আধুনিক জ্ঞানে কুরআন বোঝার পরিপক্বতা অর্জন

একজন আদর্শ মুসলিমের জন্য দ্বীন এবং দুনিয়া উভয়ের জ্ঞান অন্বেষণ খুবই জরুরী আর এ পথে যারা অগ্রসর হবে তাদেরকেই বলা যায় “উলুল আলবাব” যাদের সফলতার কথা বলা আছে কোরআনে।

আর যারা শুধু দ্বীনি জ্ঞানকে দুনিয়ার জীবনে নিজেদের জীবিকা অর্জনের পেশায় পরিণত করতে যায় তারা দুনিয়াবি জীবনের নেতৃত্ব হারায়। আর এক পর্যায়ে তাদের পক্ষে দ্বীনি জ্ঞানও সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হয় না। তখন দ্বীনি জ্ঞানের যে উদ্দেশ্য ছিল আখিরাত সাফল্য সেটাও ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে যায়।

অন্যদিকে যারা শুধু দুনিয়ার জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চায় তারাও পড়েছে দুষ্ট চক্রে। তারা দুনিয়া, দুনিয়া করে মত্ত কিন্তু দুর্ভাগ্য এই দুনিয়া থেকে শীঘ্রই তারা হবে বর্জিত! শুধু বছর কয়েক মাত্র, কয়েকটি সংখ্যার খেলা! একজন মানুষ গড়ে বাঁচে কয় বছর? ধরেন গড়ে সর্বাধিক  ৮০ বছর। এর থেকে ৪০ বছর তো চলে যায় ঘুমায়ে যা লাগে শুধু শরীরের প্রায়োজনে অন্য কোন কাজে নয়। ইমাম গাজ্জালি (রা:) বলেছিলেন, “ঘুম হচ্ছে মৃত্যুর ভগ্নি” (sister of death)। আর এই ৪০ বছরের ২০ বছর তো চলে যায় “টিনএইজের” খেলা দোলায়। বাকী থাকল ২০ বছর মানে মাত্র দুটি দশক সেটা তো শেষ হয়ে যায় চোখের পলকে। বিশ্বাস না হলে জিজ্ঞাসা করেন যাঁরা পৌঁছেছেন ৬০ বছরে।

আশ্চর্য হবার কথা নয় যে, মুসলিম স্বর্ণযুগের স্কলাররা কেন বলতেন, ” জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন পর্যন্ত যাও”। তাঁরা ভাল করে জানতেন অজানার দেশ চীনে দ্বীনি জ্ঞান নয় সেখানে দুনিয়াবি জ্ঞানই পাওয়া যাবে যা দিয়ে দ্বীনি জ্ঞানকে আরো পরিপক্ব (mature) করা যাবে। একজন বিশ্বাসীর দ্বীনি জ্ঞান যখন দুনিয়াবি জ্ঞান দিয়ে হবে পরিপক্ব তখন তার মর্যাদা বেড়ে যাবে অনেক উপরে। আর চিন্তা করেন, এ পরিপক্বতা যখন একটি জাতীর বৈশিষ্ট্য হয়ে যাবে তখন সে পুরা জাতী যে আসলেই হতে পারবে “খাইরু-উম্মাহ”, যাদের কথা উল্লেখ হয়েছে কোরআনে।

খাইরু উম্মতীর অন্যতম কাজ হচ্ছে  ভাল কাজের প্রবর্তন  এবং মন্দ কাজে বাঁধা প্রদান। এখন মন্দ কাজের বাধা দিলে যারা মন্দ কাজ করতে চায় তারা কি তা মেনে নিবে? আসতে পারে সংঘর্ষ তখন তা মোকাবিলায় যে ক্ষমতায়ন (empowerment) প্রয়োজন তা কি ভাবে আসবে? এখানেই তো প্রয়োজন দুনিয়াবি শক্তি অর্জন অর্থাৎ দ্বীনি জ্ঞানের সাথে দুনিয়াবি জ্ঞানের সমন্বয়।

ইংরেজিতে একটি শব্দ আছে যাকে বলে ইউটোপিয়া বা কল্পনা। আজ প্রশ্ন হচ্ছে উপরোক্ত চিন্তা ভাবনা কি সত্যি ইউটোপিয়া বা কল্পনারাজ্যের কথা না বাস্তবে তা সম্ভব? আমি বলব যারা হতাশ বা বিষণ্ণ চিত্তের মানুষ তারাই এ ভাবনাকে কল্পনারাজ্যের ভাবনা বলতে পারেন। তবে এ দলে কিন্তু কোন ঈমানদারের থাকার কথা নয়।

On a side Note:
হতাশায় জর্জরিত মুসলিমের জন্য নিচের ভিডিওটি শুনা দরকার।

আসল কথা মানব সভ্যতায় সময়ের সাথে তথ্য, প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে যত মানুষ ততই পাচ্ছে এমন সব অজানা তথ্য সে গুলোকে সামনে রেখে খোলা মন নিয়ে কোন বিশ্বাসী যদি কোরআন পড়ে, চিন্তা করে তাহলে পাবে কোরআনের আয়াত বোঝার এক অনন্য সত্যতার উপলব্ধি। কোরআন কোন বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ নয় বরং সেখানে আছে অনেক উপদেশ, নির্দেশ ও নিদর্শন।

কোরআনের আয়াত সম্পর্কে একটা জিনিস বুঝতে হবে যে, ” নিশ্চিত বা অবাধ স্বচ্ছ ও পরিষ্কার (absolute) অর্থের কোন আয়াত বা নিদর্শনের সাথে নিশ্চিত বা শর্তহীন (absolate) কোন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার বা তথ্যের কখনও কোন সংঘর্ষ (clash) ছিলনা, হয় নাই এবং ভবিষ্যতেও হবে না। এটাই হল কোরআনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য! প্রতিষ্ঠিত (established) বৈজ্ঞানিক সত্য বা কোন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও তথ্য কোরআনের আয়াত বা নিদর্শনের সত্যতা উপলব্ধি করতে আরো বেশী সাহায্য করে। বস্তুত এতে উন্মুক্ত হয় কোরআনকে বুঝার এক নতুন দিগন্ত। মহাবিশ্বের রহস্য বোঝার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সঙ্গে  কুরআন বোঝার পরিপক্বতাও বাড়তে থাকে । 

 এরকম একটি উদাহরণ হল সুরা মু’মিনুন এর  ১২ – ১৪ নং আয়াতে মানুষ সৃষ্টির ক্রমবিকাশ সম্পর্কে যে বর্ণনা এসেছে তা বর্তমান বৈজ্ঞানিক আবিস্কারের সাথে কোন তফাৎ নাই।  

এ প্রসঙ্গে এখানে লিংক দেয়া এই লিখাটিও পড়তে পারেন।  

উপসংহার:

কোরআন পড়ে সবাই উপকৃত হতে পারে না। তবে এটা কোরআনের সমস্যা নয় বরং যে পড়তে চায় তার মনের উদ্দেশ্যে কি সেটা হচ্ছে আসল ব্যাপার। সে কথা আল্লাহ কোরআনেই বলে দিয়েছেন। সূরা বনী ইসরাইলের ৮২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآَنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ وَلَا يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إِلَّا خَسَارًا (82) “আমি এ কুরআনের অবতরণ প্রক্রিয়ায় এমন সব বিষয় অবতীর্ণ করছি যা মুমিনদের জন্য নিরাময় ও রহমত এবং জালিমদের জন্য ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করে না।” (১৭:৮২)

এর তাফসির বা ব্যাখ্যা হচ্ছে: আগের আয়াতে সত্যের স্থায়িত্ব আর মিথ্যার বিলোপের কথা বলা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ আয়াতে হকের সুস্পষ্ট একটি মানদণ্ডের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হচ্ছে, যে কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, তা কেবল হকের অনুসারী অর্থাৎ মুমিনদের জন্যেই কল্যাণকর ও উপকারী। তাঁরা কুরআনের আলোকে নূর এবং হেদায়াত থেকে উপকৃত হন এবং এর সাহায্যে তাঁদের আত্মিক রোগব্যাধির নিরাময়ের পাশাপাশি আল্লাহর বিশেষ রহমতের অন্তর্ভুক্ত হন। তবে কাফের মুশরিকরা এবং বিরোধীরা কুরআনের সত্যতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাদের নিজেদের আত্মাকে কালিমালিপ্ত করে এবং ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমনটি উর্বর জমিতে বৃষ্টির পানির ফলে ফসল ভালো হয় অথচ ঐ বৃষ্টির পানিই যদি লোনা জমিতে পড়ে তাহলে ক্ষতি ছাড়া কোনো লাভ নেই। তবে কুরআন কেবলমাত্র মানুষের অন্তরাত্মারই নিরাময় করে না বরং বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মানুষের শারীরিক অনেক রোগব্যাধিও ভালো হয়ে যায়।

এ আয়াত থেকে আমরা শিখবোঃ

এক. আল্লাহর ওপর ঈমান আনার মধ্য দিয়ে আল্লাহর বিশেষ রহমত ও দয়া লাভ করার ক্ষেত্র তৈরি হয়।

দুই. কাফেররা যেহেতু ঐশী আদেশ অনুযায়ী চলে না, সেহেতু তাদের বিরোধিতা তাদের অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং তাদের কুফরির পরিমাণও বৃদ্ধি করে। পরিণতিতে তাদের ক্ষতির মাত্রাও বেড়ে যায়।

তাসলিমা নাসরিন এক হাতে সিগারেট অন্য হাতে কোরআন নিয়ে যখন পড়তে বসেন তার উদ্দেশ্য কোরআনের অপব্যখ্যা কিভাবে দেয়া যায় সে জন্য উপযুক্ত আয়াত ও পাঠ্যাংশ খুঁজে পাওয়া!

আবার যে একজন হিদায়তের অন্বেষণে আল্লাহকে খুঁজে পেতে চায় তার পড়া হয় ভিন্ন । এ প্রসঙ্গে এ ভিডিওটি শুনতে পারেন

আল্লাহ সবার মন বাসনা পূরণ করেন। এ ভিডিওটিতে এক জন আমেরিকান ডাক্তরের কন্ঠে এ কথার একটি উদাহরণ পাবেন। সুবহানআল্লাহ।

*************************************************

রেফারেন্স:

The Clash of Reason and Revelation: Reconciling Science and Scripture by Dr. Mohamed Abutaleb, Organized by Harvard Islamic Society, USA.


মন্তব্য দেখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *