ড. আমর খালেদ: আরব বিশ্বে ইসলামী নবজাগরণে তরুণদের আলোক প্রদীপ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

আলহামদুলিল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার জন্য। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক মানবতার মুক্তির দূত, মুবাশশির, নাযির ও রাহমাতাল্লিল আলামীন মুহাম্মাদ ﷺ এর ওপর, তার পরিবার, সাহাবা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) ও সালফে-সালেহীনদের (রাহিমাহুমুল্লাহ) ওপর।

11148707_10153801403446165_8368377784204775852_n

সুন্দরভাবে পড়তে অত্র আর্টিকেলটির পিডিএফটি দেখুন  – http://tinyurl.com/o8k7ysh

‘ওমর ফারুক’ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেনঃ

“ইসলাম- সে তো পরশ মানিক তারে কে পেয়েছে খুঁজি?

পরশে তাহার সোনা হল যারা তাদেরই মোরা বুঝি”।

এই সোনা তখন নিজের স্বার্থে থাকে না, তখন অন্যকে ঝিকিমিকি আলো দেয়, অনুপ্রেরণা দেয়, চলতে সহায়তা করে অনন্ত জীবনের পথে আলো হয়ে। তখন আমরা দেখি একজন একাউন্ট্যান্ট হয়ে যায় ইসলামী ডক্টরেট (পিএইচডি-ধারী), নতুন ব্যক্তিত্ব, একজন অনুপ্রেরণাশীল দায়ী, ইসলামের একজন একনিষ্ঠ সেবক। তিনি হলেন ড. আমর খালেদ (Dr. Amr Khaled) ।

আমর খালেদ মধ্যপ্রাচ্যের সর্বাপেক্ষা ও প্রথম ব্যক্তিত্ব হিসেবে খ্যাতির শীর্ষে রয়েছেন ইসলামের সেবক, প্রচারক ও অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতা ও সামাজিক কার্যক্রমে সফলতার শীর্ষে থাকার জন্য। দ্বিতীয় হিসেবে রয়েছেন আরেক শ্রেষ্ট ব্যক্তিত্ব ড. তারেক আল-সুয়াইদান (Dr. Tareq Al-Suwaidan)। আমর খালেদের জন্ম মিশরে। তিনি তরুণদের নিয়ে কাজ করেন, তাদেরকে অনুপ্রেরণা দেন, কাজের পথে দেখান। আমর খালেদ ইসলামের দিকে আসার পর প্রথমেই তার ইচ্ছাকৃত প্রয়োজন জ্ঞানের দিকে ধাবিত হন।  Cairo University থেকে ১৯৮৮ সালে Accounting এ গ্রাজুয়েশন করেন। ইসলামী স্টাডিজে ডিপ্লোমা করেন ২০০১ সালে আর ইসলামী শরীয়ার বিষয় “Islam & Co-Existence” এর ওপর পিএইচডি করেন ২০১০ সালে  University of Wales, Lampeter থেকে ।

আমর খালেদ একজন মুসলিম টিভি ব্যক্তিত্ব, ধর্মপ্রচারক, মোটিভেশলান বক্তা ও সমাজসেবক। আরববিশ্বে রয়েছে তার লাখ লাখ দর্শক। তিনি স্যাটেলাইট টিভি, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ সাইট ইউটিউবের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের কথা প্রচার করেন এবং নিজে কাজ করে দেখান। আরববিশ্বের আশহত লক্ষ লক্ষ্ যুবকদের আশার প্রদীপ হয়ে শুরু করেছিলেন এবং তার সামাজিক কার্যক্রম The Life Makers (Development Through Faith) প্রজেক্টটি; সেই আশাহতদের আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি দেশে, লক্ষ তরুণদের মাঝে। হাস্যরসসমৃদ্ধ এই ব্যক্তি শিক্ষা দেন ভালোবাসা ও দয়ার।

তিনি “Muslim Reality TV Show” দিয়ে শুরু করেন দুবাই টেলিভিশনে। আমর খালেদের ভাষণ অনলাইনে প্রকাশিত হয়, ক্যাসেটে বেস্ট সেলিং হয়, বিক্রি হয় সিডিতে-ও। তার ওয়েবসাইট প্রায় ২০টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে, বিভিন্ন ভাষায় তার লেকচার নিয়ে কথা হয় এবং বলা হয় অপেরা উইনফ্রের চাইতে বেশি মানুষ তার ওয়েবসাইটে ভিজিট করে (বার্ষিক ২০ লক্ষ ভিজিটর)। তার ভিডিও ইউটিউবে প্রায় ৬০ মিলিয়নবার (৬ কোটি) দেখা হয়েছে এবং সাবস্ক্রাইবার রয়েছে চার লাখের ওপরে। ১৮ মিলিয়নের (১ কোটি ৮৩ লক্ষ) উপরে রয়েছে ফেইসবুক ফ্যান। এগুলো হওয়ার অন্যতম আরেকটি কারণ হলো তিনি নিজেকে অন্যদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম ভাবেন, যেখানে সবার অধিকার রয়েছে নিজেকে তুলে ধরার, কাজে নামার, আশাহতদের আশার আলো পাবার।

তার বেশিরভাগ প্রোগ্রাম IQRAA TV তে প্রচারিত হয় এবং বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেলেও মুসলিম বিশ্বে প্রচারিত হয়।

The 500 most Influential Muslims, 2011 অনুযায়ী The Top 50 এর ২১ তম। The New York Times Magazine এর ২০০৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী তিনি আরববিশ্বের “The world’s most famous and influential Muslim television preacher” এবং তাকে টাইম ম্যাগাজিনে বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালীদের একজন (১৩তম) হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ২০০৮ সালের উন্মুক্ত নির্বাচনে Prospect Magazine (UK) and Foreign Policy (United States) অনুযায়ী বিশ্বের ১০০ জন পাবলিক বুদ্ধিজীবীর মাঝে তিনি ৬ষ্ঠ তম হন। টাইম ম্যাগাজিন তাকে  “Rock star for the Arab world” বলে অভিহিত করেছেন।

তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিশেষত  মুসলিমদের মাঝে আবেগানুভূতি ও আধ্যাত্বিকতার গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য। শান্তভাবে বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেন কিন্তু আবেগের সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্বিক আকর্ষণ মানুষকে অভিভূত করে, কর্মের নতুনত্ব ও ঈমানের মাধ্যমে উন্নয়নের পথে আহবান করে। এভাবে হাজার হাজার মুগ্ধ দর্শককে তিনি তার ধর্মীয়, সামাজিক ও অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতার মাধ্যমে আন্দোলিত করেন, আহবান করেন কাজের দিকে, নতুন প্রজেক্ট তৈরি করতে অনুপ্রেরণা দেন রাসূলে জীবনী থেকে। তিনি আরববিশ্বের তরুণদের সফলভাবে দেখান যে বর্তমান বিশ্বে আমরা যেসব আধুনিক সামাজিক বিষয়াবলীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি, সেগুলোর সমাধানে দরকার ধর্মের প্রাসঙ্গিকতা।

তার খ্যাতি ও প্রভাবের কারণে, ইসলামের লাগামছাড়া প্রসার ও সাফল্যের কারণে মিশরের বামপন্থীরাও তার প্রতি খ্যাপা। তিনি পশ্চিমাদের বিরোধিতায় ‘হিজাব না করা মহা পাপ’ বলেছেন, তাই মিশরের বাম ও সরকারী ফান্ডেড পত্রিকা তার পেছনে লেগেছিল এবং এখনও আছে।

আমর খালেদ সদা হাস্যোজ্জল। এর মানে এটা ধরে নেওয়ার দরকার নেই যে তিনি দ্বীনের ব্যাপারে যেমন-তেমন ও উদাসীন মানুষ। বরং দ্বীন ও তিনি যা করেন সে ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস তিনি। তার হাসির পেছনে রয়েছে শো-গুলোতে কর্মঠ চিন্তা ও অতি যন্তশীল প্রস্তুতির ফসল।

যদিও তিনি কোনো ইসলামিক স্কলার নন, কিন্তু  মুহান্দেসিন এ মসজিদ আল-হুসসারি-তে তিনি বিখ্যাত হন বাগ্মীতা ও সুহৃদয়বান ব্যক্তিত্বময় বক্তা হিসেবে। তার সাপ্তাহিক বকৃতা এতটাই বিশাল জনগোষ্টীর কাছে জনপ্রিয় হয় যে যুবকরা তার লেকচার শুনার জন্য কয়েক ঘন্টা আগে এসে সিট পাওয়ার জন্য বসে থাকতো। বাহিরের রাস্তা মানুষে ভরে যেতো তার কথা শুনার জন্য। সেখানে তার নিয়মিত দর্শক হতো ৪০,০০০ লোক।

তিনি ক্লাসিক্যাল স্কলারদের থেকে ভিন্ন পদ্ধতিতে আগানোর চেষ্টা করেন। তিনি মনে করেন কেবল অভিশাপ, আর জাহান্নামের ভয় দেখানো নয়, বরং আমাদের দরকার ঈমান ও আমালের প্রতি মানুষকে অনুপ্রেরণা দেওয়া, তাদেরকে ভালবাসার কথা বলা।

তিনি অনুপ্রেরণাদায়ক বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেন সেই ৯০ এর দশকে। তখন এটি সীমাবদ্ধ ছিল বাড়িতে ও বিভিন্ন পাবলিক অনুষ্ঠানে। পরবর্তীতে তিনি প্রকাশ্যে মসজিদ, বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম ও স্যাটেলাইট টিভিতে নিয়মিত হন। ইসলামী লেকচার প্রদানে তিনি ১৯৯৮ সালে ফুলটাইম যোগ দেন। এভাবে তিনি আরববিশ্বের তরূণ ও মিডল ক্লাস মুসলিমদের মাঝে জনপ্রিয়তার শীর্ষে চলে আসেন। একাউন্ট্যান্ট এর চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি ধর্ম ও সামাজিকতার মিশ্রণে ধর্মীয় অনুপ্রেরণার মাধ্যমে হয়ে উঠেন আরববিশ্বের টেলিভিশন ও সামাজিক কাজের মুসলিম আইকন হিসেবে। এজন্য বলা হয় তিনি “More popular than Oprah” বা অপেরা উনফ্রের চাইতে বেশি জনপ্রিয় অথবা তাকে বর্ণনা করা হয় “The Phenomenon of Amr Khaled” হিসেবে.

আমর খালেদের কথা মুসলিম বিশ্বের যুবকদের কাছে আধুনিক, মধ্যমপন্থী এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো এগুলো খুবই জনপ্রিয় ও লোকগাহ্য।

তার পরিবার অতটা ধার্মিক ছিলো না। তিনি ১৯৮১ সালের রামাদান মাসে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার প্রয়াস পান। তিনি আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির ইচ্ছা পোষণ করেন। এভাবে তিনি ইসলামের আলোকে নিজেকে পুনরায় আবিষ্কার করেন। সেই ইচ্ছামূলক চিন্তন থেকে রামাদান মাসই তাকে মোড় ঘুরিয়ে দেন ঈমান বা বিশ্বাসের মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব গঠনের ও ভাল মুসলিম হিসেবে গড়ে উঠার। এভাবে দু’দশক সময়ের ব্যবধানে নিজেই হয়ে উঠেন মুসলিম যুবকদের পূণর্জাগরণের প্রতীক হিসেবে।

তার বকৃতা আশা ও অনুপ্রেরণায় ভরা। তিনি চান পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে ভালো উপলব্ধিময় সম্পর্ক গড়ে উঠুক। এ চাওয়ার কারণ রয়েছে অনেকগুলো। তিন লন্ডনে নির্বাসিত থাকাবস্থায় দেখেছেন পশ্চিমের হতাশা, নগ্নতার নির্লজ্জতা ও ভ্রষ্টপথের যাত্রীদের। একইসাথে দেখেছেন তাদের বৈশ্বিক কিছু গুণও। তিনি মনে করেন পশ্চিমাদের এই পথভ্রষ্টতায় সহায়তা করা এবং তাদের ভালো গুণগুলোকে নিজেদের মাঝে সমন্বয় করার জন্য মুসলিমদের উচিৎ সহায়তা করা এবং এক সাথে কাজ করা।

আমর খালেদ আরববিশ্ব ও বিশ্বের মুসলিম যুবকদের খুব সাধারণ ইসলামী আখলাক, বিশ্বাসের প্রতি দৃঢ়তা এবং আধ্যাত্বিক জাগরণে অর্জনের প্রতি আহবান করেন।

তার কাজে ধরণ

Amr khaled

তিনি মনে করেন এই চারটি উপাদানের মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক রয়েছে।

ঈমান অর্থ বিশ্বাস…কিন্তু বিশ্বাসের তো কিছু কর্ম রয়েছে, তাই না? সেগুলো হলো নীতি, নৈতিকতা আর ভালো ব্যবহার।

কিন্তু এই ভালো ব্যবহার ও নীতি-নৈতিকতা কি কেবল নিজের জন্য? নাহ। তাহলে এগুলো আমাকে নিজের ভেতর থেকে অন্যকে সাহায্য করতে হবে, কাজ করতে হবে অন্যের জন্য। এভাবে কেবল ঈমানের মাধ্যমে যে নীতি-নৈতিকতা আসবে সেগুলোর মাধ্যমে অন্যের জন্যও কাজ করতে হবে।

এই অন্যের জন্য কাজ করাটা হবে উন্নয়ন- যার সংমিশ্রণ হবে ঈমান ও নীতি-নৈতিকতার সম্মিলনে (Development Through Faith) ।

সামাজিক উন্নয়ন, রুট লেভেলে ইসলাম ও তিনি

আমর খালেদের উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় অনুপ্ররণা ও ঈমানের জায়গা থেকে মুসলিমরা নিজেরাই নিজেদের সমাজের উন্নতি ঘটাবে। এজন্য তিনি চিন্তা করেন দরকার হবে আন্তঃধর্মীয় ডায়ালগ, সহিষ্ণুতা ও মধ্যমপন্থার। সমাজের ক্রমাগত ভাঙ্গনকে তিনি অশুভ বলে মনে করেন এবং এটা মুসলিম তরুণদের ভবিষ্যত বিপদগ্রস্থ করে ফেলেছে। এজন্য মুসলিমদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে পরিবর্তন ও উন্নতি ঘটানোর। এজন্য তিনি একটি প্রোগ্রাম হাতে নেন যাকে The Life Makers বলা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল সমাজের উন্নয়ন যা আরববিশ্বে তরুণদের মাঝে নবজাগরণের মানসিকতা তৈরি করেছে।

লাইফ মেকার মডেলের মাধ্যমে আমর খালেদ মুসলিমদেরকে অনুপ্রাণিত করেন ইসলাম দিয়ে সমাজ ও জীবনের উন্নয়ন এবং পরিবর্তনের জন্য। যেহেতু তার সূত্র ছিল Development Through Faith  আর এজন্য তিনি প্রথমে রাসূল ও সাহাবাদের জীবনের উন্নয়ন ও পন্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন অন্য প্রোগ্রামে। এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে রাসূল ও সাহাবাদের সেই সব Faith গুলোকে বাস্তবে কার্যকারী করতে Development প্রোগ্রাম হাতে নিতে প্রস্তুতি চলছে আর এই লাইফ মেকারস প্রোগ্রামটি-ই সেই প্রস্তুতি, পদ্ধতি আলোচনা ও প্ল্যানিং এর ধারাবাহিক আলোচনার সফলপ্রাপ্তির দিক-নির্দেশনা। এই দিক থেকে ইসলামী আন্দোলন বা দাওয়াতে সফলতার সুত্র শুরু হয় ঈমানের দাওয়াত দিয়ে এবং এটির গুরুত্ব দিয়েছেন বিখ্যাত মুফাসসির ডা. এসরার আহমাদ, শাইখ আবুল হাসান নদভী (রাহিমাহুমুল্লাহ) ও তার সুযোগ্য ছাত্র এবং বর্তমান শতাব্দীর মুহাদ্দিস শাইখ আকরাম নাদভী।

এখানে আমর খালেদের কৃতিত্ত্ব কি?

তার কৃতিত্ত্ব হলো ঈমান মূল, কিন্তু ঈমানের কাজ কি? এইখানে ক্লাসিকাল স্কলাররা ফুল স্টপ দিচ্ছে কেন? ঈমানের তো কাজ আছে, তাই নয় কি? হ্যা, তিনি এই ঈমানের মাধ্যমে কাজ করেরন, আশা দেখান পরিবর্তনের, উন্নয়ন ও গড়ার- এটাই সবচেয়ে বড় পার্থক্য অন্যদের চিন্তার সাথে।

িিি

তিনি প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্যে আসার জন্য কথা বলেন; সততা, বিনম্রতা ও ভদ্রতা এগুলোর অন্যতম। তিনি বিশ্বাস করেন উন্নয়ন করতে হলে অবশ্যই শিকড়/মূল থেকে করতে হবে (From The bottom To Up)(এবং তুরস্কে দুই দিক থেকেই এ পরিবর্তন এসেছে From The bottom To Up & From Up To Bottom.। (এদিক থেকে আমার মনে হয় সামাজিকভাবে উন্নয়ন বা পরিবর্তন করতে গেলে অবশ্যই From bottom To Up করতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই আর রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিবর্তন করতে গেলে ও টিকে থাকতে গেলে তুরস্কের মডেলে যাওয়া-ই ভালো।) এজন্যই তিনি “Faith Based Development” প্রোগ্রাম চালু করেন এবং এভাবে কমিউনিটি উন্নয়নে Faith কে অনুপ্রেরণা ও গাইড হিসেবে ব্যবহার করেন এবং উনার এই The Life Makers টি মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই রয়েছে যেখানে তিনি কৃষি, শিক্ষা, ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ সেবা এবং অন্যান্য আরো কিছু বিষয়ে জাগরণ তৈরি করেছেন এবং উন্নয়নের ধারায় রয়েছে (তিনি তার ওয়েবসাইটে ২৬টি প্রায়োরিটি তৈরি করেছিলেন এবং যবকদের কাছ থেকেও হাজার হাজার সাড়া পেয়েছিলেন এগুলোর ভিত্তিতে)। এই প্রজেক্ট করতে গিয়ে তিনি প্রায় দু’বছর ধরে চ্যানেলসমূহের মাধ্যমে স্বপ্ন দিতে থাকেন লক্ষ্য তরূণদের। এবং যেই আরবে কিছু করার চিন্তা করতো না, সেই আরবের লোকেরাই প্রচূর পরিমাণে এই স্বপ্নে সাড়া দেয় এবং কেবল আরববিশ্ব-ই নয়, অন্যান্য দেশ-ও যেমন লন্ডন এই ধরণের প্রজেক্ট তৈরি হতে থাকে।

এছাড়া তিনি এর UK-based “Right Start Foundation প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান।

4

যুবক শ্রেণীর ওপর আমর খালেদের প্রভাব অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক – উভয়ভাবেই; মুসলিম উম্মাহ নির্বিশেষে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যেই বিশাল জনগোষ্টী নারী ও যুবতীরা হিজাব করতো না, তারা তার হিজাবের ওপর লেকচার শুনে রাতারাতি-ই হিজাব করা শুরু করে দিতো; অথচ তারা এর আগে হিজাব পরিধাণের চিন্তাও করতো না।

তিনি হিজাবের একটি লেকচার ঐসব মুসলিম নারীদের ওপর ক্রোধোদীপ্ততা প্রকাশ করেন যারা পশ্চিমাদেরকে অনুকরণ করার চেষ্টা করেন আর হিজাব করেন না। তিনি বলেনঃ “কে নারীদেরকে বেশি সম্মানিত করেছে? ইসলাম নাকি যারা নাকি ম্যাচের ওপর অর্ধনগ্ন নারীদের ছবি অংকন ব্যতীত একটা ম্যাচও বিক্রি করতে পারে না? তারাই কি নারীদের সম্মানিত করেছে নাকি মন্দ আচরণ করেছে নারীদের প্রতি? ইসলাম কি নারীদের সম্মানিত করেনি? তাদেরকে আবৃত করেছে, এসব শোষণ থেকে মুক্ত করেছে”

তিনি বিশ্বাস (ঈমান) এর ব্যবহারকে আধ্যাত্বিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্ব দেন।

তিনি খুবই কার্যকরীভাবে মেডিয়াগুলোকে ব্যবহার করেন। আরবীতে স্যাটলাইট টিভিতে লেকচার, অডিও, ম্যাগাজিন এবং ইন্টারনেট। সবকিছুই তিনি ব্যবহার করেছেন ইসলামী পূণর্জাগরণের জন্য। এদিক থেকে আরববিশ্বের দ্বিতীয় ইসলামি  ব্যক্তিত্ব ড. তারেক আল-সুয়াইদান-ও একই কাজ করেছে এবং সবগুলো মেডিয়াকে খুবই দক্ষতার সাথে ব্যবহার করেছেন ইসলামী জাগরণের জন্য।

তিনি বাস্তবিক উদাহরণ ব্যবহার করেন। তরুণদেরকে হৃদয় থেকে উৎসারিত কথা দিয়ে আহবান করেন ইসলামের কাছে আসতে এবং ভবিষ্যত সমাজের উন্নয়ন ও অধিকতর ভালোর জন্য কার্যকর হতে।

রাজনীতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমি রাজনীতি করতেছি কিন্তু সেটা আমার নিজস্ব পদ্ধতিতে। পার্টি করেই যে রাজনীতি করতে হবে সেটা নয়। আমি বিশাল জনগোষ্টীকে ইসলামের পথে আনতেছি।

মিশরের আরব বসন্তের পর তিনি প্রথম রাজনৈতিক দল গঠন করেন, সভাপতির দায়িত্ব পান এবং সাংসদ হিসেবেও জয়ী হন। সেনা অভ্যুত্থানের পর তিনি পদত্যাগ করেন। তিনি মনে করতেন যে প্রেজিডেনশিয়াল ইলেকশনে সবার মত সঠিকভাবে প্রয়োগ হয়নি। এজন্য দরকার মধ্যবর্তী কোনো তৃতীয় দল যাকে সবাই বিশ্বাস করবে। তিনি এখানে ‘রাজনীতি ও উন্নয়ন’ একই সাথে দেখেছিলেন মিশরের সংকাটবস্থায়।

আমর খালেদের প্রাথমিক শ্রোতা আরববিশ্বের ১৫-৩৫ বছরের বয়সীরা। তিনি বিশ্বাস করেন যে এই বয়সের মানুষেরাই ইসলামী বিশ্বে পরিবর্তনের জন্য সর্বাপেক্ষা বেশি উপযোগী। তিনি তার প্রাত্যহিক জীবনের বোধগম্য ভাষা, বন্ধুসূলভ আচরণ ও লেকচারে আনন্দদানের জন্য বিখ্যাত।

তার জনপ্রিয়তার কারণে তার লেকচার দেওয়া নিষিদ্ধও করা হয় এবং তাকে লন্ডনে নির্বাসিত করা হয়েছিল যখন মসজিদেই ৪০,০০ হাজার নিয়মিত দর্শক হতো তার কথা শোনার জন্য। এবং তিনি আল-জাজিরার সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে খ্যাতিকে ভিন্নভাবে দেখা হয়, ভয় করা হয়। এর কারণ উনি প্রকাশ্যভাবে বলেননি কারণ উনি মিশরে থাকেন। ড. তারেক আল-সুয়াইদান ঠিকই বলেছিলেন। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ লোকেরা স্বাধীনতা চায়, অধিকার চায় আর এক্ষেত্রে রাজকীয় পরিবারের চাইতে অন্যকেউ বিখ্যাত হলে তাদের গদি রক্ষার সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

Most Important and Influential TV Shows

তিনি টিভি শো করেন প্রতি রামাদানে এবং একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ টপিকে আলোচনা রাখেন। রামাদান মাসে সকলেই মোটামুটি ভালো সময়ের মধ্য দিয়ে যায় এবং এতে অনুপ্রাণিত করার উত্তম সময় হিসেবে তিনি একে বেছে নিয়েছেন। আমর খালেদের অনেকগুলো টিভি শো রয়েছে।

আমি রিসোর্সগুলো নিচে পিডিএফ বা লিংক আকারে দেবো। সেখান থেকে ডাউনলোড করতে পারেন।

The Life Makers

যদি প্রশ্ন করে আমর খালেদ কেন একটি আলোক প্রদ্বীপ? কেন একটি নাম একাধারে একটি প্রতিষ্ঠান, একজন লেখক, একজন ইসলামী বক্তা, অনুপ্রেরণার প্রতীক? তার সুন্নাহর পথে চলার বাস্তবিক রুপ যেখানে আধুনিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও ঈমানী চেতনায় চলেছে, বাস্তবতায় সেট ফিরে এসেছে “লাইফ মেকারস” Life Makers (Arabic: صناع الحياة)প্রোগ্রাম, যেটি তার জীবনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে করেছিলেন এবং প্রজেক্ট আকারে চালু রয়েছে বিভিন্ন দেশে। যেহেতু তিনি Development Through Faith বা “ঈমানের মাধ্যমে উন্নয়ন” কথাটিকে মটো হিসেবে নিয়েছেন। এই প্রোগ্রামটি করার আগে তাই তিনি প্রথমে সাহাবাদের ঈমান ও আমালের কথা নিয়ে প্রোগ্রাম করেছেন যাকে ‘Wa Nalqa al-Ahebba’ (Meet the Beloved) বলা হয়। এরপরে এটি বাস্তবে রুপ দিতে তিনি পরবর্তী অংশ Work বা কাজে নামবেন, এর জন্যই তিনি বিস্তারিত তার কাজের ধরণ, কোন কোন ক্ষেত্রে কাজ করবে, কীভাবে করবে, সবগুলো দিক একে একে ধারাবাহিক প্রোগ্রামে বর্ণনা করেছেন। এই শো-টি তিনি করেছিলেন ২০০৪-২০০৫ এ ২ বছর ধরে। এজন্য তিনি ফিল্ড রিসার্স করেন, তরুণদের কাছ থেকে তাদের চাহিদা, ইচ্ছা, তাদের স্বপ্ন নিয়ে আলোচনা করেন, জানতে চান তাদের জীবনের প্রায়োরিটির দিকগুলো। এটার লক্ষ্য ছিলো ধর্মীয় কথা থেকে কাজে নামা (ঈমান ও আমল Eman Then Work=Development)। কেবল কথাতে সীমাবদ্ধ থাকা মানে ধর্মের প্রকাশ না ঘটা। এভাবে তিনি একে বাস্তবে রুপ দেন। একে তিনি একই সাথে আরব মুসলিম যুবকদের জাগরণের পথে নিয়ে আসেন। প্রথমদিককার কয়েকটি পর্ব দেখলে বুঝতে পারবেন কীভাবে এই অসাধারণ চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে একজন ব্যক্তির মধ্য দিয়ে। তিনি এই লাইফ মেকারস প্রজেক্টের মাধ্যমে আরবে জাগরণ ঘটান অনেকগুলো ক্ষেত্রে।

On the Path of the Beloved

আমাদের দেশের এক্টিভিস্টদের প্রধান সমস্যা যদি বলতে বলেন তবে বলতে হবে রাসূলের জীবনের প্রতিটি গতির বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্বিক শিক্ষার অনুপলব্ধি। এজন্য আমাদের সিরাহর ইতিহাসের পাঠ নিরস ও অশিক্ষার মাঝেই কেবল রয়ে যায়নি, এ থেকে বঞ্চিত হয়েছে ইসলামী আন্দোলনের বুদ্ধিবৃত্তিক সুন্নাহর পদ্ধতি, প্ল্যান ও স্ট্রাটেজি সম্পর্কেও। সেজন্য সফলতার মুখও দেখতে পায়নি। এই প্রোগ্রাম দেখার সাথে সাথে হয়তো আপনার মনে হবে আমি আসলেই গভীরভাবে কখনই রাসূলের জীবনী জানি-ই-নি!!

রাসূলের সারা জীবনে কত জায়গায়, কত পদ্ধতিতে, কোনভাবে, কত কিছু করেছে, সেগুলো আমরা সিরাহর সাধারণ পাঠে বুঝি না। কিন্তু আমি যদি বলি রাসূলের হেরা গুহায় যাওয়া নিয়ে ইসলামী আন্দোলন, সফলতা, মানবতার মুক্তি ইত্যাদি নিয়ে প্ল্যান, স্ট্রাটেজি কত গভীরে ছিল। খাদিজা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) মাঝে মাঝে হেরা গুহায় যেতেন, থাকতেন, এতে স্বামী-স্ত্রীর পরিবারে প্রশান্তি আনার কোন পদ্ধতি রয়েছে? স্বামীর সাথে হেরা গুহায় স্ত্রীর থাকার সাথে পরিবারের প্রশান্তির সম্পর্ক কি? এর সাথে পারিবারিক সুখের প্ল্যান কোথা থেকে আসল? হুম, অনেক কিছুই অজানা সিরাহতে। আপনাকে দেখতে হবে মাইক্রোস্ক্রোপ দিয়ে…সাধারণ চমশা যেখানে ১% দেখতে ব্যর্থ, মাইক্রোস্কোপ সেখানে ৯৯% দেখতে পায়। রাসুলের জীবনীকে আরেকবার মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখার চেষ্টাই করা হয়েছে এই প্রোগ্রাম-এ— সাথে রয়েছে সমকালীন চিন্তা, কার্যবিধি, পরিকল্পনা, স্ট্রাটেজি ইত্যাদির বর্ণনা ।

“নিশ্চয় কিছু কিছু কথার মাঝে যাদুর প্রভাব রয়েছে”। রাসূল ﷺ এটি বলেছিলেন একজন অমুসলিমের বক্তব্য সম্পর্কে। সিরাতের ক্লাসে On the Path of the Beloved (Arabic: على خطى الحبيب) কত দর্শকই না কাঁদতে থাকে।

তাঁর কথায় থাকে যুক্তি, আবেগ, শিক্ষা ও সমকালীন প্রাসঙ্গিক কর্ম সমন্বয়ের চিন্তা-পরিকল্পনা। এ থেকে একজন ব্যক্তি যেমন কাঁদতে থাকে, একই সাথে এই আবেগের বুদ্ধিবৃত্তিক ছোঁয়ায় থাকে ইসলামি পরিকল্পনা, স্ট্রাটেজি ও কর্মের উদ্দীপনা।

এটি ২০০৫ সালে রামাদান মাসে রাসূল এর কবরের পাশে, ঠিক মসজিদ উন-নববীর পাশেই স্টুডিও স্থাপন করে আলোচনা করেন চমৎকারভাবে। এতে রাসূলের জীবনের পথ চলা থেকে শুরু করে জীবনের কষ্টের মূহুর্তগুলকে হাইলাইট করে সেগুলোর মাঝে কী কী কর্মপন্থা, পদ্ধতি ও স্ট্রাটেজি নিয়েছেন, সেগুলোর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শিক্ষা থেকে শুরু করে আজকের পৃথিবীর ইসলামি মননদের জন্য কী পরিকল্পনা হওয়া দরকার সেগুলোর জীবন্ত সিরাহর রুপ দিয়েছেন। মূলত মুসলিমরা রাসূলের জীবনকে সমকালীন প্রাসঙ্গিকটাকে বর্জিত করেছে বলেই এত দুর্দশা এবং এ থেকে উত্তরণের জন্য, রাসূলের জীবনী থেকে সেই শিক্ষা নিয়ে নব জাগরণের উদ্দেশ্যেই এই অসাধারণ প্রোগ্রামটি করা হয়েছিল। মহিলা সাহাবীদের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো উঠে এসেছে। ইসলামের ইতিহাসে মহিলাদের এত গুরুত্ব ছিল তা অবিশাস্য, যা সিরাহর বিভিন্ন অংশে আলোচিত হয়েছে।

Contemplation on The Quran (Insights into the objectives of the Qur’anic verses)

আরেকটি চমৎকার প্রোগ্রাম ছিল Quranic Though বা Contemplation on The Quran বা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা। দীর্ঘ দশটি বছর এই চিন্তাটা আমর খালেদকে তাড়া করে বেড়িয়েছে। বিশেষত প্রতি রামাদান মাসেই তাকে এই চিন্তায় আচ্ছন্ন করে রাখতো। তিনি ভাবতেন মুসলিম বিশ্বের কুরআন পাঠ প্রকৃতপক্ষে কুরআনের সঠিক উপলব্ধি ও উদ্দেশ্যের সাথে যায় না। এজন্য তাদের কাছে কুরআন এক অপরিচিত গ্রন্থ মনে হতো। কেউ হয়তো পড়েই যায়, কোনো উদ্দেশ্য খুঁজে পায় না আয়াতগুলোর মাঝে। কেউ হয়তো আয়াতের অর্থ বুঝে কিন্তু এরপরের সব আয়াতগুলোর সাথে সম্পর্ক খুঁজে পায় না। আবার অনেকেই সবগুলো আয়াত উপলব্ধি করতে পারে কিন্তু পূর্ণ সূরার উদ্দেশ্য বা বিষয়বস্তু কী, সূরাটির মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের কাছে কী চাচ্ছে এবং এগুলো আমাদের জীবনের সাথে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত, সেগুলো খুঁজে পায় না।  এইসব চিন্তা করেই এই বই ও প্রোগ্রামের পদচারণা যা পাঠক ও কুরআনের মধ্যকার উপলব্ধিহীনতার অবসান ঘটাবে ইন শাআ আল্লাহ।

এতে কুরআনের সূরাগুলোরকে অতি সহজে উপলব্ধির জন্য সূরাগুলোর মূল আয়াত বা যেসব আয়াত, ঘটনাকে ঘিরে ঐসূরাগুলো নাযিল হয়েছে, সেগুলোকে স্পষ্ট করে তুলে ধরা। অর্থাৎ যে থিম বা বিষয়বস্তুকে ঘিরে পূর্ণ সূরা আবর্তিত হচ্ছে, যেটুকু বুঝতে পারলে পূর্ণ সূরাটুকু বোঝা খুবই সহজ হয়ে যাবে, সেইটুকুকে বোধগম্য ভাষায় সহজে তুলে ধরা হয়েছে। এতে ঐসব সূরাগুলোকে যেমন খুব সহজেই বুঝতে পারবেন, তেমনি বুঝতে পারবেন ঐসূরাগুলোর অন্যান্য আয়াতগুলোর প্রধান বিষয়ের আলোকেই। এছাড়া সমস্ত সূরাগুলোর মাঝে যে ঐক্য ও ধারাবাহিকতা আছে, সেগুলোও তিনি অনন্যরুপে বর্ণনা করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে কুরআন কতটা সূশৃংখল!! এভাবে কুরআন পড়ার মাঝে সীমাবদ্ধ না থেকে, যেন এ থেকে উপলব্ধির মাধ্যমে উপকার পেতে পারি, সেই চেষ্টা তিনি করেছেন খুব সাধারণভাবে।

এভাবে তিনি প্রতিটি সূরার প্রধান বিষয়বস্তু ও উদ্দেশ্যকে অতি সহজে তুলে ধরেছেন। এভাবে প্রতিটি আয়াত কীভাবে ঐ বিষয়বস্তুকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে তিনি কিছুটা আলোচনা করে দেখিয়েছেন। আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না কীভাবে প্রতিটি সূরার নাম তার প্রধান বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কযুক্ত। এভাবে না বুঝলে কীভাবে উপকৃত হবো? সূরা বাকারাহ নাম যে সুরার প্রধান বিষয়বস্তু থেকে এবং এর সাথে সম্পর্কযুক্ত, এটি উপলব্ধিতে না আসলে কীভাবে সুরার প্রধান বিষয়বস্তু ও উদ্দেশ্য থেকে উপকার নেবো? বা আমাদের কিভাবে জীবনের সাথে সম্পৃক্ত করবো? তিনি এখানে সূরার নামগুলোকে সূরার প্রধানবিষয়বস্তুর সাথে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত তা দেখিয়েছেন। তিনি আরো দেখিয়েছেন কীভাবে একটি সূরা তার পূর্বের ও পরের সূরার সাথে একই ধারায় লেগে আছে। অর্থাৎ পূর্ণ কুরআনটি একই মালার গাথনির মত। এজন্য সুরা-কে আরবীতে Fence বা বেড়া বলা হয়। বেড়ার উদ্দেশ্য কি? অবশ্যই কোনো কিছুকে সুরক্ষিত করা। এভাবে বেড়ার মাঝে কোন ফাঁকা থাকতে পারে? না। কারণ ফাঁকা থাকলে সুরক্ষিত হবে না। তেমনি কুরআনও এভাবে সূরা হওয়ার কারণে প্রতিটি সূরা একে অন্যের সাথে সুরক্ষিতভাবে সুশৃংখলভাবে লেগে আছে।

প্রত্যেক সাহাবা কিন্তু প্রতিটি আয়াত বা সুরার অর্থ জানতো না কিন্তু তারা সবাই একটা বিষয় জানতো সেটা হল সূরার মূল বিষয়বস্তু ও উদ্দেশ্য। কারণ জীবনের সাথে কুরআনের শিক্ষাকে সম্পৃক্ত করতে হলে এগুলো জানার বিকল্প নেই।

এভাবে আমর খালেদ

(১) প্রতিটি সূরার শুরুতে কেন সূরাকে পাঠ করছি, বিষয়বস্তু এবং এ সুরার উদ্দেশ্য –তা আলোচনা করেছেন।

(২) এরপর সূরার নাম ও সূরার বিষয়বস্তু এবং এদের মাঝে পারস্পারিক সম্পর্ক ও উভয়ের যে একই উদ্দেশ্য, তা আলোচনা করেছেন।

(৩) এরপর সূরা থেকে কিছু আয়াত নিয়ে এগুলোকে ব্যাখ্যা করে সূরার নাম ও বিষয়বস্তুর সাথে যে পূর্ণ সূরাটি আবর্তিত হচ্ছে, সেগুলো আলোচনা করে বুঝানো  হয়েছে।

(৪) এরপর এই সূরা ও এর পূর্বের ও পরের সূরার সাথে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা আলোচিত হয়েছে এবং

(৫) শেষে বলা হয়েছে যে এই সূরায় এই এই বিষয় আলোচিত হয়েছে, এই এই শিক্ষা – সুতরাং আপনারা এই সূরা পড়ার সময় এগুলো মনে রেখে পাঠ করবেন, চিন্তা করবেন, শিক্ষা নেবেন এবং নিজের জীবনে প্রয়োগ করবেন আল্লাহর বাণীকে।

এভাবে পাঠের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি খুব সহজেই বুঝতে পারবে আল্লাহ এই সূরা থেকে তার নিকট কি চাচ্ছে, সূরার উদ্দেশ্য কি এবং আল্লাহর সাথে এই সূরার মাধ্যমে কীভাবে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে পারি।

এখন পর্যন্ত মোট ৫২টি সূরাকে এভাবে তিনি কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছেন আলহামদুলিল্লাহ।

Call for Co-Existence – বা পারস্পারিক সহাবস্থান

Call for Co-Existence (Arabic: دعوة للتعايش) যা ২০০৭ সালে করা হয়েছিল। C0-Existence মানে পূর্ব-পশ্চিম বা আমাদের ও ওয়েস্টের কথা বুঝায় না। আমাদের চারিপাশে অনেক সমস্যায় জর্জরিতি। এগুলোর মাঝে আমাদের পারস্পারিক মুসলিমদের মাঝে অনেক সমস্যা রয়েছে, রয়েছে দেশে-দেশে আর এগুলোর জন্য আমাদের দরকার পারস্পারিক সহাবস্থানের চিন্তাকে গুরুত্ব দেওয়া। মুসলিম বিশ্বসমূহের মাঝে একে অন্যের সাথে অনেক সমস্যায় রয়ে গেছে যেগুলো একে অন্যের সাথে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ হতে বাঁধা দিচ্ছে, এভাবে আমাদের পারস্পারিক ঐক্য, শক্তি ও শান্তি সবই বিনষ্ট হচ্ছে। একজন মুসলিম আরেকজন মুসলিমের সাথে কথা বলতে পছন্দ করে না, ডিভোর্স রেট ক্রমবর্ধমান, ছেলে-পিতামাতা আলাদা হচ্ছে, এক ইসলামী দল আরেক ইসলামী দলের প্রতি অনাস্থা ও ঘৃণা জ্ঞাপন করছে। স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষকের মাঝে ডায়ালগ হয় না, মসজিদের ইমামের কাছে যুবকরা প্রাণ খুলে প্রশ্ন করতে পারে না। অথচ আমাদের দরকার পারস্পারিক সহাবস্থানে গুরুত্ব দেওয়া যা আমাদের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজে আসবে। স্পেনের গৌরবগাথায় উন্নয়ন ছিল পারস্পারিক ভিন্নতায়, সহাবস্থানে—চরম্পন্থা, ঘৃণা বা চিন্তাগত ফারাকের কারণে অনৈক্যে নয়; বরং এগুলো ছিল ধ্বংস সময়কার কারণ।

ইসলাম পারস্পারিক সহাবস্থানে থাকতে পারে বলেই এটি বৈশ্বিক ধর্ম। Co-Existence মানে নিজের মুসলিমত্ব আইডেন্টি, ঈমান ও আখলাক হারানো নয়, এর মানে পরস্পর সম্মানের সাথে চলতে থাকা।

এভাবে আমাদের মুসলিমদেরকে উন্নয়নের পথে, ইসলামের প্রচারে, এর উন্নত দিক প্রচার করতে তিনি কুরআন ও সুন্নাহ থেকে আদম থেকে শুরু করে আমাদের আল্লাহর বৈচিত্রময় ও ভিন্ন ভিন্ন সৃষ্টি, গোত্র, দেশ ভাগের মাঝে যেসব হিকমত রেখেছেন সেগুলোর বর্ণনা করেছেন।

এতে গুরুত্ব স্থান পেয়েছে কেন আমাদেরকে পূর্ব ও পশ্চিমের এক সাথে কাজ করা দরকার। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ড. আমর খালেদের শরীয়ার পিএচডির টপিক কিন্তু এইটি-ই ছিল।

কোপেনহেগে ড্যানিশ কার্টুনের ব্যাপারে তিনি গেলে অনেকেই তার সমালোচনা করেন। কিন্তু তিনি বলেন, বিরোধীতার চেয়ে ডায়ালগ বেশি দরকারী এবং উপকারীও বটে। তিনি মনে করতেন মুসলিমদের নতুন অ্যাপ্রুচ দরকার আর তা হলো পারস্পারিক উপলব্ধি বৃদ্ধি করার মাধ্যমে বোঝাপড়া করা।

রাসূল সমস্ত মুসলিম উম্মাহকে একটি দেহের সাথে তুলনা করেছে। আল্লাহ সূরা মায়েদাতে সৎ ও ভালো কাজে পরস্পরকে সাহায্য করতে বলেছেন। রাসূল হিলফুল ফুযুল সম্পর্কে নবুওয়াত পাওয়ার পরও বলেছেন এটি যদি এখনো থাকতো তবে আমি একাজে সাহায্য করতাম। অথচ এটি ছিল মুশরিকদের একমাত্র সামাজিক কার্যক্রম যেখানে যুদ্ধবিদ্ধস্থ, ব্যবসায়ী সম্পদ চুরি হয়ে যাওয়া লোকদের সাহায্য করা হতো।

এভাবে আমরা অন্যদের সাথে ভালো কাজ করলেই না তারাও আমাদের মুসলিমদের সুন্দর আখলাক দেখে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে, জান্নাতের পথে দাওয়াত দেওয়ার স্কোপ তৈরি হবে অন্যদের মাঝেও।

কুরআনে প্রচূর পরিমানে ডায়ালগ দেখতে পাবেন যেখানে নবী ও তার গোত্র বা বিরোধীদের সাথে কত সুন্দরতম পন্থায় এক সাথে থেকেছেন (Co-existence). কুরআনের অনেক জায়গায় পাবেন আল্লাহ বলছেন “তারা বলে” অথচ নবীগণ কিন্তু সেখানেই ছিল।

এভাবে আমর খালেদ কুরআন ও সুন্নাহর ভেতর থেকে সুগভীরভাবে তুলে ধরেছেন কুরআনের ভেতরে এই Co-existence এর মেথডলজি, শিক্ষা, পদ্ধতি ও আল্লাহর প্রজ্ঞাময় স্ট্রাটেজি; যা আমাদের সমকালীন মুসলিমদের আরো বেশি গুরুত্বের দাবি রাখে।

IN Thy Name We Live

3946cc5a2ed843c2c9fca0b4efcd28ba_XL

In Thy Name We Live (Arabic: باسمك نحيا) ছিল আরেকট প্রোগ্রাম যা ২০০৬ সালেই করা হয়েছিল। কুরআনে বর্ণিত আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নামের মাধ্যমে দর্শকদের ঈমানী শক্তিকে দৃঢ় করা, আমাদের প্রাত্যহিক জীবন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থানের ওপর এ নামসমূহের প্রভাব আলোচনা এবং এভাবে এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর অধিক নৈকট্যময় অবস্থানে যাওয়া ছিল এই প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য। অন্যভাবে উদ্দেশ্য বলতে গেলে ‘আল্লাহকে জানা’ এবং ফলে ‘তাকে ভালোবাসা’, ‘তাকে ভয় করা’, ‘তার আদেশ মানা ও তার নির্দেশের প্রতি অনুগত থাকা’ ছিল উদ্দেশ্য। এভাবে আমাদের ধর্মীয় জ্ঞানের চূড়ান্ত রুপ হবে আল্লাহর আনুগত্য করা ও এর ফলে সুখী হওয়া। আপনি একজন ব্যক্তিকে যতই ভালোভাবে ও গভীরভাবে জানবেন, ভালোবাসার সম্পর্ক তো ততই গভীর হবে, তাই না? ঠিক এমনিভাবে আল্লাহকে যতটা গভীরভাবে, যতটা উচ্চ মাত্রায় জানতে পারবো, আমাদের জীবনের তত উচ্চমাত্রার উদ্দেশ্য বুঝতে পারবো এবং সফলতাও আসবে এই উদ্দেশ্যকে আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে তাকে ভালোবেসে ও আনুগত্যের মাধ্যমে। কুরআনের শুরু করি ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ দিয়ে, আল্লাহর ৯৯ নাম মুখস্ত ও সংরক্ষণের জন্য জান্নাত দান, সূরা ইখলাসে আল্লাহর অনেকগুলো নাম এবং একে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ বলা, এভাবে কুরআনের অনেক আয়াতের শেষেই আল্লাহর নামগুলো বলা হয়েছে কেবল পূর্ণ আয়াতগুলো উপলব্ধির জন্য। অর্থাৎ ঐসব আয়াত আপনি কেবল তখনই বুঝবেন যখন ঐসব আয়াতের শেষে বা যেকোনো জায়গায় আল্লাহর নামগুলোকে বুঝতে পারবেন!! তার মানে আল্লাহর পূর্ণ আনুগত্য, তার বিধান মানা, সুখে থাকা বা হেদায়েত পাওয়া সবই আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নামসমূহের মাঝেই নিহিত!! সুবহানাল্লাহ। প্রোগ্রামগুলো দেখতে দেখতেই বুঝতে পারবেন আল্লাহর নামগুলো আমাদের জীবনে কত অনিন্দরুপে জীবন্ত হয়ে ধরা দেয়, কত নিখুঁতভাবে আমাদের হেদায়েত, প্রাত্যহিক জীবন ও আল্লাহর সাথে আমাদের জীবনের কত গভীর সম্পর্ক দরকার, আমাদের প্রয়োজনেই! নামটি কেন এমন? প্রত্যেকটি নামের বিশ্লেষণ শুনার সাথে সাথেই বুঝতে পারবেন সেগুলো আমাদের জীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়ে প্রতিটি মিনিটেই কত নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। প্রোগ্রামটি করা হয়েছিল আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নামসমূহের সাথে আমাদের জীবনের সম্পর্ক বর্ণনা ও এটা দেখানো যে কীভাবে সমস্ত পৃথিবীটাই আল্লাহর এসব নামের মাঝে ডুবে আছে।

Omar: the maker of civilization ওমরঃ একটি সভ্যতার স্রষ্টা

Omar: the maker of civilization (Arabic: عمر صانع حضارة) যা ২০১২ সালে প্রচারিত হয়েছিল এবং এখানে উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কীভাবে একটি সভ্যতার সৃষ্টিকর্তা হয়েছিল সেগুলোর খুটিনাটি বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। সভ্যতা কী? শিল্প, কৃষি, স্থাপত্যশৈলি, আবিষ্কার, ব্যবহার ইত্যাদি। এসবই সভ্যতার অংশ এবং এসবই কিছুই ইসলামের অবদান ছিল যার ভিত্তি গড়েছিল রাসূল ও একে সম্প্রসারিত করেছিল ওমর। প্রতিটি পর্বে আমর খালেদ ওমর এর এই সভ্যতা সৃষ্টির একেকটা পয়েন্ট তুলে ধরে আলোচনা করেছেন এবং আজকের যুগের ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, যুবকশ্রেণীরা কীভাবে এই নতুন করে সভ্যতা জন্ম দিতে পারে সেই দিক-নির্দেশনা, অনুপ্রেরনা দিয়েছেন। ঈমান হলো সভ্যতা সৃষ্টির মৌলিক ভিত্তিপ্রস্তর আর এগুলো আমরা ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে শিখতে পারি কীভাবে সভ্যতা শিখড়ে উঠেছিল।

এভাবে আলোচনারসমূহের মাধ্যমে তিনি যুবকদের সভ্যতা সৃষ্টির অনুপ্রেরণার অগ্নিশিখায় জ্বলে উঠার আহবান জানান, তিনি তাদেরকে আরেক সভ্যতার ওমর হতে ডাকেন।

চাষী ভূমি বৃদ্ধি, চাষের জন্য পানির সুবিধা, বেকারত্ব দূরীকরণ, ধর্ম নির্বিশেষে সবার ব্যবসার উন্নয়ন, শহর সৃষ্টি, মানুষের নিরাপত্তার জন্য সরঞ্জাম কেনা, ভূমি নিরাপত্তা – এগুলো সবই করেছিল মাত্র সাড়ে দশ বছরে।

এরকম আবিষ্কার, উন্নয়ন, নতুন সৃষ্টি, শক্তিবৃদ্ধি, দারিদ্রদূরীকরণ, রাতে প্রজাদের অবস্থা দেখা, প্রত্যেকের প্রয়োজন পূরণ করা, আদল ও ইনসাফের একনিষ্ট উদাহরণ এভাবে সৃষ্টি করেন এক নতুন সভ্যতা যা ছিল ঈমানের ভিত্তিতে ইসলামী মূল্যবোধের আদলে।

ওমর একটি সভ্যতার স্রষ্টা ছিল। কিন্তু দুংখের বিষয় আজকে আমরা সেটা হারিয়ে ফেলেছি। তিনি সৃষ্টি করেছিলেন মানবতা, সৃষ্টিশীলতা, উদ্ভাবনী শক্তি ও সাফল্য। আজকেও আমাদের সেই ঈমানী ভিত্তির সভ্যতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন; দরকার পারস্পারিক দ্বন্দ্ব ভুলে সাফল্য, জ্ঞান, স্থাপত্য, শিল্প, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, মানবতা, লজ্জাশীলতা ও দয়ার ভিত্তিতে সভ্যতা গড়ার আকাংক্ষা ও কর্মের সমন্বয়।

আমরা ওমর কে কতটা ভালোবাসি? আমাদের কি উচিৎ নয় আখিরাতে তাদের সাথে থাকার ইচ্ছাটাকে প্রবল করা? তাহলে কেন রাসূলের ভিত্তিতে যেই ওমর সভ্যতাকে গড়েছিল সেটাকে পূনরুজ্জীবিত করবো না? ওমর মারা গিয়েছে কিন্তু তার সভ্যতাকে আমরা মরতে দিবো না…দরকার আমাদের প্রচন্ড কাজ, প্রত্যেককেই হতে হবে নিজ দক্ষার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ…আমাদের কাজ করতে হবে সভ্যতা সৃষ্টিতে আর আল্লাহর ইবাদাহও চলবে একই সাথে।

The Story of Andalusia” স্পেনের আন্দালুসিয়ার ইতিহাস

Qisat Al Andalus “The Story of Andalusia” বা স্পেনের আন্দালুসের ইতিহাসের গল্প। সাড়ে ১৪০০ বছরে মুসলিমদের গৌরবের ইতিহাস স্পেনে ছিল ৮০০ বছর। এই ইতিহাস যেমন ইসলামের এক সূদীর্ঘ সফলতার ফল আবার একই সাথে এত বছরের ইসলামী সভ্যতা যাকে আজকের ইউরোপীয় সভ্যতার চাইতেও সেই সময়কার শ্রেষ্ট সভ্যতা ধরা হতো, কেন পরাজয় হলো মুসলিমদের? এই ‘কেন’র উত্তর যদি জানতে না পারেন, ‘কেন’ এতদিন সফল ছিল সেই উত্তরও যদি না জানতে পারেন—তবে আপনি আমি আর কখনই ইসলামের বিজয়ের মুখ দেখতে পারবো না। স্পেনের ইতিহাস আমাদেরকে আল্লাহর কালামের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ দেখায়। সামগ্রিক ঐক্য আমাদেরকে বিজয়ের পথ দেখায়, একটি উন্নত সভ্যতার চূড়ান্ত রুপ দেখায়। আবার অনৈক্য আমাদেরকে ধ্বংসের চূড়ান্ত রুপও দেখায়। স্পেনেই সেই চূড়ান্ত ধংসাবশেষ দাঁড়িয়ে আছে। কেউ হয়তো এখন বলতেই পারবে না সেই সময়ের সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ট সভ্যতার কারিগর ছিল আজকের মুসলিম!! জানতে হবে, হ্যা, জানতেই হবে ঐসব চিরন্তন বিজয়ের নিয়মাবলী যা আল্লাহ দিয়েছেন।

  • A Smile of Hope এটি অনুপ্রেরণামূলক ও শিক্ষামূলক গল্পের অতি সাধারণ সিরিজ। এগুলো হতাশার মাঝে আশার ঝলকানি হয়ে সম্মুখে আসবে। ছোট্ট ছোট্ট বর্ণনা কিন্তু বিশাল আশার বাণী হয়ে দাড়িয়ে থাকে সম্মুখে, সারা জীবনের  জন্য ।
  • Qur’an Stories (Arabic: قصص القرآن) কুরআনের গল্প শিরোনামে তিনি ২০০৬ সালের রামাদানে এই প্রোগ্রামটি করেন যেখানে কেবল নবীদের নয়, বরং সাধারণ মানুষদের থেকেও দারূণ সব নৈতিক শিক্ষাগুলকে তুলে ধরেন। উদ্দেশ্য ছিল এসব শিক্ষার মধ্য দিয়ে দর্শকদের নতুন উদ্দীপনা দেওয়া, যাতে সমাজে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে বদ্ধপরিকর ও দৃঢ় থাকেন।
  • Tomorrow is better (Arabic: بكرا أحلى) এটি ছিল মিশরের রাস্তায় প্রকাশ্য উন্মুক্ত ময়দানে যা প্রচারিত হয়েছিল ESC (Egyptian space channel) এর মাধ্যমে। হতাশাই শেষ নয়, ভবিষ্যৎ ওইসব মানুষের হাতে যারা দৃঢ় প্রত্যয়ে আজ কাজ করবে গড়ার আশায়। অনুপ্রেরণামূলক একটি দারুণ সিরিজ ছিল এটি। এই সিরিজ থেকে বুঝা যায় তিনি মানুষের সাথে রাস্তায় এরকম উদ্যোগ নেওয়া কতটা গ্রাসরুট লেভেলে তিনি কাজ করেছেন এবং মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন আরবের শ্রেষ্ট স্থানটি যা ছিল রাসূলের প্রেরণায়, ইসলামের কাজে…ঈমান ও আমালের সমন্বয়ে।
  • ২০১১ সালের রামাদান মাসে প্রচারিত হয়ে ছিল Journey to Happiness (Arabic: رحلة للسعادة) যার উদ্দেশ্য ছিল কীভাবে জীবনে সুখ অর্জন করা যায়।

তিনি ঘুম উঠে দেখেন কেউ ফোন করেছে, হ্যালো বলেছে। কেউ দোয়া চেয়েছে বা কেউ তাদের সমস্যার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, এই সময়গুলো খুবই সুন্দর কাটে। আমি এসবের উত্তর দেওয়ার জন্য বসে যাই। এভাবে আমি মানুষদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করি। এগুলো আমার টক শো-তে সাহায্য করে, কারণ আমি যুবকদের সাথে সংযুক্ত থাকি, আমি তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন নই; বরং আমি তাদের সাথে বসবাস করি।

আমর খালেদ মনে করেন, তিনি জীবনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করতে পেরেছেন । তিনি বলেন, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা ও নিজ জীবনের লক্ষ্য-মেসেজকে পূর্ণ করার ভারসাম্য-ই জীবনের সুখকে খুঁজে পাওয়া। ঈমান জীবনের সাথে গড়ে উঠে, এটি জীবনের অবদান রাখে। এটা মানসিক সুখ ও দৃঢ়তা আনে।

তার সমাললোচক ও সমর্থক উভয় দল একটি বিষয়ে খুবই সম্মত যে তিনি — খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তার সমর্থকরা তার প্রভাবকে ভালোবাসে, এবং এজন্য হিজাবের প্রশংসার কারণে হাজার হাজার নারী হিজাব পড়া শুরু করে দেন। তার সমালোচকেরা তাকে ‘বিভিন্ন বর্ণযুক্ত বংশিবাদক’ বলেন যুবকদের ওপর তার প্রচন্ড প্রভাব থাকার কারণে। তবে তিনি এসব সমালোচনাকে থুড়াই কেয়ার করেন এবং তিনি নিজের মত  প্রচারক হিসবে, কর্মী হিসেবে কাজ করে যান।

আমর খালেদ একটা বিষয়ে খুবই পরিষ্কার যে, তিনি তার অনুসারীদের অনুপ্রেরণা দিয়ে আশা করেন যে, ঈমান (Faith) হলো নৈতিক, বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক জাগরণের চাবিকাঠি। তার প্রথম আহবান ছিল আধ্যাত্বিকতা বা আল্লাহর সাথে সম্পর্কের দিকে ফিরে আসা, এরপর বিশ্বাসভিত্তিক উন্নয়নের কাজ করা (Faith Based Development). তিনি প্রচার করেন কর্মঠ কাজ, ভালো কাজ এবং নিষ্কলুষ চরিত্রের উপকারিতা এবং এভাবে যুবকদেরকে আহবান করেন তাদের জীবন ও কমিউনিটিকে পরিবর্তনের।

উক্তি –

“উঠে দাঁড়াও এবং পৃথিবীতে বোঝা হওয়ার পরিবর্তে পরিবর্তন ঘটাও, ভিন্নতা সৃষ্টি করো”। 

“আমাদের মাঝে যুক্তিশীল ব্যক্তিদের কথা শুনতে হবে এবং আমাদের কথার আওয়াজ চরমপন্থীদের চেয়েও বেশি স্পষ্ট হতে হবে”।

“যুবকদের মাঝে প্রচূর পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত রয়েছে এবং আমি এই গতিশক্তিকে শান্তিপূর্ণ ও মধ্যমপন্থায় পরিচালিত করতেছি”

“সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য আমার কিছু বার্তা আছে যাকে আমি ‘development through faith’ বলি। বিশ্বাস হলো উন্নয়নের চালিকাশক্তি এবং এটি ছাড়া কেউ উন্নয়ন করতে পারে না। আমি কোনো মুফতি নই, আর সেজন্য ইসলামী আইনে কোনটি হালাল বা হারাম তা বলি না। আমি যা ইচ্ছাপোষণ করি সেটা হলো আরব যুবকদেরকে কর্মতৎপর করা”

শেষ কথা, একটু স্বপ্ন …বাংলাদেশের মত স্থানে, বিশেষত বাংলাভাষায় যদি কুরআনের ওপর তার সিরিজ, আল্লাহর নামগুলোর প্রাত্যহিক উজ্জীবতা ও জীবন্ত সিরাহ থেকে সমকালীন স্ট্রাটেজি, পরিকল্পনা ও কর্মের উদ্দীপনাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায়, কেউ প্রকাশনায় নিয়ে আসেন বাংলাভাষায়, অনেক বড় কাজ হতো এই ক্ষেত্রে। আশা রাখি কেউ আসবে, আল্লাহতো তার কাজ কাউকে না কাউকে দিয়ে করিয়ে নেন, কাউকে তার সেবার সৌভাগ্যে জড়িয়ে নেন…কেউ আসবে…আল্লাহর পথ থেমে থাকে না, সৌভাগ্যবান কেউ হবেই ইন শাআ আল্লাহ।

রিসোর্স ও অন্যান্য রেফারেন্স

One on One – Amr Khaled (Al Jazeera)

http://tinyurl.com/pqemrnw

The Life of prophet Muhammad (PBUH) English subtitled

http://tinyurl.com/nnqvjno

(ENGLISH) Quranic Thoughts – Amr Khaled

http://tinyurl.com/p3l6r7o

ইংরেজি পিডিএফ – http://tinyurl.com/ojhsd75

আমর খালেদ, প্রভাব, সারাহর ফিরে আসা এবং কিছু কথা…

http://tinyurl.com/pgkdljn

(ENGLISH) A Journey with the Names of Allah (swt) – Amr Khaled

http://tinyurl.com/o9yn5hq

ইংরেজি পিডিএফ – http://tinyurl.com/o7yxksp

The Life Makers (Development Through Faith)

ইংরেজি পিডিএফ – http://tinyurl.com/pxguk3b

Omar: A Civilization Maker

ইংরেজি পিডিএফ – http://tinyurl.com/noux6ly

A Call For Co-Existence

ইংরেজি পিডিএফ – http://tinyurl.com/oehy9cs

Stories of Prophets

ইংরেজি পিডিএফ  – http://tinyurl.com/nuowb4d

Parables in The Quran

ইংরেজি পিডিএফ –  http://tinyurl.com/nzh46ra

Dr. Amr Khaled – “Reviving the 10 Commandments in the Modern World” with English Subtitles (Click ‘CC’ in youtube video)

http://tinyurl.com/oo7qqka

RISTalks: Dr. Amr Khaled – “Where Then Are You Going?” (with English Subtitles) at RIS US 2010

http://tinyurl.com/nam8k7f

“A Smile Of Hope” Episodes – Amr Khaled (English Subtitle

http://tinyurl.com/pu8dk63

(ENGLISH) With the Followers – Amr Khaled

http://tinyurl.com/p2d9to3

Some Translation of Amr Khaled into English Voice

http://tinyurl.com/o4trxnu

List of Amr Khaled videos in English,

http://bible-quran.com/amr-khaled-videos/

আমর খালেদের ওপর ইন্ডিপেন্ডেন্ট এর একটা চমৎকার লেখা  –

http://tinyurl.com/6ppgx4

News of Intellectual (Dr. Amr Khaled)

http://tinyurl.com/ne7mumj

Amr Khaled ENGLISH “The Followers”

http://tinyurl.com/o8oor4q

FB – https://www.facebook.com/AmrKhaled?fref=ts

Youtube – https://www.youtube.com/user/AmrKhaled

ইংলিশ অনুবাদ কৃতজ্ঞতা –  http://www.daraltarjama.com/


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *