একটার পর একটা খবর। একটার চেয়ে অন্যটা নির্মম, পৈশাচিক, বিবেকহীন। এ সব নিয়ে ব্যক্তি পর্যায় থেকে আরম্ভ করে সকল সংবাদ মাধ্যম ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো একধরনের সচেতনতার উৎসবে মুখরিত। সকলেই কিছুনা কিছু লিখছে বা বলছে তাদের সচেতন ও প্রতিবাদী মনোভাব প্রকাশের জন্য। দায় ও করনীয় কর্তব্যের অবহেলাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখানোর লজ্জা থেকে নিজের কাছে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার এই নির্মম পরিহাস দেখে দূরে বসে আমি শুধু করুনার হাসি হাসছি।
ভারতীয় আগ্রাসন,হাসিনার অবৈধ ক্ষমতারোহন ও পৈশচিকতার তান্ডব নৃত্য, খালেদার অক্ষম নেতৃত্ব ও নিস্ক্রিয় দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য নানা রকম পদলেহন কর্মসূচী, শাহাবাগীদের উত্থান পতন, হেফাজতের ১৩ দফা, ৫ই মের নির্মমতা ও বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানিয়ে ফেলবার কল্পলোকের গল্পগাঁথা, ডাক্তার সাংবাদিকদের মল্লযুদ্ধ আর অতি সাম্প্রতিক কালের হত্যা ও গুম ইত্যাদি হাজারো ঘটে যাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ, আলাপ আলোচনা, বিচার-বিশ্লেষন, লেখালিখি ও তর্ক-বির্তক যে হারে চলছে তাতে করে আমার তো মনে হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত সচেতন নিজেদের সমস্যা সম্পর্কে।
যারা সমস্যা সম্পর্কে সচেতন তারা এটাও জানে কি করলে তার সমাধান সম্ভব। কিন্তু কিভাবে সে সমাধানের লক্ষ্যে এগোতে হবে তা তারা না জানলেও কোন সমস্যা নেই। দেশ ভর্তি আঁতেল বুদ্ধিজীবি গোষ্ঠীতো রয়েছেনই তার জন্য। তাহলে এখনো কেন একই আবর্তনের এই চক্রের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছি ?? বোঝার দৃস্টিভঙ্গীকে একটু এদিক ওদিক ঘোরালেই বোঝা যায় কতোটা অন্তঃসার শূন্য মাকাল ফল হয়ে পড়েছি সামান্য ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থের নেশায়। আর এর সাফাই হিসেবে নিজেদেরকে পরিনত করছি বোতাম সৈনিক বা কাগুজে বাঘ হিসেবে!! ঘরের দরজা খুলে ইন্টারনেটের সুইসটা বন্ধ করে বাইরে এসে এ সকল অন্যায় আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার শক্তি, সাহস ও যোগ্যতা সবই আজ হারিয়ে বসে আছি আমরা।
ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে প্রতিক্রিয়াশীল গোঁড়া, না মানলে আধুনিক প্রগতিশীল। রাজনীতি করলে মুজিব নয়তো জিয়ার সৈনিক। এই হল আমাদের করুন মানষিক চেহারার আপামর জনগন। তাই অন্য রাস্তায় ভিন্ন আঙ্গীকে চিন্তা করার সময় এসেছে। শুধু শুধু সামাজিক গণমাধ্যম গুলোতে বসে বসে সমালোচনার ঝড় অথবা বড় বড় বানী না কপচে কিছু করার চেস্টা করুন। শুরুটা করুন নিজের ঘর থেকে। সন্তানকে মানুষ করতে না পারার জন্যে, তার মাদকাষক্তি ও অসামাজিক কর্জকলাপের জন্য লজ্জা বোধ করুন। অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পত্তির জৌলুষ নয় তা আপনাকে ভীত সন্ত্রস্ত করুক। প্রতিবেশী ও গরিব আত্মীয় স্বজনকে সাহায্য করতে না পারার কস্টে আপনাদের হৃদয় দগ্ধ হোক প্রতি মুহূর্ত। এ আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের অনুরোধ। যা সফল করবেন আপনারা আপনাদের স্বার্থে।
আজ থেকে আম জনতার কাছে প্রত্যাশা নয় দিক নির্দেশনা দেয়া হবে। যদি এখনো মনে করে থাকেন প্রচলিত ধারায় সমাজের পরিবর্তন করবেন বা আপনাদের নেতা-নেত্রীর সন্তানেরা এসে আপনাদের মুক্তি দেবে তাহলে মাথায় বেশী করে পানি ঢালুন সবাই। প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোতে হয়তো বা রয়েছে অসাধারন সব নীতি নৈতিকতা কিন্তু তা দিয়ে গত ৪০ বছরে কি করেছেন আপনারা দেশ আর মানুষের জন্য ? যদি উত্তর দিতে না পারেন তবে বদলে ফেলুন এ সব ফালতু নীতি নৈতিকতা। যা বা যে রাজনীতির মাঠে এসে দেশ ও দশের কাজে নিবেদিত প্রান নয় তাদের সত্যিই কি আজ আমাদের প্রয়োজন রয়েছে? তারা যদি নিজের স্বার্থে আপনাদের ভুলে যেতে পারে তবে আপনাদের এতো ভালোবাসা কোথা থেকে আসে ? সময়ের সাথে সাথে আজ আমরা শিক্ষায়, সচেতনতায়,অর্থে-বিত্তে প্রভাব প্রতিপত্তিতে যেমন শক্তিশালী হচ্ছি তেমনি হয়ে পড়ছি বিবেক প্রতিবন্ধী।
আমরা বাংলাদেশীরা এমনিতেই সব হারিয়ে বসে আছি। দেশের অস্বিত্ত্বটুকুও আজ বিসর্জনের দাঁড় প্রান্তে। লাশের শহরে আমাদের বিবেক নির্বাক। নতুন প্রজন্মের আধুনিকতার নামে নির্লজ্জ বেহায়াপনায় আমরা নির্লিপ্ত। নিজেস্ব শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির অবক্ষয়ে উদাসীন। মনুষ্যত্ব আর মানবিকতার নাম করে সামাজিক গণমাধ্যম গুলোতে সমালোচনায় মুখরিত অসুস্থ্য বিবেক। পৈশাচিক আত্মকেন্দ্রীক লোভী কূটীল ক্ষমতাশীল শ্রেনীর আবির্ভাবে আপ্লুত। অনেক হয়েছে। এবার এ সব বন্ধ করুন। না পারলে হাতে খড়ি শুরু হোক অপারগতার স্বীকৃতির মাধমে। শিখতে শিখতে পথ চলবো একে অপরের হাত ধরে। নতুন দল, নতুন ধারার গণ মানুষের রাজনীতির মাধ্যমে দেশের পরিবর্তন হবে। যার দাবীদার ভাগীদার শুধুই আপনারা; আম জনতা।
পূর্ব প্রকাশিত শিখনিউজ ডট কম