ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও আমাদের কর্মসংস্থান

   

বিশ্বের অগ্রগতির সাথে অর্থনীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। অর্থ যেমন অনর্থের মূল, তেমনি অর্থ ছাড়া দেশ জাতি গঠনে ভালো কোন ভুমিকাও রাখা যায়না। পৃথিবীর অনেক সম্পদশালী দেশ তাদের অর্থ-বিত্ত দিয়ে যেমন অপকর্ম করছে, তেমনি কিছু ভালো কাজও করছে। আল্লাহ প্রদত্ত অনেক নেয়ামতকে মানুষ কাজে লাগিয়ে, এ সকলক্ষেত্রে উৎকর্ষতা সাধন করে মানুষের জীবন যাপনকে সহজ করে দিয়েছে। প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশ হয়েছে, দেশে দেশে উন্নতির এত ব্যাপক ছোঁয়া লেগেছে যে, এগুলো দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। প্রতিনিয়ত গবেষণার মাধ্যমে নিত্য নতুন আবিস্কার আমাদের সামনে আসছে। এগুলোর ব্যবহারের মাধ্যমে আমরাও উপকৃত হচ্ছি। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারছি আজকের সামাজিক, রাষ্ট্রীক পরিবর্তনে? বিশেষ করে ইসলাম অনুসারীদের জাগতিক এই পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য কোন ভুমিকা দেখা যায় না। অথচ বিশ্ব সভ্যতায় মুসলমানদের অবদান সবচেয়ে বেশি। আধুনিক সভ্যতার ভিত্তিটা মুসলমানদের হাতে। বিগত দুয়েক শতাব্দি যাবত মুসলমানরা নৈতিকতার দিক দিয়ে যেমন পিছিয়ে পড়েছে তেমনি, অর্থ বিত্তের দিক দিয়েও পশ্চাদগামী। ফলে, বিশ্ব সভ্যতায় মুসলমানদের প্রভাব আজ গৌণ। এর থেকে বেরিয়ে আসার পথ আজ আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের একটি দুআ শিখিয়েছেন। তিনি আমাদের এ প্রার্থণা করতে বলেছেন যে, হে বান্দা, তুমি তোমার মালিকের কাছে এই বলে প্রার্থণা করো যে, হে আমাদের রব, আমাকে ইহকালে দান কর প্রভুত কল্যাণ এবং পরকালেও দান কর প্রভুত কল্যাণ।এই দুআ আমরা প্রতিনিয়ত করি। এটা রবের শিক্ষা। ইহজগতে দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে সমাজ সংসার পরিচালনার কথা ইসলাম বলেনি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কিভাবে আমাদের অর্থনৈতিক পশ্চাদগামীতা থেকে বের হয়ে আসবো। আজ চর্তুদিকে সুদ, ঘুষ, জোয়া, জুচ্চুরি, প্রতারণা, ধোকা, সমাজকে এমনভাবে গ্রাস করে বসেছে যে, ভালো মানুষগুলো আর এ সকল পথে যেতে চায় না। তারা দুনিয়া থেকে বিমুখ হয়ে নিরিবিলি জীবন যাপনকেই পছন্দ করে। এভাবে কি দুনিয়ার নেতৃত্ব গ্রহন করা যাবে? এভাবে কি নিজেদের দুঃখ দুর্দশা লাঘব করা যাবে? এর জন্য আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে। আমাদেরকে এমন পথ বের করতে হবে যেভাবে অর্থনৈতিক মুক্তি মেলে। স্বাবলম্বী হওয়ার পথ হয় সহজ। দিশেহারা মানুষ খুঁজে পায় সত্যের সন্ধান। তারা আজ চরমভাবে অতিষ্ট। সুদের বেড়াজালে তারা জর্জরিত।
আমরা খুব বড় আশা করি না। বর্তমানে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত এমন কিছু পদ্ধতি অবলম্বন যার দ্বারা প্রথমত : বেকারত্ব দূরীভুত হয়। অতঃপর স্বাবলম্বী হওয়া। অতঃপর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। বর্তমান সময়ে মানুষ অর্থনৈতিক লেন-দেন করতে গিয়ে বহুবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ধোকা খেতে খেতে মানুষ দিশেহারা। এ অবস্থায় একজন ইসলাম অনুসারীদের জন্য একটি বড় পুঁজি হলো আস্থা। এদেশের আলেম-উলামাদের প্রতি মানুষের আস্থা আছে। কিন্তু তারা সমাজথেকে, অর্থনৈতিক লেন-দেন থেকে দূরে থাকায় তারা নিজেরা যেমন পিছিয়ে পড়ছে, তেমনি সমাজও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হলো, আলেম-উলামাদের অর্থনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত হওয়া খুব জরুরী। আর এ পথে এগিয়ে আসার জন্য প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে ভুমিকা পালন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য এ পুঁজি উলামাদের নেতৃত্বে গ্রহন করা যেতে পারে। বর্তমানে একদিকে চলছে জুন মাস, যে মাসে বাজেট নিয়ে বিস্তর আলোচনা হবে। হাজার হাজার কোটি টাকার কাহিনী আমরা শুনবো। অপরদিকে কওমী মাদ্রাসা সমূহের শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চলছে। রমযান শেষে কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদ নিয়ে তারা সমাজের খেদমতে এগিয়ে যাবেন। যারা এ বৎসর ফারেগ হচ্ছেন, তাদের সামনে অনেক আশা পাশাপাশি হতাশাও। কি করবেন তারা? এতদিন ছিলেন মাদ্রাসার গ-ির ভিতর নির্দিষ্ট নিয়ম মোতাবেক জীবন যাপন করেছেন। বাহিরের কোন চাপ তারা সহ্য করেন নি। সংসারের কোন দায়িত্ব তাদের ঘাড়ে অর্পিত হয়নি। সামাজিক ঘাত-প্রতিঘাতের তারা মুখোমুখি হয়নি। এ অবস্থায় অনেকের মধ্যেই দেখা দেয় হতাশা। তারা কি করবেন? যারা ফারেগ হচ্ছেন, তাদের মধ্যে অনেকে আছেন প্রখর মেধার অধিকারী, তারা হয়তো দরস-তাদরীসের খেদমতে নিজেদের নিয়োজিত করবেন, আবার কিছু আছেন, যারা সমাজ-সংসার খুব ভালো বুঝেন, কিন্তু কিতাবের দিক দিয়ে দুর্বল। তাদের হতাশাটাই বেশি। আজকে আমার প্রস্তাব সেই সমস্ত ভাইদের জন্য যারা দরস-তাদরীসের বাইরেও কাজ করতে আগ্রহী, তাদের নিয়ে। যারা ফারেগ হয়ে গিয়েছেন, অথচ বেকার সময় কাটাচ্ছেন, তাদের নিয়েও।
ড. ইউনুস সাহেব একটি থিউরী কথা বারবার বলে যাচ্ছেন, অর্থনীতি নিয়ে আগাতে হলে, তাদের থিউরী গুলো আমাদের কিছুটা বুঝতে হবে। এর যে অংশটুকু কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নয়, সেটা গ্রহন করতে হবে, যেটা কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী তা বর্জন করতে হবে। তার থিউরীর একটি বিষয় হলো সামাজিক ব্যাবসা। গ্রামীণ ব্যাংক নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পর ড.ইউনুস সামাজিক ব্যবসার বিষয়টি বিশ্বব্যাপি খুব জোরের সাথে উচ্চারণ করছেন। বিশ্ব অর্থনীতিবিদগণ তা নিয়ে গবেষণাও করছেন, তার বাস্তবায়ন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন।

আমি মনে করি, উলামায়ে কেরাম, এই সামাজিক ব্যবসায় ভালোভাবে সফল হবেন। সমাজকে সেবা দিয়ে, সার্ভিস দিয়ে যে আয় আসবে, সেটা সামাজিক ব্যবসার একটি অন্যতম অংশ। সমাজ উলামায়ে কেরামদের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ বড় বড় অর্থনৈতিক কোম্পানীগুলো, ইনসুরেন্স কোম্পানীগুলো এদেশের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। তাদেরকে হাতে পায়ে ধরে, অনুরোধ, অনুনয় করে তাদের ব্যবসার সাথে উলামাদের সম্পৃক্ত করতে সচেষ্ট হন। কারন, এর দ্বারা তারা ব্যবসায়িকভাবে যত সহজে সফল হন, অন্য কোন ব্যক্তিদের দিয়ে এত তাড়াতাড়ি সফল হন না। আর উলামা ও ইমাম-মুয়াজ্জিনদের একটি বিরাট পুঁজি আছে, যেটা অন্যদের নেই। সেটা হলো “আস্থা’। মানুষ আলেম-উলামাদের বিশ্বাস করে। তাদের প্রতি আস্থা রাখে। ফলে অর্থনৈতিক কোম্পানী গুলোর ব্যবসা ভালো হয়। তাহলে আজ উলামাদের কেউ যদি নিজেরাই উদ্যোক্তা হন, কেউ যদি ছোট ছোট সমিতি করার মাধ্যমে সমাজকে সামাজিক সেবাটা দিতে পারেন, তাহলে একাধিক উপকারিতা রয়েছে। একদিকে তরুণ আলেমদের কর্মসংস্থানের পথটা সহজ হয়, অপরদিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজির মালিক হয়ে যাবেন উলামায়ে কেরাম। তারা নিজেরাই উদ্যোগ নিতে পারবেন, সমাজের কোন কোন সেক্টরে কাজ করলে সমাজেরও উপকার হবে, তাদের নিজেদেরও উপকার হবে তা জানতে পারবেন।
সামাজিক যোগাযোগ, সামাজিক পুঁজি, সামাজিক ব্যবসা, এশব্দগুলো বর্তমানে অর্থনীতিতে খুব প্রচলিত। এর সবকটির ক্ষেত্রে উলামাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা বিপুল। অনেকক্ষেত্রে উলামায়ে কেরাম অন্যের হাতে ব্যবহৃত হন। কিন্তু নিজেরা কিছু করতে সাহসী হন না। কারন তাদের হাতে ন্যূনতম নগদ মূলধন নেই। ফলে ইচ্ছে থাকলেও কিছু করতে পারেন না। আমরা অনেক সময় এনজিওদের বিরোধিতা করি, প্রায়শই না জেনে, তাদের কর্মকৌশল না বুঝে বিরোধিতা করি, তাদের বিকল্প কি সেটা আমরা দাঁড় করাতে পারি না। এনজিও’রা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় সংগ্রহ করে আজ তারা অনেক ধনী। তাদের ভিতরে মানবিক বোধ কম। তারা শুধু পয়সাই চিনে, ফলে তারা যতটা জনগণের কাছাকাছি যেতে পারে, তারচেয়ে অনেক বেশি আপন হতে পারবে উলামায়ে কেরাম। এনজিও’রা জনগণের পয়সা দিয়ে আজ অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। যে কারনে উপকারভোগী মানুষগুলো তাদের ভক্ত হয়ে উঠেছে। উলামায়ে কেরাম ইচ্ছে করলে এ পদ্ধতিতে সফল হতে পারে। এর জন্য দরকার কৌশল। এর জন্য প্রয়োজন মনোবল। দেশের প্রতিটি গ্রামে যদি একটি করে তরুণ উলামায়ে কেরাম সমিতি গড়ে তুলেন, তাহলে দেখা যাবে এক সময় হাজার হাজার ক্ষুদ্র এনজিও গড়ে উঠেছে। তারা সমাজকে কর্জে হাসানা দিতে পারছে, ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে ব্যবসায় সহায়তা করতে পারছে। ধীরে ধীরে বড় বড় ব্যবসায়ও তারা উদ্যোগ নিতে পারবে। আর যদি অনেকগুলো গ্রামের ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারী উলামায়ে কেরাম মিলে যৌথ উদ্যোগ নিতে পারেন, তাহলে বৃহৎ শিল্পের বাজারে ঢুকে যাওয়া তাদের পক্ষে খুবই সহজ। বর্তমানে মানুষের হাতে পয়সা আছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আগের তুলনায় অনেক শক্তিশালী। পিছিয়ে আছেন আমাদের আলেম সমাজ। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় দ্বারা জনগণের যে সকল সেবা দেওয়া সম্ভব, তার মধ্যে রয়েছে প্রাইভেট হসপিটাল, ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, হেলথ সেন্টার, কিন্ডারগার্টেন, নুরানী মক্তব, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, ইত্যাদি। মোট কথা, যখন আপনার হাতে পুঁজি থাকবে তখন দেখবেন আপনার ব্যবসার পথও খুলে গেছে। আয়ের পথ উম্মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। আপনি মানুষকে কিছু দিতে পারছেন, এটাকে অনেক মানুষ সমীহ করবে। যদিও এ টাকা আপনার না, দশজনের। তবুও আপনি যেহেতু দশজনকে ম্যানেজ করতে পেরেছেন, তার মানে আপনার সাথে দশজন আছে, আপনি একটি শক্তি। এভাবে ধীরে ধীরে আপনার হাতে পুঁজি আসবে, পুঁজির সেবক শক্তিও আসবে। কারন পুঁজি যার কথা বলে, শক্তিও তাকেই প্রণাম করে। আজ বাংলাদেশে কিছু অপ্রতিদ্বন্ধী এনজিও আছে, যাদের অঢেল সম্পদের কাছে সরকারও অসহায়।
নতুন যারা ফারেগ হচ্ছেন, তারা যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে গিয়ে আগে স্থির করুন আপনি কি করবেন? আপনি কোন পেশা গ্রহন করবেন। অতঃপর সেই পেশার সাথে সম্পৃক্ত দশজন বন্ধুকে কাছে টানুন, তাদের সাথে অর্থনৈতিক স্বাবলম্ভী হওয়ার বিষয়টি শেয়ার করুন। আপনি উদ্যোক্তা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করুন। দেখবেন, আপনাকে তারা পেয়ে অনেক খুশি। আপনি সাদরে দায়িত্ব গ্রহন করুন। স্বচ্ছতার সাথে কাজ করুন। কাজ করতে করতেই কাজ বুঝে যাবেন। আগে আপনি ইচ্ছা করুন, কি করবেন? তারপর সেটা বাস্তবায়নের জন্য চিন্তাশক্তিকে ব্যবহার করুন। দেখবেন পথ খুলে গিয়েছে। আজকের ব্রাক, আশা, গ্রামীনব্যাংক, এদের ইতিহাস দেখুন, এদের প্রতিষ্ঠার কাহিনীগুলো কান দিয়ে শুনুন। তারা কেহই বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা করেনি। ’এহসান এস বাংলাদেশ’ নামে কওমী ঘরানার আলেমদের একটি অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস যতটুকু জানি, মাত্র ২০/৩০হাজার টাকা নিয়ে শুরু হয়েছিল। বর্তমানে শতকোটি টাকা তাদের ফান্ডে রয়েছে। যদিও বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে, তারপরও আমি তাদের সফল মনে করি এই কারনে যে, তারা এখনও টিকে আছে। আমরা তাদের কাছ থেকে শিখতে পারি। তাদের সমস্যাগুলো কেন হয়েছে, সেটা আমরা জেনে কাজে লাগাতে পারি। অভিযোগের কথা শুনেই পিছু হটে গেলে হবে না। কাউকে না কাউকে তো সফল হতে হবে। আজকে যদি বাংলাদেশে আরো ২০টি এহসান এস বাংলাদেশের মতো প্রতিষ্ঠান থাকতো, তাহলে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা যেতো। কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা বের করা যেতো। এহসান এস অনেক উলামাদের স্বাবলম্ভী করেছে।
আমি নিজে ১৯৯৬ সাল থেকে আল ইত্তেহাদ উন্নয়ন সমিতি নামে একটি ছোট খাট সমিতি অফিসিয়াল কাঁজের ফাঁকে ফাঁকে পরিচালনা করে আসছি । এর মাধ্যমে কোটি টাকা জমা হয়েছে। জমি’র ব্যবসা এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র ব্যবসা থেকে যে মুনাফা হয়েছে মুলধনসহ সেই টাকা যথাযথভাবে সদস্যদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। ফলে আজো সেই সুনাম ধরে রেখেছি। এখনো মানুষ লাখ লাখ টাকা হাতে তুলে দেয়, শুধু সেই বিশ্বাসের কারনে। দীর্ঘ দিনের পরীক্ষায় পরিচিতদের বিশ্বস্ততা অর্জন করা গেছে। এটাও একটা বড় ধরণের সম্পদ। এরই ধারাবাহিকতায় ”রুফাকা টাওয়ার” নামে একটি ৬তলা ভবন নির্মাণের মতো কাজ শুরু করার সাহস পেয়েছি। নিজে সৎ থাকলে, লোভ কে সংবরণ করতে পারলে, কাজে ধারাবাহিকতা থাকলে সফলতার নিশ্চিত সম্ভাবনা। তিনটি জিনিষ খুবই জরুরী: হিসেবে স্বচ্ছতা, লোভ সংবরণ এবং কাজে ধারাবাহিকতা। আজকে এটা, কালকে ওটা করলে সফলতার সম্ভাবনা কম।
ক্ষুদ্র সঞ্চয় করতে কোন অফিসের প্রয়োজন হয়না। বড় ধরনের আয়োজনও করতে হয়না। একটু আন্তরিক ইচ্ছাই যথেষ্ট। কিন্তু এর উপকারিতা অনেক। আসুন, আমরা যারা দরস ও তাদরীসের বাইরেও কিছু করতে চাই, যারা সামাজিক ব্যবসায় জড়াতে চাই, কওমীদের সাথে যে সামাজিক সম্পর্কের একটি বড় ধরণের পুঁজি আছে সেই সামাজিক পুঁজিটাকে কাজে লাগাই। তাহলে ইহকালেও কল্যাণ, পরকালেও কল্যাণ। প্রথমত আপনার আর্থিক সমস্যার সমাধান হলো, এটা আপনার ইহজাগতিক কল্যাণ, আর আপনি যে নিষ্ঠার সাথে অন্যের সম্পদ সঞ্চয় করে দিলেন, সেটা কোন ব্যবসায় খাটালেন। তা দিয়ে মুনাফা অর্জন করে নিজ দায়িত্বে তার হাতে তুলে দিলেন, এর মধ্যদিয়ে আপনি সওয়াবও অর্জন করলেন। পাশাপাশি জনগণের মধ্যে যে ভয় কাজ করতো, যে হতাশা বিরাজমান ছিল, তা থেকে তাকে মুক্ত করলেন।
ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের কাজের জন্য বড় কোন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই। সামান্য জানা শোনা কোন ভাইয়ের দ্বারস্থ হলেই আপনি সমাধান পেয়ে যাবেন। অল্প কয়েকটি খাতা আর কাগজ হলেই আপনার আয়োজন সফল হবে। আসুন, আমরা বিষয়টি ইতিবাচক ভাবে বিবেচনা করি। আলোচিত বিষয়টি নিয়ে একটু পর্যালোচনা করি। আগামী দিনের পথচলায় যদি সামান্য উপকারে আসে তাহলে তাকে কাজে লাগাই। আল্লাহ আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি দান করুন। আমীন।

পূর্ব প্রকাশিত: নুরবিডি ডট কম (ভিডিও লিংক ছাড়া)

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *