গাফফার সম্পর্কে অনেক কিছু জানি, সব ফাঁস করে দিতে পারি

গত কয়েকদিন যাবত অন লাইন এবং অফ লাইনে একটা বিষয় নিয়ে তুমুল ঝড় বয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ সদর দফতরে এক একাডেমিক আলোচনায় জনাব চৌধুরী ধর্ম সংক্রান্ত আলোচনা করে তার জ্ঞানের সীমা প্রদর্শন করে এসেছেন।
মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করে উপস্থিত অনেককেই আমোদিত ও বিনোদিত করেছেন। মুসলিম বিশ্ব যাদেরকে অত্যন্ত সম্মান করেন তাদেরকে বিড়ালের আব্বা ও ছাগলের আব্বা বলে টিটকারী করেছেন। সব আমল নামা ডিজিটাল কায়দায় ধরে রাখা হয়েছে। তারপরেও তিনি গালি দিচ্ছেন জামায়াত শিবিরকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মূলক প্রচারনার জন্যে।
প্রায় পৌণে দুই শ কোটি মুসলমান যে বিশ্বাস ধারন করেন তার বিপরীতে কিছু বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, আল্লাহর নিরানব্বইটি গুণবাচক নাম সমূহ কাফের মুশরিকদের দেবদেবির নাম থেকেই গ্রহন করা হয়েছে।
এটা সত্য যে ইসলাম গ্রহন করার পর অনেক সাহাবার নাম অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। অর্থাৎ কোন নাম ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক মনে না হলে সেই নামটি ইসলাম এন্ডোর্স করে দিয়েছে। কালক্রমে আরবী ভাষার সেই নামগুলি পুরো মুসলিম বিশ্ব গ্রহন করে স্বতন্ত্র একটি উম্মাহর সৃষ্টি করেছে। একই ভাবে সারা বিশ্বের খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের নামগুলি মূলতঃ ইউরোপিয়ান ভাষাগুলি থেকে এসেছে। এই নাম নিয়ে কোথাও কোন সমস্যা নেই। সমস্যা আছে শুধু আমাদের এই বাংলাদেশে। তাও শুধুমাত্র মরুর গন্ধযুক্ত নামগুলি নিয়ে।
আমাদেরকে অতি বাঙালি বানানোর নামে আমরা বাঙালি আগে না মুসলমান আগে এই ধরনের অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন এই গাফফার সাহেবরা । আমরা বাঙালি আগে হলে তো গাফফার চৌধুরীর বাঙালি মরদেহ প্রথমে আগুনে পোড়াতে হবে, তারপর সেই সাচ্চা মুসলমানের ছাই দাফন করতে হবে। সারা জীবন না -খৎনা (বাঙালি) থেকে মরার আগে আগে খৎনা করতে হবে। প্রথমে সাত পাক দিয়ে বিয়ে করতে হবে, তারপর কলেমা পড়ে সেই বিয়েকে পোক্ত করতে হবে।
প্রকৃত কথা হলো, জীবনের যে সব জায়গায় ধর্ম কোন মন্তব্য করেছে বা বিধান দিয়েছে সেখানে বাঙালিত্ব,পাঞ্জাবিত্ব বা তামিলত্বকে বিসর্জন দিয়েই মুসলমান হতে হবে। আমাদের পূর্ব পুরুষরা এটা জেনে বুঝেই এই ধর্ম বিশ্বাস বা সংস্কৃতিকে আকড়ে ধরেছেন । তবে যেখানে ধর্মের কোন মন্তব্য নেই বা ‘ ডু ইট অর ডু নট ডু ইট ‘ নেই সেখানে স্থানীয় কালচারকে গ্রহণ করতে অসুবিধা নেই।
আসলে গাফফার চৌধুরী ও মুনতাসির মামুনদের অনেক উপকার করে দিয়েছে জামায়াত শিবির । কারন অনেক জায়গায় ধর্মের বিরোধিতাকে তারা জামায়াত বিরোধিতা বলে পার পেয়ে গেছে। এবার মাত্রাটা একটু অধিক হয়ে পড়াতে বেকায়দায় পড়ে গেছেন।

এখন গাফফার চৌধুরীকে উদ্ধার করতে মুনতাসির মামুনরা এগিয়ে এসেছেন। তিনি জানিয়েছেন এই গাফফার চৌধুরীও মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। অর্থাৎ তিনিও ছিলেন তালেবে এলেম । তিনি নাকি অন্য অনেকের চেয়ে বড় মুসলমান।
এই সাচ্চা মুসলমান বা তালেবে এলেম এখন মুখ খুললেই কিছু না কিছু বেরিয়ে আসছে। গতরের বসন খানা এখন তার সত্যিই ছোট হয়ে পড়েছে। একদিকে টেনে ঢাকতে গেলে অন্যদিক আগলা হয়ে পড়ে। ফলে আগের কীর্তি ঢাকতে নতুন আরেক কীর্তি সৃষ্টি করে বসছেন। অহেতুক দোষারূপ করছেন নন্দঘোষ জামায়াত শিবিরকে।
অথচ অবৈধ সংসদও তাকে তওবার পরামর্শ দিয়েছে। ব্যারিস্টার আনদালিব রহমান পার্থ বলেছেন, তাকে জুতা মারলে ছওয়াব হবে। কিন্তু তাকে জুতা মেরে সেই জুতা খুলেই তো আবার একুশে ফেব্রুয়ারীতে প্রভাত ফেরিতে তার রচিত গান খানাই গাইতে হবে ! জানি না, তরুণ এই নেতা আমাদের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক এই দ্বন্দ্বটির কীভাবে মিমাংসা করবেন?

মুনতাসির মামুনের বিপরীতে আরো অনেকেই এই তালেবে এলেমের আমল নামার সিডি নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। তার অনেকগুলিই খুবই ভয়াবহ। এই তালেবে এলেমকে ঢাকায় প্রথম আশ্রয় দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের ঢাকা অফিসেই নাকি তার প্রথম থাকা খাওয়া জুটেছিল । সেই আশ্রয়দাতারাই এই তালেবে এলেমের আজ প্রধান শত্রু হয়ে পড়েছে।
তিনি আজীবন অনেকের ছহি নামা (চরিত্র হনন, যেমন ইউনূস নামা ) লিখেছেন। বিশেষ করে যারাই আওয়ামী ভাবধারা বা স্বার্থের বিপরীতে গিয়েছেন তখনই তিনি তাদের ছহি -নামা লিখে ফেলেছেন। এভাবে ডঃ ইউনূস, বিচারপতি হাবিবুর রহমান, সদ্য প্রয়াত সিরাজুর রহমান, তার বাল্যবন্ধু শফিক রেহমান সহ অনেক জ্ঞানীগুণীর ‘ছহি -নামা’ তিনি লিখেছেন।
একবার শফিক রেহমানকে জিজ্ঞেস করেছিলাম , উনি আপনার বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও আপনার বিরুদ্ধে এত কিছু লিখেছেন ; আপনার হাতে তার চেয়েও অধিক শক্তিসালী কলম থাকা সত্ত্বেও আপনি কিছু লিখছেন না কেন ? শফি ভাইয়ের জবাব ছিল, ‘ এর কথার জবাব না দেয়াই সবচেয়ে বড় জবাব।’
শফিক রেহমান আরো জানিয়েছেন , আমি গাফফারের সম্পর্কে এত কিছু জানি যে সেগুলি নিয়ে লিখলে সেটার ভার বহন করার ক্ষমতা তার আর থাকবে না। সেদিন এই সাংবাদিক গুরুর নৈতিকতা, মানবিকতা, অবিশ্বস্ত ও অকৃতজ্ঞ বন্ধুর প্রতি তার নিজের বিশ্বস্ততা দেখে কিছুটা অবাক হয়েছিলাম। তার প্রতি সম্মানটুকু সেদিন আরো এক ধাপ বেড়ে গিয়েছিল।

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *