কিশোরী আয়েশা রাঃ এর বিয়ে নিয়ে বিদ্বেষীদের মিথ্যাচার!!

অমুসলিম ইসলাম বিদ্বেষীগণ কিশোরী আয়েশা রাঃ-কে বিয়ে করার জন্য মুহাম্মদ সাঃ-কে নানাভাবে অভিযুক্ত ও আক্রমণ করে। এসব আক্রমণাত্মক অভিযোগের মধ্যে শিশু নির্যাতন ও একটি। তাদের অভিযোগ যে মুহাম্মদ (সা:) কালের সীমাবদ্ধতা উত্তীর্ণ হতে পারেন নি, তিনি সর্বকালের আদর্শ হতে পারেননি। আমরা এখানে তাদের অভিযোগগুলো যাচাই করতে যাচ্ছি।

প্রথমে দেখি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটেনিকায় Child Abuse বা বাচ্চাদের সাথে কুকর্মের সংজ্ঞা কী দিয়েছে-
“শিশুদের সাথে কুকর্ম করা, যাকে শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতাও বলা হয়, এইটি হচ্ছে ইচ্ছাকৃত ভাবে শিশুদেরকে অন্যায় ভাবে আঘাত দেয়া এবং ভোগান্তি আরোপ করা। এই

পরিভাষা যে সব অর্থ বহন করে তা হল এই:
১. অসংযত/অপরিমিত শারীরিক নির্যাতন করা;
২.অসঙ্গত অশ্লীলতা ভাষা ব্যবহার করা,
৩.দুর্ব্যবহার;
৪.উপযুক্ত নিরাপত্তা বিধানে ব্যর্থতা,
৫.খাদ্য, চিকিৎসা ও মানসিক সমর্থ দানে ব্যর্থতা;
৬.অবৈধ যৌনসম্পর্ক স্থাপন করা;
৭. যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণ;এবং শিশুদের নিয়ে অশ্লীল ছবি তৈরি করা।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এইগুলোকে প্রায়ই “ শিশু আঘাত জনিত লক্ষণ” বলে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।

শিশুদের সাথে অপমানজনক কুকর্ম/দুর্ব্যবহার পৃথিবীর প্রায় সব দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত এবং ফৌজদারি সংবিধিমালায় দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য করা হয়।
শিশুদের সাথে দুর্ব্যবহার তার ভবিষ্যৎ জীবনে গভীর পরিণতি বা প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া শারীরিক বিকাশে বিলম্ব, ভাষার ব্যবহার ও অর্থ অনুধাবনে বৈকল্য, ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন, শিক্ষা ও ব্যবহারে সমস্যা –এগুলো হচ্ছে কিছু সাধারণ বিষয় যা নাবালক দুর্ব্যবহার, অযত্ন ও অবহেলা থেকে উদ্ভূত হয়। (এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, ১৯৯৮)

মন্তব্যঃ-
উপরে উল্লেখিত নির্ণায়ক গুলোর মধ্যে কোন একটি নির্ণায়ক মুহাম্মদ সাঃ জীবনের ইতিহাসে পাওয়া যায়নি ।
আয়েশা রাঃ অথবা অন্য কোন মানুষকে এই ধরণের আঘাত এবং যন্ত্রণা মুহাম্মদ সাঃ দেবার কোন একটি ঘটনা পাওয়া যায়না।
আয়েশা রাঃ বা মুহাম্মদ সাঃ অন্য কোন স্ত্রী বা উপপত্নীর সাথে মুহাম্মদ সাঃ মৌখিক ভাবে হোক আর শারীরিক ভাবে যৌন নিপীড়নের কোন ন্যুনতম উদাহরণ দেখা যায়নি।
ইতিহাসে আয়েশা রাঃ উনার নিজের এবং আশেপাশের অনেক মানুষের, এমনকি মুহাম্মদ সাঃ এর মত ব্যক্তিত্বের অনেক ঘটনা রাখ ঢাক না করেই বর্ণনা করে গিয়েছেন – কিন্তু তিনি নিজে কখনও মুহাম্মদের সাঃ স্ত্রীর দায়িত্ব পালন কালে কোন ধরণের যন্ত্রণা বা কষ্ট ভোগ করেছিলেন তাঁর কোন বর্ণনা উল্লেখ করে যাননি। বরং যখনই মুহাম্মদ সাঃ ভিন্ন কারণ বশতঃ অন্য মহিলাদেরকে বিয়ে করে এনেছিলেন তখন আমরা উনাকে অনেকসময় ঈর্ষান্বিত হতে দেখছি।
কোন এক ঘটনার কারণে মুহাম্মদ সাঃ স্ত্রীদের থেকে ১ মাস দূরে থাকার প্রতিজ্ঞা করে দূরে থেকে মাস পূর্ণ হবার পর স্ত্রীদের হুজরায় গিয়েছিলেন সেই সময় আয়েশা রাঃ বলে উঠেছিলেন- ইয়া রাসুলাল্লাহ, আজ তো ২৯ দিন মাস পূর্ণ হয় নাই!!!

একবার চিন্তা করে দেখুন যে স্ত্রী প্রতিদিন হিসাব করতেন স্বামী কর্তৃক কসম শেষ হতে আর কত দিন বাকি, সেই কসম মুক্তির অপেক্ষার প্রহর গুনতেন এবং স্বামীর ভালোবাসায় ভাগ নেয়া সতীনদের প্রতি ঈর্ষা বোধ করতেন, সে স্ত্রীর কতনা গভীর ভালোবাসার পরিচয় পাওয়া যায় – এই বাস্তবতাই বলে দেয় দেয় যে তিনি কি পরিমাণ ভালবাসতেন মুহাম্মদ সাঃ কে।

“শিশুদের সাথে দুর্ব্যবহার তার ভবিষ্যৎ জীবনে গভীর পরিণতি বা প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া শারীরিক বিকাশে বিলম্ব,ভাষার ব্যবহার ও অর্থ অনুধাবনে বৈকল্য,ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন,শিক্ষা ও ব্যবহারে সমস্যা –এগুলো হচ্ছে কিছু সাধারণ বিষয় যা নাবালক দুর্ব্যবহার,অযত্ন ও অবহেলা থেকে উদ্ভূত হয়”।
উপরে উল্লেখিত কোন একটি সমস্যার কথা আয়েশা রাঃ জীবনী থেকে জানতে পাইনি,যা পাই বরং তার উল্টা প্রতিচ্ছবি-আয়েশা রাঃ কে বাস্তব জীবনে আমার দেখে পাই – তাঁর ব্যক্তিত্ব, শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক সর্ব দিক দিয়ে তিনি অনন্যা ছিলেন তাঁর প্রখর স্মৃতি শক্তির বাস্তব স্বাক্ষর আমরা হাদিসের মাধ্যমে জানতে পারি। তিনি মুহাম্মদ সাঃ ওফাতের পর দীর্ঘ ৫০ বছর মানুষকে কোরআন হাদিস শিক্ষা দান করেছিলেন শুধু তাই নয় মুহাম্মদ সাঃ পরবর্তী তিন তিন জন খলিফাকে পরামর্শ সহায়তা দিয়েছিলেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে,আয়েশা রাঃ মুহাম্মদ সাঃ কে বিয়ে করে উনার অভিভাবকত্ব লাভ করে তিনি নির্যাতিত শিশু হিসাবে নয় বরং আশীর্বাদ প্রাপ্ত শিশু ছিলেন।
মুহম্মদ সাঃ এর বিরুদ্ধে অভিযোগকে বিশ্লেষণ এবং খণ্ডন করার পর আমাদের কাছে বিকল্প টেকসই যা বলার আছে তা হচ্ছে- আয়েশা রাঃ সাথে মুহাম্মদ সাঃ বিয়ে দ্বারা মানবতা এবং ইসলামের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হয়েছিল। আসুন আমরা আমাদের দাবী বিশ্লেষণ করে দেখি-

মুহাম্মদ সাঃ আয়েশা রাঃ কে প্রাথমিক যে তিন কারণের জন্য বিয়ে করেছিলেনঃ

আবু বকর রাঃ সাথের বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আত্মীয়তার মজবুত বাঁধনে পর্যবেশিত করে রাখা।

আয়েশা রাঃ ইসলামের বিধি বিধান শিক্ষা এবং তৈরী করা যাতে তিনি ইসলামের বিধি বিধানকে সংরক্ষণ, (বিশেষ করে নারীদের জন্য একান্ত বিষয়াদি) রাসুল সাঃ জীবন ইতিহাস, আল কোরআনের আয়াতের নাজিলের কারণ এবং মানুষকে তাঁর সঠিক শিক্ষাদান করতে পারেন।

উনাকে সে ভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল যাতে তিনি উনার সম্পূর্ণ সক্ষমতাকে ইসলামের জন্য ব্যবহার করতে পারেন।

আয়েশা রাঃ কে বিয়ে করা ছিল আল্লাহর ইচ্ছা যা ওহির মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

মুহাম্মদ সাঃ থেকে সে সম্পর্কে যে বর্ণনা তিনি জেনে ছিলেন সেই কথা আয়েশা রাঃ নিজেই বর্ণনা করে গিয়েছেন-তিনি বলেছেন-“তোমাকে বিয়ে করার আগে আমাকে ২ বার স্বপ্ন দেখান হয়েছিল। আমি দেখেছি একজন ফেরেশতা তোমাকে এক টুকরো রেশমি কাপড়ে জড়িয়ে আমার কাছে নিয়ে আসছেন। আমি বললাম- আপনি নিকাব উন্মোচন করুন! যখন তিনি নিকাব উন্মোচন করলেন তখন আমি দেখতে পেলাম যে ঐ মহিলা তুমিই। আমি তখন বললাম –এইটি যদি আল্লাহর তরফ থেকে হয়ে থাকে তাহলে তিনি তা অবশ্য বাস্তবায়ন করবেন। তারপর আবার আমাকে দেখানো হলো যে, একজন ফেরেশতা তোমাকে এক টুকরো রেশমি কাপড়ে জড়িয়ে আমার কাছে নিয়ে আসছেন। আমি বললাম- আপনি নিকাব উন্মোচন করুন! যখন তিনি নিকাব উন্মোচন করলেন তখন আমি দেখতে পেলাম যে ঐ মহিলা তুমিই। আমি তখন বললাম –এইটি যদি আল্লাহর তরফ থেকে হয়ে থাকে তাহলে তিনি তা অবশ্য বাস্তবায়ন করবেন। (সহি বুখারী ২৪১৮)

 আয়েশা রাঃ জন্ম লাভ করেন মুহাম্মদ সাঃ এর নবুয়ত লাভের পর এবং উনার পিতা মাতার ইসলাম গ্রহণের পর, সম্পূর্ণ ইসলামী আক্বিদা ও পরিবেশে তাঁর জন্মের সময় তাদের পরিবারে প্রাক ইসলামী মুশরিকদের সংস্কার, আচার আচরণ কোনটাই তাঁর মগজে স্থান লাভ করতে পারে নাই। তিনিই জন্মগত ভাবে মুসলিম শিশু হয়ে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। ইসলাম অবিকৃত ভাবে তাঁর ভিতর রূপ গ্রহণ করতে পেরেছিল। কাজেই উনার চিন্তা চেতনায় খাঁটি ইসলামী বিশ্বাস বিরাজমান ছিল।

 আয়েশা রাঃ প্রাথমিক ভাবে সাফা বিনতে আব্দুল্লাহ নাম্নীয় মহিলার তত্বাবধানে শিক্ষা লাভ করেন। তারপর সে যুগের সুগভীর জ্ঞানের অধিকারী উনার পিতা আবু বকর রাঃ কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেন। অসাধারণ ধীশক্তি সম্পন্না ও জিজ্ঞাসু স্বভাবী আয়েশা রাঃ পক্ষে উপযুক্ত শিক্ষকই জুটেছিল। তিনি প্রখর স্মৃতিশক্তি সম্পন্না ছিলেন। একবার যা শুনতেন তা অন্তরে গেঁথে রাখতে পারতেন। এই কারণে তিনি বাল্য থেকেই লক্ষণীয় সৌন্দর্য্য ও প্রখর স্মৃতিশক্তির কারণে সবার কাছে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি মুহাম্মদ সাঃ স্নেহময় যত্ন এবং সতর্ক পরিচর্যায় চলে আসার কারণে এবং স্ত্রী এবং ঘনিষ্ঠ সঙ্গী হিসাবে তিনিই এক মাত্র অতি কাছ থেকে মুহাম্মদ সাঃ এর কাছ থেকে ইসলামী জ্ঞান এবং সূক্ষ্মদর্শিতা লাভ করেছিলেন যা অন্য কোন নারীর পক্ষে সেই রূপ জ্ঞান এবং সূক্ষ্মদর্শিতা লাভ করা সম্ভব হয়নি।

মুহাম্মদ সাঃ এর ওফাতের পর ৫০ বছর তিনি নবীর কাছ প্রাপ্ত ইসলামী শিক্ষার শিক্ষকতা করেছিলেন। উম্মতের কাছে ব্যাপক ভাবে রাসুলের হাদিস পৌঁছে দেবার জন্য এমন বয়সের স্ত্রীর প্রয়োজন ছিল। তাই এই বিয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশে যে হয়েছিল তা কোন মুসলিমদের স্বীকার করতে দ্বিধা থাকা উচিত নয়। হাফসা রাঃ সালমা রাঃ এর মত আয়েশা রাঃ এর পুরো কোরআন মুখস্থ ছিল। এমন কি মুহাম্মদ সাঃ ওফাতের পর উনার কাছে উনার নিজস্ব কোরআনের একটি সংকলন ছিল।

 হাদিস বর্ণনাকারীদের অন্যতম চারজনের ( আবু হুরাইয়াহ রাঃ, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ, আনাস ইবনে মালিক রাঃ) মধ্যে আয়েশা রাঃ একজন ছিলেন। যিনি একাই ২০০০ হাজারের বেশি হাদিস বর্ণনা করে গেছেন। উনার ২২১০টি হাদিসের মধ্যে থেকে ১৭৪টি হাদিস বুখারী আর মুসলিমে স্থান পেয়েছে। তাঁর বর্ণনা কৃত হাদিসে মধ্যে এমন কিছু হাদিস আছে যা নারীদের একান্ত বিষয় যা আয়েশা রাঃ ছাড়া অন্যদের কাছ থেকে পাওয়া যায় নাই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যে, উনার ভাগনা হযরত উরুওয়া ইবনে যোবায়র (রা:) সহ কমপক্ষে তিন জন হাদিস বিশারদ হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদিসসমূহ সহীফাকারে লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন। সাহাবিয়ে কেরাম পরবর্তী যুগে উরুওয়াহ ছিলেন একজন প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ। ইসলামী হাদিস বিশারদগণ বলে থাকেন- আয়েশা রাঃ না থাকলে ইলমে হাদিসের অর্ধেকই বিস্মৃতির অন্তরালে হারিয়ে যেত।

 নিচের হাদিস থেকে বুঝা যেতে পারে যে, অনেক সাহাবিয়ে কেরাম আয়েশা রাঃ এর কাছ থেকে জ্ঞান লাভ করেছিলেন-
আবু মুসা (রাঃ)হতে বর্ণিতঃ এক দল মুহাজির এবং এক দল আনসারের মধ্যে একবার মতবিরোধ দেখা দেয়। জনৈক আনসার বলেছিলেন– গোসল ফরজ হবে কেবলমাত্র তখনই যদি বীর্য বেরিয়ে আসে। কিন্তু মুহাজিরগণ বলেন যে, মেয়ে লোকের সাথে সঙ্গমে মিলিত হলেই গোসল ফরজ হয়ে যায় । আবু মুসা রাঃ বললেন– ঠিক আছে, আমি তোমাদেরকে এ বিষয়ে সঠিক নিয়ম বাৎলে দেব। তিনি (আবু মুসা) বলেনঃ আমি সেখান থেকে উঠে আয়েশা রাঃ নিকট গেলাম এবং তার সাথে সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করলাম। অনুমতি মিলল এবং আমি তাকে প্রশ্ন করলামঃ উম্মুল মোমেনীন,আমি আপনাকে এমন একটি বিষয়ে প্রশ্ন করতে চাই যা বলতে আমারই লজ্জা লাগছে। তিনি বললেন, যে কথা তুমি তোমার জন্মদাত্রী মাকে জিজ্ঞেস করতে লজ্জা পেতে না, আমাকেও তুমি তা জিজ্ঞেস করতে পার। আমি তোমার মায়ের মতোই। এ কথার পর আমি তাকে বললাম– একজন পুরুষের উপর গোসল ফরজ হয় কখন?উত্তরে তিনি বললেন– তুমি ঠিক জায়গায়ই এসেছ। রসুলুল্লাহ (দঃ) বলেছেন– কোন ব্যক্তি যদি (স্ত্রীলোকের) চারটি প্রত্যঙ্গের উপর সওয়ার হয় এবং খৎনা করা অঙ্গটি পরস্পর স্পর্শ করে, তখনই গোসল করা ফরজ হয়ে দাড়ায়। সহি মুসলিম, বুক নং–৩, হাদিস নং–০৬৮৪

 উরওয়া বিন জুবায়ের বলেছেন-“ আমি কখনও কাউকে পাই নাই যিনি আল কোরআন, হালাল এবং হারামের আদেশ নিষেধ, ইলমুল আনসাব বা নসব–শাস্ত্র এবং আরবি কবিতায় আয়েশা রাঃ এর চেয়ে বেশি ওয়াকিবহাল ছিলেন। সেই কারণে অনেক বয়োজৈষ্ঠ সাহাবিয়ে কেরামগণ জটিল কোন বিষয় নিরসনে আয়েশা নিরসনে সাহায্য গ্রহণ করতেন। দেখুন- ইবনে কাইম ও ইবনে সা’দ কর্তৃক জালা-উল- আফহাম ভল্যুম ২ এর ২৬ পৃষ্ঠা।

 আবু মুসা আল আশারী রাঃ বলেনঃ- আয়েশা রাঃ নিকট নিয়ে যাওয়া কোন সমস্যার সমাধানের জন্য আমাদের কখনো কোন অসুবিধা হয় নাই। দেখুনঃ- সীরাত-ই-আয়েশা, তিরমিজি পৃঃ ১৬৩

 একজন শিক্ষক হিসাবে ছাত্রদেরকে অনুপ্রাণিত করার সুস্পষ্ট ভাষণ রীতি আয়েশা রাঃ আয়ত্তে ছিল। সমকালীন মানুষের মধ্যে বাগ্মিতার বাগ্মিতায় তিনি ছিলেন সেরা একজন। এই বিষয়ে আল আনাফ রাঃ এর বর্ণনা পাওয়া যায়, তিনি জানান যে, তিনি আবুবরক রাঃ থেকে উমর রাঃ, উসমান রাঃ, আলী রাঃ সহ সমকালীন খলিফার দেওয়া ভাষণ শুনেছেন কিন্তু আয়েশা রাঃ মুখ থেকে যে আকর্ষণীয় ভাবে অনুপ্রেরণা মূলক ভাষণ শোনা যেতে সেই ভাবে অন্য কারো মুখ থেকে বের হতে তিনি শুনেন নাই।

 আবু মুসা আল আশারীর বর্ণনায় জানা যায় যে, নবী সাঃ বলেন- অন্যান্য মহিলার সাথে আয়েশা রাঃ এর শ্রেষ্ঠত্বের তুলনা ত্বারিদের সাথে অন্যান্য অন্যান্য খাদ্যের শ্রেষ্ঠত্বের তুলনার মত। (ত্বারিদ হচ্ছে গোস্ত আর রুটি তৈরি এক প্রকার অতুলনীয় খাদ্য)। দেখুন বুখারী ৪-৬৪৩।

 মুসা ইবনে তালহা রাঃ বলেন- আমি দেখিনাই কোন একজনকে আয়েশা রাঃএর চেয়ে ভাল ভাষণ দিতে। দেখুনঃ হাকিমের মুস্তাদ্রাক ভল্যুম ৪ পৃঃ ১১

 দূর দূরান্তের নারী পুরুষগণ আয়েশা রাঃ এর থেকে জ্ঞান লাভ করেছিলেন। উনার দারুণ আগ্রহ সহকারে আধ্যায়নে আল কোরআন বোধগম্য হয়েছিল। তিনি বেশ কিছু আয়াত নাজিলের চাক্ষুষ সাক্ষী ছিলেন। কয়েক বার উনার বিছানায় রাসুল সাঃ কাজে ওহী নাজিল হয়েছিল। সেই কারণে সেই আয়াত নাজিলের কারণ সম্পর্কে উনার সুস্পষ্ট ধারণা ছিল যার কারণে এই আয়াতের ব্যাখ্যা করা তাঁর জন্য সহজ ছিল।

 মুহাম্মদ সাঃ আয়েশা রাঃ কোলে মাথা রেখেই ইন্তেকাল করেছিলেন। এবং উনার ঘরেই রাসুল সাঃকে দাফন করা হয়েছিল।
আয়েশা রাঃ এর জীবন ইতিহাস প্রমাণ করে দিচ্ছে যে, নারীরা চেষ্টা করলে পুরুষদের চেয়েও বেশী জ্ঞান অর্জন করার ক্ষমতা রাখেন এবং যে কোন এক বা একাধিক বিষয়ে পাণ্ডিত্য অর্জন এবং বিশারদদেরও শিক্ষক হতে পারেন। তাঁর জীবন আরও প্রমাণ করে যে, একজন নারীও ক্ষমতা আছে অন্যান্য নারী ও পুরুষদের উপর প্রভাব বিস্তার করে তাদের নেতৃত্ব দান করতে অনুপ্রাণিত করতে।

আয়েশা রাঃ আজো সমান ভাবে অনুপ্রেরণা এবং আদর্শ ভূমিকা রাখতে পারেন আমাদের তরুণদের মাঝে যারা একটি আদর্শ চরিত্র পাওয়ার জন্য তারা কায়মনোবাক্যে খুঁজে চলছেন তাদের প্রিয় তারকা, চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী কিংবা ক্রীড়া তারকাদের মধ্যে।
আয়েশা রাঃ যে ভাবে এখনও মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ের মধ্যে চির জাগরূক আছেন এবং অব্যাহত ভাবে চির জাগরূক থাকবেন । আমরা মহান আল্লাহর দরবারে আরজ জানাচ্ছি এই মহান মহীয়সী নারীকে বেহেস্তে দরজা বুলন্দ করে দিন। আমিন!

উপসংহারঃ
উপরে বর্ণিত আয়েশা রাঃ কার্যক্রম এবং গুণাবলি বিচার বিশ্লেষণ করার পর প্রমাণ হয় যে, রাসুল সাঃ পরবর্তী সময়ে ইসলামের সেবার জন্য মুহাম্মদ সাঃ প্রত্যক্ষ পরিচর্যায় মাধ্যমে আয়েশা রাঃকে ছাঁচে ঢেলে সক্ষম করে তোলাই ছিল কিশোরী আয়েশা রাঃ বিয়ে করার প্রধান কারণ। কোন অবস্থাতে বিপথগামী ওরিয়েন্টালিস্ট বা বর্ণবাদী মুশরিক, বা ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক তথা এন্টি মুসলিমগণে অপপ্রচার তাদের বিকারগ্রস্ত আনা কারণ নয়।
অতএব আমি দুনিয়ার আস্তিক নাস্তিক, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষ সকল অকপট মানুষদেরকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আমরা – আপনারা আসুন মনের বন্ধ দরজা জানালা খুলে কোরআন এবং সুন্নাহর নির্ভরযোগ্য প্রমাণিত উৎসের আলোকে মুহাম্মদ সাঃ জীবনী পড়ুন। নিজেদের বিবেক দ্বারা নিজেরাই বিচার করুন কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা!

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মালিক আপনার আমার সবার সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রেরিত সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত পথ নির্দেশনা ইসলামকে মানব সমাজ সত্য বলে স্বীকার করে নেওয়ার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে দুনিয়াতে চিরস্থায়ী শান্তি যেমন আসবে তেমন করে মৃত্যু পরবর্তী জীবনেও দোযখের আগুন থেকে পাবেন চির পরিত্রাণ।
“আমি তাঁকে (মোহাম্মদ সাঃ) বিশ্লেষণ করে দেখেছি – আশ্চর্য এক ব্যক্তি এবং আমার মতে তিনি অ্যান্টি ক্রাইস্ট তো নন-ই, বরং তাঁকে অবশ্যই মানবতার রক্ষাকারী হিসাবে বর্ণনা করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি যে তাঁর মতো মানুষ যদি আধুনিক পৃথিবীর একজন সার্বভৌম ক্ষমতাপ্রাপ্ত শাসকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, তাহলে তিনি এর সমস্যাগুলির সমাধান এমন ভাবে করতে সক্ষম হবেন যে এতে আবার বহু প্রয়োজনীয় সুখ ও শান্তি ফিরে আসবে”।
— জর্জ বার্নার্ড শ’, দ্য জেনুইন ইসলাম ভল্যুম.১,নং ৮১৯৩৬।

আজ যদিও মুহাম্মদ সাঃ স্বশরীরে আমাদের মধ্যে নাই তথাপি উনার মহত্তম জীবন আদর্শ পৃথিবীর সকল মানুষের অনুসরণের জন্য উত্তম রূপে সংরক্ষিত করা আছে।

মুনিম সিদ্দিকী

About মুনিম সিদ্দিকী

ব্লগে দেখছি অন্য সহ ব্লগাররা তাদের আত্মপরিচয় তুলে ধরেছেন নিজ নিজ ব্লগে! কুঁজো লোকের যেমন চিৎ হয়ে শোয়ার ইচ্ছা জাগে তেমন করে আমারও ইচ্ছা জাগে আমি আমার আত্মপরিচয় তুলে ধরি! কিন্তু সত্য যে কথা তা হচ্ছে শুধু জন্মদাতা পিতা কর্তৃক আমার নাম আর পরিবারের পদবী ছাড়া আমার পরিচয় দেবার মত কিছু নেই! আমি এক বন্ধ্যা মাটি যেখানে কোন চাষবাস হয় নাই। যাক আমি একটি গান শুনিয়ে আত্মপ্রতারণা বর্ণনা শেষ করছি- কত শহর বন্দরও পেরিয়ে চলেছি অজানা পথে - কালেরও নিঠুর টানে- আমার চলার শেষ কোন সাগরে তা তো জানা নাই! ধন্যবাদ।

Comments are closed.