ধর্মের আড়ালে ব্যভিচার!!

পৃথিবীর সব ধর্মের সমাজে এক শ্রেণী হীন প্রকৃতির ধর্মীয় যাজক, পুরোহিত, পণ্ডিত পাদ্রী ও মুল্লাদের দ্বারা ধর্মের মর্যাদাহানিকর আচরণ বিশেষকরে যৌন বা আর্থিক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের কেলেঙ্কারি প্রায়ই শুনা যায়। তবে পরিসংখ্যান মতে দেখা যায় মুসলিম সমাজে এসব তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তাই বলে ধর্মের মর্যাদাহানিকর কোন হারাম আচরণ বা কেলেঙ্কারিকে প্রশ্রয় দেয়া সম্ভব নয়। যখনই যেখানে এসব দেখা যাবে তার প্রতিবাদ ও সমালোচনা করা ঈমানী দায়িত্ব।

ইসলামের নামে যদি কোন কুপ্রথা চালু করার অপ্রয়াস করা হয় তার অন্যতম একটি হচ্ছে এক সঙ্গে আরবি শব্দ "তালাক" তিনবার স্বামী রাগের মাথায় বা ঠাণ্ডা মাথায় বললে তথাকথিত "হালালা" করার ফতোয়া!!
সে দিন সিবিসি রেডিওতে একটি ডুকুমেন্টারী শুনলাম "হালালা সার্বিস" নামে লন্ডনে কিছু লোক যে কত মেয়ের জীবন নষ্ট করছে তার হিসাব নাই! ব্যাপারটি বুঝতে প্লিজ নিচের ভিডিওটি শুনেন। যারা ভিডিও দেখতে চাননা তারা এখানে রিপোর্টি পড়তে পারেন

কথা হচ্ছে মাথা-গরম স্বামীর এক সাথে তিন তালাক উচ্চারণে যখন তালাক চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে মনে করা হয় বা ফতোয়া দেয়া হয় তখন মহিলারা নিজেদের জীবন ও সংসার রক্ষা করতে গিয়ে তথাকথিত "হিল্লা বা সুরাহা" করার উদ্দেশ্যে "হালালা" করার যে ব্যভিচারের ফাঁদে পড়ে তা শুনলে মাথা খারাপ হওয়ার অবস্থা এমনকি বেশ কিছু মসজিদের ইমামরাও নাকি এসব ব্যভিচারের কুকর্মে জড়িত!

অনুতপ্ত স্বামী এবং বিধ্বস্ত একটি পরিবার ও একজন অসহায় মহিলা এবং তার সন্তানদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ রক্ষায় মহান আল্লাহর প্রদত্ত শান্তির ধর্ম ইসলামে কি এসব গ্রহনযোগ্য? ভাবতে অবাক লাগে।

একসাথে "তালাক" শব্দ তিনবার উচ্চারণ করে দিলেই কি তালাক হয়ে যায়? একটি বিবাহ বিচ্ছেদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কি এত সহজ ও দ্রুত হয়ে যায় তাহলে কোরআনে তালাক সম্পর্কে যে নিয়ম ও প্রক্রিয়া অনুসরণের কথা আল্লাহ সুরা বাকারা ও তালাকে বলেছেন তার অর্থ কি?

তাই বলব, যারা এই হালালা নামের এই হারাম কুকীর্তির সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মুসলিম সমাজকে আরো সচেতন হওয়া উচিত এবং সবাইকে এ বিষয়ে বেশী বেশী লিখা উচিৎ। চিন্তা করেন বিবিসির এ ডকুমেন্টারি কত মিলিয়ন মানুষ শুনেছে এবং তারা মুসলিম সমাজের প্রতি কি ধারণা পোষন করল? চরিত্রহীন এসব মুল্লাদেরকে কারা ঠিক করবে? ধর্মের নামে এসব মনগড়া ফতোয়া দেবার অধিকার এসব মুল্লাদেরকে কে দিয়েছে?

মদীনায় অবতীর্ণ সূরা আল মুজাদালাহ (৫৮:২) আয়াতটি লক্ষ্য করুন মহান আল্লাহ বলেন,

"তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীগণকে মাতা বলে ফেলে, তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। তাদের মাতা কেবল তারাই, যারা তাদেরকে জন্মদান করেছে। তারা তো অসমীচীন ও ভিত্তিহীন কথাই বলে। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।"

এখানে এ কথাটি স্বামী নিশ্চয় আদর করে বলতনা বরং রাগের মাথায় স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদের উদ্দেশ্যই বলা হত। এটি একটি কুসংস্কার ছিল তখনকার আরবদের সমাজে। এবার বুঝেন সে সময়ের আরবরা কোন কোন বিষয়ে কত আদিম (Premitive) প্রকৃতির আবেগপ্রবণ মূর্খ ছিল। দু:খের বিষয় হল সে রোগ আজও একটি  মহল কোন চিন্তা ভাবনা না করে মুসলিম সমাজে ধর্মের নামে চালিয়ে দিতে চায়! 

মুখে কথা উচ্চারণ করলেই কিছু হয়ে যায়না এটিকে সত্যিকার অর্থে বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে বুঝতে হবে। কোন স্বামী তার স্ত্রীকে মুখে "তালাক" বলে দিলেই তালাক হয়ে গিয়েছে বলে ফতোয়া দেয়ার সেই সব মুল্লারা কোরআনের উপরোক্ত আয়াতের মর্ম কি সত্যিকার অর্থে বুঝতে পেরেছেন? বরং স্বামীকে প্রশ্ন করতে হবে "সত্যিই তুমি তোমার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাও কি না"? Did he really mean it? যদি ইয়েস হয় তাহলে তাকে আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ম ও প্রক্রিয়া ফলো করতে হবে যা অল্লাহ সুরা বাকারা ও সুরা তালাকে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন। এই নিয়ম ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করার পরে বলা যেতে পারে যে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে। কেউ মুখে বলল সে নামাজ পড়বে কিন্তু বাস্তবে পড়লা না তাহলে কি তার নামাজ হয়ে গেল?

মুসলিমদের জন্য সুখবর হল মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তর সমাজে এবং প্রায় সকল স্কলারেরা "হালালা বিবাহকে" একটি অবৈধ হারাম প্রথা হিসাবেই বলে থাকেন তবে কিছু সংখ্যক চরিত্রহীন ও অর্থের লোভী মুল্লাদের জন্য ইসলাম ও মুসলিমদের উপর আজ মিডিয়া যে অমানবিক কালো ছাপ লোপনের সুযোগ পায় তা বন্ধ করতে হবে।

তাই আমার এক বন্ধু হয়তবা বিরক্ত হয়ে বলতে বাধ্য হয়েছেন যে "ধর্মের অনেক বিষয় এক ধরণের চর্ম রোগের মত। এটা আমরণ থাকবে" ।

তবে কথা হচ্ছে আমরণ থাকবে ভাবলেও এটাকে ঠাণ্ডা করা যেতে পারে সে জন্য দরকার যুগ-উপযুক্ত জ্ঞানবর্জিত ধর্মীয় নেতৃত্বকে বিসর্জন দিয়ে তাকওয়া ও বিশ্লেষণাত্মক চিন্তা চেতনার ধর্মীয় নেতৃত্ব গড়ার। যারা কোন বিষয়ের গভীরে দৃষ্টি দেয়ার ক্ষমতা রাখে এবং বুঝতে সক্ষম হয় যে ধর্ম পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে স্রষ্টার সৃষ্টির কল্যাণে। আর এ উপকারটি কেন এবং কিভাবে অর্জন করতে হবে তা বুঝাতে হবে বা বুঝাবার দক্ষতা ধর্মীয় নেতৃত্বের মাঝে থাকতে হবে। কেননা কারো ধর্ম পালন বা না পালনে স্রষ্টার কোন ক্ষতি বা উপকার করার ক্ষমতা তার সৃষ্টির পক্ষে সম্ভব নয়। আবার কোন এক বিশেষ যুগের বিশেষ কালচার বা সাংস্কৃতিক কিচ্ছা কাহিনীর  আসল  প্রেক্ষাপঠ না জেনে ধর্ম পালন হচ্ছে বলে ফতোয়া দিয়েও সম্ভব নয়। যেহেতু আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (স:) এসবের কথা কখনও বলেন নাই।

যে ভিডিওটির কথা উপরে উল্লেখ করেছিলাম তা নিম্নে দিলাম।

অনেকে হয়তবা বলতে পারেন অন্যান্য ধর্মের পাদরী পুরোহিতদের কুকীর্তি ও কেলেন্কারির (Scandal) তুলনায় ইসলামে এখনও অনেক কম। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তাই বলে কি আমরা নিরব থাকতে পারি? উপরের সে রিপোর্টটি প্রকাশের পর অমুসলিমরা কিভাবে ইসলামের ব্যাপারে বদনাম ছড়াতে সক্ষম হচ্ছে শুনতে নিচের ভিডিওটি দেখেন।

ভিডিওটি লন্ডন হাইড পার্কের স্পিকার্স কর্নারে ধারণ করা বেশ কোলাহলের মাঝে কথা হচ্ছে খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন।

Comments are closed.