একাধিক বিয়ে করা কিংবা লন্ডিয়ার সাথে যৌন সম্পর্ক

আরব দেশে দাস প্রথা রোধ করতে ইসলাম কি করেছিল? প্রশ্ন হচ্ছে একাধিক বিয়ে করা কিংবা দাসী বা লন্ডিয়ার সাথে সঙ্গে যৌন সম্পর্কের কথা সত্যি কি কুরআনে বলা হয়েছে না ইসলামকে যারা বিতর্কিত করতে চায় এটি তাদের আবিষ্কার তা দেখতে হবে। যুগ যুগ ধরে ধর্মকে যারা প্রাতিষ্ঠানিকতার বেড়াজালে আটকিয়ে রেখেছেন তাদের অনেকের নিজশ্ব মতামতও কিন্তু ইসলামকে বিতর্কিত করেছে আজকের সমাজে!

দাস প্রথা ও বহু বিবাহ ইসলামের আবিষ্কার নয়। এটি মানুষের সমাজের বিশেষ প্রেক্ষাপটের সৃষ্ট একটি বিশেষ যুগের প্রথা ছিল যা মানুষ সময়ের সাথে সাথে সেটিকে পরবর্তী সমাজে নিরুৎসাহিত করতে সক্ষম হবে এটিই স্বাভাবিক।

আল্লাহ অবশ্যই জানেন যে মানুষেরা বিশেষকরে পুরুষ মানুষের অনেকের মাঝে বহুগামিতা বা একাধিক বিয়ে করার আসক্তি থাকতে পারে। সে সমস্যা দূর করাতে ৪ নং সুরার ১২৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলে দিয়েছেন যারা ইতিমধ্যে বিয়ে করে ফেলেছেন তাদের কি করণীয়?

বিয়ের লিমিট কি হবে তা সমাজ ব্যবস্থাই ঠিক করতে পারবে এবং তা পরিবর্তন হবে সেটি জানা কথা। কোরআন এখানে নির্দিষ্ট কোন সীমা নির্ধারণ করে দেয় নাই তবে মানুষের আচরণে কি পরিবর্তন আসতে হবে বা কি নিয়ম মানতে হবে সেটি বলে দিয়েছে বিশ্বাসীদেরকে।

Polygamy বা বহু বিবাহ আজও অনেক দেশে বিদ্যমান ইউটিউব সার্চ করলে আমেরিকায় অমুসলিমদের মাঝে এর উদাহরণ পাওয়া যায়! অনেক মেয়েরা সদিচ্ছায় রাজি হয় ২য় কিংবা ৩য় স্ত্রী হতে যদি সে পুরুষের অঢেল সম্পত্তি বা খ্যাতি তাকে। যদিও আইনত অনেক রাষ্ট্রে আজ সেটি নিষিদ্ধ। Polygamy in North America কিংবা Polygamy in Canada লিখে সার্চ করে দেখতে পারেন।

ইসলাম একাধিক বিয়ের ব্যাপারে কোন নির্দিষ্ট হুকুম দেয়নি বরং আমরা কোরআনে দেখতে পাই একাধিক বিয়ে করলে কি সমস্যা হবে এবং সেটি এড়াতে উত্তম রাস্তা কোনটি সেটি বলে দিয়েছে।

“মানহাজের” অনুসন্ধানের নামে একাধিক বিয়ের পক্ষে বা আরবের সপ্তম শতাব্দী প্রথা বিশ্লেষণ করে অনেক কিচ্ছা কাহিনীর অবতারণা করা যেতে পারে কিন্তু তাতে ফায়দা কিছু হবে না। কথা হচ্ছে এত কাহিনীতে যাওয়ার আগে কোরানের ৪:৩ আয়াতের context নিয়ে, এর ভিত্তিতে বিষয়টি খেয়াল করলে দুই, তিন বা চার বিয়ের বিষয়টি কিভাবে কেন এসেছিল তা পরিষ্কার হবে।
আমারা যদি ৪:৩ আয়াতটি একটি শর্ত-বাক্য (conditional sentence) একমত হতে পারি তাহলে এর জবাবটি কি? সেটি আগে দেখার বিষয়। সে উত্তর না খুঁজে যদি অন্যত্র ঘোরাঘুরি হয় তবে সমস্যা। তখন দেখতে হবে অযতা সময় নষ্ট করে আকারে-ইঙ্গিতে ইসলামের মৌলিক সার্বজনীন আদর্শকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে কিনা?

একজন বিশ্বাসের কাছে কুরআন হতে হবে এমন একটি গ্রন্থ যাতে কোন সন্দেহ নাই। সেই সাথে তাকে এটিও বুঝতে হবে কোরআন নাজিল হয়েছে রমজান মাসে অনেক প্রাচীন যুগের একটি জীবন্ত সমাজের মানুষের সামনে প্রধানত তাদেরকে উদ্দেশ্য করে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও কালচারের সংস্কার করতে অর্থাৎ তারা যে মূর্তি পূজা করে শিরিক করত ইত্যাদি ছেড়ে এক আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি আন্তরিকতার সহিত মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে তথা ঈমান আনতে। আল্লাহ বলেন:

(২:৮) وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّقُوۡلُ اٰمَنَّا بِاللّٰهِ وَ بِالۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ مَا هُمۡ بِمُؤۡمِنِیۡنَ ۘ

মানুষের মধ্যে এমন লোক আছে যারা বলে, ‘‘আমরা আল্লাহর প্রতি এবং আখেরাতের দিনের প্রতি ঈমান এনেছি’’ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা মু’মিন নয়। তাইসিরুল

কালের পরিক্রমে এই কোরআন যখন একজন বিশ্বাসের হাতে পৌঁছাবে তাকে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে যে কুরআনের সব হুকুম কি তার জন্য আক্ষরিক অর্থে প্রযোজ্য না কথাগুলো আজ লিখিত বাক্য আকারে তার কাছে শিক্ষামূলক তথ্য হিসেবে এসেছে যাতে যাতে কুরআন যখন যেখানে যেই সমাজে নাযিল হয়েছিল সেই সমাজের সাথে বর্তমান সমাজের পার্থক্যটা বুঝতে পারে এবং বর্তমান যুগের সমস্যা দূর করতে কোন দিকনির্দেশনা বা উপাদান থাকলে সেটিকে অনুসরণ করে কাজে লাগাতে পারে। তবে সেটি তার নিজের যুগের বাস্তবতায় নিজেই খুঁজে বাহির করতে হবে। ১০০ বছর আগের কোন ব্যাখ্যাকারীর ব্যাখ্যা দিয়ে বর্তমান বাস্তবতায় ইজতেহাদ করা এক বিরাট কঠিন কাজ। কেননা সেই প্রাচীন যুগের ব্যাখ্যাকারী বর্তমান বাস্তবতা জানতেন না। তাই তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তার যুগের বাস্তবতায়। তিনি যখন পৃথিবীতে ছিলেন তখন মানুষের কাছে তথ্যপ্রযুক্তিও ছিল না। আজ মায়ের পেটে বাচ্চা হলে প্রসবের আগেই মা বাবা জানতে চাইলে জানতে পারে সেটি ছেলে না মেয়ে।

Loading


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *