করোনার শিকার সংবাদপত্র শিল্প ও উত্তরণ ভাবনা

করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি ও শিল্প-বাণিজ্যের সব শাখার ওপরই নানা মাত্রার প্রভাব সৃষ্টি করেছে। বৈশ্বিক যোগাযোগ স্থবির হয়ে পড়ায় পর্যটন শিল্প অচল, বিমান পরিবহন খাত তীব্র চাপের মুখে, কৃষির অবস্থাও ভালো নয়, জ্বালানি তেলের বিশ্ব বাজারের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ব্যারেল তেল বিনামূল্যে নিলে তাকে উল্টো প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। সার্বিকভাবে মহামন্দার পদধ্বনি প্রবল হয়ে উঠছে।

করোনার খাতভিত্তিক ক্ষতির মাত্রা নিরূপণে এখনো সেভাবে কাজ হয়নি। তবে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব দেশের সংবাদপত্র শিল্পই সম্ভবত সবচেয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়েছে। ইউরোপ আমেরিকার বহু দেশে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রকাশ হয়ে আসা স্থানীয় সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে গেছে। জাতীয় পর্যায়ের অনেক পত্রিকা ছাপা সংস্করণ বন্ধ করে দিয়ে অন লাইন সংস্করণ বের করছে।
ইউরোপ আমেরিকার বেশির ভাগ সংবাদপত্রের আয়ের মূল উৎস বিজ্ঞাপন রাজস্ব। এসব দেশের মূল ধারার অনেক পত্রিকা বিনামূল্যে অথবা নামমাত্র মূল্যে সরবরাহ করা হয় গ্রাহকদের কাছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, শিকাগো ট্রিবিউন, টরন্টো স্টার অথবা গার্ডিয়ান-টেলিগ্রাফের মতো পত্রিকা বিক্রির আয় থেকে পত্রিকা সরবরাহের ব্যয়ও ওঠাতে পারছে না। ফলে করোনার লকডাউন পরিস্থিতিতে এসব দেশের সংবাদপত্রও মারাত্মক চাপের মধ্যে রয়েছে। সংবাদকর্মীদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির চেয়েও গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপনজনিত আয় দীর্ঘ সময়ের জন্য কমে যাওয়ার আশঙ্কা এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখার পথে অনেক বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এসব সংবাদপত্রের পেছনে বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের পুঁজির সমর্থন থাকায় এ মুহূর্তে তা হয়তো বন্ধ হবে না। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি আরো কয়েক মাস চললে, এমনকি করোনা-উত্তর বৈশ্বিক মহামন্দা সৃষ্টির যে পূর্বাভাস আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান দিচ্ছে তাতে অনেক পত্রিকা গ্রুপ নিজেদের সঙ্কুচিত করে ফেলতে পারে। বিশ্বব্যাপী সংবাদপত্র শিল্প সম্ভবত আর কখনই করোনা-পূর্ব অবস্থায় ফিরতে পারবে না। বিবিসিসহ অনেক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম মিডিয়ার এই করুণ পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।

বৈশ্বিকভাবে সংবাদপত্র বেশ ক’বছর ধরে নানা সঙ্কটকাল পার হচ্ছিল। এই সঙ্কটের মূল কারণ ছিল সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপনজনিত আয় অব্যাহতভাবে কমে যাওয়া। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে এই আয় ৪০ শতাংশের মতো কমলেও সে তুলনায় সংবাদপত্রের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। মূল ধারার সংবাদপত্রগুলো অন লাইন সংস্করণের সাথে সমন্বয় করে নিজেদের কোনোভাবে টিকিয়ে এ পর্যন্ত চলে আসছিল। কিন্তু করোনার ছোবলে সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে।

বাংলাদেশে এই প্রভাব যেন আরো বেশি। দেশের বেশির ভাগ আঞ্চলিক ও জেলাভিত্তিক সংবাদপত্র এখন প্রকাশ হচ্ছে না। ঢাকায় হাতেগোনা কয়েকটি পত্রিকা ছাড়া বাকি সব সংবাদপত্র কার্যত বন্ধ। মূল ধারার পত্রিকাগুলোর ওপরও আঘাত আসতে শুরু করেছে। লকডাউন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগে এখানকার সংবাদপত্রগুলো নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেদের কোনোভাবে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে আসছিল। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের নজিরবিহীন সংক্রমণ ও প্রাণহানি এবং এর ফলে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট অচলাবস্থায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমের অবস্থা এখন নাজুক।

বিজ্ঞাপনের আয়ের পাশাপাশি পত্রিকা পাঠকদের কাছে পৌঁছানোর নেটওয়ার্ক সঙ্কুচিত হওয়ায় অনেক কাগজ ইতোমধ্যে প্রকাশনা স্থগিত বা বন্ধ করে দিয়েছে। নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টির আগে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের বার্ষিক সম্মেলনের স্মরণিকায় আমার ‘সাংবাদিকতা কি ছাড়তেই হবে?’ শীর্ষক একটি লেখা প্রকাশ হয়েছিল। এই লেখাটা শুরু করেছিলাম ঢাকার একজন নেতৃস্থানীয় অর্থনৈতিক সাংবাদিকের ফেসবুক স্ট্যাটাসের বক্তব্য তুলে ধরে। সেখানে তিনি বলেছিলেন, সংবাদপত্র শিল্পের এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে তিনি তরুণদের আর এই পেশায় আসতে বলবেন না। যারা এখানে আছেন তাদের এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশা বেছে নেয়ার পরামর্শ দেবেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সাংবাদিকতা বিভাগ বন্ধ করে দেয়ার আবেদন জানাতে চান। বলতে চান, শিক্ষার জন্য কেউ যেন আর এই বিষয়টি বেছে না নেন। সাংবাদিকতার মর্যাদা, গ্ল্যামার ও সামাজিক ও অর্র্থনৈতিক নিরাপত্তার কোনো কিছুই আর অবশিষ্ট নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন। তার এ মন্তব্যের সাথে আংশিক একমত হয়েও আমি বলেছিলাম, সাংবাদিকতার সব কিছু সম্ভবত শেষ হয়ে যায়নি। এই শিল্প এবং পেশা তার গৌরব মর্যাদা আবার ফিরে পাবে। গণতন্ত্র এবং রাষ্ট্রের প্রকৃত সার্বভৌমত্বের সাথে গণমাধ্যমের টিকে থাকার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে বলে বিশ্বাস থেকে আমি এ মন্তব্য করেছিলাম।

আমি ব্যক্তিগতভাবে আশা এবং স্বপ্ন নিয়ে সামনে এগোনোর পক্ষপাতী। আমার বিশ্বাস আমরা যা দেখছি, তা একমাত্র সত্য নয়। ঘন কালো মেঘের আড়ালে যে উজ্জ্বল সূর্য উঁকি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তা একটি অনিবার্য বাস্তবতা। সেটি যিনি দেখার সেই সর্বশক্তিমান দেখছেন। তিনি নিশ্চয়ই এখনকার অস্বস্তিকে সেই স্বস্তিতে নিয়ে যাবেন।

তবে এই লেখা যখন লিখছি তখন দেশের বেশির ভাগ গণমাধ্যমে সংবাদকর্মীরা এক মাস আগের বেতন এখনো পাননি। অনেক গণমাধ্যমকর্মীর বেতন দুই বছর পর্যন্ত বকেয়া জমে গেছে। এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা গণমাধ্যমে কাজ করছেন রোজা বা ঈদের আগে তাদের বেতন-ভাতার কী অবস্থা হবে সে বিষয়ে কেউ নিশ্চিত নন। করপোরেট সমর্থিত দু-একটি হাউজ শুধু এর ব্যতিক্রম। বাংলাদেশে ছাপা বা বৈদ্যুতিক উভয় গণমাধ্যমই এখন চাপের মধ্যে। আমি রেডিও টেলিভিশনের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো আলোচনায় যাচ্ছি না।

আমি যে সংবাদপত্রে কাজ করি সেটির অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কিছুটা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে। সংবাদপত্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ছোটখাটো একটি গবেষণার সময় এ দেশের মূলধারার সংবাদপত্রগুলো কিভাবে পরিচালিত হয় তার ওপরও কাজ করার সুযোগ হয়। এতে আমার ধারণা, বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো করোনা-পূর্ব অবস্থায় নিকট ভবিষ্যতে আর ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাবে না। নতুন এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই সংবাদপত্র শিল্পকে সামনে এগোতে হবে।

বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে বিশেষত বহুল প্রচারিত বাংলা পত্রিকা, যেগুলোর প্রচার সংখ্যা লাখের কোটায় বা তার চেয়ে বেশি সেগুলোর অর্ধেক বা কাছাকাছি আয় সংবাদপত্র বিক্রি থেকে আসে। বাকি অর্ধেক বা কিছুটা বেশি আসে বিজ্ঞাপন রাজস্ব থেকে। বলা যায়, সংবাদপত্রে স্থির ও চলতি খরচ মিলিয়ে যে উৎপাদন ব্যয় হয় তার আধাআধি পত্রিকা বিক্রি থেকে আসে। করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে লকডাউনের কারণে সব করপোরেট প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দু-একটি সরকারি বিজ্ঞাপন ছাড়া কোনো বিজ্ঞাপনই বলতে গেলে কোনো সংবাদপত্রে নেই। আর পত্রিকার বিপণন নেটওয়ার্কের অচলাবস্থা সৃষ্টির কারণে বহুল প্রচারিত পত্রিকাগুলোর মুদ্রণ সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে সীমিত হয়ে পড়েছে। এর ফলে বিক্রিলব্ধ রাজস্ব থেকে পত্রিকার পক্ষে নিউজপ্রিন্টের সংস্থান করাটাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে বেতনভাতা বা অন্য ব্যয়ের সংস্থান অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। এ অবস্থায় প্রায় সব পত্রিকা পৃষ্ঠা সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে।

সরকারি অফিস আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঈদের আগে খোলার সম্ভাবনা নেই বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য অনুসারে, লকডাউনের অচলাবস্থা জুন পর্যন্ত থাকতে পারে। আর এর প্রত্যক্ষ প্রভাব অর্থনীতির ওপর একেবারে রক্ষণশীলভাবে ধরা হলেও দুই বছর চলবে। তাহলে সংবাদপত্র শিল্প ও সংবাদকর্মীদের অবস্থা কি দাঁড়াচ্ছে। সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম এক লেখায় এ অবস্থায় সরকারের কাছে কয়েকটি প্রণোদনা সহায়তা দানের প্রস্তাব করেছেন। যার মধ্যে রয়েছেÑ প্রথমত, সরকারের কাছে বিজ্ঞাপন বাবদ সংবাদপত্রগুলোর যে পাওনা রয়েছে সেই টাকাটা এ মুহূর্তে পরিশোধ করা। দ্বিতীয়ত, সরকার যেহেতু বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দিচ্ছে, আমাদের সংবাদকর্মীদেরও সরাসরি আর্থিক প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা। তৃতীয়ত, ব্যাংক থেকে ৪ শতাংশ সুদে বিভিন্ন সেক্টরকে যেভাবে ঋণ দেয়া হচ্ছে সংবাদপত্র শিল্পকেও সেইভাবে ঋণ দেয়া। চতুর্থত, অগ্রিম আয়কর দেয়ার একটি বিরাট চাপ রয়েছে। সেগুলো ছয় মাসের জন্য অন্তত স্থগিত রাখা।

সম্পাদক পরিষদের সভাপতির প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে অবশ্যই কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে সংবাদপত্রগুলো। কিন্তু এর মধ্যে সব প্রস্তাব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। এর বাইরে আরও কিছু পদক্ষেপ নেয়া না হলে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হতে পারে।

সবাই জানেন, বাংলাদেশের সরকারি বিজ্ঞাপন বিতরণের নীতিমালা বস্তুনিষ্ঠ নয়। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিবেচনা করতে গিয়ে সংবাদপত্রগুলো সার্বিকভাবে শিল্প হিসেবে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পায়নি। এমন অনেক সংবাদপত্র রয়েছে যেগুলোর নাম সাধারণ পাঠক তো দূরের কথা সাংবাদিক বা সংবাদপত্র বিক্রেতারাও জানেন না। অথচ সরকারি হিসাবে সেগুলোর প্রচার সংখ্যা দুই লাখ বা তার চেয়ে বেশি। এসব পত্রিকা এই প্রচার সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে সরকারি বিজ্ঞাপন ও ক্রোড়পত্র পাচ্ছে। এখন সরকারি বিজ্ঞাপনের বকেয়া বিল ছাড় করা হলে তাতে মূল ধারার কয়েকটি পত্রিকা এখান থেকে লাভবান হবে কিন্তু সব পত্রিকা নয়। এবিসি তালিকার উপরের দিকে থাকা নামগোত্রহীন অনেক পত্রিকা এর লাভ হাতিয়ে নেবে। সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা আসলে কত তা নিয়ে সরকারি এজেন্সিগুলোর কাছেই গোপন রিপোর্ট রয়েছে। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে এবং বৈরী অবস্থার মধ্যেও যেসব পত্রিকা প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছে সেসব পত্রিকায় বিশেষ সরকারি বিজ্ঞাপন দেয়া এবং এর বিপরীতে নগদমূল্য ছাড় দেয়ার বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এটি হলে মূল ধারার পত্রিকাগুলোও টিকে থাকার অবলম্বন পাবে।

সংবাদকর্মীরা মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে চান। তাদের ন্যায্য বেতনভাতা নিশ্চিত করা গেলে এর বাইরে নগদ দান অনুদানের প্রণোদনা তারা চান না। এই বিবেচনায় পোশাক কারখানাগুলোকে যেভাবে ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জ দিয়ে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে সে রকম পদক্ষেপ নেয়া হলে মালিকপক্ষ সংবাদকর্মীদের সঙ্কট সময়ে বেতনভাতা নিশ্চিত করতে পারবে। তবে শর্ত থাকতে হবে রেয়াতি ঋণের অর্থ দিয়ে সংবাদকর্মীদের বেতনভাতা দিতে হবে। এর মধ্যে পত্রিকাগুলো তার স্বাভাবিক টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে।

এ ছাড়া আরেকটি প্রশ্ন আসবে, সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নোয়াব নেতা সংবাদকর্মীদের প্রণোদনার আওতায় আনার যে সুপারিশ করেছেন তার সুবিধা কাদের কাছে পৌঁছাবে? এর মধ্যে সাংবাদিকদের দু’টি ইউনিয়নের মধ্যে যেটি সরকার সমর্থক হিসেবে পরিচিত সেটি সাংবাদিকদের একটি তালিকা সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। আমার জানা মতে, সরকার সমর্থক হিসেবে পরিচিত নন এমন সংবাদকর্মীদের সংগঠনের কোনো সদস্যের নাম এতে নেই। এ অবস্থায় রাষ্ট্রের করের অর্থ দিয়ে একটি পক্ষের পৃষ্ঠপোষকতাকে অনেকে সঙ্গত মনে করবেন না। সেটি আইনসিদ্ধও হবে না। কারণ দু’পক্ষের ইউনিয়নই সরকারের নিবন্ধনপ্রাপ্ত।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, সংবাদকর্মীরা সাধারণভাবে অনুদান বা দান খয়রাতের বিষয়টি কাম্য মনে করেন না। এর চেয়ে অনেক ভালো হবে যদি সরকার সংবাদপত্র শিল্পকে নিজস্বভাবে দাঁড়ানোর জন্য নীতিগত সহায়তা দেয়। সে সহায়তার আওতায় জরুরি বিজ্ঞাপন আর এর বিপরীতে এবং পুরনো বিজ্ঞাপন বিল পরিশোধের পাশাপাশি অন্য শিল্পের মতো উদ্যোক্তাদের শর্তসাপেক্ষে রেয়াতি ঋণ মঞ্জুর অনেক বেশি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হবে।

বলাবাহুল্য, করোনা সঙ্কট কোনো ব্যক্তি দল বা গোষ্ঠীর জন্য আসেনি। এ সঙ্কটের মোকাবেলাও কোনো একক পক্ষ করতে পারবে না। এ বিষয়ে সরকারের একতরফা বা পক্ষপাতমূলক নীতি পদক্ষেপ গ্রহণের পরিস্থিতি এখন দেশে নেই। সামনেও থাকবে বলে মনে হয় না। এই বাস্তব বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম শিল্পের সঙ্কট উত্তরণের পদক্ষেপও হতে হবে সবার জন্য ও সর্বজনীন।

সৌজন্যে: নয়া দিগন্ত

Comments are closed.