জঙ্গি হইলো একটা সংখ্যা।

ইসলামিক জঙ্গি হইলো পৃথিবীর সব চেয়ে বড় বেমানবিত নাগরিক। সব চেয়ে বেইল ছাড়া মানুষ। তাকে ক্রসফায়ার করা যায়, ড্রোন দিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে খুন করা যায় , তাকে আবু গারিবে তার বাপের সামনে রেপ করা যায়, সেইটা ভিডিও করা যায় , সেলফি তোলা যায়। যেই সেলফি কোথাও না কোথাও কার ড্রইং রুমে টাঙ্গানো থাকে। বাপের উর্দি পরা সেই ছবির সামনে, ৪ বছর বয়সী শিশু খেলাধুলা করে। সেই শিশুর নাম আছে, জন বা উইলিয়াম।
কিন্ত, ইসলামিক জঙ্গির কোন নাম নাই। জঙ্গি হইলো একটা সংখ্যা। যে কোন পরিমাণ, নিহত মানুষের গায়ে সেই সংখ্যাটা লাগায় দিয়া বলা যায়-৮ জন জঙ্গি মারা গ্যাছে। ২০ জন জঙ্গি ড্রোনে খুন মারা গ্যাছে। ১২০০ জঙ্গি নিহত হইছে। এর পর আর কোন জাস্টিফিকেশান লাগেনা। জঙ্গিদের কোন বাবা নাই, মা নাই, সন্তান নাই। স্বপ্ন নাই। সে শুধু একটা সংখ্যা জঙ্গি।
আজকে, সেই সব জঙ্গিদের উত্তরাধিকার আমাদের জঙ্গি। তারা একই নামহীন মায়ের সন্তান।একই পরিচয় হীন ভাই, একই অশ্রুহীন বোনের ভাই, একই জন্ম না নেয়া, সন্তানের পিতা।
ফাহিম, অনেক লাকি সে একটা নাম পেয়েছে ক্রস ফায়ারের আগে।Fahim
আমি ফাহিমের মৃত্যুতে শোক করিনা। কোন মৃত্যুতেই এখন শোক হয়না। ফাহিমেরটা আরও হয় না। কারণ, সে কিছু নির্দয় খুনের মহড়ায় ভাড়াটে ছিল মাত্র। একজন টার্গেট কিলার বাদে তার আর কোন পরিচয় নাই। যদিও পুলিশের ভাষ্য বাদে তার কোন প্রমাণ নেই। কিন্ত, সেইটাও বিশ্বাস করলাম। কাউকে না কাউকে বিশ্বাস করতে হবে।
এই রাষ্ট্রের আইন ভঙ্গের জন্যে তার শাস্তি চাইতেই হবে। ফাঁসি। হলে হোক। কিন্ত, সেই টা চাই,কিন্ত ডিউ প্রসেসে চাই।

 

দুঃখজনক ভাবে, আমি সেই নাদান যে বিএনপির আমলে ক্রসফায়ারে নিহতদের লাশে উল্লাস করছিলাম। আমি বলছিলাম দরকার আছে।যেই সব সন্ত্রাসীর বিচার হচ্ছেনা, তার বিচার যদি না হয়, তবে খুন হলে হোক।
কিন্ত,সেই অন্যায় সমর্থনের পাপের দায়, আজকে আমার বইতে হচ্ছে। রাষ্ট্রকে ডিউ প্রসেস অনুসরণ না করার যেই অনুমতি দিয়েছিলাম- সেই পাপের দায়ে আজকে বাংলাদেশ ভগ্ন রাষ্ট্র।
আমি শোক করিনা কিন্ত সিম্পাথাইজ করি, কারণ, ফাহিম ক্রিয়া নয়, প্রতিক্রিয়া মাত্র। এই ভগ্ন রাষ্ট্রের পূর্বের অনেক খুনের প্রতিক্রিয়া সে।
একই খাটিয়াতে অভিজিৎ এবং ফাহিমের লাশ রেখে খুঁটি ধরে হাঁটছে বাংলাদেশ। উভয়েই তার সন্তান। লাশ গুলো দাফন করতে একটা কবরস্থান আর একটা শ্মশান খুঁজছে সবাই। একটা ধীর শব যাত্রায় জোম্বির মত হেটে বেড়াচ্ছে ১৬ কোটি মানুষ। কিন্ত শ্মশান বা কবরস্থান কোনটাই খুঁজে পাচ্ছেনা, এই জোমবি নাগরিকের দল।

Loading

জিয়া হাসান

About জিয়া হাসান

লেখক: প্রাবন্ধিক। প্রকাশিত গ্রন্থ : শাহবাগ থেকে হেফাজত: রাজসাক্ষীর জবানবন্দি -

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *