ঈমান

ঈমান কি? ঈমান একটি আরবী শব্দ যার শাব্দিক অর্থ বিশ্বাস। ঈমান একটি পারিভাষিক শব্দ। ইসলামের মৌলিক ভিত্তির উপর বিশ্বাস। ঈমান ইসলামের প্রধান ভিত্তি। ঈমান ছাড়া আর যাই হোক কেঊ  মুসলমান হতে পারে না। অন্তরে বিশ্বাস, মৌখিক প্রকাশ এবং কাজে প্রয়োগ থাকলে ঈমান প্রকাশ পায় এবং যে এটা করে তাকে ঈমানদার বলা যায়।                                                 

আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়। তাঁর কোন শরিক বা অংশীদার নেই। তিনি অনাদি, অনন্ত, অসীম, কোন কিছু দ্বারা তিনি সীমাবব্ধ নন, তিনি সৃষ্টির সর্বত্র পরিব্যাপ্ত, মোমিনের ক্বাল্বে তাঁর সিংহাসন, তিনি সর্ব শক্তিমান, সর্ব শ্রেষ্ঠ, সর্বজ্ঞানী, অতুলনীয়, মহাপরাক্রান্ত, তিনি স্বেচ্ছাচারী সম্রাট, কোন সিদ্ধান্ত নিতে কারো অনুমতির প্রয়োজন হয় না, তিনি গুপ্ত অথচ সৃষ্টির মাঝে তিনি দৃশ্যমান, তিনি সর্ব দ্রষ্টা, সর্ব শ্রোতা, তাঁর সৃষ্টির মধ্যে এমন কোন শব্দ নেই যা তিনি শোনেন না, এমন কোন বস্তু নেই যা তিনি দেখেন না, সমুদ্রের অতল গভীরে  ক্ষুদ্রাণুক্ষুদ্র কীটের অস্তিত্বও তাঁর জ্ঞাতীর বাইরে নয়, মানুষের অন্তরের মণিকোঠায় যে বাসনাটি লুকায়িত আছে তাও তিনি জানেন, তিনি মহাপরিচালক- কারো দ্বারা তিনি পরিচালিত নন, তিনি কাউকে জন্ম দেননি, তিনি কারো জাতও নন, তিনি আহার-নিদ্রা-রোগ-ব্যাধি-তৃষ্ণার উর্ধে, তিনি সর্ব জীবের  আহার দাতা-প্রতিপালক- তৃষ্ণা নিবারণকারী, তাঁর সৃষ্টিতে এমন কোন প্রাণী নেই যাকে তিনি আহার দেন না, তিনি মহামহিমান্বিত, তিনি অভাবহীন, প্রশংসিত, পরম দয়ালু দাতা অথচ চরম শাস্তিদাতা, তিনি ক্ষমাকারী, জন্ম মৃত্যুর উর্ধে, যখন কিছুই ছিল না তখনও তিনি ছিলেন, এখনো তিনি আছেন, যখন কিছুই থাকবে না তখনও তিনি থাকবেন, তিনি ন্যায় বিচারক, চিরস্থায়ী, ধৈর্যশীল, অভাবহীন, গোটা সৃষ্টি জগতের মালিক, তিনি জন্ম ও মৃত্যুদানকারী এবং পূণরুত্থানকারী, গৌরবান্বিত, তিনি সূক্ষ্ম হিসাব গ্রহণকারী, মহাপ্রলয়কারী।

তিনি তাঁর কাজে সাহায্য করার জন্য অগনিত ফেরেশতা তৈরী করেছেন নিজের নূর থেকে। তাঁরা আহার-নিদ্রা-রোগ-ব্যাধি-তৃষ্ণার উর্ধে, তাঁদের কোন স্মৃতি নেই, রক্ত-মাংসের দেহ নেই, বিশ্রামের প্রয়োজন নেই। আলোর গতির চাইতেও তাঁরা দ্রুতগামী। তাঁরা মহান রাব্বুল আলামীনের আদেশ পালন ও তাঁর ইবাদতে ব্যস্ত।

মানব জাতিকে সিরাতাল মুস্তাকিমের পথে পরিচালনার জন্য আনুমানিক ১০৪ খানা গাইড পাঠিয়েছেন বিভিন্ন নবী-পয়গম্বরের মাধ্যমে। মানব জাতি যদি তার জীবন পরিচালনার জন্য এই গাইড অনুসরণ করে তাহলে তার সফলতা অবশ্যম্ভাবী।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে অতীব শখ করে সৃষ্টি করেছেন- তাকে দোজখে পাঠানোর জন্য নয়। তাইতো তিনি আ্সমানী গাইডকে সহজে অনুধাবনের জন্য এবং কিভাবে তা বাস্তব জীবনে প্রতিফলন ঘটানো যায় তার উদাহরণ হিসাবে যুগে যুগে বিভিন্ন নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। আমরা সব নবী-রাসুলকেই বিশ্বাস করি। তাঁরা মহান আল্লাহর আদেশ- নিষেধগুলো তাঁদের জীবনে প্রয়োগ করে দেখিয়েছেন ওগুলো পালন করা মোটেই কষ্টকর নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন-

آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللّهِ وَمَلآئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لاَ نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ وَقَالُواْ سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ
 
( রসূল তার রবের পক্ষ থেকে তার ওপর যে হিদায়াত নাযিল হয়েছে তার প্রতি ঈমান এনেছে। আর যেসব লোক ঐ রসূলের প্রতি ঈমান এনেছে তারাও ঐ হিদায়াতকে মনেপ্রাণে স্বীকার করে নিয়েছে। তারা সবাই আল্লাহ‌কে, তাঁর ফেরেশতাদেরকে, তাঁর কিতাবসমূহকে ও তাঁর রসূলদেরকে মানে এবং তাদের বক্তব্য হচ্ছেঃ “আমরা আল্লাহ‌র রসূলদের একজনকে আর একজন থেকে আলাদা করি না। আমরা নির্দেশ শুনেছি ও অনুগত হয়েছি। হে প্রভু, আমরা তোমার কাছেই আমাদের গোনাহ মাফ চাইছি। আমাদের তোমারই দিকে ফিরে যেতে হবে।  [সুরা বাকারা: ২৮৫]

আমরা গর্বিত যে, আমাদের জন্য আসমানী কেতাব আল কোরআন এবং রাসুল হিসাবে মুহাম্মদ(সাঃ)কে মনোনীত করা হয়েছে।

যথা সময়ে এই মহাবিশ্বের মহাপ্রলয় সংঘটিত হবে। সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে, আবার তা পূণরুত্থিত হবে, মানুষের পাপপূণ্যের হিসাব হবে। মহান আল্লাহ বিচারাসনে বসবেন। তিনি ন্যায় বিচারক। চুলচেরা হিসাব হবে, যাদের পূণ্যের পাল্লা ভারী হবে তারা চিরস্থায়ী বেহেস্তী হবে, আর যাদের পাপের পাল্লা ভারী হবে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী। দুনিয়াটাই হল আখেরাতের শস্যক্ষেত্র। সেদিন কোন অজুহাত, কোন ওকালতি, কোন কৌশল কোন কাজে আসবে না।

আল্লাহর এই গুণাবলী সম্বন্ধে যদি আপনার অনু পরিমানও সন্দেহ থাকে, তবে বুঝতে হবে আপনার ঈমানে ঘূণ ধরেছে। যথা সময়ে চিকিৎসা না করালে একদিন দেখা যাবে ক্যান্সারের মত আপনার গোটা ঈমানটাই খেয়ে ফেলেছে। 

ঈমান ব্যতীত কোন ইবাদতই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের হালালকে হালাল, হারামকে হারাম মানার প্রয়োজন নেই। তাদের পক্ষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষ হত্যা, গুম, অত্যাচার, উৎপীড়ন, নির্যাতন, ধর্ষণ কোন ব্যাপারই না; অথচ তারা ঈমানদার বলে দাবী করে। কিছু মানুষ আছে তারা সাফাইও গায়। মানুষ আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে প্রিয় ও শখের সৃষ্টি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আল কোরআনে ঘোষণা করেছেন-  

مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ كَتَبْنَا عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنَّهُ مَن قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا وَلَقَدْ جَاءتْهُمْ رُسُلُنَا بِالبَيِّنَاتِ ثُمَّ إِنَّ كَثِيراً مِّنْهُم بَعْدَ ذَلِكَ فِي الأَرْضِ لَمُسْرِفُونَ
এ কারণেই আমি বনী-ইসলাঈলে র প্রতি লিখে দিয়েছি যে, যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবাপৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে। তাদের কাছে আমার পয়গম্বরগণ প্রকাশ্য নিদর্শনাবলী নিয়ে এসেছেন। বস্তুতঃ এরপরও তাদের অনেক লোক পৃথিবীতে সীমাতিক্রম করে। [সুরা মায়েদা: ৩২]

 

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *