আত্মার উপরে শাস্তি শুধু বাস্তবই নয় বরং তা দৈহিক যন্ত্রণার চেয়েও কতনা ভয়াবহ হতে পারে তা কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে পরিষ্কার করা সম্ভব। আত্মার উপর শাস্তি আবার দু’ধরণের এক: মৃত্যুর আগে, দুই মৃত্যুর পরে।
একজন ফাঁসীর আসামীকে ফাঁসীর হুকুম পড়ে শুনানোর পর যখন বলা হয় আর কিছুকাল পরেই তার ফাঁসী কার্যকর করা হবে তৎক্ষণাৎ বিদ্যুৎ-গতিতে তার আত্মার উপর দিয়ে হিমশীতল বিভীষিকা ও আতঙ্কের যে ঝড় বয়ে যায়- তার চিত্র কি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব?
আবার এমনও দেখা যায় কোন ব্যক্তি ফাঁসীর হুকুম শুনার সাথে সাথেই হার্ট এটাক বা ব্রেইন স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করে। তাহলে দেখা যায় আত্মার উপরে মৃত্যুদণ্ডের খবরের প্রতিক্রিয়া কত ব্যাপক, কত ভয়াবহ ও কত ভয়ংকর!
ফাঁসীর অসামী ফাঁসী দেয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করে। দৈহিক যন্ত্রণা কত দীর্ঘস্থায়ী, কত অসহনীয়, কত পীড়াদায়ক! ফাঁসী দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কর্য্যকর করার ঠিক আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তার আত্মা যে ভয়ানক আতঙ্কের মধ্য দিয়ে মুহুর্তগুলো পার হয়ে আসে সেই ভয়ানক অনুভবের কাছে ফাঁসী দেয়া সময়কার দৈহিক যন্ত্রণা কি নিতান্তই নগণ্য নয়? শারীরিক ও মানসিক সুস্থ মানুষ কেউ এ কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন কি?
জীবিত অবস্থায় আত্মিক সত্ত্বার উপর শাস্তিকে কার্যত বিশ্বাস ও স্বীকার করে নেয়ার পরও মৃত্যুর পর আত্মিক শাস্তিকে অবিশ্বাস কিংবা অস্বীকার করা কি অবিশ্বাসীদের স্ব-বিরোধিতা নয়?
সোজা কথায়, অবিশ্বাসীরা জীবিতাবস্থায় আত্মা ও আত্মার উপর শাস্তিকে বিশ্বাস করছে!! কিন্তু মৃত্যুর পর দেহ-চ্যুত আত্মার উপর শাস্তিকে সংশয় ও সন্দেহ প্রকাশ করছে! অথচ প্রথমেই কার্যত স্বীকার ও বিশ্বাস করে নিয়েছে যে, “আত্মিক সত্ত্বা” ও দেহসত্বা আলাদা। তাহলে কি তারা একথা বুঝাতে চায় আত্মিক ও দেহ-সত্ত্বা পরস্পর অবিচ্ছেদ্য বিষয়? তাহলে দেহ-সত্ত্বা ধ্বংস হবার পর যেমন, “দেহস্বত্ত্বা” আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর আত্মিক সত্ত্বার কি হয় তথা আত্মা কোথায় যায়? এ উত্তর অবিশ্বাসীরা দিতে পারবে কি?
এর বিপরীতে মাতৃগর্ভে এমবেডেড নিষিক্ত ডিম্বাণুর মধ্যে যখন হঠাৎ করেই হৃৎস্পন্দন শুরু হয়ে যায় যাকে “আত্মার” উপস্থিতি হিসাবে ধরে নেয়া হয়, সেই “আত্মা” কোথা থেকে আসে? এ উত্তর অবিশ্বাসীরা দিতে পারবে কি?
তাহলে বুঝা গেলো “আত্মিক সত্ত্বা” ও “দেহ সত্ত্বা” পরস্পর অবিচ্ছেদ্য বিষয় নয় বরং এগুলো বিচ্ছেদ যোগ্য আর “দেহ-সত্ত্বাই” “আত্মিক সত্ত্বার” উপর নির্ভরশীল। মানুষের আত্মার যন্ত্রণা বেশী বলেই বোধহয় এ কারণেই মানুষ আত্মহত্যা করতে দ্বিধাবোধ করে না! আত্মহত্যা করতে শরীর যে যন্ত্রণা অনুভব করবে সে চিন্তা একজন আত্মহত্যাকারী কখনও করে কি?
এতেই বোঝা যায়, আত্মার যন্ত্রণার কাছে শরীরের যন্ত্রণা কতো তুচ্ছ! আমাদের স্পষ্ট বুঝে নেয়া দরকার – দেহে আত্মার উপস্থিতি আছে বলেই দেহ যন্ত্রণা অনুভব করে। দেহ থেকে আত্মা আংশিক কিংবা সম্পূর্ণরূপে বেরিয়ে যাওয়া মাত্র দেহে আর যন্ত্রণার অনুভূতি থাকেনা! তাহলে যন্ত্রণার কারণ দেহ নয় বরং আত্মা নিজেই। দেহের মৃত্যু হওয়া মানেই দেহ “আত্মা” ধারণের অনুপযোগী হয়ে যাওয়া। তখন আত্মা কোথায় যায়? সে চিন্তা সময় থাকতে আমাদের করা উচিত নয় কি?
70 total views, 1 views today