কাঁদো দেশবাসী কাঁদো!!!

গত পরশু রাতে আশুলিয়া থানার অধীন নিশ্চিন্তপুর গ্রামের তাজরিন গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে অনেক গুলো প্রাণ অকালে ঝরে গেল! একটি স্বাধীন দেশে এভাবে কি মানুষের মৃত্যু কাম্য হতে পারে। আমি তো বলব এই বিশাল মৃত্যু নিছক এক্সিডেন্টাল মৃত্যু নয়, এই মৃত্যু গণহত্যার নামান্তর। আমাদের দেশে এখন শিল্প কারখানা শিশু অবস্থায় বিরাজ করছেনা। এই খাতে আমাদের টের অভিজ্ঞতা আছে। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগে প্রাণহানির ঘটনা কোন নতুন ঘটনা নয়। প্রায়ই এই ভাবে দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যায়। ঘটে গেলেই চারিদিক থেকে অনেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে বসে অনেক ধরণের কথা বার্তা ওয়াজ নসিহত করে থাকেন। কিন্তু কিছু দিন অতিবাহিত হবার পর যেই লাই সেই কদু! কেউ আর এই বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলা কেন চিন্তা ভাবনাও করেন না।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রধান প্রাণ সঞ্চালন কারী খাত। উচিত ছিল এই খাতকে যারা তাদের শ্রম দিয়ে ঘাম দিয়ে এবং তাদের আপন জনদের বঞ্চিত করে খাত চালু করে যাচ্ছেন তাদের নিরাপত্তার প্রতি অধিক মনোযোগ দেওয়ার। কিন্তু আমরা তা দিচ্ছি কি? একজন শ্রমিক প্রতিদিন ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠে ফ্যাক্টরি অভিমুখে রওয়ানা দিয়ে সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যা ৭/৮টায় ঘরে ফিরে, ঘরে ফিরে এসেও সেখানে তাদের নিজস্ব কাজ গুলো গুছিয়ে নিতে হয়, স্বামী সন্তান থাকলে তাদেরকেও সময় দিতে হয়। এইসব করে রাত ১১/১২টার আগে ঘুমাতে যেতে পারেন না। যারা এত কষ্ট করে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চালন করে যাচ্ছেন, এর বিনিময়ে কি তাদের এই ভাবে অপঘাতে মৃত্যু পুরো জাতির কাছে কাম্য হতে পারে???

গার্মেন্টসের একজন কর্মী হিসাবে গত ৩০ বছর ধরে দেখেছি যে সব কারখানা বহুতল বিশিষ্ট বিল্ডিঙে থাকে সেই সব কারখানায় আগুন লাগলে বেশীর ভাগ মানুষের মৃত্যু ঘটে। কারণ ৩/৪/৫ তলা থেকে জরুরী মুহুর্ত্যে বের হয়ে আসা যায়না। তখন প্রাণের ভয়ে সবাই জ্ঞান হারা হয়ে সেই ছোট্ট ছোট্ট দরজা দিয়ে একসাথে বের হবার চেষ্টা করার বিরাট জ্যামের সৃষ্টি হয়ে যায় যার কারণে কেউ বের হতে তো পারেনা বরং পদতলে পৃষ্ট হতে অনেক মৃত্যুবরণ করে থাকেন। অনেকে আবার প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে ৪/৫ তলা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে থাকেন, এই ঝাঁপিয়ে পড়েও প্রাণ বাঁচাতে পারেন না।

কাজেই আমার মনে হয় সরকার যদি বহুতল বিশিষ্ট বিল্ডিঙে কোন কারখানা যাতে স্থাপিত না হয় সে দিকে কড়া খেয়াল রাখা খুবই দরকার। যদি নিচতলায় কারখানা হলে সেখানে আগুন লাগলে শ্রমিকরা দ্রুত কারখানা থেকে বের হয়ে আসতে পারবে তাতে অসহায় ভাবে শ্রমিকদের প্রাণ নাশের আশংকা কমে আসবে।
শুনেছি তাজরীন গার্মেন্টসে অগ্নিনির্বাপক প্রস্তুতি ছিলনা। এত বড় একটি কারখানায় অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ছিলনা বা অপ্রতুল ছিল তা কি সরকারের যথার্থ দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ দেখতে পান নাই? সরকারে উচিত লোক দেখানোর তদন্ত নয় সঠিক তদন্ত করে এই অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ নির্ণয় করে দোষী ব্যক্তিদেরকে সমুচিত শাস্তি দান করা।যাতে ভবিষ্যতে অন্যরা এইরূপ গাফিলতি করার সাহস না পান।
গার্মেন্টস শ্রমিকরা আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ নন। কাজে যে দেশে প্রতিরক্ষা বাহিনীর কেউ অপঘাতে নিহত হলে যে সংখ্যার টাকা ক্ষতি পূর্ণ দেওয়া হয় ঠিক সেই ভাবেই কলকারখানার শ্রমিকরা অপঘাতে নিহত হলে তাদেরকেও সেই পরিমাণ ক্ষতি পূরণ দেবার ব্যবস্থা করা হোক।
তাজরীন ট্র্যাজেডি জন্য রাষ্ট্রিয় ভাবে শোক পালন করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

Loading

মুনিম সিদ্দিকী

About মুনিম সিদ্দিকী

ব্লগে দেখছি অন্য সহ ব্লগাররা তাদের আত্মপরিচয় তুলে ধরেছেন নিজ নিজ ব্লগে! কুঁজো লোকের যেমন চিৎ হয়ে শোয়ার ইচ্ছা জাগে তেমন করে আমারও ইচ্ছা জাগে আমি আমার আত্মপরিচয় তুলে ধরি! কিন্তু সত্য যে কথা তা হচ্ছে শুধু জন্মদাতা পিতা কর্তৃক আমার নাম আর পরিবারের পদবী ছাড়া আমার পরিচয় দেবার মত কিছু নেই! আমি এক বন্ধ্যা মাটি যেখানে কোন চাষবাস হয় নাই। যাক আমি একটি গান শুনিয়ে আত্মপ্রতারণা বর্ণনা শেষ করছি- কত শহর বন্দরও পেরিয়ে চলেছি অজানা পথে - কালেরও নিঠুর টানে- আমার চলার শেষ কোন সাগরে তা তো জানা নাই! ধন্যবাদ।

Comments

কাঁদো দেশবাসী কাঁদো!!! — 11 Comments

  1. আশুলিয়া অগ্নিকান্ডের ফলাফল হিসাবে জাতি পেয়েছে, লাশ,আহাজারি,ষড়যন্ত্র তত্ত্ব,তদন্ত কমিটি,ক্ষতিপূরণ,এবং শোক দিবস ইত্যাদি।শ্রমিকের জীবনের মূল্য রাষ্ট্রের কাছে কতটুকু সরকারে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের আবিষ্কার মাধ্যমে আশুলিয়ার প্রাণহানি ঘটনাকে বৈধতা দানের মধ্যে ফুটে উঠে।সরকারে প্রধানের বিবৃতি প্রমাণে করে যে, আইন শুধু মাএ সমাজের এলিটদের শ্রেণীর জন্য এবং কিতাব,পুস্তক,এর মাঝে সীমাবদ্ধ।একটি দেশের সরকার ব্যবস্থা কতটা দেউলিয়া হলে,এবং কতটুকু রাজনৈতিক ব্যর্থতা ও চেতনা দৈন নিচে নামলে সরকার প্রধান মুখে এমন কথা শুনা যায়?অথচ আইনের বিধি বিধান পোশাক শিল্পে কতটুকু তোয়াক্কা করা হচ্ছে,সেদিকে আলোকপাত না করে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে খুবই হৈ চৈ হচ্ছে। এ ধারাবাহিকতায়ে শ্রমিক শোষণ আগের মতে চলবে।

  2. যাদের ঘাম ও রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ধণীদের বিলাস-বহুল অট্টালিকা, আয়েসী জীবন তথা দেশের অর্থনীতির ভিত, তাদের নিরাপত্তার একি হাল?

  3. শোকহত সকলের জন্য। পরলোকগত ভাইবোনের আত্মার মগফেরাত কামনা করছি, আল্লাহ তাদেরকে শহীদের মর্যাদ দান করূন। আমিন
    শোকাহত সকল পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি আল্লাহ আপনাদেরকে ধর্য্যের তৌফিক দান করুন, মহান আল্লাহর হাতে ধর্য্যের নেয়ামত অপরিসীম।

  4. “কত ব্যথা বুকে চাপালে,তাকে বলি
    আমি ধৈর্য। নির্মমতা কতদুর হ’লে,জাতি হবে নির্লজ্জ ।বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে, নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার।বিধাতা তোমারে ডাকি বারে বারে, করো তুমি মোরে মার্জনা। দুঃখ সহিতে দাও গো শক্তি, তোমারে সকাশে প্রার্থনা। চাহিনা সহিতে আমার মাটিতে মজলুমের আর্তনাদ, বিষাদ অনলে পুড়ে বারে বারে লুন্ঠিত হবে স্বপ্নস্বাদ।আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া, করিতে পারি নি চিৎকার,বুকের ব্যথা বুকে চাঁপায়ে, নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার…………………………………….”

  5. আরেকটি কথা সংযোগ করি। আমরা শুনছি ‘তদন্ত’ হবে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে ইতিপূর্বে অনেকবার আগুন লেগেছে। অনেকবার অনেক লোক পুড়ে মরেছে। আপনারা কি কখনও কাউকে (মালিক পক্ষকে) জেল কাটতে শুনেছেন? সম্ভবত না। মূল কথা হচ্ছে এই শ্রেণীর লোকজন আসলে ‘মানুষের’ কাতারে গণ্য নয়। এখানেই দেশ বিভক্ত। আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা এক শ্রেণীর দলীয় পাণ্ডাদের হাতে ‘বিসর্জিত’ -এই কথাটি বুঝা দরকার। স্বাধীনতা শব্দের অনেক অর্থ ও রূপ রয়েছে। স্বাধীনতা বিভিন্নভাবে ক্ষুণ্ণ হতে পারে। আজ জনগণের স্বাধীনতা স্বার্থবাদী, মুনাফাবাদী, কিছু ফ্যাসিবাদী আদর্শের হাতে বিপন্ন। এই মর্মান্তিক ঘটনাতেই দেখতে পাবেন প্রবঞ্চিতদের পরাস্বাধীনতার রূপ। এদের জীবনের কোনও মূল্য নেই, এদের কোনও বিচার নেই, এদের কোনও অধিকারও নেই। উল্লেখিত গোষ্ঠীসমূহে egalitarian চিন্তা অনুপস্থিত। এদের কিতাবে আছে মানুষ আর ‘মানুষ’। ‘মানুষ’ বলতে তাদের নির্দিষ্ট কিছু লোক রয়েছে, ওরাই তাদের মানুষ -ওদের কেউ মরলে ওরা রাস্তায় নামবে, কিন্তু ‘এদের’ জন্য তাদের lip service ছাড়া আর কিছু নেই। দেখবেন, এক সপ্তাহ পরে এসব ভুলে যাওয়া হয়েছে, আর ওরা বুব্দুদের মত নিঃশেষ হয়েছে। অধিকন্তু লাশের রাজনীতি already শুরু হয়ে গিয়েছে।

  6. এই ট্রাজেডি সামনে রেখেও আপনাদের প্রধানমন্ত্রী খালেদা-তনয়ের ‘আন্তর্জাতিক করাপনের’ কথা নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার মানসিকতাও খুঁজে পেয়েছিলেন! প্রকৃতির কলুষই এখানে দেখার মত। সিলেটিতে বলতে হচ্ছে, ‘ওরা আদম, না উদম?’

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *