছে। মানে, নির্দেশটা কোরআন নিঃসন্দেহে স্ত্রী মৌমাছিকেই দিচ্ছে, পুরুষ মৌমাছিকে নয়। বল তাে দেবাশীষ, এই সূক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক ব্যাপারটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১৪০০ বছর আগে কোন মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন? এমনকি, শেক্সপিয়ারের সময়কালেও যেখানে এটা নিয়ে ভুল ধারণা প্রচলিত ছিল? দেবাশীষ চুপ করে আছে। সাজিদ আবার বলতে লাগল-“শুধু এই আয়াত নয়, এর পরের আয়াতে আছে অত:পর, চোষণ করে নাও প্রত্যেক ফুল থেকে এবং চল স্বীয় রবের সহজ-সরল পথে। ‘চোষণ বা পান করার ক্ষেত্রে আরবিতে পুংলিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত হয় কুল’ শব্দ এবং স্ত্রীলিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত হয় কুলি। কোরআন এখানে কুল’ ব্যবহার না করে কৃলি ব্যবহার করেছে। সহজ সরল পথে চলার নির্দেশের ক্ষেত্রে পুংলিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত শব্দ উসলুক, এবং স্ত্রীলিঙ্গের জন্য ব্যবহৃত হয় উসলুকি’। মজার ব্যাপার, কোরআন ‘ঊসলুক’ ব্যবহার না করে, উসলুকি’ ক্রিয়া ব্যবহার করেছে। মানে, নির্দেশটা পুরুষ মৌমাছির জন্য নয়, স্ত্রী মৌমাছির জন্য।
আরও মজার ব্যাপার, এই আয়াতে কোরআন মৌমাছিকে একটি সহজ সরল পথে চলার নির্দেশ দিচ্ছে। আচ্ছা, মৌমাছির কি পরকালে জবাবদিহিতার কোনাে দায় আছে? পাপপূণ্যের? নেই। তাহলে তাদের কেন সহজ সরল পথে চলার নির্দেশ দেওয়া হলাে? ‘খেয়াল কর, বিজ্ঞানী Karl Von Frisch মৌমাছিদের ব্যাপারে যে আশ্চর্যজনক ব্যাপারটি লক্ষ করেছেন, তা হলাে-তারা ঠিক যে পথে কোনাে ফুলের উদ্যানের সন্ধান পায়, ঠিক একই পথের, একই রাস্তা অন্যদের বাতলে দেয়। কোনাে হেরফের করে না। অন্যরাও ঠিক সে পথ অনুসরণ করে উদ্যানে পৌঁছে। এটাই তাদের জন্য সহজসরল পথ। বিজ্ঞানী Karl Von Frisch এটার নাম দিয়েছেন ‘Waggle Dance’. কোরআনও কি ঠিক একই কথা বলছে না? ‘দেবাশীষ, এখন তােকে যদি প্রশ্ন করি, কোরআন কি এই জিনিসগুলাে বিজ্ঞানী Karl Von Frisch-এর থেকে নকল করেছে? ‘তাের উত্তর হবে না। কারণ তিনি এসব প্রমাণ করেছেন মাত্র সেদিন, ১৯৭৩ সালে। কোরআন নাজিল হয়েছে আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবিহীন নিরক্ষর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বৈজ্ঞানিক ব্যাপারগুলাে ঠিক কোথায় পেলেন? কোরআন কেন এই নির্দেশগুলাে পুরুষ মৌমাছিকে দিল না? কেন স্ত্রী মৌমাছিকে দিল? যদি এই কোরআন সুপার ন্যাচারাল কোনাে শক্তি যিনি এই মৌমাছির সৃষ্টিকর্তা, যিনি মৌমাছিদের এই জীবনচক্রের জন্য উপযুক্ত করে সৃষ্টি করেছেন-তাঁর নিকট থেকে না আসে, তাহলে ১৪০০ বছর আগে আরবের মরুভূমিতে বসে কে এটা বলতে পারে? ‘যে-জিনিস ১৯৭৩ সালে আবিষ্কার করে বিজ্ঞানী Karl Von Frisch নােবেল পেলেন, তা কোরআনে বহু শতাব্দী আগেই বলা আছে। কই, মুসলিমেরা কি দাবি করেছে Karl Von Frisch কোরআন থেকে নকল করেছে? করেনি। মুসলিমেরা কি তার নােবেল পুরস্কারে ভাগ বসাতে গেছে? না, যায়নি। কারণ এর কোনােটাই কোরআনের উদ্দেশ্য নয়। আমরা বিজ্ঞান দিয়ে কোরআনকে বিচার করি না, বরং, দিনশেষে বিজ্ঞানই কোরআনের সাথে এসে কাঁধে কাঁধ মেলায়। এতটুকু বলে সাজিদ থেমে গেল। দেবাশীষ কিছুই বলছে না। সাকিব আর রাকিবের চেহারাটা তখন দেখার মতাে। তারা খুবই উৎফুল্ল এবং খােশমেজাজি একটা চেহারায় দেবাশীষের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন তারা বলতে চাইছে‘দে দে ব্যাটা। পারলে এবার কোনাে উত্তর দে…।

চলবে…



Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *