এ কি সেই আখেরী জামানার আলামত?

 

 

 

 

 

 

 

আল-জাজিরা  ব্লগে  নিজেকে ক্রীশ্চিয়ান পরিচয়কারি জনৈক Smith Scoot নামের এক ব্যক্তি কমেন্ট লিখেছেন,

"আমি এই নব যুগকে  ভালোবাসি……….. মুসলিমরা এখন তারা নিজেরা নিজেদেরকেই হত্যা করছে । এটাকে বলা হয়  শত্রুদের 'শিবিরে বিভ্রান্তির ফল। এ যুদ্ধে ১০ মিলিয়ন শিয়া মরবে এবং ১০ মিলিয়ন সুন্নি মারা যাবে আগামি দশ বছরে যেহেতু এ যুদ্ধ চিরকাল চলতে থাকবে। শিয়ারা ইরান ও অন্যান্য দেশ থেকে আসতে হবে  ঠিক যেমন সুন্নি সৌদি ও কাতার এবং সারা পৃথিবীর অন্যদেশ থেকে থেকে আসতে হবে। খোদার শত্রুদের জন্য নতুন যুদ্ধের ময়দান খুলা হয়েছে তাদের পরস্পরকে হত্যা করতে। এই জন্য আমি এ নতুন বছরকে ভালবাসি। এ জন্য আমি এত ভালবাসি  কারণ এ হত্যাযজ্ঞ কেউ রুখতে পারবে না। হে ছেলেরা, এগিয়ে যাও একে অন্যকে হত্যা কর, প্লিজ । আই সিস এর (ISIS)সমর্থকেরা, তোমরা  ইসলামী রাষ্ট্রের স্বপ্ন ত্যাগ করিও না এবং শিয়ারা তোমরাও তোমাদের জমি দখল ও  শ্রাইন ও পবিত্র মাজার নষ্ট করতে দিও না। বাকো হারামের"" দলও সাহায্যে এগিয়ে আসবে। প্লিজ নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করতে থাক, এর চেয় ভাল কিছু হতে পারেনা। যদি অর্থ সাহায্য দেয়া যায় আমাকে জানাবে আমি শুধু  গ্যরান্টি চাই যে তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করতে থাকবে"!  লিংক এখানে

 

The Shia group has floated a tender inviting the aviation industry to carry volunteers to Baghdad [EPA]

 

 

 

 

 

উপরুক্ত  কমেন্ট পড়ে আমার কাছে রাসুলের সেই ভবিষ্যৎ বানীর কথা মনে পড়ল যে,  তিনি বলেছিলেন, "আখেরি জামানায় একসময় এমন হবে যে মুসলিমদের মাঝে বিরাট হত্যাযজ্ঞের ফিতনা চলবে তখন যে হত্যাকারী সে জানবেনা কেন সে হত্যা করছে এবং যাকে হত্যা করা হবে সেও জানবে না কেন তাকে হত্যা করা হচ্ছে।"
বর্তমান মুসলিম বিশ্বের দিকে তাকালে মনে হয় এ অবস্থায়ই সম্ভবত শুরু হয়ে গিয়েছে । প্রশ্ন হচ্ছে এই সব হত্যাযজ্ঞ কার ইশারায় হচ্ছে ? মাত্র তিন বছর আগে   উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে "আরব স্প্রিং" নামে যে শান্তিপূর্ণ গনআন্দোলন মুকুলিত হয়েছিল এবং এর ফলে আরব বিশ্বে একের পর এক স্বৈরাচারী শাসকদের  পতন হচ্ছিল তাকে ব্যর্থ করতে সেই পুরানো শাসক গুষ্টি তাদের লালিত সামরিক বাহিনী দিয়ে  পাল্টা বিপ্লবের মাধ্যমে গণহত্যা ও সন্ত্রাস চালু করে  রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বন্ধ করে খোলে দেয়া হয় সহিংসতার নতুন তরঙ্গ! অনেকের মতে মুসলিম দেশের সম্পদ লুটতে এবং মুসলিম বিশ্বকে চির দিন মানসিক ও রাজনৈতিক গোলামে পরিণত করে রাখতে  তথাকথিত 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ'  পুনর্নবীকরণের ন্যায্যতা বা গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করার জন্যই সম্ভবত ইচ্ছাকৃত ভাবে মুসলিম দেশে সৃষ্টি করা হয়েছে এ চরম দুরাবস্থা ও  বিশৃঙ্খলা তথা জঙ্গিবাদ। মুসলিম বিশ্বে যে "আরব বসন্তের" হাওয়া এসেছিল তাকে মুসলিম বিশ্বের দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকরা ও বৈদেশিক শক্তির দালাল গুষ্টির চক্রান্তে সফল হতে না দেয়ায়ই আজ চরমপন্থিদের উত্তান। মুসলিম বিশ্বের স্বৈরশাসকরা তাদের নিজ জনগণের অধিকারকে খর্ব করে  এবং আধুনিক যুগের সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অচেনা সর্দারের মত কাজ করার যে নির্লজ্জ ভূমিকা পালন করতে ব্যস্ত তা ত্যাগ না করলে শান্তির আশা করা বোকামী। ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি প্রয়োগ করে যে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের খেলা চালু করা হয়েছে সর্বত্র তার মুল্য দিতে হবে চরমভাবে।

আশ্চর্যের ব্যপার হল মিশরে সালাফি নুর-পার্টির পক্ষে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত মুরসিকে সহ্য করা সম্ভব হয়নি কিন্তু ইসরায়েলের বন্ধু মিশরের সেনাশাসক আবদেল ফাত্তাহ-আল-সিসি  তার সেনাবাহিনী দিয়ে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করাকে সমর্থন দিতে তাদের অসুবিধা নাই। বিরোধী দলকে ধ্বংস করে তাদের  নেতাদেরকে বন্ধী করে, গণতান্ত্রিক উপায়ে  নির্বাচিত একজন রাষ্ট্র প্রধানকে বন্দুকের নল দিয়ে অপসারণ করে পরবর্তিতে একটি সাজানো নির্বাচন করে অবৈধ ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দিতেও অসুবিধা নাই! প্রহসনের নির্বাচনে জয়ী প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ-আল-সিসির সরকারকে অভিন্দন দিতে কায়রোতে পৌছেন সৌদি বাদশাহ!  এমন কি যে সব আরব স্কলার মুরসির অপসারন বেআইনি বলেছেন কিংবা তাঁকে সমর্থন করেছেন তাদেরকে সৌদি আরব যেতে নিষেধ যেমন কুয়েতের প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ তারেক সাইদানকে ওমরা করতেও সৌদি আরব যেতেও নিষেধ!

রাসুলের সময় কি যুদ্ধ হয় নাই?

অবশ্যই হয়েছে কিন্তু সেগুলা তো ছিল আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ কিন্তু সে সব যুদ্ধে বাড়াবাড়ি ছিল না, নিষ্ঠুরতা বা বর্বরতা ছিল না। সন্ত্রাসী রূপ নিয়ে মুখোশ পড়ে যুদ্ধ করতে হয় নি। আজ ইরাক সিরিয়ায় যা হচ্ছে তা কি প্রমাণ করে? মালিকি ও আসাদ এবং মিশরে শামরিক শাসক সিসি যা করছে তা কি? আবার অনেকে বলেন তথাকথিত জেহাদিরা যা করছে তা কি? এসব কি ;হারাঝ বা নিছক হত্যাযজ্ঞ  ছাড়া অন্য কিছু?  আর বিদ্রোহী গোষ্ঠীর যত উত্থান হবে রাষ্ট্রযন্ত্র ততটাই দুর্বল হয়ে পড়বে এবং বিদেশি আগ্রাসন থেকে জনগণের জান মাল ও অধিকার রক্ষায় অক্ষম হবে।

 সাম্প্রতিক ইরাকে সুন্নি বিদ্রোহী দলের নেতা আবু বক্কর বাগদাদির তথাকথিত খেলাফতের ডাক দিয়ে  ইরাকের বেশ কিছু এলাকা দখলে নিলেও  জেনে রাখা দরকার  IS ও তাদের কৃতকর্মের যে নিষ্ঠুরতার ছবি বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে  তা দিয়ে আরব বিশ্বে পশ্চিমা সরকার ও ইসরাইলি আধিপত্যবাদীর পক্ষে  ইরাকে আরেকটি  ভয়ববহ সামরিক আক্রমনের দুয়ার খুলে দেয়া হচ্ছে মাত্র। মিডিয়ার রিপোর্ট যদি সত্যি হয় তাহলে  সুন্নি বিদ্রোহীদের এসব কাজের সমর্থন করা কোন সভ্য মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

যে আল্লাহ বলেছেন ধর্মে জবরদস্তি বা বল প্রয়াগ নাই সেখানে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে কিভাবে আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থা মানুষের জীবনে কায়েম হবে? যে শাসনের বা জীবন ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে তা কি জমি বা মাটিকে দিয়ে পালন করানো হবে না সেই মাটিতে যে মানুষ বাস করে তাদের জীবনে কায়েম করে বাস্তবে তা প্রতিষ্ঠিত হবে? তাই রাসুল যেমন আপন মহানুভবতা,দয়া ও উত্তম আদর্শ দিয়ে মানুষের মন জয় করেছিলেন তা ছাড়া কি অন্য কোন রাস্তা আছে ইসলাম প্রতিষ্ঠার? আল্লাহ মুসলিমদেরকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন সে দোয়া করা ছাড়া আমাদের মত সাধারণ মুসলিমদের কাছে কিছু আছে বলে মনে হয় না। মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থা এতই ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে যে বাহির থেকে কারো পক্ষে ঘটনার সঠিক ধারণা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আল্লাহই ভাল জানেন মুসলিম বিশ্বের কি হবে?

তবে চরম হতাশার মাঝেও যুবসমাজ কি ভাবছে জানতে  নিচের ভিডিওটা শুনা দরকার  

ISIL এর উত্তান কিভাবে হল জানতে হলে নিচের ভিডিওট শুনতে পারেন:

তবে ISIL যে শেষ পর্যন্ত তাদের অবস্থান বজায় রাখাতে পারবে না এটা বলার প্রয়োজন নাই। দু:খের বিষয় হল আরো অসংখ্য নিরিহ মানুষের প্রাণ যাবে। শিশু সন্তান ইয়াতিম হবে। ইসলামিক রিলিফ ফান্ডের পাঠানো ইমেইলে দেখলাম সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত ৯০ লক্ষ মানুষ গৃহহারা।

"This is the fourth Ramadan that close to 9 million Syrians are spending as refugees or as internally displaced persons. The length of the on going conflict also means that people have become immune and accustomed to the suffering' 

খিলাফত প্রকল্পের ভুল ব্যাখ্যা

ইরাকের IS নেতা বাগদাদির খিলাফতের ঘোষনা শরিয়ত সম্মত নয় বলে ইতিমধ্যে শেখ কারজাভি সহ  প্রখ্যাত  ইসলামী স্কলারদের বক্তব্য এসেছে।  উল্লেখ্য, গত রবিবারের পর থেকে নেতৃস্থানীয় অনেক মুসলিম পণ্ডিতই আইএসের খিলাফত ঘোষণার নিন্দা জানিয়েছেন।
তারা বলেন, খেলাফত মূলত একটি বিশ্বজনীন ইসলামি রাষ্ট্র যে রাষ্ট্র রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কতৃর্পক্ষ উভয়কে নিয়ে একজন মাত্র নেতা কর্তৃক পরিচালিত হয়।
সুন্নী ইসলামের শীর্ষ কর্তৃপক্ষ আল আজহারের সিনিয়র প্রতিনিধি শেখ আব্বাস সুমন এএফপি বলেন, ইসলামি খিলাফত শক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা যায় না। একটা দেশ দখল করা  আর তার অর্ধেক লোককে মেরে ফেলা… এটা ইসলামি রাষ্ট্র হতে পারে না, এটা সন্ত্রাস।

সম্প্রতি আল জাজিরা ওয়েবসাইটে মোহ্ম্মদ গিলান, কানাডার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউরো সাইন্স এর পি এইচডি প্রার্থী এবং ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রের ছাত্র, "বাগদারির খিলাফতগিরির ভূল ব্যখা"  (Baghdadi's misconstrued caliphate project) শিরনামে অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ একটি নিবন্ধ লিখেছেন তার সারাংশ পাঠকের খেদমতে তুলে ধরলাম (মূল নিবন্ধ এখানে দেখুন)

  "এটা স্বীকার করা জরুরী যে ইসলামী রাষ্ট্র কোন শূন্যতার  মাঝে বাগাড়ম্বর পূর্ণ  rhetoric উক্তি করা নয়।  মুসলিমদের মাঝে বর্তমানের পরস্পর বিরোধী ও ভিন্ন  মতাদর্শের  নানা উপদল থাকা স্বত্বতেও ইতিহাস জুড়ে  অতীত ও বর্তমান সকল যুগের মুসলিম স্কলার একটি বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে একমত যে মুসলিমের মাঝে রাজনৈতিক একতার গুরুত্ব অপরিসীম। ঐতিহ্যগতভাবে  "খলিফা"  শব্দটি একটি বিশিষ্ট সম্মানিত শব্দ যা শুধুমাত্র ইসলামি শাসন ব্যবস্থায় মানুষের প্রতিনিধিত্ব এবং  নাগরিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ক শাসন পরিচালনা করা নয় বরং তারও ঊর্ধ্বে শাসককে মেনে চলতে হয় মুসলিম কিংবা অমুসলিম সকল নাগরিকের প্রতি ইসলামী নৈতিক নিয়মাবলী সুষ্ঠু অনুসরণে সঠিক আচরণ।

ইসলামী ঐতিহ্যে এটি সুপ্রতিষ্ঠিত যে, ধর্ম হিসাবে ইসলাম, মুসলিমদের শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বিষয়াবলী ছাড়াও মুসলমানদের রাজনৈতিক বিষয়াবলী পরিচালনার নিয়মকানুন প্রদান করে। বস্তুত অন্যান্য ধর্মের তুলনায় এক্ষেত্রে ইসলামের অবস্থান অনন্য কিন্তু তাই বলে ইসলামের আনুগত্য করা মানেই মধ্যযুগে ফিরে যাওয়া নয়। 
ইসলামের প্রগতিশীল আইন প্রকৃতি এবং নতুন প্রাসঙ্গিক বাস্তবতা মানিয়ে চলার ইসলামের ক্ষমতাকে সঠিক  মূল্যায়ন করা হয় না!  ইসলামের  শুরু থেকে ইসলামী স্কলাররা ইসলামের আইনি ব্যবস্থাকে দুভাগে বিস্তৃত ভাগ করেছেন, 
এক: ব্যক্তিগত এবাদতের কাজের অংশ ও
২য়: মানুষের সাথে বৈষয়িক লেনদেন কাজের অংশ এবং এটা এই ২য় ক্ষেত্রে তথা মানুষের লেনদেনের কাজের ক্ষেত্রেই  ইসলামী শাসন ব্যবস্থা বা ইসলামী আইনি তত্ত্ব তার গতিশীল নমনীয়তা দেখায় অর্থাৎ প্রাসঙ্গিক বাস্তবতা মানিয়ে চলার ইসলামের অসাধারণ ক্ষমতা প্রয়োগ করে।

সুতরাং আই এস কর্তৃক  যেভাবে ইসলামী রাষ্ট্রের নেতৃত্বে খিলাফতের ঘোষণা দেয়া হয়েছে বা দাবী করছে তা এক কথায় না হচ্ছে ইসলামী অনুশাসন অনুসরণ আর  না হচ্ছে  আল্লাহর রাসুল(স) প্রদত্ত পন্থার অনুসরণ!  তাছাড়া আই এস এটা কোন একটি সুসংগঠিত সামরিক বিরোধী সংগ্রাম নয় বরং  একটি চরমপন্থি গ্রুপের  দ্বারা আতঙ্ক পূর্ণ সহিংসতার সাময়িক সফলতার আস্ফালন! মুসলিমদের জন্য এ ধরণের দাবী অত্যন্ত সমস্যা যুক্ত, এটা খিলাফতের অধীনে বাস করতে আগ্রহী মুসলমানদের জন্য মরীচিকা পিছনে দাবিত হওয়া যা সম্ভবত  সবচেয়ে লোভনীয় চরমপন্থি রিক্রুট বা নিয়োগের হাতিয়ার হতে পারে।"

   

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *