দুঃসহ রাজনীতির দুর্বিপাকের হালনাগাদ হালচাল

বাংলাদেশের রাজনীতির এখন আর কোনো দল-বেদল নেই। রাজনীতির দুঃসহ বেদনা এবং সীমাহীন যাতনা প্রত্যেক মানুষকে কমবেশি ভোগাচ্ছে। অনৈতিক কর্মকাণ্ড, বেআইনি তৎপরতা এবং মিথ্যাচারে ভরপুর উল্লম্ফনে রাজনীতির বাতাস বিষাক্ত ও ভারী হয়ে গেছে। ফলে বাতাস তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে এবং রাজনীতির বাঁকে বাঁকে নানান দুর্বিপাক সৃষ্টি করে চলেছে। এই দুর্বিপাকে সবচেয়ে বিপদে আছেন ক্ষমতাসীন হোমরা-চোমরা এবং তাদের দোসর কালো টাকার মালিক, দুর্নীতিবাজ আমলা-কামলা এবং চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী পেটোয়া বাহিনীর সদস্যরা। দ্বিতীয় সারির বিপদগ্রস্তরা হলেন দেশের নিরীহ জনগণ এবং সর্বশেষ সারিতে রয়েছেন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা।

সাম্প্রতিককালের রাজনীতিতে যে আকাল শুরু হয়েছে, তাতে মানুষের চিন্তা-চেতনায় এক সার্বজনীন বিকলাঙ্গতা স্পষ্ট। অনেক জ্ঞানী এখন বোকাদের মতো কথা বলছেন, আবার বোকারা মহাজ্ঞানীর মতো আচরণ করছেন। মানুষের দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে পড়েছে এবং অনুভূতি একেবারেই ভোঁতা হয়ে গেছে। মানুষ বুঝতে পারছে না, কখন আনন্দ-ফুর্তি করতে হবে এবং কখন আহার-বিশ্রাম কিংবা নিদ্রায় সময় ব্যয় করতে হবে। মানুষের প্রতিবাদ করার ক্ষমতা এখন যেকোনো দুর্বল ক্ষুদ্রকায় গৃহপালিত পশুপাখির সাথে তুলনীয়। বেশির ভাগ মানুষের কষ্টের ‘লিঙ্গান্তর’ ঘটেছে। তারা পুরুষ হলে নারীর মতো কোমল সুরে কথা বলছেন এবং নারী হলে পুরুষের মতো কথাবার্তায় বজ্রপাতের আবহাওয়া সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন। লোকজনের কথাবার্তা শুনলে মনে হয়, তারা যেন একেকটা হরবোলা হয়ে গেছেন। তাদের নিজস্ব ভাষা বলতে তেমন কিছু নেই বললেই চলে। মালিকের শেখানো বুলির বাইরে তারা ‘ওরে মাগো- ওরে বাবাগো, ক্ষিধে পেয়েছে- বাথরুমে যাবো’ ইত্যাদি নির্দোষ ও অপরিহার্য শব্দমালা উচ্চারণ করতেও ভয় পাচ্ছেন।

রাজনীতির দুর্বিপাকে পড়ে বিএনপির মতো বৃহত্তম দল নিজেদের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা হারিয়ে ছোট ছোট দল কিংবা গোষ্ঠীর পেছনে ঘুরঘুর করছে। আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসররা দুর্বিপাকের প্রভাবে কখন যে কী বলছেন, তা যেমন তারা নিজেরা বুঝতে পারছেন না, তদ্রƒপ তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী, শত্রু-মিত্রসহ আমজনতাও বুঝতে পারছেন না। ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন এবং ‘স্বয়ংক্রিয়’ পদ্ধতির নির্বাচনী খেলায় মন্ত্রী-এমপি হওয়া লোকজনের বিরাট একটি অংশ পদ-পদবি বঞ্চিত হয়ে বেসামাল আচরণ শুরু করেছেন। তাদের কেউ কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন পর্যন্ত করেছেন। অনেকে বিগত ৩০ ডিসেম্বরের ভয়াবহ ও জঘন্যতম নির্বাচনী প্রহসনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে আরম্ভ করেছেন। ক্ষমতাসীন দল ও তাদের রাজনৈতিক দোসরদের কিছু হোমরা-চোমরার এহেন আচরণের মধ্যে সবচেয়ে আশ্চর্য লেগেছে, জনৈক শীর্ষ নেত্রীর হঠাৎ এবং অদ্ভুত পরিবর্তন। তাকে গত ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছরে একটিবারের জন্য হাসতে দেখিনি- অথচ তিনিই মন্ত্রিত্ব হারিয়ে হঠাৎ হাসতে আরম্ভ করে দিয়েছেন।

সংসদের কথিত বিরোধী দল হিসেবে যাদেরকে হরবোলা বানানো হয়েছে, তারা ক্ষণে ক্ষণে স্মৃতিভ্রমের শিকার হয়ে মালিকের শেখানো বুলি ভুলে গিয়ে তাল-বেতাল কথাবার্তা বলে সব কিছুতে তালগোল পাকিয়ে ফেলছেন। তাদের আসল মালিক-নকল মালিক, দিনের মালিক-রাতের মালিক এবং রঙ্গমঞ্চের মালিকদের তাপ-চাপ, বুদ্ধি-পরামর্শ এবং ঠ্যালা-গুঁতোয় সং মার্কা বিরোধী দলের হোমরা-চোমরাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার উপক্রম। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুর মধ্যে জীবনের সার্থকতার সন্ধান করছেন এবং বিলাসবহুল সাজসজ্জা ছেড়ে কবরের সন্ধানে আত্মনিয়োগ করেছেন।

রাজপথের বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া দলগুলো বিগত ৩০ ডিসেম্বরের সাজানো-পাতানো-পূর্বপরিকল্পিত এবং মানুষজনকে বোকা বানানো সংসদ নির্বাচনের আগে ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্ট নামের যে রাজনৈতিক জোট করেছিল, যেগুলো এখন লোক হাসানো বায়োস্কোপে রূপান্তরিত হয়েছে। ঐক্যফ্রন্ট এবং যুক্তফ্রন্টের কোন নেতা কার সাথে কোন রাতে কোন বাসায় বসে কিরূপে লেনদেন করেছেন, তা নিয়ে এখন প্রকাশ্যেই অনেকে বলাবলি করছেন। এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব:) অলি আহমেদ বীর বিক্রম সেদিন প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের আর্থিক কেলেঙ্কারি, লেনদেন এবং রাজনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনলেন। রাজনীতি সংশ্লিষ্ট লোকজন আশা করেছিলেন, কর্নেল অলি যেসব অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে উত্থাপন করেছেন তারা নিশ্চয়ই প্রতিক্রিয়া দেখাবেন। বাস্তবে কিন্তু প্রতিক্রিয়া দেখানোর মতো কোনো সাহস আজ অবধি দেখাতে পারেননি কেউ।

রাজনীতির দুর্বিপাকে পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আসলে হিসাব মেলাতে পারছে না যে, তারা কিভাবে কার মারফত এবং কী উদ্দেশ্যে একটি ভয়াবহতম ঐতিহাসিক দায় ও ন্যক্কারজনক ভোট কেলেঙ্কারির বদনাম মাথায় নিয়ে প্রায় ৯৭ শতাংশ সংসদীয় আসন দখল করে ক্ষমতাসীন হলো। তাদের পুরনো বন্ধু ভারত এবং নতুন বন্ধু চীনকে কিভাবে সামলানো হবে তা নিয়ে যেমন দুর্বিপাক শুরু হয়েছে, তেমনি ৩০ ডিসেম্বরের নায়ক-মহানায়ক তথা পুলিশের থানাপর্যায়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং জেলার দায়িত্বে নিয়োজিত এসপিদের আগামী দিনে কিরূপে সামলানো হবে, তা নিয়েও চিন্তা করতে হচ্ছে।

বিগত সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সমগ্র বাংলাদেশের প্রশাসনযন্ত্রে যেভাবে পুলিশি আধিপত্য শুরু হয়েছিল, তার রেশ থেকে রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গই রক্ষা পায়নি। নির্বাচনপূর্ব সময়ে পুলিশই ছিল আওয়ামী লীগের ‘আওয়াম-হাসিস’ এবং মাহবুব। কারণ, তারা যেমন নির্বাচনী নকশা বাস্তবায়ন করেছে, তেমনি অসাধারণ দক্ষতা ও কৌশলের মাধ্যমে প্রশাসনের সব বিভাগের ওপর কর্তৃত্ব ও হুকুমত প্রতিষ্ঠিত করেছে। ফলে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে পুলিশ তাদের সেই কর্তাগিরি স্বেচ্ছায় ত্যাগ করবে, এমন কথা কোনো নির্বোধও ভাবতে পারে না। এ অবস্থায় ভুক্তভোগীরা দুঃসহ দিনগুলোতে কিরূপে সময় পার করছেন তা সহজেই অনুমান করা সম্ভব।

সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ-দুর্দশা সর্বকালেই কমবেশি ছিল। কিন্তু বর্তমানের দুর্দশার সীমা-পরিসীমার সাথে তুলনা করা যায় এমন ঘটনা জাতির অতীতকালে একটিও নেই। বর্তমানকালে জনগণের সবচেয়ে বড় বিপত্তি হলো তাদের জাতীয়ভাবে মিথ্যা কথা শুনতে হচ্ছে, মিথ্যা ঘটনাকে সত্য বলে স্বীকার করতে হচ্ছে এবং মিথ্যার বেসাতির সপক্ষে ক্ষমতাসীনদের নেক নজরের বদৌলতে আনন্দ-ফুর্তি করতে হচ্ছে। তারা ‘ডাণ্ডাওয়ালা’দের ইশারায় আনন্দ উৎসব করতে বাধ্য হচ্ছেন অথবা একইভাবে তাদের হুকুমে কান্নার মহরত দেখাতে হচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের চিন্তার উর্বরতা, শরীরের কর্মক্ষমতা এবং সুখী মনে বেঁচে থাকার আকাক্সক্ষা মারাত্মক দুর্বিপাকে আবর্তিত হয়ে উগান্ডা বা বুরুন্ডির মতো দেশের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।

দুঃসহ গণতন্ত্রের কবলে পড়ে সাধারণ মানুষের মন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ মানুষের মন খারাপ; কেউ কেউ আবার বিষণœতার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। সামর্থ্যবানেরা বাক্সপেটরা গুছিয়ে বসে রয়েছেন ক্রান্তিকালের আশঙ্কায়। ধড়িবাজরা ইতোমধ্যেই তাদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যা এবং নগদ টাকার পাহাড় বিদেশের নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমলা-কামলারা এক ধরনের হীনম্মন্যতা ও অপরাধবোধের কারণে সাধারণ মানুষকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেছেন। অন্য দিকে, সাধারণ মানুষের সর্বাত্মক ধিক্কার এবং মুখনিঃসৃত অভিমানের বিষবাষ্পে পরিবেশ-পরিস্থিতি ক্রমেই হতাশার দিকে যাচ্ছে। মানুষের মন কোনো কোনো ব্যক্তি, শ্রেণী বা পেশার প্রতি এতটাই বিরূপ যে; তারা এমনকি, খোদায়ি গজবের জন্য হররোজ প্রার্থনা শুরু করে দিয়েছেন। এ অবস্থায় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা কারো অসুখ-বিসুখের কথা শুনলে মানুষ আশায় বুক বেঁধে আপন মনে বলে ওঠে- এবার হয়তো কিছু একটা হবে।

রাজনীতির দুর্বিপাকে বিএনপি-জামায়াত জোট এবং তাদের নব্য মিত্র ঐক্যফ্রন্টও কম আক্রান্ত হয়নি। নির্বাচনপূর্ব ড. কামাল হোসেনকে সবাই একবাক্যে মহান উদ্ধারকর্তা, ক্রান্তিকালের কাণ্ডারি এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মহানায়ক বলে ধ্যানজ্ঞান শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচন-পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের কারণে তার ভক্তরা এখন এই বয়োবৃদ্ধ ও সম্মানিত ভদ্রলোক সম্পর্কে এমন অসম্মানজনক ও অভদ্রোচিত কথাবার্তা বলা শুরু করেছেন, যার কিংদংশও যদি তিনি শুনতেন তবে হয়তো তার কর্মস্থলের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে তিনি নিজের বিষণœতা থেকে মুক্তি লাভের উপায় খুঁজতেন। ঐক্যফ্রন্টের অন্যান্য নেতা যেমন- ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না, আ স ম আব্দুর রব, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী প্রমুখ নেতার কথাকর্ম এবং আচরণে স্পষ্ট হতাশা ও উদভ্রান্তির লক্ষণগুলো পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোটের প্রধান শরিক, জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে পর্দার আড়ালে শুরু হয়েছে নানামুখী তৎপরতা। ইতোমধ্যেই জামায়াত ভাঙার একটি প্রচেষ্টার কথা দেশবাসী জেনেছেন। জামায়াতের মূল অংশ ও খণ্ডিত অংশ কি লোক দেখানো, নাকি সত্যিই তারা আদর্শিক ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে দ্বিমতের কারণে আলাদা হয়েছেন, তা নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহ রয়েছে। অনেকে এ কথাও বলাবলি করছেন যে, সরকারের কূটচালে পা দিয়ে যারা জামায়াত থেকে আলাদা হয়েছেন, অবস্থার প্রেক্ষাপটে তারা সর্বদিক ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন মাত্র। কথিত বি টিম ইতোমধ্যেই দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তারা নিজেদের ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি’ বলে পরিচয় দিয়ে সর্বমহলের সাথে সিনা টান করে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন। অন্য দিকে, জামায়াতের মূল অংশও প্রকাশ্যে সভা-সমিতি-সেমিনার এবং সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে বেশ তৎপরতা দেখাচ্ছে; যা তাদের সহযোদ্ধা বিএনপিকে অনেকটা ভাবনায় ফেলে দিয়েছে।

মালিকদের তাপ-চাপ, বুদ্ধি-পরামর্শ এবং ঠ্যালা-গুঁতোয় সং মার্কা, বিরোধী বিএনপির জন্য এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং তাকে দ্রুত কারাগার থেকে মুক্ত করার ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারা। বেগম জিয়াকে কেন্দ্র করে দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের যে আবেগ-অনুভূতি রয়েছে তা যদি বিক্ষোভে রূপ নেয়, তা সরকারের জন্য যতটা বিপত্তির কারণ হবে, তার চেয়েও বেশি উদ্বেগের কারণ হতে পারে দলের কিছু শীর্ষ নেতার জন্য বিশেষ করে যারা বেগম জিয়ার আইনি বিষয়গুলো তদারক করছেন। বিএনপি অফিসগুলোতে এ কথা সচরাচর আলোচিত হয় যে, এক শ্রেণীর আইনজীবী রয়েছেন যারা বার পলিটিক্স অর্থাৎ ঢাকা বার এবং সুপ্রিম কোর্ট বারে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য বেগম জিয়ার মামলাগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে চলেছেন। বেগম জিয়া যদি এই চক্র থেকে মুক্ত হতে না পারেন, তবে আইনি প্রক্রিয়ায় তার কারামুক্তি সুদূরপরাহত বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে।

৩০ ডিসেম্বর-পরবর্তী দুর্বিপাকে বিএনপির দ্বিতীয় সমস্যা হলো, দলের মধ্যকার একটি রক্ষণশীল সিনিয়র গ্রুপ যারা দীর্ঘদিন ধরে প্রচার করে আসছিলেন, ‘তারেক রহমানকে দিয়ে রাজনীতি হবে না’। তারা কূটকৌশল বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এ কথাও বলে আসছিলেন যে, তারেকের পরিবর্তে যদি তার স্ত্রী রাজনীতিতে আসেন, তবে ভালো হয়। তারা অস্বস্তিকর অবস্থার সুযোগ নিয়ে এ কথা দশ মুখে প্রচার করছেন যে, ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করা বিএনপির মস্তবড় ভুল ছিল। দ্বিতীয়ত, যুক্তফ্রন্টের ব্যানারে বি. চৌধুরী, আ স ম রব, মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপির সাথে জোট বাঁধার জন্য দশ পায়ে দাঁড়ানো ছিলেন, যা ড. কামালের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের চেয়ে সর্বাঙ্গীন সুন্দর, সহনীয় ও কার্যকর হতো। সেই অবস্থায় বি. চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের দিকে ঠেলে দেয়া এবং যুক্তফ্রন্ট ভেঙে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে যে রাজনৈতিক বিপর্যয় ঘটানো হলো, তা কার স্বার্থে, কিসের জন্য এবং কিসের বিনিময়ে করা হলো- এসব প্রশ্ন তুলে বহুমুখী বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

সাম্প্রতিককালে সংসদের বগুড়া উপনির্বাচন, বিএনপি দলীয় এমপিদের সংসদে যোগদান, নারী এমপি পদে মনোনয়ন, বিভিন্ন জেলায় অ্যাডহক কমিটি গঠন, ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্তি ইত্যাদি নিয়েও বিএনপি অফিসগুলো সরগরম হয়ে উঠেছে, যাকে রাজনীতির দুঃসময়ের দুর্বিপাক বলা যেতে পারে। এতসব বিপদ-বিপত্তির মাঝে তাদের জন্য সুসংবাদ হলো- পর্দার অন্তরালে দেশী-বিদেশী চতুর্মুখী সাহায্য ও সহযোগিতায় সম্পূর্ণ নতুন মেরুকরণের মাধ্যমে বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে সর্বাত্মক কার্যক্রম চলছে। ঐক্যফ্রন্টের সাথে রাজনৈতিক ঐক্যের পাশাপাশি ভারত-চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের জনৈক সিনিয়র রাজনীতিবিদের নেতৃত্বে বিএনপি এবং তারেক রহমানকে সহযোগিতা করার জন্য আরো একটি নতুন জাতীয়তাবাদী প্ল্যাটফর্ম হয়তো আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য
***********************

সৌজন্যে:  নয়াদিগন্ত

Comments are closed.