নিরাপত্তাহীন অবস্থার অবসান চাই

দেশের সার্বিক জননিরাপত্তার এখন যে করুণ হাল এর আগে এরকম কখনোই এমনটি হয়েছে বলে মনে হয়নি। চারদিকে এখন অপহরণ, গুম, খুন, হত্যা ঘটেই চলছে। নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনার পর ভাবা হয়েছিল প্রশাসনের নড়েচড়ে বসার কারণে হয়তো সব কিছু একটু হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু অপহরণ, গুম, খুনের ঘটনা থামছে না। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হলো প্রায় ঘটনার সঙ্গেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগসূত্র থাকার অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী নতুবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। যারা মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে তারাই এখন টাকার বিনিময়ে মানুষ হত্যা করছে, কখনো কখনো নেপথ্যে থেকে হত্যাকারীদের ইন্ধন দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গণমাধ্যমের বদৌলতে বিষয়গুলো সর্বসাধারণে জানাজানি হলেও খুনি বা হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি হচ্ছে না। উল্টো নানা মোড়কে আড়ালে-আবডালে খুনিরা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি অপহরণ, গুম, খুনের পাশাপাশি চারদিকে এক চরম নিরাপত্তাহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠছে। এই নিরাপত্তাহীনতা নামক কুসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ এবং গণমাধ্যম সোচ্চার হলেও কার্যকর কোনো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না।বর্তমান সরকারের আমলে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ই হলো_ অপহরণ, গুম, খুন। বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে যারা বিরোধী প্রতিপক্ষ তাদের কতটা নির্দয়ভাবে দমন করা যায়_ বর্তমান সময় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আন্তর্জাতিক এবং দেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ কথা বারবার উল্লেখ করেছে। তাদের রিপোর্ট বা নথিপত্রে তা প্রকাশও করেছে। এর আগে গুম-খুনের ঘটনা ঘটলেও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গুমের ঘটনাটি প্রকাশ্য আলোচনায় আসে মূলত ২০১২ সালে। ওই বছরের এপ্রিলে বনানী থেকে সাদা পোশাকধারীদের একটি দল অপহরণ করে নিয়ে যায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীকে। দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ইলিয়াস আলী আর ফিরে আসেনি। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইলিয়াস আলী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নির্মম শিকার এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেই তাকে গুম করা হয়েছে। এ অপহরণ ঘটনা এখনো আলোচিত এবং রহস্যাবৃত। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী স্বামীকে ফিরে পাওয়ার অভিপ্রায়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেন। কিন্তু সবই অরণ্যে রোধনে পরিণত হয়। স্বভাবতই ইলিয়াস আলীর স্ত্রী লুনা, মেয়ে নাওয়াল প্রতি রাতেই কেঁদে চোখ ভাসান। এর আগে অপহরণ করে গুম করা হয় বিএনপির আরেক নেতা চৌধুরী আলমকে। আজ অবধি তার কোনো সন্ধান মেলেনি। অভিযোগ রয়েছে, শুধু ঢাকা মহানগর বিএনপির ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ২২ নেতা-কর্মী এই সরকারের আমলে গুম হয়েছেন।আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত কয়েক বছরে গুমের ঘটনা ঘটলেও ২০১৩ সালে তার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক’ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরে যে, ২০১৩ সালে ৫০ জনেরও বেশি রাজনৈতিক কর্মী গুম এবং গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন। গত বছর গুম আতঙ্কে বিরোধী শিবিরের অনেক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীই বাড়িঘর ফেলে জীবন বাঁচাতে অন্যত্র চলে যান। যে ধারা এখনো চলমান রয়েছে। তবে আমরা দেখতে পাই ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনের পরে এ ধরনের ঘটনা আরও উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চৌধুরী আলম, আমিনুল, ইলিয়াস আলী, সানাউল্লাহ বাবু, মেয়র লোকমান, সাগর-রুনী, ত্বকি এবং সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের সাতজনসহ সারা দেশে অসংখ্য গুম ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। হাইকোর্ট প্রদত্ত রায়ও বিচারবহিভর্ূত হত্যাকাণ্ড বা গুম প্রতিরোধ করতে পারছে না। অথচ ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বলেছিল বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করা হবে। বাস্তবতা হলো এটা বন্ধ হয়নি, বরং আরও বেড়েছে। সর্বশেষ তার নিকৃষ্ট রূপটি জনগণ দেখতে পায় নারায়ণগঞ্জের রোমহর্ষক সেভেন মার্ডার ঘটনায়।নারায়ণগঞ্জ বরাবরই সন্ত্রাসের নগ্ন জনপদ বলে খ্যাত। তবে সব কিছু ছাড়িয়ে এই সরকারের আমলে শীতলক্ষ্যার কান্না যতটা বেড়েছে তেমনটি আর কখনোই বাড়েনি। ২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই আমরা দেখেছি শীতলক্ষ্যায় একের পর এক নির্বিচারে লাশ পড়তে। এ ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ৬ মার্চ সবচেয়ে নির্মম ঘটনা ঘটে নারায়ণগঞ্জে। নাগরিক নেতাকে শায়েস্তা করতে খুনিরা নিরপরাধ মেধাবী ছাত্র তানভীর মো. ত্বকিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের পর ফুঁসে ওঠে নারায়ণগঞ্জবাসী। সারা দেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। ত্বকি হত্যা নিয়ে নারায়ণগঞ্জে অনেক ঘটনার অবতারণা হয়। এখনো নারায়ণগঞ্জবাসী এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সোচ্চার। তবে ত্বকি হত্যাকাণ্ডের নির্মমতাকে ছাড়িয়ে গেছে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত সাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। নিজ দলের প্রতিপক্ষকে দমন করতে প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা নূর হোসেন নামের এক ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব সাত সাতজন মানুষের রক্তে রঞ্জিত করেন শীতলক্ষ্যার পানি। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত সাত খুনের ঘটনায় এ দেশের মানুষ বিস্মিত, চমকিত হয়েছে। মানুষ দেখেছে গণতন্ত্র ও সুশাসন ব্যর্থ হলে, সরকার দলীয় আবর্তে ডুবে থাকলে মানুষের মৃত্যু কতটা নৃশংস, ভয়াবহ এবং নির্মম হতে পারে। শীতলক্ষ্যার বুকে যখন নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, নিপাট ভদ্রলোক বলে খ্যাত আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনের লাশ ভেসে ওঠে তখন মানুষই ঘৃণা-ক্ষোভে বলছে, এ দেশে সরকার বলে কিছু নেই। ২৬ এপ্রিল সাতজনকে নিজ শহরের বুকের মধ্যখান থেকে মুহূর্তেই অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বভাবতই প্যানেল মেয়র নজরুল, অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার অপহৃত হলে বিষয়টি দ্রুতই স্থানীয় পুলিশ, র্যাব এবং জনপ্রতিনিধির নজরে আনেন স্বজনরা। অপহৃতদের উদ্ধারে স্বজনরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং বিশেষ একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনের হাত-পা ধরে কাকুতি-মিনতিও করতে থাকেন। কিন্তু কেউই ঘটনার পাত্তা দেন না। অবশেষে শীতলক্ষ্যার বুক চিড়ে ভেসে উঠে সাত সাতটি মানুষের লাশ। স্যাটেলাইট টেলিভিশনের কারণে সারা দেশের মানুষ সেই ভয়াবহ নির্মমতা অবলোকনের সুযোগ পায়। মানুষ দেখেছে কারা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। কারা পাপী আর কারা ক্ষুধার্ত-লোভী।নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত হত্যাকাণ্ডের খলনায়ক নূর হোসেন এখনো পলাতক থাকলেও এ ঘটনায় সবচেয়ে বড় অভিযোগ আসে স্থানীয় র্যাবের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠে, সে সময় বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে র্যাব-১১ এর কমান্ডার লে. কর্নেল তারেক সাইদ মোহাম্মদসহ আরও কয়েকজন এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে ভূমিকা রাখে। এ ঘটনার পর লে. কর্নেল তারেক, মেজর আরিফ এবং লে. রানাকে সেনাবাহিনী থেকে অবসর দেওয়া হয় এবং সবশেষে তাদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। সাত খুনের ঘটনায় র্যাবের সম্পৃক্ততার ঘটনা বেরিয়ে আসায় র্যাবের ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক উঠেছে। অনেকেই র্যাব বিলুপ্তির পক্ষে সরাসরি মতামত প্রকাশ করেছেন। র্যাবের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করার দাবিতে জনমত গড়ে উঠেছে। নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার বিষয়টি এখন তদন্তাধীন। তবে এ ঘটনার পর অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সাহস করে সরাসরি অভিযোগ করে বলেছেন, তাদের প্রিয় স্বজনদের র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে গেলেও দিন-মাস-বছর পেরিয়ে গেলেও তারা আর ফিরে আসেনি। লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম হিরু এবং পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ূন কবীরকে র্যাব অপহরণের দায়ে র্যাব-১১ এর সাবেক কমান্ডার লে. কর্নেল তারেক সাইদ মোহাম্মদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরও করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বারবার বলা হয়েছে, গত কয়েক বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরকারের স্বার্থে যে প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয়েছে সেটা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি এবং জামায়াতের অনেক নেতা-কর্মীকে কী প্রক্রিয়ায় হত্যা করা হয়েছে দেশবাসীর সেটা অজানা নয়। গত ডিসেম্বরে গভীর রাতে লক্ষ্মীপুরের জনপ্রিয় মানুষ ডা. ফয়েজ আহমদকে কারা হত্যা করেছে সেটাও দেশবাসী জানে। তবে বর্তমান ভয়াবহতা হলো টাকা বা উৎকোচের বিনিময়ে প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করতে ভূমিকা রাখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্য। ‘ক্রসফায়ার’-এর ঘটনার সঙ্গে টাকার লেনদেনের অভিযোগ করেছে স্বজন হারানো অনেক পরিবারই, যা গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। কোনো ব্যক্তির কারণে যদি রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানের সম্মান ক্ষুণ্ন হয় তাহলে অবশ্যই তার বিচার হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু আমরা এ ক্ষেত্রে সবসময়ই দেখতে পাই প্রশাসনের সময়ক্ষেপণ এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের উদোরপিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর যত কূটকৌশল। সেই কৌশলের প্রয়োগে এবারও চেষ্টার কমতি ছিল না। শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় বিএনপির ওপর সব দোষ চাপালেন। কিন্তু গণমাধ্যম আর জনচাপের কারণে পরবর্তীতে সত্যকে মিথ্যা বলা আর সম্ভব হয়নি। তবে সরকারের কোনো এক সাবেক মন্ত্রী আগ বাড়িয়ে বললেন, ‘নূর হোসেন বিএনপির গুপ্তচর’। কী মজাদার তথ্য! সত্যিই এমন কথায় রাজনীতিকদের দায়বদ্ধতা, দেশপ্রেম, জবাবদিহিতা নিয়ে জনমনে বিস্তর প্রশ্ন তৈরি হয়। আর এসব কারণেই নূর হোসেনের মতো ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবরা আশকারা পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ ধরনের মিথ্যাচার দেশের গণতন্ত্রের জন্য অভিশাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। বোঝাই যায়, নূর হোসেনের মতো খুনিকে ধরতে এখন ইন্টারপোলের সাহায্য নিতে হচ্ছে।নারায়ণগঞ্জে যা ঘটেছে সেটা অমানবিকতার এক চূড়ান্ত রূপ। আমরা এ নিরাপত্তাহীন অবস্থার অবসান চাই। বলতে দ্বিধা নেই, এমন বাংলাদেশ কেউই চাই না। মানুষ কতটা নিকৃষ্ট, নির্মম হলে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে জনগণ এবার সেটা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ পেয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় রাজনৈতিক বিশ্লেষক, অপরাধবিজ্ঞানী বলেছেন, পুরো বিষয়টি সামাজিক অবক্ষয়ের ফলাফল। দ্বিমত পোষণ করার কোনো কারণ নেই। সামাজিক অবক্ষয়ই যদি না হবে তাহলে টাকা লেনদেনের মতো ঘটনায় জনগণের নিরাপত্তাদানকারীরা যুক্ত হবেন কেন। এর মূল কারণই হলো_ দেশে গণতন্ত্র বিকশিত না হওয়া এবং সাম্প্রতিক সময়ে গণতন্ত্রের নামে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাওয়া। টিআইবি বলেছে, সারা দেশে এখন যা ঘটছে সেটা ‘প্রধানমন্ত্রীর একনায়কতন্ত্র’-এর ফলাফল। আসলেই সর্বত্র একচ্ছত্র ক্ষমতা বলবৎ থাকলে শীতলক্ষ্যার কান্না কোনো দিন থামবে না। ভূলুণ্ঠিত হবে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার। চরমভাবে বিপন্ন হয়ে পড়বে জনজীবন। যা গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য মোটেও সুখকর নয়।

-পূর্ব প্রকাশিত: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *