এ সব জঘন্য হঠকারি তৎপরতা পশ্চিমা দেশে মুসলিমদের জীবন ঝুকিপূর্ণ করে তুলেছে

আখেরি নবী মোহাম্মদ (স:)) আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে আরবের বুকে ইসলাম ধর্মকে সত্য ধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে যাওয়ার পরে এখনও পৃথিবীতে প্রতি পাঁচ জনের মাঝে 8 জন মানুষ অমুসলিম থাকতে চাচ্ছেন। তার কারণ কি সেটিও বুঝতে হবে। কিন্তু সে চিন্তা না করে ইসলামকে সবাই দুনিয়া থেকে মিটিয়ে দিতে চাচ্ছে বলে ইসলাম রক্ষার নামে যে উগ্র মানসিকতা প্রকাশের যে প্রবণতা শুরু হয়েছে তা খুবই দু:খজনক। ইসলামের বিপক্ষে কেউ কিছু বললেই যে সে জন্য উত্তেজিত হয়ে কোপা-কুপি শুরু করতে হবে বলে যারা মনে করেন সেটি ধর্মান্ধতার পাগলামি এবং আল্লাহর হুকুম অমান্য করা ছাড়া কিছুই নয়। এরা অবশ্যই অপরাধী । এ বিষয়ে কোরআন আমাদেরকে কি শিক্ষা দেয়।
আল্লাহ বলছেন,
“আর কোরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারি করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহ তা’ আলার আয়াতসমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রূপ হতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গান্তরে চলে যায়। তা না হলে তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ দোযখের মাঝে মুনাফেক ও কাফেরদেরকে একই জায়গায় সমবেত করবেন।
[ সুরা নিসা ৪:১৪০ ]

তাহলে এখানে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যারা যারা এমনকি আল্লাহর কালামকে বিদ্রূপ করবে ( যা আধুনিক যুগে ব্যঙ্গ চিত্রকেও সামিল করা যেতে পারে), অবিশ্বাস করলে কিংবা মুনাফেকি করলে তাদের সাথে যা করার তা আল্লাহ করবেন। সে জন্য মুসলমানদেরকে হিংসাত্মক পন্থা অবলম্বনের কথা বলা হয় নাই।
সম্প্রতি মিডিয়ার খবরে আমরা জানতে পারি যে ফ্রান্সে বসবাসরত এক চেচনিয়ার বংশবদ কট্টর ইসলামি তৎপরতায় লিপ্ত থাকা এক জঙ্গি যুবক সে দেশের এক স্কুল শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে হত্যা এবং শিরশ্ছেদ করার প্রতিক্রিয়ায় ফ্রান্স এখন উত্তপ্ত।

মুক্ত চিন্তা ও ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মের বিরুধীতা যারা করতে চায় তাদের জন্য এ ধরণের ঘটনা তো সোনায় সহাগা অর্থাৎ বিনা টাকায় বিজ্ঞাপন হয়ে গেল।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ফ্রান্সের ন্যাশনাল সেন্টার পর সায়েন্টিফিক রিসার্চের সমাজবিজ্ঞানী ল্যঁরা মুচ্চেলি মনে করেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ ‘মাত্রাতিরিক্ত‘ তৎপরতা দেখাচ্ছেন এবং তার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। তার মতে, মি ম্যাক্রঁর মাথায় এখন বিশেষ করে ২০২০ সালের নির্বাচনের কথা ঘুরছে।
“ম্যাক্রঁ আগুনে ঘি ঢালছেন,“ বিবিসিকে বলেন মি. মুচ্চেলি। “তিনি চাইছেন জনগণ যেন মনে না করে যে তিনি ডানপন্থী বা কট্টর ডানপন্থীদের চেয়ে এক পা হলেও পিছিয়ে। তাঁর প্রধান লক্ষ্য ২০২২ সালের নির্বাচন জেতা। উনবিংশ শতাব্দী থেকেই তাদের (কট্টর ডানপন্থীদের) প্রধান টার্গেট অভিবাসন এবং নিরাপত্তা।
তবে প্রতিবেদনটিতে যথার্থই বলা হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং রাষ্ট্রের বিদেশনীতির পাশাপাশি এখন যোগ হয়েছে ধর্ম। (সুত্র)

দিনের শেষে এটি বুঝতে হবে যে তথাকথিত এ সব জঘন্য হঠকারি তৎপরতা পশ্চিমা দেশে মুসলিমদের জীবন ঝুকিপূর্ণ করে তুলেছে তা অস্বীকার করা যায় না।

গণতন্ত্রে গণশাস্তি দেওয়ার কোনো বিধান নেই। আজ অনেকেই মনে করেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ ‘মাত্রাতিরিক্ত” তৎপরতা দেখাতে গিয়ে সেটিই করছেন।

উপসংহারে এ কথা বলা যায় যে, কোন মানুষ যখন ইসলাম সম্পর্কে কোন বিরূপ মন্তব্য বা অশালীন কথাবার্তা বলে তখন তার কারণ কি আগে দেখা দরকার, কেননা মানুষ তার নিজ পজিশন থেকে অন্যের অবস্থা বিবেচনা করে। সে ব্যক্তি এ কাজ কেন করছে তা নিয়ে আগে আলোচনার দরকার, সে ব্যক্তির মানসিক অবস্থার এ অধঃ:পতন কেন হল তা বিবেচনা করা দরকার আগে। তা না করে আগেই উত্তেজিত হয়ে গেলে সমস্যা। তখন উত্তেজনা বাড়াবাড়ি হয়ে দেখা দেবে এবং সেটি সাধারণ মানুষের নজরে পড়বে। তখন অবস্থা ও যুক্তি ধর্মের বিপক্ষে যাবে। তখন দেখা যাবে অন্যধর্মের মানুষেরা আসল অপরাধীকে “মুক্ত চিন্তার” দোহাই দিয়ে তার বৈধতা দিবে। ধর্মের নামে যতই হত্যা হবে ধর্ম ততই হাস্যকর দেখাবে।
আজ যুগের জ্ঞান, যুগের বিবেচনা ও যুগের যুক্তিকে সামনে রাখতে হবে। ধর্মের বিষয়ে কেউ কিছু বললে মারপিটি শুরু করা কাম্য নয়। ফ্রান্সে যে ধর্মনিরপেক্ষতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সে বিষয়টি সামনে আনতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে অন্য মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া নয়।
কোন ব্যক্তি রাসূল সম্পর্কে কার্টুন বা ব্যঙ্গ চিত্র করলে প্রথমেই বুঝতে হবে সেটি তার ব্যর্থ প্রয়াস! কেননা রাসূলের (সা) কোন ‘বাস্তব’ ইমেজ (ছবি) নেই যা নিয়ে কেউ ব্যঙ্গ করতে পারে। কেউ চিত্র অঙ্কন করলে সেটা একটি চিত্রই থাকে, তা মুহাম্মাদ (সা) এর চিত্র হয়ে যায় না। এগুলো যুক্তি ও ম্যাচিওরিটির সাথে বিবেচনা করতে হবে তারপর কেউ যদি আইনের সীমা অতিক্রম করে তবে আইনের আশ্রয় নেয়া হবে।

কুরআন পড়লে দেখা যায় সেই সপ্তম শতাব্দীতে ইসলামের জন্য মক্কায়ও মক্কাবাসীরা প্রথমে অনেক অত্যাচার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল এবং নবীকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য বা পাগল, কবি, যাদুগর, ইত্যাদি অশালীন কথাবার্তা সব সময়ই বলত কিন্তু তখন আল্লাহ কি পরামর্শ দিতেন তা বার বার এসেছে কুরআনে।

আজ আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আমরা সত্যকে যুক্তি এবং বিচার বুদ্ধি দিয়ে ব্যাখ্যা করার প্রচেষ্টা ছেড়ে যে রাস্তায় বিজয় হবে বলে ধারণা দেয়া হচ্ছে একটি বিশেষ মহল থেকে তা যে আত্মঘাতী পদক্ষেপ তা বুঝা দরকার।

Comments are closed.