১ম দৃশ্য
মনজুর মাস্টার্স পাশ করে বি সি এস এর প্রস্তুতি নিচ্ছে ৷ তার বাবা মা গ্রামে থাকেন, খুব কষ্ট করে তাকে পড়ালেখা করিয়েছেন৷ কাজেই এ চাকরিটা তাকে পেতেই হবে ৷
বি সি এসে তার প্রথম পছন্দ কাস্টমস অফিসার , তারপর ফরেস্ট অফিসার আর সবশেষে পুলিশ অফিসার ৷ এ রকম পসন্দের কারণ কি? কারণ, এ চাকরি গুলোতে ভালো একটা বাড়তি আয়ের সুযোগ আছে ৷
সে খুব খাটছে ৷ খুব সম্ভবত চাকরিটা তার হয়ে যাবে .. তাছাড়া তার একজন পরিচিত বড়ভাই আছেন – তিনি বলেছেন কয়েক লাখ টাকা দিলেই হবে ৷ বাবা বলেছেন জমি বিক্রি করে টাকাটা দিবেন ৷ .
২য দৃশ্য
মনজুর চাকরি পেয়েছে , পছন্দের চাকরি ৷ এখন তার বাবা- মা তাকে বিয়ে করানোর চিন্তা করছেন ৷ ছেলে ভালো চাকরি করে (কারণ এতে ভালো আয় করার সুযোগ আছে ), কাজেই তারা যেন তেন জায়গায় বিয়ে করাবেন না ৷ দেখে শুনে ভালো জায়গায় বিয়ে করাবেন ৷ গ্রামের মেয়ে তাদের পছন্দ না, শহরের মেয়ে খুজছেন , শহরে একটা ঠিকানা থাকলে ভালো হয় ৷ তাদের শহরে থাকার কোনো জায়গা নেই , বেয়াই বাড়ী প্রয়জনে অপ্রয়োজনে থাকা যাবে ৷ বাড়তি আয়ের সুযোগ থাকায় পাত্র হিসাবে তাদের ছেলে এখন বেশ দামী … কাজেই তারাও দামী বেয়াই খুজছেন৷
মনজুরও বাবা মায়ের সাথে একমত , সেও স্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষিত মেয়ে খুজছে ৷ পাশের গ্রামের স্কুল মাস্টারের বি এ পাশ মেয়ের প্রস্তাব সে নাকচ করে দিয়েছে ৷ সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তার মেয়ের প্রস্তাব আছে, বাবার ঢাকায় বাড়ী আছে ৷ মেয়ের চেহারাও আকর্ষনীয় , চেহারায় কষ্টের কোনো ছাপ নাই , স্বচ্ছলতায়- আদরে বড় হওয়ায় চেহারায় একটা জেল্লা আছে৷ এর সাথে স্কুল মাস্টারের টানাটানির সংসারে বড় হওয়া মেয়ের তুলনাই হয় না৷
পাত্রীর বাবাও তাকে পছন্দকরলেন, তার মেয়েকে অভাবে পড়তে হবে না ৷
৩য দৃশ্য
মনজুর সাহেব ভালো আয় করছেন ৷ গ্রামে বিল্ডিং করেছেন মা বাবার জন্য, নিজে ঢাকায় এপার্টমেন্ট কিনেছেন , বন্ধুর দেখাদেখি গাড়ীও কিনেছেন৷ বন্ধুদের পার্টিতে সে তার স্ত্রীকে নিয়ে যায় – সেখানে কম্পিটিশন হয় কার স্ত্রী কতটা দামী শাড়ী-গহনা পড়েছে৷ গত পার্টিতে তার এক কলিগের স্ত্রী ডায়মন্ড এর সেট পড়েছিলেন৷ সিঙ্গাপুর থেকে কিনেছেন ৷ তা দেখে তার স্ত্রী বায়না ধরেছে এবার ঈদের বাজার সিঙ্গাপুরে করবে , একটা ডায়মন্ডের সেট কিনবে ৷
৪র্থ দৃশ্য
মনজুর সাহেবের কয়েকজন বন্ধু আড্ডা দিচ্ছে ৷ কথায় কথায় মনজুর সাহেব এর পারিবারিক জীবন নিয়ে কথা উঠলো,
– স্বামী -স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক একদম ভালো যাচ্ছে না….
– দোষটা স্ত্রীর , তার আব্দারের জন্যই লোকটা ঘুষ খায় , ছাত্র অবস্থায় সে এমনটা ছিলনা…..
– বৌটার জন্যই ওর জীবন নষ্ট হয়ে গেল….
– বৌএর কারণেই সে দুর্নিতী করছে ….
নাটক সমাপ্ত
জিজ্ঞাসা-
১. মনজুর বিয়ের আগেই ঘুষ দিয়ে হলেও বাড়তি আয়ের চাকরি কেন চেয়েছিলেন ?
২. তিনি তার সমান সামাজিক স্তরের স্কুল মাস্টারের মেয়েকে কেন পছন্দ করেননি? কেন তিনি বাড়তি আয়ে বাড়ী করা অফিসারের মেয়ে পছন্দ করছেন?
৩. তিনি নিজেকে দামী পাত্র হিসাবে মনে করে কিসের বিবেচনায় দামী পাত্রী খুজছিলেন?
৪. পাত্রীর বাবা তাকে কেন পছন্দ করেছেন? সততার কারণে নাকি বাড়তি আয়ের সুবিধার কারণে?
৫. নাটকের প্রথম ও দ্বিতীয় দৃশ্যে স্ত্রী ছিলনা , স্ত্রী এসেছে ৩য দৃশ্যে৷ প্রথম দুই দৃশ্যেই তিনি ও তার পরিবার ঘুষের রাস্তা তৈরী করেছেন৷ তারপরও তার ঘুষের দায় শুধুমাত্র স্ত্রীর কাধে চাপিয়ে দেয়া কতটা যুক্তিকুক্ত ?
জী….না কোনভাবেই স্ত্রী-র উপর দোষ বর্তায় না ।:smile: