আবেগ ও অজ্ঞতার আঁধারে ইসলাম চর্চা

ভূমিকা:
অনেকে আছেন কোন বিষয়ে এমনকি সেটি ধর্ম বিষয়েও হতে পারে যে নিজেকে সবজান্তা ভেবে অন্য কারো ভাবনাকে  বুঝার বা জানার চেষ্টা না করে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে স্বস্তি পান! মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন সে অবস্থান থেকে সবাইকে দূরে রাখেন।

জ্ঞান অন্বেষণের একজন  অতি সাধারণ ছাত্র হিসাবে বলা যায় যে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার  আগ পর্যন্ত মানুষের চেষ্টা করা উচিত বিভিন্ন জ্ঞানী গুণী জনের বক্তব্য শুনা ও তাঁদের লিখা বই পুস্তক পড়ে কিছু শিখার। সমস্যা হচ্ছে মানুষের আজকাল বই পড়ার তেমন সময় হয়না! তার অন্যতম  কারণ কর্মব্যস্ততা ছাড়াও সম্ভবত ইন্টারনেট তথা সামাজিক মিডিয়া আসক্তি ও ইউটিউব শুনা।

একথা স্বীকার করতেই হয় যে তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষ এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহ মানুষের জ্ঞান অন্বেষণের পরিধি অনেক  বিস্তৃত করেছে। তবে তা কতটুকু সঠিক ও মানসম্মত হতে পেরেছে সে প্রশ্ন আসতেই পারে।

জনাব জাবেদ আহমেদ ঘামিদি আধুনিক যুগের একজন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ। পাকিস্তানের লাহোরস্থ আল-মাওরিদ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক সায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি।  ইসলামী জ্ঞাণ অর্জনে উপযুক্ত পন্থার সন্ধানে ও জাভেদ ঘামিদির চিন্তাধারার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে ১৯৮৫ সালে পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আল মাওরিদ ইন্সটিটিউট (Al-Mawrid Institute) যার শাখা এখন মালশেয়িয়া, আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য সহ প্রাচ্য পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে আছে। তিনি জ্ঞান বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে ইসলামী শিক্ষা অর্জনের অন্যতম পথিকৃৎ।

জাবেদ আহমেদ ঘামিদির শিক্ষক ছিলেন পাকিস্তানের প্রখ্যাত আলেম মরহুম আমিন আহসান ইসলাহী। ওনারা একসময় জামায়াতে ইসলামীর সাথে জড়িত ছিলেন কিন্তু পরে খোদ মওলানা মওদূদীর সাথে মতবিরোধের কারণে দল ত্যাগ করেন। ইসলাহী ছিলেন মওলানা মওদূদী, মওলানা মঞ্জুর নোমানীর মত জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ইসলাহী নিজে ছিলেন ভারতের বিখ্যাত আলেম ইমাম হামিদুদ্দিন ফারাহীর ছাত্র। ফারাহি বিশ্বাস করতেন, প্রাচীন যুগের আরবী সাহিত্য ঠিকঠাক পাঠ করলে তা দিয়েই কুরআনের একক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব। যার ফলে ইসলামে আর নানা মতভেদ কখনো তৈরি হবেনা।  দীর্ঘ ২২ বছরের প্রচেষ্টার পর ইসলাহী  তাঁর লিখিত বিখ্যাত তাফসির “তাদাব্বুরে কুরআন” ১৯৭৯ সালে  প্রকাশ করেন। এদিকে জেনারেল জিয়াউল হক মিলিটারি ক্যুএর মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ইসলাহীকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক দিতে চাইলে ইসলাহী তা অস্বীকার করেন। এবং সেই লিস্ট থেকে নিজে স্বপ্রনোদিত হয়ে নিজের নাম সরিয়ে নেন।

অনেকের মতে মাওলানা মওদূদির সাথে মতবিরোধ অন্যতম একটি কারণ ছিল ইসলাহী যখন ধর্মীয় লক্ষ্য আদায়ে রাজনীতির ব্যবহারকে অস্বীকার করতে শুরু করেন। জাভেদ ঘামিদি মূলত আমিন আহসান ইসলাহীর চিন্তার ধারাই বহণ করছেন এবং তিনি তাঁর বিভিন্ন বক্তব্যে তা প্রকাশ করে থাকেন।  ইসলাম বিষয়ে তিনি গভীর চিন্তাভাবনা করেন এবং সে বিষয়ে বেশ কিছু বই পুস্তক রচনা করেছেন। তবে ইসলাম বিষয়ে তাঁর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আধুনিক চিন্তাধারার অনেকে সমর্থন করলেও সনাতনী কিছু আলেমদের কাছে তিনি এখনও বিতর্কিত। পাকিস্তানে শহুরে মধ্যবিত্ত্বের গন্ডীতে তার অসংখ্য সমর্থক আছে। কিন্তু অনেক আলেমরা ঘামিদি সাহেবকে  ‘অতিরিক্ত উদার’ ট্যাগ দিয়ে তার মতামতের ব্যাপারে সবসময় উস্মা প্রকাশ করেন। জঙ্গিবাদ এবং সুইসাইড বোম্বিং বিষয়ে তার ইসলামী মতামত পাকিস্তানের চরমপন্থিদের সহ্য হয়নি এবং তাকে নানাভাবে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। তাই নিজ দেশ পাকিস্তানে থাকা নিরাপদ নয় অনুভব করে এখন মালয়েশিয়ায় থাকেন। সম্প্রতি তাঁর একটি  ভিডিও সাক্ষাৎকার  শুনছিলাম সে বিষয়েই আজকের এ লিখা।

তাঁর মতে ঐতিহাসিকভাবে যদিও এটি প্রমাণিত সত্য যে একসময় (আব্বাসীয় খিলাফতের আমলে) মুসলিম বিশ্ব বৈজ্ঞানিক,অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে উন্নতির শীর্ষে ছিল কিন্তু  বিগত পাঁচ শত বছর থেকে মুসলিম বিশ্বে চলে আসছে চরম অজ্ঞতা সেটি যেমন ধর্মীয় অঙ্গনে তেমনি বৈষয়িক অঙ্গনে। যার ফলে বিগত কয়েক শত বছরে মুসলিমরা মানব সভ্যতার উন্নয়নে এবং জ্ঞান বিজ্ঞানে তেমন কোন উল্লখযোগ্য অবদান রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রশ্ন ছিল বর্তমান বিশ্বে মানব সভ্যতা জ্ঞান বিজ্ঞানে ও মানুষের চিন্তা-বিশ্বাসে অনেক উন্নত এক অবস্থানে পৌছাতে পেরেছে বলে সাধারণত যে ধারনা করা হয় কিন্তু বাস্তবে বিশেষকরে বিগত কয়েক দশকে যা হচ্ছে বিভিন্ন দেশে সেদিকে তাকালে ভেসে উঠে ভিন্ন চিত্র!

আজ আমরা যখন আমেরিকার ট্রাম্প, ভারতের মুদি, ইংল্যান্ডের বরিস জনসনের মত নেতৃত্বের উত্থান দেখতে পাই তখন মনে হয় মানব সমাজ যেন পিছনের দিকে ফিরে যেতে চায়!  তবে ট্রাম্প বা মুদি এরা কেউ কিন্তু একা নয় তাদের পিছনে আছে এক বিরাট জন গুষ্টি যাদেরকে অনেকে কালিমাযুক্ত অন্ধকারছন্ন সংকীর্ণ মন মানসিকতার মানুষ ভাবলেও তারা সেটি মানতে রাজি নয়!

কিন্তু কেন মানুষ এ অবস্থায় পতিত হচ্ছে তা বুঝতে হলে আমাদেরকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির পিছনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও গুষ্টিগত স্বার্থ রক্ষা এবং বর্ণবাদ সহ মানুষ চরিত্রের বাস্তব প্রকৃতি ও তার দুর্বলতার মূল বিষয়টি কোথায় সেটি বিবেচনায় আনতে হবে।

এ বিষয়ে এখানে আমাদের ইসলামের ইতিহাস থেকেও শিখার আছে। আমরা যদি ইসলামের ইতিহাসের দিকে তাকাই তখন দেখতে পাই আরব গোত্রগুলোর মধ্যকার বিরোধ তথা গুষ্টিগত ভেদাভেদ ও বর্ণবাদ উচ্ছেদ করা ইসলামের অন্যতম বড় লক্ষ্য ছিল এবং সে আদর্শে একটি মুসলিম সমাজ গড়তে সক্ষম হয়েছিলেন রাসুল (স:) তাঁর জীবদ্দশায়। কিন্তু বিশ্ব নবী চলে যাওয়ার পর সামান্য কিছু সময়ের পরেই আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে সেই আরব গোত্রগুলোর মধ্যকার বিরোধ ও ক্ষমতা দখলের যুদ্ধ যেমন, উমাইয়া ও আব্বাসীয় বংশের শাসন ক্ষমতা দখলের ও সাম্রাজ্য বিস্তারের লড়াই!

উমাইয়া বংশের শাসন মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান কর্তৃক সূচিত হয়। আর আব্বাসীয় খিলাফত নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর চাচা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের বংশধরদের কর্তৃক ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে কুফায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ৭৬২ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদে রাজধানী স্থানান্তরিত করা হয় এবং পারস্যে ১৫০ বছর ধরে নিয়ন্ত্রণ করার পর খিলাফতকে তার পশ্চিমাঞ্চলের প্রদেশ আন্দালুস,মাগরেব ও ইফ্রিকিয়া যথাক্রমে একজন উমাইয়া যুবরাজ,আগলাবি ও ফাতেমীয় খিলাফতের কাছে হারাতে হয়। যাক আমি সে ইতিহাসের দিকে যাচ্ছি না। কথা হচ্ছে,ইসলামের সেই গুষ্টিগত অসাম্প্রদায়িক ও উদারনৈতিক আদর্শ ছেড়ে গোত্রীয় স্বার্থটাই সেখানে বড় ছিল যদিও তারা দাবী করত তারা ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করছিল।

অন্যদিকে ইউরোপেও ছিল রোমান সাম্রাজ্যের শাসক। এসব সাম্রাজ্যকে মধ্যযুগ এবং প্রাক আধুনিক যুগেও রোমান ক্যাথলিক চার্চ এর বৈধ  উত্তরসূরি হিসাবে বিবেচনা করা হত। এখনও ইংল্যান্ডের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ হচ্ছেন  প্রোটেস্ট্যান্ট অ্যাংলিকান চার্চের প্রধান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত পৃথিবীতে সামরিক শক্তি দিয়ে কোন দেশ দখল করা বা উপনিবেশ স্থাপন করা বৈধ ছিল এবং তখন ছিল বিশাল বিশাল সাম্রজ্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির হিটলারের পরাজয় ও কুখ্যাত সে যুদ্ধে বেসামরিক জনগণের উপর চালানো নির্বিচার গণহত্যা, হলোকস্ট (হিটলার কর্তৃক ইহুদীদের উপর চালানো গণহত্যা),আমেরিকার পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োগ ইত্যাদি ঘটনায়  প্রায় ৫ কোটি থেকে সাড়ে ৮ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। আর তার পরে থেকে শুরু হল বিশ্ব জুড়ে  একের পর এক ভৌগলিক এলাকা ভিত্তিক জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র (nations states)প্রতিষ্ঠিত হওয়া। অবশেষে অনেক বছরের বিচার-বিশ্লেষণ ও বিতর্কের পরে প্রভাবশালী রাষ্ট্রসমুহের সাধারণ সম্মতিক্রমে ধীরে ধীরে শান্তি ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং মানবিক অধিকার বজায় রাখতে সুপ্রতিষ্ঠিত হল আন্তর্জাতিক আইন। যার ধারাবাহিকতায় উন্নত রাষ্ট্রসমুহে প্রতিষ্ঠিত হল গণতন্ত্র, মানবাধিকার,মত প্রকাশের স্বাধীনতা সহ উদারনৈতিক অসাম্প্রদায়িক,ধর্মনিরপেক্ষতা,পুঁজিবাদী অর্থনীতি আদর্শের সমাজ।

তাছাড়া শিল্প উন্নত রাষ্ট্রসমুহের শ্রমিক সংকট দূর করতে ও পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার প্রয়োজনে সে সব দেশে অভিবাসীর বা ইমিগ্রেশনের সুযোগ দেয়া হল। ফলে ইমিগ্রেশন আজ বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রসমুহের জনসংখ্যার চেহারা বদলে দিয়েছে যা লক্ষ্য করে এই ধনী দেশগুলি ইমিগ্রেশনের সুযোগ সংকুচিত করতে বিভিন্ন বাধার সৃষ্টি করলেও গরিব দেশ থেকে আরও উন্নত জীবনের সন্ধানে আসার প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণ রুখে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে স্থানীয়দের মাঝে শুরু হয়েছে অসন্তোষ। অভিবাসীরা যদিও তাদের গ্রহণকারী দেশগুলিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে কিন্তু তাদের উপস্থিতি স্থানীয় বর্ণবাদ মানুষেরা তাদের সমাজ সংস্কৃতি বদলে যাওয়ার ভয়ে আজ আতঙ্কিত। আর ইদানীং এই ভয়কে কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুঠতে সফল হচ্ছেন এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদরা।

এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই সমাজতন্ত্রী ও পুঁজিবাদী—এই দুই ভাগে ভাগ হয়ে বিশ্বে স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল আর দুই পক্ষই নিজেদের ব্যবস্থাকেই মুক্তির একমাত্র পথ বলে মনে করত। কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এক সময় সমাজতন্ত্রী রাষ্ট্রগুলাই তাদের সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থাকে বর্জন করে পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্র (Capitalism) অর্থব্যবস্থাকে গ্রহণ করে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে ৫০ – ৬০ দশকে বিশ্বের মুসলিম দেশের কত যুবক নিজেদেরকে বামপন্থী তথা সমাজতান্ত্রিক প্রগতিশীল করতে নিজেদের ধর্মবিশ্বাস ও ইসলামী আদর্শকে ত্যাগ করে ধন্য মনে করতেন অথচ মাত্র কয়েক দশকেই সমাজতন্ত্রের আদর্শ ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে! ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে চিন্তা করলে এদের মত ক্ষতিগ্রস্ত আর কে হতে পারে?

তবে সমাজতন্ত্র ব্যর্থ হলেও একথা স্বীকার করতে হবে যে পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্রের জন্য অবশ্যই সমাজতন্ত্র একটি চ্যলেইন্জ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিল।

অতএব ইতিহাস প্রমাণ করে এ পৃথিবীতে যেসব অন্যায় অবিচার অত্যাচার পরিলক্ষিত হয় তা মানুষের অপকর্মের কারণেই হয় এখানে  গণতন্ত্র, আদর্শ বা ইসলামের কোন দোষ নেই।

এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে বিশ্বের এ অবস্থায় ইসলামী আদর্শের ভবিষ্যৎ কী?

ইসলাম একটি সত্য ধর্ম ও আদর্শ হিসাবে পশ্চিমা দেশে একদিন হয়তবা জনপ্রিয়তা পেতেও পারে তবে ইসলামকে আপাতত একপাশে রেখে ইসলামের অনুসারী তথাকথিত মুসলিমদের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে একথা নি:সন্দেহে বলা যায় আধুনিক বিশ্বে পশ্চিমা সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করার মত কোন শক্তি মুসলিমদের নাই আর তা হবার লক্ষণ সুদূর ভবিষ্যতেও দৃশ্যমান নয়!

তাই যদি প্রশ্ন করা হয় বর্তমান বিশ্বে পশ্চিমা সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রভাব বা আকর্ষণ যেভাবে বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার মোকাবেলায় ইসলামের মাঝে এমন কি আকর্ষণ আছে যা গ্রহণ করতে মানুষকে দৌড়ে আসতে হবে?
সে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার মত ক্ষমতা মুসলিমদের নাই।  কোন সভ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করে বিকল্প অন্য কোন জীবন ব্যবস্থার বাস্তব উপস্থাপনা করার যে বুদ্ধিগত যোগ্যতা সৃষ্টির পরিবেশ দরকার মুসলিম দেশেগুলোতে তা নাই।

“ইসলামের বিজয় আসবেই” বলে যারা গলাবাজী করেন তাদেরকে যদি বলেন সে “বিজয়টা” আসলেই কি এবং বিজয় কিভাবে আসবে বা তাতে রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা জনকল্যানে মানুষের কি উপকারে আসবে? সে উত্তরে কিছু গৎবাঁধা ও চর্বিত চর্বণ কথাবার্তা ছাড়া সে বিষয়ে যুক্তিসম্মত স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাবে না তাদের কাছ থেকে।

তবে মুসলিম বিশ্বের সমস্যা আরো প্রকট হয়েছে যখন জ্ঞানের ভিত্তিতে  ইসলামী  শিক্ষা  না দিয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে আবেগকে। ফলে নৈতিকতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি সৃষ্টি না হয়ে এ সমাজে দেখা যায় দিনে দুপুরে গণপিটুনি দিয়ে মানুষকে  হত্যা করতে,খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মিশাতে, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট, গুম,খুন,নাগরিক ও মানবিক অধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি অপরাধ নিত্যদিনের ব্যাপার!

ইসলামী ধর্মতত্ত্বের ক্ষেত্রে জাভেদ আহমদ গামিদির অবদান সম্পর্কে অনেকের মত হল গামিদী সাহেবের চিন্তাভাবনা বর্তমান সময়ের প্রয়োজনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে মুসলিম সমাজের পাশাপাশি অন্য ধর্মের সম্প্রদায়ের কাছেও । তাঁর চিন্তাগুলি বিশ্বের বিরাজমান অসুস্থতার সঠিক নিরাময় হতে পারে। জাভেদ আহমদ গামিদী প্রকৃতপক্ষে যা বলতে চান তা হ’ল ধর্ম আলোচনায় আবেগের সংস্কৃতিকে  মূলোপকরণ না করে সেখানে যুক্তি ও বিচার বিশ্লেষনে সত্যকে জানার সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেয়া উচিত।

রেফারেন্স:

একজন ‘অদৃশ্য’ ইসলামী পণ্ডিত

সমাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী?

 

Comments are closed.