বিশ্বাসীদের অবস্থান কোথায়?

বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম দেশে আজ যে যুদ্ধ চলছে সেখানে বিশ্বাসীদের ভূমিকা ও দায়িত্ব কিংবা কমপক্ষে নিজেদের মানসিক অবস্থানটাও যদি সঠিক অবস্থায় না থাকে  তা হলে এর চেয়ে দেউলিয়া মুসলিম আর কে হতে পারে?

এ যুদ্ধের (১)এক পক্ষে আছে সেক্যুলার বামপন্থী ও ইসলামকে অন্যান্য ধর্মের মত একান্ত নিজস্ব ব্যক্তিগত কালচারাল বিষয়ে সীমাবদ্ধ রাখার পক্ষে যারা গতানুগতিক বস্তুতান্ত্রিক জীবনাদর্শের ও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী গুষ্টির আশীর্বাদ পুষ্ট তথাকথিত আধুনিক চিন্তাধারার অনুসারী আর (২) অন্য পক্ষে আছেন ইসলামী মূল্যবোধ বিশ্বাসী যারা ইসলামী সার্বজনীন আদর্শ ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান।

সেকুলার বনাম ইসলামের এ যুদ্ধে আপাতত সেকুলারদের বিজয় দেখলেও শেষ পর্যন্ত তাদের পরাজয় হবে মুসলিম দেশে যার আলামত ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে।

আর সে জন্য এ সেক্যুলারা ভোগছেন ভীষণ মনকষ্টে। অবশ্য ইসলাম বিদ্ধেষী জায়নিষ্ট ও মুসলিম বিশ্বে আধিপত্য বজায় রাখতে পশ্চিমা সাম্যাজ্যবাদীরাও এখন এদের বন্ধু । তাদের আর্থিক সহায়তায় এরা এখন গড়ে তোলেছে আর্ন্তজাতিক নেটওয়ার্ক। বাংলাদেশের সেক্যুলারিষ্টদের গুরু শাহরিয়ার কবিরের সাম্প্রতিক লিখিত “লন্ডন থেকে আঙ্কারা (দুই) জামায়াতের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ॥ বিপন্ন ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র ” শীর্ষক নিবন্ধটি পড়লে এ কথার ইংগিত পাওয়া যায়।

তাই মিশরের অবৈধ সামরিক সরকারের পক্ষের কিংবা তুরষ্কের কামাল আতাতুর্কের অনুসারী কিংবা বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী সাংবাদিক ও তথাকথিত সুশীল সমাজের বুদ্ধিজীবি এরা সবাই একই সুরে কথা বলতে দেখা যায়। মুসলিম বিশ্বের যেখানে স্বাধীনচেতা মুসলিম সরকার ক্ষমতায় সে দেশে শাহরিয়ারকে ছুটে যেতে দেখা যায় সেখানকার সরকার বিরোধী সেক্যুলার গুষ্টির কাছে। কি উদ্দেশ্যে এ ভ্রমন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পাঠকদের খেদমতে সেই নিবন্ধের কিছু কথা এখানে ।উল্লেখ করছি:

প্রধান বিরোধী দল কামাল আতাতুর্কের অনুসারী রিপাবলিকান পিপলস পার্টির ডেপুটি চেয়ারম্যান ওসমান ফারুক পেশায় কূটনীতিক। ১৯৭৭ সালে ঢাকায় তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। অবসরের আগে যুক্তরাষ্ট্রে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। অবসরের পর রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন; ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক তুরস্কের এক বলিষ্ঠ কণ্ঠ, ক্ষমতাসীন জাস্টিস এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে.) পার্টির কঠোর সমালোচক। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কে তুরস্কের রাষ্ট্রপতির চিঠির বিষয়ে ওসমান ফারুক বললেন, আমরা পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্টের এই অনভিপ্রেত কাজের কঠোর সমালোচনা করেছি। আমি বলেছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে কোন মন্তব্য করা, বিচারের সমালোচনা করে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টকে চিঠি লেখা আমাদের প্রেসিডেন্টের উচিত হয়নি।  আমি জানতে চেয়েছিলাম আপনার এই বক্তব্য কি কোন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে? ওসমান ফারুক বললেন, পত্রিকায় নিশ্চয় ছাপা হয়েছে। আপনি চাইলে আমি পার্লামেন্টের ধারাবিবরণীর কপি পাঠিয়ে দেব। এরপর তিনি সরকারের কার্যকলাপ সম্পর্কে বললেন তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষতা এখন বড় ধরনের হুমকির মুখে। রাজনীতি ও সমাজে ব্যাপকভাবে ইসলামীকরণ আরম্ভ হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা তুরস্ককে অতীতের ইসলামী ধারায় নিয়ে যেতে চাইছেন। পাঠ্যসূচিতে ধর্মশিক্ষা ও কোরান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। টেলিভিশনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান বেড়েছে। অধিকাংশ টেলিভিশন ও সংবাদপত্র সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণে। …….. একে. পার্টির হাইব্রিড ইসলাম তুরস্ককে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ভেবে আমি অত্যন্ত শঙ্কিত। আমরা ইসলামের বিরুদ্ধে নই, তবে আমি মনে করি রাজনীতিতে ধর্মের কোন জায়গা থাকা উচিত নয়।”

বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনরা নিজেদেরকে মুসলিম দাবী করলেও কার্যত প্রথমোক্ত সেক্যুলার দলের অন্তর্ভুক্ত এটা এখন প্রমাণিত সত্য। বিশেষ করে হেফাজতে ইসলামের নিরীহ ইসলাম প্রিয় মানুষদের উপর শাপলা চত্তরে গণহত্যা চালিয়ে তারা সেটা প্রমাণ করে দিয়েছেন।

সবচেয়ে অবাক লাগে তারা যখন দাবী করেন তারা গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক এবং ন্যায় বিচারের পক্ষে কিন্তু বাস্তবে তাদের কার্যকলাপ হচ্ছে গণতন্ত্র ও সুবিচারের বিপক্ষে। বিশেষ করে ইসলামের বিপক্ষে তাদের অবস্থান একেবারে ইসলামবিদ্ধেষীর সমান। আর নির্বাচনের সময় দেখা যায়  বাম, বর্ণবাদী ও তথাকথিত চেতনাধারীগণ শুরু করে আসল ধর্মব্যবসা যদিও তারা বলতে থাকেন – বাংলাদেশের ইসলাম নিয়ে যারা রাজনীতি করেন তারাই ধর্মব্যবসায়ী। কিন্তু ইসলামী দলগুলোর প্রতি তাদের এই অভিযোগ শুনা গেলেও নির্বাচন আসলে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীগণ টুপি পাঞ্জাবী, মাথায় হিজাব, হাতে তসবিহ, সাথে দাড়ি টুপিওয়ালা সঙ্গী, মাজারে মসজিদে, দৌড়াদৌড়ি করেন অতিভক্তি প্রকাশ করতে । কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ড যে একধরনের ভণ্ডামি ও ধর্ম নিয়ে ব্যবসা নয় তা কি অস্বীকার করা যায়? তাই ফেইসবুকে এক বন্ধুকে প্রশ্ন করতে দেখি “ইসলামী দল গুলো যদি ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে তাহলে এরা কি ধর্ম নিয়ে প্রতারণা করছেনা?

পরিশেষে বলতে চাই সাময়িক বিপর্যয় ও বাধা বিপত্তি বিশেষ করে মুসলিমদের উপর অমানবিক অত্যাচার, অবিচার ও তথ্য সন্ত্রাস দেখে যারা ভয় পান তাদের জানা উচিৎ  অসংখ্য বাধা বিপত্তি ক্লেশ ও দুর্দশা পেরিয়ে চরম সফলতা অর্জনের যে অনুপম উদাহরণ রেখে গেছেন এ পৃথিবীতে আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী মোহাম্মদ (স:) তা একজন মুসলিম যখন চিন্তা করে তখন তার মনে হতাশা আসার প্রশ্নই আসে না।  অতএব সে শিক্ষাকে সামনে রেখেই মুসলিমদেরকে অগ্রসর হতে হবে। তবে শুধু ঈমান আনলেই যে মুসলিম হওয়া যায় না তা আল্লাহ তা’য়ালা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন আল কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে। এমনি এক নির্দেশ পাওয়া যায় সুরা আল ইমরানের (সুরা: ৩) ১০২ ও ১০৩ নং আয়াতে।

“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।”

মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করলে যে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় লিপিবদ্ধ হয়ে চরম ব্যর্থতা ও নরকের আগুনে জ্বলতে হবে সে বিষয়ে বিশ্বাসীদেরকে সতর্ক করার জন্যই আল্লাহ এ আয়াত নাজিল করেছেন।

আর পরের অয়াতে মহান আল্লাহ আবার বলেও দিয়েছেন কিভাবে সে ব্যর্থতা পরিহার করা যায়।

“আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুন্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমুহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার।”

এই আয়াতে “তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে” এ কথাটা আইয়েমি জাহেলিয়াতের সময়কার আরবদের অবস্থার কথা বুঝানো হয়েছে বলে ইসলামী স্কলাররা বলেন। ইসলামের পূর্বে তাদের সমাজে পুরানো শত্রুতার জের নিয়ে যুগে যুগে চলত গ্রোত্রে গোত্রে মারারমারি কাটাকাটি ঠিক যে ভাবে আমাদের দেশে চেতনার ঠিকাদার স্বার্থন্নেষী গুষ্টি ইসলামের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে গিয়ে বাংলাদেশে সে সংষ্কৃতি চালু করতে চায়! তাই কোরআনের ভাষায় বলা যায় আমরা এক অগ্নিকুন্ডের পাড়ে অবস্থান করছি। আর সেক্যুলাররা আমাদেরকে সেখানেই রাখতে চায়।

অতএব যারা বিশ্বাসী তাদের সবার উচিত বর্তমান মুসলিম বিশ্বের এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করা। মুসলিমদের উচিত কোন প্রকার দ্বিধা ধন্ধ পরিহার করে দ্রুত নিজেদেরকে মুসলিম নামধারী সেই পোত্তলিকতা ও সেকুল্যার জিবনাদর্শের অনুসারীদের কাছ থেকে দূরে সরে আসা এবং সমাজে ইসলামী পরিবেশ ফিরিয়ে আনা।

Loading


Comments

বিশ্বাসীদের অবস্থান কোথায়? — 4 Comments

  1. আপনার লেখাটি পড়ে দুটি মন্তব্য করার ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু কথা দীর্ঘ হতে পারে বিধায় একটি মন্তব্য এখন করব এবং অপরটি না হয় কাল পরশু করব, ইনশাল্লাহ। প্রথম কথাটি এই যে আমরা ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রণয়নের মোকেবেলায় যে প্রতিকূলতা লক্ষ্য করি সেই প্রতিকূল-ময়দানে ইসলাম বিদ্বেষীদের পক্ষ হয়ে কাজ করতে দেখবেন এক বিরাট সংখ্যক ‘মুসলিমদের’। এদের মধ্যে এক অংশ মুনাফিক, এক অংশ কালচারেল মুসলিম (নাস্তিক) এবং এক অংশ সরল বিশ্বাসী যারা সকলের সাথে এই মর্মে ঐক্যমত: “রাজনীতিতে ধর্মের কোন জায়গা থাকা উচিত নয়”, কিন্তু রাজনীতি যে কেবল ভোটাভোটি নয়, এর সাথে আপনার গোটা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নীতি-নৈতিকতা সংশ্লিষ্ট এবং রাষ্ট্রযন্ত্রই যে জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করে, মানসিকতা গড়ে, শিক্ষার আঞ্জাম দেয়, পরবর্তী প্রজন্ম গড়ে সুতরাং “রাজনীতিতে ধর্মের কোন জায়গা থাকা উচিত নয়” –এই কথাটি বলে নাস্তিক ও আলট্রা সেক্যুলার পক্ষ যে তাদের আদর্শই রাষ্ট্রে কার্যকর করে ফেলে, এই সীমা পর্যন্ত তাদের চিন্তা প্রসারিত হয় বলে মনে হয় না। এরাই প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাদের আদর্শে গড়ে তুলে। আর এই গড়ে-ওঠা ‘মুসলিমগণ’ ওদের পক্ষ হয়ে ঈমানদারগণকে যৌথভাবে গায়ের জোরে চ্যালেঞ্জ করে, প্রতিহত করে। এই ‘মুসলিম’ পক্ষই ময়দানের জটিলতা। এটা কিন্তু গায়ের জোরে address না করে যতটুকু সম্ভব প্রজ্ঞা ও ধৈর্যের সাথে করা উচিত। এতে ফল আসতে যদি এক দশক, দেড় দশক পিছিয়েও যায় তবুও। মদিনায় এক বিরাট সংখ্যক লোক মুনাফিক ছিল। প্রত্যেকটি ঘটনায় তাদের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু নবী (সা.) অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে সেইসব পরিস্থিতির মোকাবেলা করতেন যাতে নিজেদের মধ্যে আভ্যন্তরীণ যুদ্ধ বেঁধে না যায়, হোক তারা মোনাফেক। নিফাক হচ্ছে একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, এক ধরণের ধারণাগত ও চিন্তনীয় বৈশিষ্ট্য। এর সাথে তকদীর জড়িত। এই সমস্যা ও পরিস্থিতিকে খোলাফায়ে রাশেদার খলিফাগণ অত্যন্ত কষ্টকরভাবে এবং জটিলতার সাথে মোকাবেলা করতে হয়েছে। নিফাকের অস্তিত্ব না থাকলে খিলাফত ৩০ বছরের মাথায় শেষ হয়ে যেত না। এক সময় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা দ্বীনের অংশ ছিল যেমন আজকের সব বিজ্ঞান আগে natural science ছিল, পরে প্রসার ও বিস্তৃতিতে আলাদা আলাদা নামে পরিচিত হয়েছে। এখন রাজনীতিকে আরবি ‘সিয়াসাহ’ শব্দে ব্যক্ত করা হচ্ছে কিন্তু এই সিয়াসাহ শব্দ কোরানে নেই। এই ধারণার সব কথা দ্বীন, আইন, নীতি-নৈতিকতায় স্থান পেয়েছে। আমাদের দ্বিতীয় জটিলতা হচ্ছে বিভিন্ন দল ও গ্রুপের অস্তিত্ব যেগুলোকে ইসলামের কয়েকটি বিষয়কে নিয়ে সাজানো হয়েছে এবং তা হয়েছে সামাজিক নানান বাস্তবতাকে সামনে রেখে। কিন্তু একটি দল গঠিত হওয়ার পর তার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে যখন কাজ শুরু হয় তখন সেই উদ্দেশ্য লিখিত হয় এবং প্রচারের জানাজানি হয় এবং একসময় সেই উদ্দেশ্য ব্যক্তিবর্গের ঊর্ধ্বে চলে যায়। এক সময় সামাজিক বাস্তবতা পরিবর্তিত হলেও সেই দল অতীতের বাস্তবতায় নির্মিত উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে চলতেই থাকে। ব্যক্তি তার মত পালটাতে পারে কিন্তু দল ব্যক্তির ঊর্ধ্বে ওঠার পর সেই স্থান আর অবশিষ্ট থাকে না। এজন্য বিভিন্ন দলের মধ্যে ঐক্য আনা সম্ভব নয় না, বা অত্যন্ত জড়িল হয়। আজ গায়ের জোরে মুসলমানদের এক অংশ ‘দ্বীনকে’ (সিয়াসাহসহ দ্বীনকে) সরিয়ে রাখার কাজ করছে। তাই এসেছে জটিলতা। সুতরাং ঈমানদার পক্ষ অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেভাবে নবী (সা.) করেছিলেন, সাহাবারা (রা.) করেছিলেন। আমার মনে হয় মুসলিমগণ দেউলিয়া হবেন না। কেননা বিশ্বের বাস্তবতা কোরান ও হাদিসের মুসলিম বাস্তবতা নয়। এখনে ‘মুসলিম’-বাস্তবতা জটিল রূপে বিরাজ করছে।

  2. এ যুদ্ধের (১)এক পক্ষে আছে সেক্যুলার বামপন্থী ও ইসলামকে অন্যান্য ধর্মের মত একান্ত নিজস্ব ব্যক্তিগত কালচারাল বিষয়ে সীমাবদ্ধ রাখার পক্ষে যারা গতানুগতিক বস্তুতান্ত্রিক জীবনাদর্শের ও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী গুষ্টির আশীর্বাদ পুষ্ট তথাকথিত আধুনিক চিন্তাধারার অনুসারী।

    এরা হয়তো ইসলামকে সেকেলে বলে বিশ্বাস করেন, কিংবা ইসলামের দাবী ইসলামই একমাত্র জীবন ব্যবস্থা সে দাবীতে তারা বিশ্বাস করেন না, নতুবা তারা বিশ্বাস করেন-ইসলামের দাবী অনুযায়ী তা প্রতিষ্ঠা করতে গেলে অন্যান্য জাতী গোষ্ঠির প্রতি ন্যায় করা হবেনা।

    আর (২) অন্য পক্ষে আছেন ইসলামী মূল্যবোধ বিশ্বাসী যারা ইসলামকে নিছক একটি ধর্ম ছাড়াও জিবন ব্যবস্থা (code of life) মনে করে এবং ইসলামের সার্বজনীন আদর্শ ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান।

    এরা চাইলেই কি আসে যাবে! এদের মধ্যে কতজন এই বিশ্বাসের সাথে আমলের দ্বারা অবিচল আছেন তা আমার মনে সন্দেহ আছে। আমরা এই বাংলাদেশে কয়েক মাস আগে দেখেছি, এই ধরণের বিশ্বাসিরা লেজ গুটিয়ে ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যেতে। এদের মধ্যে গুটি কয়েক আছে জঙ্গি মানসিকতা সম্পন্ন, আর আছে পশ্চাৎপদ চিন্তা চেতনায় আচ্ছন্ন। আল্লাহ রাহমানুর রহিম, তাই আল্লাহ ভালুকের হাতে কুড়াল তোলে দিয়ে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে দেবেন না, পৃথিবীর উন্নতির স্বার্থে তিনি সেই জাতিকে সাহায্য করে যাবেন যে জাতি জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নত।

    সেকুলার বনাম ইসলামের এ যুদ্ধে আপাতত সেকুলারদের বিজয় দেখলেও শেষ পর্যন্ত তাদের পরাজয় হবে মুসলিম দেশে যার আলামত ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে।

    সে স্বপ্ন আমারও আছে কিন্তু আশে পাশের মুসলিম মুজাহিদদের আচার আচরণে অচিরে তা হবে বলে মনে হয়না। মিশর আর বাংলাদেশের মুজাহিদদের শিক্ষা দীক্ষা আকাশ পাতাল ব্যবধান তা দুই দেশের ইসলামপন্থী কথা বার্তা আর পোশাক আশাক থেকে প্রমান পাওয়া যায়। তাই মিশরীয়দের মত বাংলার মুসলিম মুজাহিদ সৃষ্টি করতে হলে কওমী শিক্ষা ব্যবস্থাকে মিশরে আল আজহার বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন করতে হবে। আর এই বিষয়ে গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সরকার সাহায্য করবেনা। তাই বেসরকারী ভাবে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে, এবং কওমী মাদ্রাসার মত তা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে, অপেক্ষা করতে হবে ২৫/৩০ বছর যখন সেই শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত হয়ে নতুন প্রজন্মরা বের হয়ে আসবে তখন ই দরকার পড়বে এক বিপ্লব, যার মাধ্যমে প্রচলিত সব ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে বিনোদনের সকল মাধ্যম, সকল প্রচার মাধ্যমকে ইসলামি করনের কাজ চালিয়ে যেতে হবে যাতে এই মতের এবং পথে তরুণরা তারা যা বিশ্বাস করে তার নৈতিক সমর্থন বজায় রাখার উৎসাহ অনুপ্রেরণা পায়, তারা যাতে প্রচলিত ভোগবাদী সকল প্রকার যন্ত্র থেকে দূরে থাকে।

    একে. পার্টির হাইব্রিড ইসলাম তুরস্ককে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ভেবে আমি অত্যন্ত শঙ্কিত। আমরা ইসলামের বিরুদ্ধে নই, তবে আমি মনে করি রাজনীতিতে ধর্মের কোন জায়গা থাকা উচিত নয়।”—“প্রধান বিরোধী দল কামাল আতাতুর্কের অনুসারী রিপাবলিকান পিপলস পার্টির ডেপুটি চেয়ারম্যান ওসমান ফারুক

    এই কথা হচ্ছে কৌশল, গাছের শেকড় কেটে পাতায় পানি ঢালার মত! শেকড় কাটতে কেউ দেখবে না কিন্তু পানি ঢালতে দেখবে কিন্তু এক সময় যখন গাছটি মরে যাবে তখন তার জন্য তাদের দোষা যাবেনা!!

মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *